X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

জীবন এক শিক্ষা সফরের নাম

হায়দার মোহাম্মদ জিতু
০২ জুলাই ২০২৩, ২১:৩৪আপডেট : ০২ জুলাই ২০২৩, ২১:৩৪

জীবন এক শিক্ষা সফরের নাম। বিচ্ছিন্নভাবে হলেও এখানে প্রতিনিয়ত অভিজ্ঞতার সঞ্চরণ ঘটে। গেলো বছর এমনই এক অভিজ্ঞতা জুটেছে। সচরাচর ঈদের সময়টায় বাড়ি ফেরা মানুষের ঢল নামে। যার কারণে টিকিট পাওয়া কিংবা হঠাৎ করে উঠে যাওয়া উচ্চমূল্য, দুই-ই যাত্রীদের মুশকিলের সম্মুখীন করে। এ কারণে দুঃসাহসিক তরুণ, যুবকেরা মোটরযান নিয়েই বাড়ির পথে রওনা হয়ে যান। তবে এটা ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ। এই টিকিট জটিলতা ও তারুণ্যের অবাধ্য সাহস নিজেকেও একবার এমন পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।

ঢাকা থেকে বাড়ির পথের দীর্ঘ যাত্রায় প্রচণ্ড রোদ ও ধুলাবালিতে ক্লান্তিকর অবস্থা তৈরি হয়। এ জন্য সামান্য প্রশান্তির জন্য পথের ধারে অবস্থিত মসজিদের উঠোনে ছায়ায় দাঁড়াই। পাশে থাকা ওজুখানায় মুখে-চোখে পানি দেই। সেখানেই জোটে অভিজ্ঞতা। মসজিদের বারান্দা পরিচ্ছন্নতাকারী এক ব্যক্তি ওজুখানা ব্যবহারের বিনিময়ে পয়সা দাবি করে বসেন। বিস্মিত হয়ে বলেছি, এটা তো মসজিদ; গণশৌচাগার নয়। এরপর শুরু হয় তার বীতশ্রদ্ধ আচরণ। অথচ সর্বত্রই মসজিদ, মাদ্রাসা কেন্দ্রিক খাদেম, হুজুরবৃন্দের ব্যবহার প্রশংসনীয়।

কিছু দিন পূর্বে বাংলা ট্রিবিউনে শৌচাগার বিষয়ক সিরিজ অনুসন্ধান ও বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছিল। এ জন্যই এই বিষয়টিকে তুলে ধরা। কারণ, প্রয়োজনের সঙ্গে মানুষের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহারটুকুও তুলে ধরা জরুরি।

শৈশবে মক্তবে হুজুরের সুরেলা কণ্ঠের কায়দা পড়া, আমপারা পড়া এবং পরম যত্নে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য শেখানোর মমত্ববোধের বিপরীতে সেই ব্যক্তির পয়সা কেন্দ্রিক আচরণ সম্পূর্ণ বৈপরীত্য সৃষ্টি করে। এ জন্য অবশ্য একশ্রেণির নব্য ধনীরা দায়ী। রাতারাতি পয়সা কামিয়ে নিজেদের পাপ মোচন ও পুণ্যের আশায় অপরিকল্পিতভাবে মসজিদ, মাদ্রাসা গড়ে তুলছেন। দান কিংবা স্থাপনা নির্মাণ শেষে একবার ছবি তোলা, খবর প্রচার শেষ হয়ে গেলে প্রতিষ্ঠাকারী নিরুদ্দেশ। এরপর সেখানে কীভাবে কী চলছে, কোনও খোঁজ নেই।

আধুনিক দেশ গড়তে সুশিক্ষা প্রয়োজন। প্রায় ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে অবশ্যই সঠিকভাবে শেখার ও শেখানোর ওপর নিয়ন্ত্রণ, পর্যবেক্ষণ থাকা জরুরি। তুরস্কের মতো মুসলিম দেশ বিজ্ঞান ও বৈশ্বিক চর্চায় এগিয়েছে। কারণ, তাদের দেশে পর্যবেক্ষক আছেন, নিয়ম আছে, নিয়ন্ত্রণ আছে। যে কেউ চাইলেই মসজিদ স্থাপন করতে পারবেন না, ইমামতিও করতে পারবেন না। ইমাম হতে হলে অবশ্যই ‘ইমাম হাতিপ’ নামক প্রতিষ্ঠান থেকে উত্তীর্ণ হতে হয়।

সম্প্রতি দশ জন নিয়ে বালাটারির একটি মহল্লায় নিরীক্ষা চালিয়ে দেখা যায়, প্রায় অপরিকল্পিত ও বিচ্ছিন্নভাবে মক্তব-মাদ্রাসা, মসজিদ গড়ে উঠছে। এই চিত্র দেশের প্রায় সর্বস্থানে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে লোক দেখানো এসি ব্যবহারের নানা বাহার। অথচ একটা মহল্লায় মানুষের সংখ্যা গণনা করে সেখানে কয়টি মসজিদ প্রয়োজন তার কোনও সঠিক পরিসংখ্যান নেই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার প্রত্যেক উপজেলায় একটি মডেল মসজিদ ও ধর্মীয় সাংস্কৃতিক চর্চাকেন্দ্র নির্মাণ করছেন। এই নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে ভেন্টিলেশন সিস্টেম বা বাতাস চলাচল ব্যবস্থা। এটা থাকলে এসি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ অপচয় বন্ধ হবে। বরং এই বিদ্যুৎ দেশের উৎপাদনমুখী, বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠনে খরচ করার সুযোগ তৈরি হবে। সঙ্গে তুরস্কের মতো এক ধরনের পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করা জরুরি। এতে আচরণ ও প্রজ্ঞার আলোকে নির্বাচিত ইমামবৃন্দ আরও আলো ছড়াতে পারবেন।

বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইসলামের প্রতি আনুগত্যশীল ছিলেন। তবে ধর্ম নিয়ে সুযোগ সন্ধানীদের বিরুদ্ধে ছিলেন অনমনীয়, অনড়। এই প্রেক্ষাপটে ভাবলে স্পষ্ট যে এই ধরনের অপরিকল্পিত মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ আদতে একশ্রেণির মুনাফালোভী ঠিকাদার শ্রেণি ও বিচ্ছিন্নতা তৈরি করছে। যেখানে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের প্রয়োজন জাতীয় ঐক্যের। কারণ, অর্থনৈতিক, ভূ-রাজনীতির ক্ষেত্রে দেশ ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার দিকে এগোচ্ছে।

ধর্ম চর্চাকারী ও ধর্ম ব্যবসায়ীদের পথ ভিন্ন। এ দেশের মানুষ সহজিয়া সংস্কৃতির। আল্লাহর প্রতি আনুগত্যে, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনী, বিদায়ী ভাষণ, পড়ে-শুনে এখনও চোখ ভেজায়। আল্লাহর পেয়ারে মুহাম্মদ (সা.)-এর মানসিক ও স্বাপ্নিক দর্শন পাওয়ার আশায় পুণ্য করেন। কাজেই এই সহজিয়া ও পুণ্যপ্রার্থী মানুষগুলোর বিশ্বাস নিয়ে কেউ যেন ব্যবসা করতে না পারে সেজন্য সজাগ হওয়া জরুরি। নির্বাচনকালীন সময়টায় মানুষকে যেন কেউ কোনও কিছুর ভুল ব্যাখ্যা দিতে না পারে সেদিকেও খেয়াল রাখা জরুরি।

তাহলে পথে খানিক জিরিয়ে নেওয়ার বিনিময়ে অর্থ চাওয়া ও না দেওয়ার বিনিময়ে দুর্ব্যবহারের মতো অভিজ্ঞতাগুলো নাই হয়ে যাবে। পাশাপাশি মক্তব, মাদ্রাসা ও মসজিদগুলোর খেদমতকারীদের পুরো ব্যবস্থাকে শেখার, শিক্ষার ও পরীক্ষার ভেতর নিয়ে আসতে হবে। তাহলে আচরণগত উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ আরও প্রবল হবে। সঙ্গে মক্তব-মাদ্রাসা পরিচালনায় পোস্টার, মাইক টানাটানি, মার্কেটিং ভোটের মতো বিভাজন, বিদ্বেষ বন্ধ করতে হবে। বরং প্রতি মাসে একজন করে নামাজি শুভাকাঙ্ক্ষী মসজিদের খবরাখবর নেবেন, নিজেকে খাদেম হিসেবে বিবেচনা করবেন, এই চল তৈরি করতে হবে।

দেশের ইমামবৃন্দ যথেষ্ট মার্জিত ও জ্ঞানী। এখন প্রয়োজন তাদের হাত ধরে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য নিয়েও আলোচনা, বয়ান হওয়া। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের উদ্যোগে নির্মিত ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক চর্চাকেন্দ্রগুলোকে স্থানীয় পর্যায়ে কাজে লাগানো যেতে পারে। এটা করা গেলে ইসলামি জ্ঞানের সঙ্গে বিজ্ঞানমনস্ক ও স্বনির্ভর জাতি গঠনে উৎপাদনমুখী আচরণ তৈরি হবে। এতে মিলবে আচরণগত প্রশান্তি এবং ইসলামি সম্প্রীতি ও সাম্যের বাংলাদেশ।

লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা

[email protected]

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
দোহায় হামাসের কার্যালয় বন্ধের চিন্তা করছে কাতার
দোহায় হামাসের কার্যালয় বন্ধের চিন্তা করছে কাতার
ভিসা অব্যাহতি ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়ে মিশরের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা
ভিসা অব্যাহতি ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়ে মিশরের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা
বিএনপি নেতাদের কথা মাঠকর্মীরা শোনে না: ওবায়দুল কাদের
বিএনপি নেতাদের কথা মাঠকর্মীরা শোনে না: ওবায়দুল কাদের
কয়েকটি দেশেই আটকে আছে সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার
কয়েকটি দেশেই আটকে আছে সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ