X
সোমবার, ১২ মে ২০২৫
২৮ বৈশাখ ১৪৩২

বদলে গেছে দিন

মাহমুদুর রহমান
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১১:২৬আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১১:২৮

মাহমুদুর রহমান সাত বছরে অনেকটাই বুড়িয়ে গেছেন তিনি। উজ্জ্বল জ্যোতির্ময় চোখে অনেকটাই ব্যর্থতার ছানি। কেনই বা নয়! পৃথিবীর সব চেয়ে শক্তিধর পরাশক্তি চালানোর চাপ, সে তো নেহায়েত কম কিছু নয়।
কোকড়া কেশ ধূসর, মুখমণ্ডলে ভাঁজ এ তো হওয়ারই কথা। তবে আত্মপোলব্ধি যেন আত্মবিশ্বাসকে করে তুলেছে আরও বলিয়ান। আর যাই হোক, বাক্স-প্যাটরা গোছানোর সময় এখনও আসেনি। অনেক দিন পর, বারাক ওবামা তার দুটি বক্তৃতা দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শোরগোল সৃষ্টি করেছেন। বিশ্লেষকেরা কিছুই ধরতে পারছেন না। বিশেষজ্ঞরা বিশেষভাবেই অজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
কারণ বেইসবল খেলার প্রখ্যাত  ‘curved ball’ টি তিনি ছুড়েছেন। মুসলিমবিদ্বেষ যখন চূড়ান্তে, তিনি গেছেন মসজিদে শাসন করতে নয়, অনুরোধ করতে নয়, সম্প্রদায়কে তাদের অবদানের জন্য ধন্যবাদ জানাতে। নতুন করে শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থানের গুরুত্ব বোঝাতে, ইসলামের শান্তির বার্তা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিতে।
যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনে প্রকাশ্যে বা প্রচ্ছন্ন ইসলামবিরোধী স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এমন সময়ে প্রথম কোনও রাষ্ট্রপতি মসজিদ গেলেন। এতে অবশ্যই ভিন্ন গুরুত্ব বহন করে। সে কারণে বিশ্লেষকেরা হাতড়ে বেড়াচ্ছেন।
আইন সভায় ওবামার বক্তব্য ছিল এতটাই তীর্যক যে, বিশেষজ্ঞরা মন্তব্যের ভাষা খুঁজে পেতে হিমশিম খেয়েছেন। কিন্তু সে দেশের সমস্যা থেকে দূরে যারা রয়েছেন, তাদের কারও কারও কাছে আমজাদ হোসেনের চমৎকার গান ‘এ দুনিয়া এখন তো আর সে দুনিয়া নাই/ মানুষ নামের মানুষ আছে দুনিয়া বোঝায়/ সে মানুষের ভীড়ে আমার সেই মানুষ নাই’ স্মরণে এসে গেছে। ওবামার বক্তৃতায় প্রকাশ পেয়েছে ঘাত-প্রতিঘাতে ক্লান্ত এক ব্যক্তির একাকিত্ব। সুশাসনের পতাকাবাহী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান স্বয়ং প্রশ্ন তুলেছেন সুশাসন নিয়ে। প্রশ্ন করেছেন নির্বাচনে কালো টাকার প্রভাব নিয়ে। সঙ্গে-সঙ্গে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন—IRS-কে এই অর্থের সূত্র নিয়ে।

ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান উভয় দলকে সমালোচনা করেছেন রাজনীতিতে বর্ণবাদ, বিভাজন আর লবিস্টের কাছে জিম্মি করায়। যে আইন সভায় তার রাজনৈতিক চলা শুরু, সেই সভায়  জানিয়েছেন উদাত্ত আহ্বান। সে কথায় যেন খুঁজে পাওয়া গেল ‘এ দুনিয়া এখন তো আর সে দুনিয়া নাই’। কখনও কি দেখা যাবে আমাদের রাজনীতিবিদদের এমন উপলব্ধি? হলে কি তা প্রকাশ করবেন?

সব চেয়ে সাহসী বক্তব্য এলো আব্রাহাম লিঙ্কনকে তার জানা সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রপতি বলে অভিহিত করা। ডেমোক্র্যাট হয়েও ইলিনয়ের সন্তান রিপাবলিকান লিনকনকে প্রশংসা করতে তিনি বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করেননি। আমরা কি তা পারব কখনও? এবং এই বক্তব্যের জন্য কই কেউ তো তার পিন্ডি চটকাননি!

আমজাদ হোসেনের গানের আরেকটি কলি খুবই প্রযোজ্য। ‘এখন বুঝি দারুন সময়, বদলে গেছে দিন’। দিন বদলে তিনি প্রকাশ করেছেন দুঃখ। অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে জানিয়েছেন আইন সভার জ্বালাময়ী বিতর্কের পর উভয়পক্ষ কফি পান করেছেন বা পোকার খেলেছেন। আর এখন একে অন্যের উপস্থিতি সহ্য করতে পারেন না।

তার মূল বক্তব্য ছিল স্পষ্ট। তাদের দেশ এবং জনগণের কল্যাণে সবাই সচেষ্ট এবং আন্তরিক। তফাৎ হওয়ার কথা শুধু যাত্রা পথ নিয়ে। কিন্তু বাস্তবে এসেছে অশুভ সাংঘর্ষিক দ্বিমত।

নতুন যাত্রার আহ্বান তিনি করেছেন ঠিকই, যেন নির্বাচন প্রার্থীদের এক ধরনের উপদেশ, অনুরোধ। কেউ কি তার কথা শুনবেন? আমরা কি এই উদাহরণ গ্রহণ করব? সাত বছর আগে তার নির্বাচনই স্লোগান ছিল ‘Yes we can’। কেন জানি মনে হচ্ছে নাগরিক ওবামার আরও একটি ইনিংস অপেক্ষা করছে। কেন জানি মনে হচ্ছে এবার তিনি খুঁজবেন সেই মানসিকতার মনের মানুষ।

লেখক: কমিউনিকেশন বিশেষজ্ঞ

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
‘জনগণের মতামত ছাড়া করিডোর-বন্দর চুক্তির সিদ্ধান্ত সরকার নিতে পারে না’
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির প্রতিবাদ‘জনগণের মতামত ছাড়া করিডোর-বন্দর চুক্তির সিদ্ধান্ত সরকার নিতে পারে না’
১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ, ছাত্রদল-যুবদলের ১০ নেতাকর্মী আটক
১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ, ছাত্রদল-যুবদলের ১০ নেতাকর্মী আটক
আওয়ামী লীগ কার্যালয় দখল করলেন বিএন‌পি নেতারা
আওয়ামী লীগ কার্যালয় দখল করলেন বিএন‌পি নেতারা
ঋণের চাপে ছোট হচ্ছে বাজেট, উন্নয়নে বরাদ্দ ৪ বছরে সর্বনিম্ন
ঋণের চাপে ছোট হচ্ছে বাজেট, উন্নয়নে বরাদ্দ ৪ বছরে সর্বনিম্ন
সর্বশেষসর্বাধিক