X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

নির্ধারিত সময়ে রিটার্ন না দিলে কি করদাতা ক্ষতিগ্রস্ত হন?

মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২০:২২আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২০:২২

বহু প্রত্যাশার আয়কর আইন পাস হলো ২০২৩ সালে। এই আইনের নাম ‘আয়কর আইন ২০২৩ (২০২৩ সালের ১২নং আইন)’। প্রত্যাশার শতভাগ আশা করা যেমন ঠিক নয়, তেমনি উল্টোভাবে কোনও কিছু হবে তাও ঠিক নয়। আমাদের আইন প্রণেতাগণ মনে হয় আইন নিয়ে গবেষণা করার সুযোগ এখন আর তেমন পান না। মূলত যেকোনও আইন পাস হওয়ার আগে এর ভালো দিক, মন্দ দিক নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হওয়া দরকার। আগে হতো, এখন হয় না। ফলে এর আশানুরূপ ফল অর্জন হয় না, বরং বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ে সমাজের সকল স্তরে। এরকম কতিপয় আইনের উদাহরণ আমাদের আছে।

আয়কর আইন একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ আইন। ১৯২২ সালের পর বহুকাল পার হয়েছে। ব্রিটিশের বিদায়ের পর কখনও অফিস আদেশ, কখনও অধ্যাদেশ দিয়ে রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা হয়েছে যুগে যুগে। আইন হয়নি, বিশেষ করে বাংলাদেশে এই আইন প্রথম। আমাদের প্রত্যাশা ছিল বহু দিন পর হলেও একটি রাজস্ববান্ধব ও করদাতার সুরক্ষার আদলে একটি কর ন্যায্যতার আইন পাওয়ার। সময়, যুগ, অর্থনীতি, মুক্তবাজার ব্যবস্থা, আয়-ব্যয় নীতি, সীমাহীন আয়বৈষম্যের সমাজ, দুর্নীতি, সমন্বয়হীনতার যুগ, ন্যায়বিচারের ঘাটতি, শিক্ষা-স্বাস্থ্যে ন্যায্যতার ঘাটতি, দৃশ্যমান উন্নয়ন এবং যে সমাজে বিদেশি ঋণের ভার দিন দিন দৃশ্যমান প্রভাব ফেলছে জনজীবনে, সেখানে আয়কর আইনটি বাস্তবতার নিরিখে চুলচেরা বিশ্লেষণ করার প্রয়োজনীয়তার কথা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি। গতানুগতিক আমলানির্ভর আইনটি সংসদে এলো, পাস হলো। কার্যকরও শুরু হলো। ব্যাপক আলোচনা খোরাক জন্ম দিলো, কিন্তু যা হওয়ার তাই হলো।

ব্যাপক পরিবর্তনের মধ্যে একটি দিক নিয়ে আজকের আলোচনা। একজন স্বাভাবিক করদাতা এই আইনের মধ্যে থেকে যে কঠিন বার্তা পেলেন তা তুলে ধরা দুটি কারণে প্রয়োজন মনে করছি। এক নম্বর কারণ হলো–আইনের নতুন নিয়ম সম্পর্কে করদাতাকে সতর্ক করা। দুই নম্বর কারণ হলো– করদাতাকে আইনি সুরক্ষা দেওয়ার সুপারিশ করা।

আগের আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর ১২৪ ধারায় রিটার্ন ইত্যাদি দাখিলের ব্যর্থতার জরিমানার বিধান ছিল এরূপ, যে ক্ষেত্রে কোনও ব্যক্তি যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া ধারা ৭৫,৭৭, ৮৯(২), ৯১(৩) বা ৯৩(১) এবং/অথবা ধারা ৭৫এ-এর আওতায় প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উইথহোল্ডিং ট্যাক্স-এর প্রয়োজনে বা অধীনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে ব্যর্থ হয়েছেন, সেক্ষেত্রে উপ-কর কমিশনার ওইরূপ ব্যক্তির সর্বশেষ নির্ধারণী আয়ের জন্য আরোপিত করের দশ শতাংশ হারে, যা ন্যূনতম এক হাজার টাকা হবে, জরিমানা করবেন এবং এইরূপ পরিশোধে ব্যর্থতা চলতে থাকলে অনুরূপ প্রতিদিনের জন্য অতিরিক্ত আরও পঞ্চাশ টাকা হারে জরিমানা আরোপিত হতো। তবে শর্ত ছিল– এই রূপ দণ্ড অতিক্রম করবে না-(এ): সেরূপ ব্যক্তি করদাতার ক্ষেত্রে যাঁর আয়ের ওপর ইতোপূর্বে পাঁচ হাজার টাকা কর নির্ধারণ হয়নি; (বি): ইতোপূর্বে আয়কর নির্ধারণী হয়েছিল সেরূপ করদাতা ব্যক্তি হলে তাঁদের ক্ষেত্রে, পূর্ববর্তী কর নির্ধারণীর পঞ্চাশ শতাংশ (৫০%) অথবা এক হাজার টাকা, এই দুইয়ের মধ্যে যেটি অধিক।

এছাড়া উপ-কর কমিশনার যৌক্তিক কারণে করদাতার আবেদন বিবেচনা করে ২ মাস পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করতে পারতেন। এরপরও কোনও করদাতা যদি রিটার্ন দিতে ব্যর্থ হতেন, তাহলে যুগ্ম কর-কমিশনার আরও ২ মাস সময় বৃদ্ধিও বিষয়ে বিবেচনা করতে পারতেন। কিন্তু নতুন আয়কর আইনে এই সবের কোনও সুযোগ রাখা হয়নি।

আয়কর আইন ২০২৩ এই বিধান ধারা ১৭৪ করদিবস পরবর্তী সময়ে রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে কর পরিগণনা: ধারা ১৬৬ অনুযায়ী রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে এরূপ কোনও করদাতা করদিবসের মধ্যে (৩০ নভেম্বর) রিটার্ন দাখিলে ব্যর্থ হলে এই আইনের অন্যান্য বিধানের অধীন উদ্ভূত দায় অক্ষুণ্ন রেখে নিম্নবর্ণিত নিয়মে করদাতার কর নির্ধারণ ও পরিশোধ করতে হবে:

ক) করদাতার কর অব্যাহতি প্রাপ্ত মোট করযোগ্য আয়ের সাথে যোগ হবে। অর্থাৎ তিনি কোনও কর অব্যাহতি দেখাতে পারবেন না। সম্পূর্ণ আয়ের অঙ্ক করযোগ্য আয় হিসেবে গণ্য করে কর নির্ধারণ করতে হবে (ধারা ১৭৪ (ক),(অ)।

খ) করদাতা কোনও প্রকার বিনিয়োগ সুবিধা দাবি করতে পারবেন না (ধারা ৭৬(৫)।

এই বিধান প্রয়োগের ফলে একজন সাধারণ করদাতার ক্ষতির পরিমাণ নিম্নের উদাহরণের মাধ্যমে পরিষ্কার ধারণা করা করা যায়:

ধরুন, মি. মমিন একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি ২০২২-২৩ আয়বর্ষে তার বেতন খাতে ১০,৮০,৯০০ টাকা আয় করেছেন। তিনি ৩,০০,০০০ টাকা অনুমোদিত খাতে বিনিয়োগ করেছে। করদাতা মি. মমিন যদি কর দিবসের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করেন তাহলে তার করদায় কত হবে(?) এবং যদি করদিবসের (৩০ নভেম্বর) ১৫ দিন বা ১ মাস পর রিটার্ন দাখিল করেন তাহলে তার করদায় কত হবে (?)।

নিচের সারণিতে তুলনামূলক চিত্রে উভয় ক্ষেত্রে করদাতার করদায় দেখানো হলো:

উভয় ক্ষেত্রে করদাতার করদায়

উপরের সারণিতে দেখা যায় যে, একজন স্বাভাবিক করদাতা করদিবসের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করলে তিনি নিট কর দিবেন ১০,৪৪২ টাকা। কর দিবসের পরে ১ মাসের মধ্যে পরে রিটার্ন দিলে নিট করদায় ৮৮,০২০ টাকা।

এই দুই অঙ্কের মধ্যে পার্থক্য ব্যাপক। করদাতাকে আইনি সুরক্ষা দেওয়ার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আয়কর আইন ২০২৩ (২০২৩ সালের ১২নং আইন)-এর ৩৪২ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করে নিম্নে বর্ণিত আইনি সুরক্ষা দিতে পারে:

ক) কোনও যৌক্তিক কারণে করদিবসের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে ব্যর্থ হলে কমপক্ষে ১ মাস সময় বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে;

খ) করদাতাকে ন্যূনতম জরিমানা করে বিলম্বে রিটার্ন দাখিলের সুযোগ দিতে পারে;

গ) করদাতা শারীরিকভাবে অসুস্থ বা প্রতিনিধি প্রেরণ করতে অক্ষম হলে করদাতাকে যৌক্তিক সময় পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে;

ঘ) যৌক্তিক কারণ ছাড়া যদি রিটার্ন দাখিল করতে ব্যর্থ হয়, উক্ত করদাতাকে নোটিশ প্রদানপূর্বক বা শুনানির সুযোগ দিয়ে জরিমানা ছাড়া রিটার্ন দাখিলের সুযোগ দেয়া;

ঙ) যতদূর সম্ভব জরিমানার বিধান বিলুপ্ত করা; তখন করদাতা নির্ভয়ে রিটার্ন দাখিল করবেন এবং রাজস্ব বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

এই পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করলে কোনোরূপ প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই এনবিআর রাজস্ব আদায়ে ব্যাপক সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হবে।

লেখক:  কর আইনজীবী

[email protected]

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
টিভিতে আজকের খেলা (২ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২ মে, ২০২৪)
ঘরের মাঠে পিএসজিকে হারিয়ে এগিয়ে থাকলো ডর্টমুন্ড
চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালঘরের মাঠে পিএসজিকে হারিয়ে এগিয়ে থাকলো ডর্টমুন্ড
ইজিবাইক ছিনতাইয়ের সময় স্থানীয়দের পিটুনিতে একজনের মৃত্যু
ইজিবাইক ছিনতাইয়ের সময় স্থানীয়দের পিটুনিতে একজনের মৃত্যু
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ