X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম আলো যে অন্যায় করেছে শিশু সবুজের সাথে

লীনা পারভীন
০১ এপ্রিল ২০২৩, ১৯:৪৬আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২৩, ১৯:৪৯

ধরেই নিলাম প্রথম আলো যা বলেছে সবটাই সত্যি। সবুজের ছবি জাকিরের বক্তব্য দিয়ে যা ছাপা হয়েছে– সেটা যে ভুল এতে কোনও সন্দেহ নেই। প্রথম আলোর এই ভুলের কারণে শিশু সবুজের জীবনে যে ঝামেলাটা নেমে এলো তার দায় কি এড়াতে পারবে? প্রথম আলোর এই প্রতিবেদনের পরবর্তীতে দেশের অধিকাংশ মিডিয়া ক্যামেরা আর বুম নিয়ে হাজির হয় সবুজের বাসায়। একের পর এক মিডিয়ার কাছে শিশুটি ও তার পরিবারকে জবাব দিতে হচ্ছে। দোষ না করেও যে জবাবদিহিতার মধ্যে পড়ে গেলো–এই জায়গাটিকে কি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব?

আমি সাংবাদিক না কিন্তু একজন সচেতন মানুষ হিসেবে একটি শিশুকে ও তার পরিবারকে এমনভাবে হেনস্তা করার দায়ে প্রথম আলোকে দোষী করতেই পারি। সাংবাদিকতার কিছু নীতিমালা নিশ্চয়ই আছে। গুগল করলেও এর কিছু পাওয়া যায়। ইউনিসিফের একটি গাইডলাইন আছে রিপোর্টিং বা সাংবাদিকতায় শিশুদের ব্যবহারের বিষয়ে। গাইডলাইনে ৬ টি নীতিমালার একটিতে বলা হয়েছে, “In interviewing (and reporting on) children, pay special attention to each child’s right to privacy and confidentiality, to have their opinions heard, to participate in decisions affecting them and to be protected from harm and retribution.” অর্থাৎ, শিশুদের গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়ার কথাই বলা আছে। কিন্তু প্রথম আলো কি সেটা রক্ষা করতে পেরেছে? নাকি বাচ্চাটাকে পাবলিক ট্রায়ালের মধ্যে ফেলে দিলো? সর্বশেষ ৬ নম্বর নীতিতে বলা হয়েছে– “Do not publish a story or an image that might put the child, their siblings or peers at risk, even when their identities are changed, obscured or not used.”

বাংলাদেশ জাতিসংঘের নীতিমালা বহির্ভূত কোনও দেশ নয়। আমাদের দেশের সাংবাদিকরা মানবাধিকার বা প্রেস ফ্রিডম নিয়ে কথা বলা শিখেছেই এই সংস্থাগুলোর কাছ থেকে। ইউনিসেফ প্রতিবছর রিপোর্টারদের পুরস্কার দিয়ে থাকে। অথচ প্রথম আলোর এই দিকটিকে আমরা কোনোভাবেই নজরে আনছি না।

ইউনিসিফের সেই ‘গাইডলাইনস ফর জার্নালিস্ট’স রিপোর্টিং অন চিলড্রেন’ এ অনেকগুলো ধারায় কেমন করে এবং কী কী বিষয়কে নজরে নিয়ে বাচ্চাদেরকে নিয়ে রিপোর্টিং বা রিপোর্টিংয়ের কাজে ব্যবহার করা যাবে সে বিষয়ে বিস্তারিত আছে। এমন আরও ৬ টি গাইডলাইনের একটিতে বলা আছে– “Obtain permission from the child and his or her guardian for all interviews, videotaping and, when possible, for documentary photographs. When possible and appropriate, this permission should be in writing. Permission must be obtained in circumstances that ensure that the child and guardian are not coerced in any way and that they understand that they are part of a story that might be disseminated locally and globally. This is usually only ensured if the permission is obtained in the child’s language and if the decision is made in consultation with an adult the child trusts.”

এই জায়গাটি আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। প্রথম আলো যে অপরাধটি করেছে সেটি এই ধারার সম্পূর্ণ বিপরীত। অর্থাৎ সেই প্রতিবেদক কিন্তু বাচ্চাটিকে বা বাচ্চাটির পরিবারের কোনও অনুমতিই নেয়নি তার ছবি তোলার বিষয় বা বাচ্চাটির কোনও গল্প তারা কোথায় কেমন করে ব্যবহার করবে সে বিষয়ে কোনও আলোচনাও হয়নি বলেই সবুজ ও তার পরিবার বলতে চেয়েছে। সর্বশেষ ইউনিসিফের একই গাইডলাইনের আরেকটি পয়েন্ট এখানে তুলে দিতে চাই যেখানে বলা হয়েছে– ‘Do not further stigmatize any child; avoid categorizations or descriptions that expose a child to negative reprisals’।

এখন অনেকেই হয়তো বলতে চাইবেন যে আমরা কি কেউ এইসব নিয়ম-কানুন মানি? মানলে দেশে শিশু শ্রম কেন বন্ধ হয়নি? কেন সবুজকে ফুল বিক্রি করতে হচ্ছে। যারা এমন যুক্তি দেখাচ্ছেন তারা হয়তো ভুলে যাচ্ছেন যে শিশু শ্রম আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ হলেও এটা তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত। রাষ্ট্র শিশুদেরকে যথাযথ সুবিধা দিতে পারছে না তার মানে এই না যে সংবাদমাধ্যম তাদেরকে কোনও প্রকার নেতিবাচক প্রচারণার কাজে বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করতে পারবে।

আজকে যেসব আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম দেশে বাজারমূল্যের অস্থিরতার সংবাদ ছাপার কারণে প্রথম আলোকে আইনি পদক্ষেপের আওতায় আনা হয়েছে বলে বিবৃতি দিচ্ছে তারা কি এই দিকটি সম্পর্কে ভেবেই বিবৃতি দিয়েছে? আন্তর্জাতিক মিডিয়া কি জানে যে প্রথম আলোর একটা ভুল আজকে সবুজ ও তার পরিবারের গোপনীয়তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে? আন্তর্জাতিক বিবৃতি যারা দিচ্ছেন তারা কি জানে যে প্রথম আলোর একটা ভুলের কারণে সবুজের পরিবার মিডিয়া ট্রায়ালের মুখে পড়েছে এবং শিশুটিকে প্রথম আলো নেতিবাচক এক্সপোজার দিয়েছিলো?

আমি আইনজ্ঞ বা সাংবাদিকতা বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রিধারী কেউ না। আমার অত আন্তর্জাতিক আইন বা নীতি বিষয়েও জ্ঞান নেই কিন্তু একটা শিশুকে এহেন হেনস্তার মধ্যে ফেলার অপরাধে প্রথম আলোকে আমি দোষী মনে করি। প্রথম আলো দেশের একটি অন্যতম প্রধান দৈনিক পত্রিকা। তাদের সংবাদকে ফলো করে, বিশ্বাস করে কোটি মানুষ। এমন একটি দৈনিক পত্রিকার সামান্য ভুলও যে কতবড় বিশৃঙ্খলা বয়ে নিয়ে আসতে পারে সেটি নিশ্চয়ই এই ঘটনা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পেরেছে।

লেখক: কলামিস্ট

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
একযুগ পর দলছুট, সঙ্গে সঞ্জীব চৌধুরী
একযুগ পর দলছুট, সঙ্গে সঞ্জীব চৌধুরী
সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করা ব্যক্তির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো বাঘ, নিয়ে গেলো গহীন বনে
সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করা ব্যক্তির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো বাঘ, নিয়ে গেলো গহীন বনে
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দিলেন এক ব্যক্তি
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দিলেন এক ব্যক্তি
দুই জনপ্রতিনিধির নাম বলে সাভারে সাংবাদিকের ওপর কেমিক্যাল নিক্ষেপ
দুই জনপ্রতিনিধির নাম বলে সাভারে সাংবাদিকের ওপর কেমিক্যাল নিক্ষেপ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ