X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগ কি ‘বিভ্রান্ত’?

লীনা পারভীন
২৮ অক্টোবর ২০২৩, ১০:১১আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ১০:১১

আমি আওয়ামী লীগকে ভালোবাসি কারণ এই দলটি একজন বঙ্গবন্ধু আর একজন শেখ হাসিনা দিয়েছে। আবার আমি অনেকটা অসহায়ের মতো বাধ্য; কারণ আওয়ামী লীগ ছাড়া আমার আবেগকে বুঝতে বা ধারণ করতে পারবে তেমন কোনও রাজনৈতিক শক্তি নেই। আমি নিশ্চিত আমার মতই অবস্থা এদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অনেক মানুষের।

যারাই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করবে তাদের কাছে প্রিয় মাতৃভূমিকে রক্ষা করার আর কোনও বিকল্প জন্ম হয়নি। এখন এই অসহায়ত্ব কি আওয়ামী লীগ ধারণ করে নাকি সুযোগ নিতে চায়?

এই দলটি ক্ষমতায় আছে গত ১৫ বছর ধরে। আমি এর আগের বিচ্ছিন্ন বছরগুলোকে হিসেবে নিচ্ছি না কারণ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসা দলটি এক পালটে যাওয়া নেতার নেতৃত্বে এগিয়েছে। বলা হয়, আওয়ামী লীগ হারলে বা থেমে গেলে গোটা বাংলাদেশ হেরে যায়। এর প্রমাণ আমরা পেয়েছিলাম ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকেই। তীব্র বাসনায় এগিয়ে চলার কথা যে দেশটির সেই দেশ তীব্র বেগে পিছিয়েছে অন্ধকারের দিকে। সেই অন্ধকার থেকে বলা যায় একদম একা হাতে দেশটাকে টেনে এনে শুধু রাজপথে নয়, বিশ্বের পথে এনে দাঁড় করিয়েছে আজকের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

আর এই একটি কারণেই আমার মতো প্রগতিমনা যারা নাগরিক আছেন তারা শেখ হাসিনাকে নিজেদের নেতা হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছেন। একজন শেখ হাসিনার চোখ দিয়ে আজকে আমরা স্বপ্ন দেখছি বিশ্বজয়ের। স্বপ্ন দেখছি অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজের পরিচয়কে পোক্ত করার। বিশ্ব নেতৃত্বের তালিকায় এখন বাংলাদেশের শেখ হাসিনার নামও পাওয়া যায়। এ এক পরম পাওয়া আমাদের জন্য।

কিন্তু মাঝেমাঝেই সন্দেহ জাগে, আওয়ামী লীগের বাকি নেতারা কি আমাদের এই অন্ধ আবেগের সুবিধা বা ফায়দা নিতে চাইছে? নাকি নিজের অবস্থানকে সন্তোষজনক করার অপচেষ্টা হিসেবে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত রাখতে চাইছে?

দল হিসেবে আওয়ামী লীগের পরিচয় ছিল অসাম্প্রদায়িক। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু নেতার কর্মকাণ্ড আমাদের কপালে চিন্তার বলিরেখা ফেলে দিচ্ছে।

প্রতিবছর দুর্গাপূজা এলেই দেশে একধরনের এলার্ম বাজতে থাকে। হিন্দুরা বিবেকের তাড়নায় পড়ে যায়। তাদের প্রধান উৎসব দুর্গাপূজা আর এই উৎসব মানেই প্রাণখুলে, মন খুলে নিজেদের মতো আনন্দে ভেসে যাওয়া। কিন্তু যেভাবে আমাদের প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা নিয়ম-কানুন বেঁধে দিতে চাইছেন তাতে করে এই “বেচারা” হিন্দুসমাজ বিব্রত হয়ে পড়ছে।

একদিকে আমরা বলছি যার যার ধর্ম সে তার মত করে পালন করবে। ধর্ম যার যার উৎসব সবার। আবার আরেকদিকে সরকার দলীয় এমপি, মন্ত্রীরা স্থানীয় পূজা ব্যবস্থাপনায় নাক গলাচ্ছেন। হিন্দুরা তাদের উৎসব কেমন করে পালন করবে, কী খাবে, কী পরবে কতটা আনন্দ করবে আর কী করা যাবে না– এমন একটা নিষেধাজ্ঞার ফর্দ ঝুলিয়ে দিচ্ছেন যে যার মতো করে।

কেন? একবার ভেবে দেখেনতো যে ভিন্ন ধর্মের লোকেরা এসে মুসলমানদের ঈদ উৎসবের ফর্দ ঠিক করে দিচ্ছে তাহলে কি মানবেন কেউ? আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি সেই হিন্দু বা ভিন্ন ধর্মের বক্তাকে অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে মামলা খেতে হবে, জেলে যেতে হবে এমনকি জীবনও দিতে হতে পারে।

কুমিল্লার সাংসদ যা বলেছেন সেটা কি যৌক্তিক কোনও বক্তব্য হতে পারে? হিন্দুদের কি অনুভূতি নেই?

প্রশ্ন হচ্ছে, এসব কেন করছে সরকার দলীয় এমপি বা অনুসারীরা? আর যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কেন নেওয়া হচ্ছে না? না দলীয়, না প্রশাসনিক, কোনও পদক্ষেপই নেওয়া হয় না কখনও। এটা কি দল হিসেবে আওয়ামী লীগের দুর্বলতা নয়?

এই দেশ স্বাধীনের পেছনে কি হিন্দুদের কোনও অবদান ছিল না? আমি ইতিহাসিবিদ নই কিন্তু যতটা পড়েছি বা জেনেছি তাতে এটা পরিষ্কার যে পাকিস্তানি বা রাজাকারদের হাতে হিন্দুরাই সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত ও ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ‘মাইনরিটি’ কনসেপ্ট পাকিস্তানি আমলে ছিল কিন্তু একটা স্বাধীন রাষ্ট্রেতো সবাই সমান অধিকারভোগী নাগরিক হবার কথা। সেখানে ধর্মের ভিত্তিতে কেন মেজরিটি বা মাইনরিটি হিসেব করা হবে?

ধর্ম প্রতিটি মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত চর্চা ও বিশ্বাসের বিষয়। অথচ সেখানে কেবলমাত্র সংখ্যায় “মেজরিটি” হওয়ার কারণে নিজেদের বিশ্বাস ও ভালো লাগাকে চাপিয়ে দিতে চাইছে।

এই যে “মেজরিটি” হওয়ার ক্ষমতার দম্ভ সেই পাল্লায়তো আমরা আওয়ামী লীগকে মাপি না কখনও। আমরাতো সেই আওয়ামী লীগকে সমর্থনও করি না। আজকের আওয়ামী লীগ কোথায় যেন খেই হারিয়ে বিপথে হাঁটতে চাইছে। তবে কি দল হিসেবে আওয়ামী লীগ নিজেদেরকেও গুছিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে? যে রাজনৈতিক আদর্শকে বুকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু এই দেশকে স্বাধীন করে রেখে গিয়েছেন আজকের আওয়ামী লীগ কি সেই আদর্শকে অটল রাখতে গিয়ে কোথাও সন্দেহপ্রবণ হয়ে পড়ছে?

আমরাতো এই আওয়ামী লীগকে চিনি না। আমরা চাই আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথেই হাঁটবে। আমরা চাই আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার হাত ধরে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করবে।

এই ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের মধ্যে অসংখ্য যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি হবার কথা ছিল। কিন্তু যাদের এখন আমরা দেখছি, যারা দলের স্পোকসপার্সন হিসেবে সামনে আসছেন তাদের একেকজনের চিন্তার ধরন আমাদেরকে প্রায়ই শঙ্কিত করে দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য শুনলে মনেই হয় না তিনি একজন ঝানু রাজনীতিবিদ। ওনার কথাবার্তা একদিকে যেমন হাস্যস্পদ বার্তা দেয় আবার তেমনি গুরুত্বপূর্ণ দলের অগুরুত্বপূর্ণ নেতার ইঙ্গতিও দেয় বটে। যেসব নেতারা সাম্প্রদায়িক বক্তব্য দিয়ে দলকে বিব্রত করছে তাদের বিরুদ্ধে দলীয় পদক্ষেপ নিতে কি দল ভয় পাচ্ছে? কেন পাচ্ছে? তারা কি আসলেই দলকে ধারণ করছে? বিষয়টা আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে কতটা ভাবনার জানি না তবে আমাদের মতো অসহায়দের কাছে খুব ভয়ের বার্তা দিচ্ছে।

 

লেখক: কলামিস্ট

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ভুটানে আবার কোচ হয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের বিদ্যুৎ
ভুটানে আবার কোচ হয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের বিদ্যুৎ
ধর্ষণ মামলা: প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত জামিন পেলেন মুশতাক-ফাওজিয়া
ধর্ষণ মামলা: প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত জামিন পেলেন মুশতাক-ফাওজিয়া
সৌদি আরব পৌঁছেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সৌদি আরব পৌঁছেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ