X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

নিজের হাতেই নেই নির্ভরতার চাবি

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
১৫ এপ্রিল ২০২১, ১৭:২৪আপডেট : ১৫ এপ্রিল ২০২১, ১৭:২৪

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা আসবে, এমন একটা কথা খুব স্বাভাবিকভাবে নীতিনির্ধারণী ও বিশেষজ্ঞদের জায়গা থেকে উচ্চারিত হচ্ছিল। কিন্তু মৃত্যু কম, নমুনা পরীক্ষা কম, তাই সংক্রমণের সংখ্যাও কম– এমন এক বাস্তবতা নিয়ে মোটামুটিভাবে বলতে শুরু করেছিলাম যে, বাংলাদেশে করোনা পরাজিত হয়েছে। বলতে গেলে বড় একটা সময় ধরে আনন্দধ্বনিও উচ্চারিত হয়েছে। কিন্তু এটি যে দ্রুত এমন বিষাদ আর উদ্বেগ ডেকে আনবে, তা বোধ করি তারা কেউ কল্পনাও করতে পারেননি।  

করোনার শুরুর সময়ের মতোই এখন হাহাকার এবং সেটা আরও বেশি। আইসিইউ নেই, অক্সিজেন নেই শুনতে শুনতে এখন শুনছি বেডও নেই। পরিস্থিতি মোকাবিলার কৌশল কী হবে সে নিয়ে সরগরম গণমাধ্যম, সামাজিক মাধ্যম। যারা ‘জীবন ও জীবিকা’, কিংবা ‘সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি’ সবকিছু খোলা রাখা যাবে, করা যাবে বলে বিমূর্ত সব ধারণা দিয়েছিলেন তারাও এখন অস্থিরতায় আছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী কমপক্ষে তিন সপ্তাহের কঠোর লকডাউনের কথা বলেন ঠিকই, তবে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী সাত আটদিনের লকডাউনেই সমাধান খুঁজে পান। এবার প্রথম দফায় যে লকডাউন হলো, তা একেবারেই ইউনিক। প্রথমত সাত দিনের লকডাউনের ধারণা বিশ্বের কোথাও না থাকলেও আমরা আবিষ্কার করতে পেরেছি। সেটুকুও আবার প্রথম কিছু খোলা, কিছু বন্ধ এবং এরপর গণপরিবহন খোলা, দোকানপাট, মার্কেট সব খোলার লকডাউন আমরা উপভোগ করলাম।

এবার এলো আট দিনের কঠোর লকডাউনের হুংকার। কিন্তু প্রথমেই আবদার করে বসলেন বড়লোক পোশাক রফতানিকারকরা। বলতে হলো খোলা থাকবে রফতানিমুখী শিল্পকারখানা। তাহলে বাদ থাকবে কেন অন্যরা। দেখার পালা কে কীভাবে প্রভাবিত করে ব্যবসা খোলা রাখতে পারেন, কঠোর লকডাউনকে সেমি-কঠোর বা কোমল বানিয়ে ফেলতে পারেন। তবে একটা বিষয় এখনও বুঝতে পারছি না আমরা – গণপরিবহন বন্ধ রেখে, ব্যাংক খোলা রেখে, পোশাক কারখানা খোলা রেখে শেষ পর্যন্ত না সবই আসলে খুলে দিয়ে তালা চাবির খোঁজ করি আমরা।

লকডাউন দিলে কঠোরভাবে, বিজ্ঞানসম্মতভাবেই দিতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় সারাদেশে একযোগে লকডাউন আসলেই কতটা সম্ভব সে নিয়ে তর্ক উঠছে। বরং সংক্রমণ যেখানে বেশি সেসব এলাকায় স্মার্ট লকডাউন করতে পারি কিনা, সে সক্ষমতা আমাদের আছে কিনা সেটা একবার পরীক্ষা হতে পারতো। ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠন সংবাদ সম্মেলন করে সার্বিক লকডাউনের প্রতিবাদ করেছে এবং দাবি করেছে লকডাউন হলেও যেন দোকানপাট বা মার্কেট খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়। দোকান ব্যবসায়ীদের কথা হলো, আবারও লকডাউন হলে তাদের বাঁচার পথ থাকবে না। গত বছর বৈশাখ এবং ঈদে কোনও বাণিজ্য হয়নি এবং এবারও যদি না হয় তাহলে তারা বাঁচবেন না। একই কথা বলছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। আরেকটি অংশ মনে করে লকডাউনের কারণে অতি দরিদ্র মানুষের সিংহভাগকে বাঁচানো যাবে না।

সরকার যদিও দাবি করে, করোনায় বিশ্বের উন্নত দেশগুলো বড় ক্ষতিতে পড়লেও বাংলাদেশ তার অর্থনীতি চালু রাখতে সক্ষম হয়েছে। বাস্তবতা হলো, করোনার কারণে ২০২০ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতি যে আঘাত সয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি সইবার মতো সামর্থ্য আমাদের নেই। বিতর্ক থাকবে, অভিমত থাকবে লকডাউন বা অতিমারি মোকাবিলার অন্যান্য কৌশল নিয়ে। বাস্তবতা হলো, সরকারের ভাবনায় আছে একটিই কথা– অর্থনীতিকে স্থবির না করে মহামারি মোকাবিলা করতে হবে।

তাহলে আমাদের নাগরিকদের করণীয় কী? প্রথমে আমরা মনে করলাম ঘরে বসে থাকলে বা খুব করে নিয়ম মানলে করোনা ঘেঁষতে পারবে না কাছে। কিন্তু সমস্যা হলো এটা করেও লাভ হচ্ছে না। কিছু মানুষ নিয়ম মানলেন, অধিকাংশই মানলেন না বা মানতে পারলেন না। চরম সত্য হলো–সব খোলার সংস্কৃতিতে, উৎসবে আমেজে সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করার ফলে সংক্রমণের হার এখন বাড়ছে, মৃত্যুর হারও বাড়ছে।

মনে রাখতে হবে, সবই খুলে যাবে এবং বাস করতে হবে করোনার সাথেই। গণপরিবহনে উঠতে হবে, বাজারে ভিড় লেগেই থাকবে, পথে ঘাটে গায়ে গা লাগিয়ে লোক চলবে। আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক সমাবেশও চলবে। করোনা সামলাতে যত পদক্ষেপই নেওয়া হোক না কেন, সেগুলো পুরোপুরি এ দেশে আর বাস্তবায়িত হবে না।

তাই নিজের হাতে নিজের নির্ভরতার চাবি তুলে নিতে হবে। মানুষকে সচেতন হতে হবে। সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে একটা সমন্বয় গড়ে তুলতে হবে। সংক্রমণ ঠেকানোর ৮০ ভাগ চাবিকাঠি মাস্ক পরা ও হাত ধোয়ার মধ্যে। বারবার হাত ধোয়াও সমস্যা। তাই হাতে রাখতে হবে ভালো মানের স্যানিটাইজার। মাস্ক পরেছেন বলে বা সাথে স্যানিটাইজার আছে বলে মানুষের সাথে দূরত্ব বজায় রাখবেন না, নিশ্চয়ই সেটা হবে না।    

কিছু বিষয় নিজেরাই মানি। প্রথমত রাস্তায় বেরুলে মাস্ক পরি। কাজের জায়গাও পরে থাকবো। আমার তিন ফুটের মধ্যে কেউ যেন মাস্ক না পরে আসেন, সেদিকে খেয়াল রাখবো।  নিয়মিত পরিষ্কার করা যায় এমন জুতা পরে বের হই। গয়নাগাটি পরা বাদ দেই। কারণ, ধাতুর ওপর প্রায় বেশ অনেক দিন থেকে যেতে পারে জীবাণু। ঘড়িও কি জরুরি এই ডিজিটাল যুগে?
যারা কাজ করি, তারা যেন অফিসে নিজস্ব কাপ রাখি এবং খেয়াল রাখি সেটা যেন নিয়মিত সাবান-পানিতে ধোয়া হয়। বাইরের খাবার না খাই। প্যাকেটের বিস্কুট বা বাদাম যেন খাই।

একটা বিষয় বেশ পরিষ্কার, করোনাভাইরাস থেকে আমাদের মুক্তি নেই সহসা। এই আতঙ্ককে সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে, সয়ে যেতে হবে এবং টিকে থাকতে হবে। আর সে জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে। বড় ধরনের শারীরিক সক্ষমতা বা ইমিউনিটি ছাড়া এর বিরুদ্ধে লড়াই অসম্ভব। পরিশ্রমী, স্বল্পাহারী এবং জীবনে পূর্ণ শৃঙ্খলা মেনে চলা লোকজনই জয়ী হবেন। গাদাগাদি করে চলা, গোগ্রাসে গেলার স্বভাব যাদের তারা নিজের বিপদ বাড়াচ্ছেন। সর্বগ্রাসী ক্ষুধা ও লোভ এবং লাভের বাসনা আমাদের অনিবার্য ধ্বংস ডেকে আনবে।  আতঙ্ক নয়, যতটা সম্ভব স্বাভাবিক জীবনযাপন করি, ভয় যেন গ্রাস না করে আমাদের। নিয়ম মানি, করোনা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

 
লেখক: সাংবাদিক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
যুক্তরাষ্ট্রের টি-টোয়েন্টি দলে নিউজিল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার
যুক্তরাষ্ট্রের টি-টোয়েন্টি দলে নিউজিল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ