X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

খারকিভ বা কিয়েভ দখলের আশা কি ছেড়ে দিয়েছেন পুতিন?

বিদেশ ডেস্ক
২৯ মে ২০২২, ১৭:৩১আপডেট : ২৯ মে ২০২২, ১৭:৩১

ইউক্রেনে তিন মাস ধরে সর্বাত্মক যুদ্ধ পরিচালনা করছে রাশিয়া। শুরুতে রুশ পদাতিক বাহিনী বেশ কয়েকটি দিক থেকে আক্রমণ করে এবং দেশটির বিভিন্ন স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, বাদ যায়নি পোল্যান্ডের সীমান্তবর্তী পশ্চিমাঞ্চলও। তবে এক মাসের মাথাতেই রাশিয়া নিজেদের আক্রমণের সামরিক মনোযোগ কিয়েভ থেকে সরিয়ে কেন্দ্রীভুত করে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস অঞ্চলে: গত আট বছর ধরে অঞ্চলটিতে নজর রয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের।

সামরিক বিশ্লেষক মাইকেল কফম্যান গত সপ্তাহে টুইটারে লিখেছেন, এই যুদ্ধের সামগ্রিক সামরিক ভারসাম্য এখনও ইউক্রেনের পক্ষে। বিশেষ করে সেনা ও পশ্চিমা অত্যাধুনিক সামরিক সহযোগিতার ফলে… কিন্তু স্থানীয়ভাবে ডনবাস অঞ্চলের ভারসাম্য ভিন্ন ঘটনা।

ডনবাসে পুতিন পূর্ণাঙ্গ ও কত দ্রুত নিজের লক্ষ্য অর্জন করে সেটির ওপর নির্ভর করবে ইউক্রেনের অন্যান্য অঞ্চল নিয়ে রুশ পরিকল্পনা কেমন হবে। এখানে ক্ষয়ক্ষতিও এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।

 

ডনবাস

ডনবাসে ইউক্রেনীয় সেনাদের ঘিরে ফেলার পরিকল্পনা পরিত্যাগ করেছে রাশিয়া। এর বদলে তারা ছোট ছোট স্থানে ইউক্রেনীয়দের ঘিরে ফেলছে। এতে করে ইউক্রেনীয় সেনারা রসদ সরবরাহ ও সেনা শক্তি বৃদ্ধি করা বিঘ্নিত হচ্ছে।

গত সপ্তাহে রুশ সেনাদের লক্ষ্য ছিল সিয়েভিয়েরোদনেস্ক শহর। স্থানীয় গভর্নর সেরহি হাইদাই জানান,  অন্তত ১০ হাজার সেনা ও আড়াই হাজার সরঞ্জাম নিয়ে শহরে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। খবর পাওয়া গেছে, কয়েকদিন নির্মম বোমা বর্ষণের পর রুশ সেনারা ইতোমধ্যে শহরতলীয় একটি হোটেলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।  

রাশিয়া যদি সিয়েভিয়েরোদনেস্কের দখল নিতে পারে তাহলে তারা পুরো লুহানস্ক অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে এবং দনেস্ক অঞ্চলের যেসব ভূখণ্ড এখনও তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই সেগুলোতে মনোযোগ দিতে পারবে।

কফম্যান লিখেছেন, আমার মনে হয় না রাশিয়ার আক্রমণ থমকে আছে। আর যখন অগ্রগতি ধীর গতির তখন তা চূড়ান্ত মুহূর্তে কখন পৌঁছাবে তা ধারণা করার মতো ভালো কোনও উপায় নেই।

দনেস্কতে রুশপন্থীদের মাল্টিপল রকেট লঞ্চার সিস্টেম

 

দখলকৃত ভূখণ্ড

রাশিয়া যে ইউক্রেনের কিছু ভূখণ্ডকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা করছে এই বিষয়ে এখন আরও সংশয় নেই। যেমনটি ২০১৪ সালে তারা করেছিল। ওই সময়েও ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের দখলকৃত ভূখণ্ডকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে না নিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রশাসন বসায়। এখন খেরসন ও জাপোরিজ্জিয়া প্রদেশের কিছু অংশ রাশিয়ায় অঙ্গীভুত করার আলোচনা শোনা যাচ্ছে। আক্রমণের প্রথম কয়েকদিনের মাথায় এই এলাকা দখল করে রুশ সেনারা।

বোমাবর্ষণে ধ্বংসস্তুপ বানিয়ে মারিউপোল শহরের দখল নিয়েছে রাশিয়া। ডনবাসের আরও কয়েকটি অঞ্চল শিগগিরই দখল করতে পারে তারা। তবে খেরসন ও জাপোরিজ্জিয়ার অঞ্চলগুলো প্রায় বিনা লড়াইয়ে দখল করা হয়েছে। ফলে এই অঞ্চলগুলোতে ভিন্নমতধারীদের নির্মূল এবং পুরো নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করতে পেরেছে রাশিয়া।

ইউক্রেনপন্থী মনোভাবের বিরুদ্ধে জোরদার অভিযান দেখা গেছে অঞ্চলগুলোতে। খবর পাওয়া গেছে, এসব স্থানে রুশ মুদ্রা রুবল ও মস্কোর টাইমস জোন প্রবর্তন করা হয়েছে। শিক্ষকরা রুশ পাঠ্যক্রমে যাতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান করতে সেজন্য তাদের পুনরায় প্রশিক্ষণ দেওয়ার ঘোষণা এসেছে। ধারাবাহিক বেশ কয়েকটি ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। এগুলোতে স্থানীয়রা ঘোষণা দিয়েছেন তারা নাৎসিমুক্তকরণের মধ্য দিয়ে গেছেন এবং ইউক্রেনকে আর সমর্থন করেন না।

সম্ভাব্য শান্তিচুক্তির ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব ভূখণ্ডকে রাশিয়ায় একীভূত করার বড় ধরনের প্রভাব থাকবে। ইউক্রেন এসব ভূখণ্ড হারানো মেনে নেবে না। কিন্তু যদি পাল্টা হামলা চালায় তাহলে রাশিয়া দাবি করবে, ইউক্রেন রুশ ভূখণ্ডে হামলা করছে।

 

কিয়েভ

ইউক্রেনের রাজধানীতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। মাঝে মধ্যে বিমান হামলার সাইরেন ও রাজপথে অস্ত্রধারী মানুষ যুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দেয়। এছাড়া ক্যাফেগুলো ব্যস্ত, ওপেরা চালু হয়েছে এবং কারফিউ পিছিয়ে রাত ১১টার পর থেকে জারি রয়েছে। এপ্রিলের শুরুতে রুশ সেনা প্রত্যাহারের পর কোনও কামানের হুমকি নেই, শহরতলী থেকে কোনও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে না। যেমনটি ছিল যুদ্ধের প্রথম কয়েক সপ্তাহ।

তবে রুশ ভাষার সংবাদমাধ্যম মেদুজা গত সপ্তাহে ক্রেমলিন সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে, পুতিন এখনও কিয়েভ দখলের আশা ছেড়ে দেননি এবং ডনবাসের লড়াই শেষ হলে হয়ত আরেকটি আক্রমণ হতে পারে।

পূর্ব ইউক্রেনে রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী সেনা

 

খারকিভ

কিয়েভের মতোই যুদ্ধের শুরুতে ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভ দখলের পরিকল্পনা করেছিল রাশিয়া। কিন্তু তারা অপ্রত্যাশিত দৃঢ় প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়। তাদের অগ্রগতি থমকে যায় শহরতলীতে এবং পরে শহরের সীমানায় অবস্থান নিতে বাধ্য হয় তারা।

সম্প্রতি ইউক্রেনীয় সেনারা রুশদের আরেকটু পিছু হটতে বাধ্য করেছে। কিন্তু কিয়েভের মতো রুশ সেনারা একেবারে নিজেদের প্রত্যাহার করেনি। শহরে আক্রমণ করার মতো দূরত্বে এখনও অবস্থান করছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য অনুসারে, গত দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রথমবার বৃহস্পতিবার শহরের ভেতরে গোলাবর্ষণ করেছে রুশ বাহিনী।

সামরিক কমান্ডাররা বলছেন, খারকিভে রুশ সেনাদের নতুন অগ্রগতির কোনও ইঙ্গিত নেই। কিন্তু রুশ সেনারা যেখানে অবস্থান করছে সেখানে দৃঢ়ভাবে রয়েছে। সীমান্ত বা অন্যত্র সরে যাওয়ার তাদের কোনও পরিকল্পনা নেই।

স্থানীয় ইউক্রেনীয় এক কমান্ডার গত সপ্তাহে বলেছেন, রুশরা কিছু একটা পরিকল্পনা করছে। যখন কিছু ঘটবে আমরা কেবল তখন জানতে পারব।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

/এএ/
টাইমলাইন: ইউক্রেন সংকট
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:৩০
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:০২
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:০৪
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:০১
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:০৪
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২৩:০১
সম্পর্কিত
রুশ গুপ্তচর সন্দেহে জার্মানিতে গ্রেফতার ২
রাশিয়া জিতে গেলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে: ইউক্রেন
ক্রিমিয়ায় রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসের দাবি ইউক্রেনের
সর্বশেষ খবর
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
দুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টিদুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন