X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

মৃত্যু হোক অশুভ চিন্তার

তুষার আবদুল্লাহ
১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৩:৪৭আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৬:৫৩

তুষার আবদুল্লাহ কাজের বাইরে দিনের সিংহভাগ সময় কাটে শিশু-কিশোর-তরুণদের সঙ্গে। শুক্রবার তেমনই কাটলো। সকাল থেকে রাত, একাধিক দলের সঙ্গে আড্ডা হলো। সকাল থেকেই যেমন ফেসবুকে ভাইরাল–দৈনিক সংগ্রামে রাজাকার আবদুল কাদের মোল্লাকে শহীদ বলে সম্বোধন করা হয়েছে। কেন তাকে শহীদ বলা হলো–এ নিয়ে প্রশ্ন এসেছে স্কুলপড়ুয়াদের কাছ থেকেও। শনিবার যখন দেশ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানাবে, তার আগের দিন এমন শিরোনামে খবর প্রকাশের সাহস তারা পেলো কী করে? ওদের জানালাম, পত্রিকাটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিশ্বাসীদের দ্বারা পরিচালিত নয়। পত্রিকাটি যে গোষ্ঠীর, আব্দুল কাদের মোল্লা তাদের নেতা। আমি মুক্তিযুদ্ধের সময় মিরপুরে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে কাদের মোল্লার কী অবস্থান ছিল তা জানালাম ওদের। মুক্তিযাদ্ধা ও কবি কাজী রোজীর কাছ থেকে তাঁর বান্ধবী মেহেরুন্নেসা মেরীকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা যতটুকু জেনেছিলাম, ওদের সেই কাহিনি শোনালাম। এবং ওই ঘটনার সঙ্গে কাদের মোল্লার সংযুক্ত থাকার বিষয়ে কাজী রোজীর কাছে যা শুনেছি, বললাম ওদের। একই সঙ্গে ওদের স্মরণ করিয়ে দেই, কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিকে কেন্দ্র করে সারাদেশে যেভাবে গণজাগরণ তৈরি হয়েছিল। ওদের স্মৃতিতেও গণজাগরণ এখনও তরতাজা। ওরা জানতে চাইলো, এমন একটা গণজাগরণ, মানবতাবিরোধীদের বিচারের পরেও, সংগ্রামের মতো একটি পত্রিকা টিকে আছে কী করে? কিংবা গণমাধ্যম হিসেবে রয়ে গেলেও ওরা এমনভাবে খবর পরিবেশনের সাহস দেখায় কী করে? আমি শুধু বললাম বিষয়টি রাষ্ট্রের।

দুপুরে দেখা আরেক দলের সঙ্গে। তাদের প্রশ্ন বুদ্ধিজীবী হত্যা মামলার রায়ের পরেও দণ্ডপ্রাপ্তদের যারা বিদেশে পালিয়ে আছে, তাদের কেন দেশে আনা হচ্ছে না? বললাম, তারা যেসব দেশে আছে, সেখানে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার রেওয়াজ নেই। তাই আইনগত জটিলতা আছে। ওরা বললো জটিলতা থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু কূটনৈতিক তৎপরতা তো চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা দূতাবাসগুলো এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছে–এমন খবরতো পাই না। নিজেও ভেবে দেখলাম, ওরাতো ঠিকই বলেছে, তেমন আলোচনা তো শুনি না।

বিজয়ের পঞ্চাশ বছর উদযাপনের জন্য যখন তৈরি হচ্ছে দেশ, তখন তো শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচারের বকেয়া কাজটুকু সেরে ফেলা প্রয়োজন।

বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে দণ্ডিত ফেরারি চৌধুরী মঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান পেশায় সাংবাদিক ছিলেন। এই তথ্য তরুণ প্রজন্মের সাংবাদিকদেরও লজ্জিত করে।

সন্ধ্যায় পাড়ায় ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল কয়েকজন তরুণের সঙ্গে। ওদের আয়োজন চলছিল ভোরে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে যাওয়ার। তরুণদের একজন বললো, দেখুন আমরা কয়জন বুদ্ধিজীবীর কাজের কথা জানি? হাতেগোনা কয়েকজন শহীদ বুদ্ধিজীবীর লেখা এবং তাদের পেশার কথা জানি। বাকিদের কাজ নিয়ে আমাদের স্পষ্ট ধারণা নেই। যারা শিক্ষক বা লেখক, সাংবাদিক ছিলেন, তাদের কয়জনের লেখা বা কাজ সাধারণের সামনে আনা হয়েছে। অন্তর্ভুক্ত হয়েছে পাঠ্যপুস্তকে? অনেকের রচনা বা গ্রন্থ তো কবেই বাজার থেকে হারিয়ে গেছে, নতুন করে ছাপার উদ্যোগ নেই, সরকারি, বেসরকারি কোনও ব্যবস্থাপনাতেই। ঢাকা ছাড়াও সারাদেশে যে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে, আটচল্লিশ বছরে তাদের কতজনকে আমরা পূর্ণাঙ্গভাবে জেনেছি? রাস্তা,পাঠাগার বা কোনও স্থাপনার নামকরণ করলেই, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়ে গেলো–তা বলা যাবে না। দেখলাম তরুণরা ঠিকই ভাবছে। ওরা ঠিক পথেই তো আছে। ওরা যেমন বলছে, একাত্তরে জীবন উৎসর্গ করা বুদ্ধিজীবীদের পরম্পরা উত্তরসূরিরা ধরে রাখতে পারেনি। ফলে শুভবুদ্ধির পুনঃআত্মপ্রকাশ আর ঘটেনি।

ওদের আড্ডা থেকে ফিরতে ফিরতে দেখলাম দৈনিক সংগ্রামের প্রবীণ সম্পাদক স্বীকার করেছেন, আবদুল কাদের মোল্লার নামের আগে শহীদ বিশেষণ ব্যবহার করাটা আইনসঙ্গত হয়নি। তিনি জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। বলেছেন, ওই শব্দটি তারা আর লিখবেন না। সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক বুদ্ধিজীবী দিবসের প্রভাত বেলায়।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
তিন লাল কার্ডের ম্যাচ নিয়ে কে কী বললেন!
তিন লাল কার্ডের ম্যাচ নিয়ে কে কী বললেন!
প্রথম ধাপে ভোটের হার ৬০ শতাংশ, সর্বোচ্চ পশ্চিমবঙ্গে
লোকসভা নির্বাচনপ্রথম ধাপে ভোটের হার ৬০ শতাংশ, সর্বোচ্চ পশ্চিমবঙ্গে
ইসরায়েলি বিমান কীভাবে এলো বাংলাদেশে, প্রশ্ন নুরের
ইসরায়েলি বিমান কীভাবে এলো বাংলাদেশে, প্রশ্ন নুরের
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ