X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

চোখ থাকিতে অন্ধ

আশরাফ সিদ্দিকী বিটু
৩১ জুলাই ২০২৩, ০৮:৪৭আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২৩, ০৮:৪৭

বিএনপি ও তাদের তথাকথিত ৩৩/৩৪ দল(!) যুগপৎভাবে গত কয়েক মাসে বেশ কিছু রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়েছে।বেশ কয়েকটি দফাও দিয়েছে। স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানও বেশ কয়েক দফা দিয়েছিল, যা দেশের গণতন্ত্রে কোনও উপকারে আসেনি। একই পথ ধরে বিএনপিও দফার চক্রে আবদ্ধ হয়ে আছে। কখন কোন দফা দিচ্ছে তা নিয়ে আছে নানা সমালোচনা। তাদের কোনও দফা জনমতকে পক্ষে আনতে পারেনি। তাই একবার ১০ দফা, ২৭ দফা, আরেকবার ৩০ দফাসহ নানা দফা শুধু দিয়েই যাচ্ছে। এসব দফার মূল হলো তারা চায় বর্তমান সরকার পদত্যাগ করুক। কিন্তু এই নির্বাচিত সরকার কার কাছে পদত্যাগ করবে?

এমন পদত্যাগের বিধান তো সংবিধানে নেই। সংবিধান অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ফেরার কোনও সুযোগ নেই। 

সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলছে। কিন্তু অতীতে খালেদা জিয়াই বলেছিল, পাগল ও শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বিতর্কিত করেছিল বিএনপি। নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ২০০২ সালের ২২ মে বিচারপতি এম এ আজিজকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করেছিল। যার আমলে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তৈরি করা হয় এবং ৩০০-এর বেশি ছাত্রদল-শিবির নেতাকর্মীকে নির্বাচন কমিশনে চাকরি দেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলো আন্দোলন করেছিল আজিজের বিরুদ্ধে। 

২০০৭ সালের ২১ জানুয়ারি এমএ আজিজ পদত্যাগ করেন। তবে ২০০৮ সালে এম এ আজিজ বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিএনপি থেকে এমপি নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছিল।   

বিএনপি তাদের দলীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করতে চেয়েছিল, এজন্য বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা বিএনপি সরকার বাড়িয়েছিল। পরে বিএনপি নেত্রীর আজ্ঞাবহ অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দীন আহম্মেদ নিজেই রাষ্ট্রপতি থেকেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হন। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করতে ব্যর্থ হওয়ায় পদত্যাগের পরিপ্রেক্ষিতে সেনা সমর্থিত বিতর্কিত ওয়ান-ইলেভেন সরকার দেশে চেপে বসেছিল, যারা প্রায় ২ বছর সময় নিয়েছিল নির্বাচন অনুষ্ঠানের।

বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাদের দফা না মানলে নাকি রাজপথে সমাধান করবে বিএনপি। রাজপথ বিএনপির একা না।রাজনীতির ময়দানে আন্দোলন-সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয়। বিএনপি জুলাই মাসের কর্মসূচিগুলোতে তাদের নেতাকর্মীদের উসকানি দিচ্ছে। লন্ডন থেকে বার্তা আসছে, ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ নামে। ‘টেক ব্যাক’ মানে মানুষ বুঝে যে তারা (বিএনপি) কাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে চায়, কী ফিরিয়ে আনতে চায়। ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ মানে দেশ আবারও দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, হাওয়া ভবন, একরাতে হাজারো নারী ধর্ষণ, ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ মানে মুচলেকা দিয়ে বিদেশে পলায়ন, বিদেশে টাকা পাচার, বিদ্যুতের নামে খাম্বা বসানো, ‘টেক ব্যাক’ মানে মিস্টার টেন পার্সেন্টের পকেটে লুটপাটের টাকা, ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ মানে আবারও ধর্মীয় সংঘাত, জঙ্গিবাদে মদত, ১০ ট্রাক অস্ত্র, ২১ আগস্ট বোমা হামলা ঘটানো।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকে বিএনপির জন্ম। বিএনপি কখনও সত্য এবং ভুলও স্বীকার করে না।সন্ত্রাস, সহিংসতার পথ তাদের পছন্দ, তারা জনগণ থেকে বিদেশিদের কাছে যায় বেশি (যা বারবার প্রমাণিত)। অতীতের ভুল ও অপকর্ম বিএনপি কখনও স্বীকার করেনি বা সেই ভুল থেকে শিক্ষাও নেয়নি। এখনও সহিংস আচরণ বিএনপির মধ্যে বিরাজ করে, সুযোগ পেলেই তারা সহিংস হয়ে ওঠে। 

১২ জুলাই কর্মসূচি দিয়ে বিদেশিদের সামনে শান্ত স্বাভাবিক আচরণ দেখালেও পরের কর্মসূচিগুলোয় বিএনপি পুনরায় সহিংস আচরণ শুরু করে। 

বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ১৮ ও ১৯ জুলাই, এই দুদিনব্যাপী বিএনপির পদযাত্রায় দেশের ১১টি জেলায় ভাঙচুর, সহিংসতা করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এসব হামলা ভাঙচুর সহিংসতায় ৪৫ জন সাধারণ মানুষ আহত ও ১০০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। ৪০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য আহত হয়। ৪ জন গণমাধ্যম কর্মীকে তারা আহত করে। ১১টি জেলায় ২০টি যানবাহন ও ১৮টি মোটরসাইকেল, ১টি বাইক ও ২টি অটোরিকশা ভাঙচুর করে। 

দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) আবাসিক ভবনে ভাঙচুর, ভেটেরেনারি হাসপাতালের মূল ফটকে ভাঙচুর করে। পাশাপাশি, চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চুর নির্বাচনি কার্যালয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা ভাঙচুর চালিয়েছে এবং খাগড়াছড়িতে পৌর কার্যালয় ভাঙচুর করে বিএনপির নেতাকর্মীরা।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২৯ জুলাই শনিবার সকাল ১১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির নামে ২৫টি যানবাহন ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়, পুলিশের ২০ জন সদস্যকে আহত করে, বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের ৮টির মতো গাড়ি ভাঙচুর করে এবং বিভিন্ন স্থানে ১৫টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। (সূত্র: ২৯ জুলাইয়ের বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ডিএমপি)। 

পাশাপাশি, মাতুয়াইল, উত্তরা, ধোলাইখাল, গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ করে বিএনপির নেতাকর্মীরা।

বিএনপির নেতা গয়েশ্বর রায় ‘গুলিবিদ্ধ’ বলে ফেসবুকে অপপ্রচার চালায় নিপুন রায়। পরে দেখা যায় গয়েশ্বর রায় ডিবি অফিসে খাওয়া দাওয়া করেছেন। এমন গুজব ছড়ানো-অপপ্রচার করা বিএনপির স্বভাবজাত ও রাজনীতির অংশ। 

সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল থেকে বারবার বলা হচ্ছে, শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হবে না। কিন্তু সহিংসতা করলে জানমালের নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর কিছু করলে তখন তো আইনি ব্যবস্থা নিতে হয়।  

এটা পরিষ্কার যে সহিংসতার পথ বেছে নিলে জনসাধারণের জানমাল রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাধ্য। 

বিএনপি সেই পুরাতন স্টাইলে পুলিশের ওপর হামলা চালাচ্ছে, যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। সহিংসতা করে, মানুষ পুড়িয়ে মেরে আর যাহোক দল আওয়ামী লীগ বা বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে দুর্বল করা যাবে না। অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করে, বহু অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে, নানা চড়াই-উতরাইয়ের পর আজকের আওয়ামী লীগ। 

বিএনপি যদি মানুষের জন্য রাজনীতি করে তবে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা কেন, তাদের গাড়ি ভাঙচুর করা কেন? সন্ত্রাসের উসকানি কেন?

নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা না নেওয়া যেকোনও দলের গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে নির্বাচন প্রতিহত করতে চাইলে তার বিরুদ্ধে সরকার, নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাধ্য। কেউ যদি নির্বাচন বানচাল করতে চায় সেজন্য দায় নিতে হবে এবং আইনি পদক্ষেপের সম্মুখীন হতে হবে। 

আগামী নির্বাচন ঘিরে কোনও দল বা ব্যক্তি বা গোষ্ঠী জল ঘোলার চেষ্টা করলে পাল্টা জবাবের জন্য তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।এটা খুব সহজ সমীকরণ। কারণ, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করার অধিকার কারও নেই। 

কর্মসূচির নামে সহিংসতা, যানবাহনে আগুন, পুলিশের ওপর হামলা- এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। এগুলোর জন্য উল্টো জবাব আসবেই। কেউ এসবের জবাব না দিয়ে বসে থাকবে না। 

মানুষের ক্ষতি করে কখনও সমর্থন পাওয়া যাবে না। বিএনপি সেই পুরোনো সহিংসতার পথ বেছে নিচ্ছে। কিন্তু তাদের মনে রাখতে হবে, আগুনসন্ত্রাস করে আওয়ামী লীগকে দমানো যাবে না। 

গত এক মাসে বিএনপির সহিংসতা সেই তাদের ২০১৩-২০১৫ সালের মানুষ পোড়ানো, যানবাহনে ভাঙচুর-আগুন, বাসে-ট্রেনে আগুন- এসব ভয়াল স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে। সহিংসতা করে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না। এটা বিএনপি হয়তো বুঝে কিন্তু মানতে রাজি না। কারণ, তাদের ঢাকা ও লন্ডন কেন্দ্রে সবসময়ই দ্বন্দ্ব। 

আগুনসন্ত্রাস বিএনপিকে কোনোভাবে ক্ষমতায় বসাবে না। এটা বুঝেও না বোঝার মানসিকতা নিয়ে বিএনপি হয়তো ‘চোখ থাকিতে অন্ধ’ সেজে বসে আছে। 

লেখক: কলামিস্ট ও রাজনৈতিক কর্মী।  

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ