আকস্মিক ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কুমিল্লা, ফেনী ও নোয়াখালীসহ কয়েকটি জেলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এমন অবস্থায় বন্যাকবলিত এলাকায় সহযোগিতার জন্য ত্রাণ সংগ্রহের কাজ করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আহ্বানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে একের পর এক খাদ্য সহায়তা আসছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি)। টিএসটি প্রাঙ্গণে চলছে ত্রাণের বিশাল কর্মযজ্ঞ।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, টিএসসির প্রধান ফটকে মাইকে একটু পর পর ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে, ‘চলাচলের রাস্তা বন্ধ করবেন না, শৃঙ্খলা বজায় রাখুন’। আর কিছুক্ষণ পর পর প্রাইভেটকার, ট্রাক, রিকশা, এমনকি ঠেলাগাড়ি ভর্তি বন্যার্তদের জন্য শুকনো খাবার, খেজুর এবং পানি নিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ।
প্রবেশপথের পাশে ‘সারা দেশের বন্যায় আক্রান্তদের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে গণ-ত্রাণ সংগ্রহ’ বুথ বসানো হয়েছে। এসব ত্রাণ রাখা হচ্ছে টিএসসির অভ্যন্তরীণ ক্রীড়াকক্ষে ও ক্যাফেটেরিয়াসহ আশপাশে। সেখানে বিস্কুট, চিড়া-মুড়িসহ প্রতিটি খাবার আলাদা প্যাকেজিং করা হচ্ছে। এগুলো পৌঁছানো হবে বন্যাকবলিত এলাকায়। অনেকে নগদ অর্থ সহায়তাও করছেন। সেসব টাকাও হিসাব করে সংরক্ষণ করে রাখা হচ্ছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বুথের স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকাল থেকে ত্রাণ সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু হয়। আবার শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ত্রাণ সংগ্রহ শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এর আগে বুধবার রাতে বন্যার্তদের সহযোগিতায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে ‘গণ-ত্রাণ সংগ্রহের’ ঘোষণা দেন দুই সমন্বয়ক। বুধবার (২১ আগস্ট) রাতে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার জানান, ত্রাণ সহায়তায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ফান্ড উত্তোলনের জন্য বিকাশ, রকেট বা নগদের মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট চালু করা হয়েছে। ০১৮৮৬৯৬৯৮৫৯ নম্বরে সব মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (রকেট লেনদেনের জন্য +৭) ব্যবহার করে অর্থ সহায়তা দেওয়া যাবে। একই আহ্বান জানান আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বুথের স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, বৃহস্পতিবার সারা দিনে নগদ অর্থ সংগ্রহ হয়েছে ১৪ লাখ ৬০ হাজার ১৭৩ টাকা। এবং অনলাইন সংগ্রহ হয় প্রায় ১৬ লাখ টাকা। আর শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত বুথে ১৪ লাখ টাকা জমা পড়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, শুকনো খাবার নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে টিএসসিতে আসছেন শিশু, শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সের লোকজন। মুড়ি, চিড়া, বিস্কুট, স্যালাইন, খেজুরসহ সামর্থ্য অনুযায়ী শুকনো খাবার জমা দিচ্ছেন তারা। কেউ স্যানিটারি ন্যাপকিন দিচ্ছেন। আবার কেউ নগদ অর্থ দিচ্ছেন।
টিএসসিতে ত্রাণ সংগ্রহ কেন্দ্রে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, বন্যায় দুর্গতদের জন্য প্রথমে উদ্ধার কার্যক্রম করা দরকার। শিক্ষার্থীরা অনভিজ্ঞ। আমি ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লাসহ বন্যাকবলিত জেলাগুলোর ডিসিদের বলতে চাই, আপনারা আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসুন।
হাসনাত বলেন, ‘বাংলাদেশ পুনর্গঠন চলছে, এ মুহূর্তে বাঁধ খুলে দিয়ে ভারত সংকট তৈরি করতে চাচ্ছে। ভারত, আপনারা সতর্ক হোন। আমাদের পিঠ দেখানোর দিন শেষ। এখন বুক দেখানোর দিন চলে এসেছে। আমাদের সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করবেন, আপনাদের সঙ্গেও অনুরূপ আচরণ করা হবে। বর্তমানের আচরণই নির্ধারণ করবে ভবিষ্যৎ ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক কেমন হবে।’