X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

বন্ধনীতে বন্দি সাধারণ মানুষ

তুষার আবদুল্লাহ
০৭ মে ২০১৬, ১২:৫৮আপডেট : ০৭ মে ২০১৬, ১৩:০৪

Tushar Abdullahঅপলক চোখে আজ অনেকটা সময় জাতীয় সংসদ ভবনের দিকে তাকিয়ে রইলাম। এই মহানগরে বড় হয়েছি সংসদ ভবনকে আঁকড়ে ধরেই বলা যায়। নানা বাড়ির ছাদ আর সংসদ ভবনের দূরত্ব ছিল বিশাল বপুর মানিক মিঞা এভিনিউর রাস্তাটি। আমি মহাসড়ক বলতে প্রথম এই রাস্তাটিকেই ভেবেছিলাম। পথে কিভাবে গাড়ি ভেসে চলে, সেটা এই সড়কেই দেখা।
রাজনৈতিক কূট-কৌশল হিসেবে এর বিশালতাকে দ্বি-খণ্ডিত করা হয়। সাধারণরা যে রাজনৈতিক, সামাজিকভাবে খণ্ডে-খণ্ডে বিভক্ত হয়ে পড়ছিলাম, তার প্রথম বহিঃপ্রকাশ মানিক মিঞা এভিনিউ সড়কটিকে দ্বি-খণ্ডিত করা। যৌথজমিনে দেয়াল তুলে দেওয়ার মতো। নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য সংসদ ভবন চত্বর বা মাঠের উদারতার জুড়ি আর এই মহানগরীতে আছে কয়টি? স্কুল বেলা, কলেজ বেলা, বিশ্ববিদ্যালয় বেলা, কাজের বেলা সব সময়েই বন্ধু ও পরিবার নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি সংসদ ভবন চত্বর। কাজের বেলাতে এসে মূল ফটকের ভেতরে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। বিস্মিত হয়েছি স্থাপত্য নকশা দেখে। কিন্তু বাইরের উদার সবুজের আকর্ষণ তার চেয়েও বেশি। ঢাকা শহরে সপরিবারে এমন নির্মল বাতাস গ্রহণের সুযোগ আর নেই। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সংসদ ভবন চত্বরে সাধারণের প্রবেশ সংরক্ষিত করা হয়েছে। আগে ইস্টার সানডেতে ভোরে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় প্রার্থনা হতো, এখন তাতেও বাধা। সংসদ ভবনকে চারদিক থেকে গ্রিল দিয়ে আটকে ফেলা হচ্ছে। জানি না সংসদ ভবনের এই বন্দি হয়ে যাওয়া দেখতে পেয়েই প্রতিবাদ জানাতে এবারের সোনালী আর স্বর্ণচূড়া একটু ফ্যাকাশে হয়ে ফুটলো কিনা!

আরও পড়তে পারেন: তুলসী গাছে আপত্তি, পরে থানায়
জাতীয় সংসদ ভবন চত্বর এবং মানিক মিঞা এভিনিউকে উদাহরণ হিসেবে সামনে রেখেই সাধারণরা বলতে পারি- সামাজিকভাবে সত্যি সাধারণরা বন্ধনীতে আটকা পড়ে যাচ্ছি। অজুহাত সংশয়ের, অজুহাত নিরাপত্তাহীনতার। সাধারণরা কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছি না। অপরের বিষয়ে উদার হতে পারছি না। অপরের চিন্তাকে দখল বা গুড়িয়ে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। সাধারণরা অপরকে জানতেও চাচ্ছি না। অপরের প্রতি আমাদের কৌতুহল আছে। কিন্তু সেই কৌতুহলকে উঁকি দেওয়ার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। যে কারণে অপরের কৌতুহল আমাদের ভেতর এক প্রকার সংশয় ও অবিশ্বাসের ঘুনপোকা বসতি গড়েছে। ফলে সাধারণরা খণ্ড-খণ্ড দ্বীপে বাস করতে শুরু করেছি। প্রত্যেকে যেন অন্যের থেকে বিযুক্ত থাকি সেজন্য মজবুত বেড়া তৈরি করেছি। কারণ বিযুক্ত থাকতে পারাই এখন নিরাপদ থাকার মূল শর্ত।

আরও পড়তে পারেন: রিজার্ভ চুরি: হ্যাকারদের ‘প্রলুব্ধকারী বাংলাদেশি’কে শনাক্ত করার চেষ্টা
এই বিযুক্ত থাকার নেশা একদিনে সংক্রমিত হয়নি। সাধারণ মানুষকে রকমারি জুজুর ভয় দেখানো হয়েছে। পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে যারা ক্ষমতার সাম্রাজ্য গড়তে চেয়েছে, তারা সাধারণকে বিভিন্ন ছলে এই জুজুর ভয় দেখিয়েছে। সাধারণ মানুষ যত আঁতকে উঠেছে, ততই তাদের ভয় দেখানোর মাত্রা বেড়ে গেছে। সাধারণরা যতই কুঁকড়ে থাকবে, তাদের সাম্রাজ্য গড়া ও উপভোগ আরও সহজ হবে। এদিকে প্রান্তিক মানুষ, অর্থাৎ যারা ক্ষমতা বলয়ের বাইরে তারা কিন্তু ভয় পেতে পেতে একে অপরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। গিয়েছেও অনেকটা। একজনের থেকে অপরের অবস্থান দূর দ্বীপে। সাধারণ মানুষেরা শুধু ভয়েই নয় রয়েছে আতঙ্কেও। কারণ সাধারণ মানুষ যদি একজোট থাকে, জোটবদ্ধ হয় তাহলে ওদের ক্ষমতার বলয়ে চির ধরবে। ক্ষমতায় শ্রেণির প্রাধান্য ও সাম্রাজ্যবাদীতা থাকবে না। তাই সাধারণ মানুষকে ভয়, আতঙ্কের বন্ধনীতে বেঁধে রাখতে তারা মরিয়া। এজন্য যত ফন্দি আঁটা যায়, সেই কাজ তারা করে যাচ্ছে। নিজস্ব বা দেশীয় বুদ্ধিতে না কুলালে, বুদ্ধি সাধারণ দানি করতেও দেখছি। এ কথা সাধারণ মানুষকে মনে রাখতে হবে, দৃশ্যত তাদের মধ্যেও দূরত্ব এবং বিভক্তি লক্ষ্য করা যায়। সেই বিভক্তিতে সাধারণ মানুষকে যুক্ত করার ভণিতাও আছে। কিন্তু পর্দার আড়ালের সত্য হচ্ছে ক্ষমতার বলয়ের সকলের লক্ষ্য একটাই- সাধারণ মানুষ ভীত থাকুক, আতঙ্কিত থাকুক, তাদের নিজেদের মধ্যে সংশয়ের দেয়াল আরও উঁচু হোক। এবং এই শ্রেণি স্বেচ্ছায় গ্রহণ করুক ‘বন্ধনী’র বন্দিত্ব!

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
কম শক্তির আবাহনীর বিপক্ষেও জিততে পারেনি মোহামেডান
কম শক্তির আবাহনীর বিপক্ষেও জিততে পারেনি মোহামেডান
নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নসহ সাত দফা দাবি সরকারি কর্মচারীদের
নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নসহ সাত দফা দাবি সরকারি কর্মচারীদের
ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে নিহত ৮ বাংলাদেশির মরদেহ হস্তান্তর
ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে নিহত ৮ বাংলাদেশির মরদেহ হস্তান্তর
গাজীপুরে দুর্ঘটনার পর ট্রেন চলাচল শুরু
গাজীপুরে দুর্ঘটনার পর ট্রেন চলাচল শুরু
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ