X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনাকে ভালোবাসি

লীনা পারভীন
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৬:৪৪আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৬:৪৪

লীনা পারভীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ২৮ সেপ্টেম্বর আপনার ৭৫তম জন্মদিনে বাংলাদেশের একজন সামান্য নাগরিক হয়ে ভালোবাসার কথা জানানোর লোভ সামলাতে পারলাম না। অনেক ভালোবাসি আপনাকে। ভাবছেন, কেন এই ভালোবাসা? জেনেছি, ভালোবাসতে নাকি কারণ লাগে না। কিন্তু আপনার প্রতি এই ভালোবাসার পেছনে কারণ আছে।

লিখতে বসে ভাবছিলাম আমি কি একজন ব্যক্তি শেখ হাসিনাকে ভালোবাসি নাকি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ভালোবাসি?  অনেক ভেবে উত্তর পেলাম– ব্যক্তি শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো আসলে একই সত্তা। এখানে বিভেদ খুঁজতে যাওয়া মানেই বোকামি করা। আসলে একজন ব্যক্তির মধ্যে যদি ভালোবাসার উপাদান না থাকে তাহলে একজন প্রধানমন্ত্রী হয়েও সেই গুণাবলীগুলোকে অর্জন করতে পারে না।

একজন ব্যক্তি শেখ হাসিনাকে তো আমি কাছ থেকে দেখিনি, তাই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যা দেখি তা-ই দিয়ে ব্যক্তিকে চিনে নিয়েছি।

আপনি একজন প্রচণ্ড জেদি মানুষ, সেটা কি আপনি জানেন? নিশ্চয়ই জানেন। কারণ একজন ব্যক্তি নিজেই নিজেকে সব থেকে বেশি চেনে। আপনার এই জেদ অনেকের গায়ের জ্বালা ধরায়। এই যে আপনি একরোখাভাবে নিজের মতো করে কাজ করে চলেছেন। কোনও অহেতুক সমালোচনা-ষড়যন্ত্রকে পাত্তা না দিয়ে এই একরোখা শেখ হাসিনাই আমার প্রধান আকর্ষণের কারণ। জেদ ছাড়া অর্জন হয় না। এই জেদ নিশ্চয়ই আপনি পেয়েছেন আপনার পিতার কাছ থেকে কারণ সেই মহান ব্যক্তিটির জেদের কারণেই তো আমরা পেয়েছিলাম আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ।

তাঁর জেদের সামনে অসহায় হয়ে পড়েছিলো প্রবল পরাক্রমশালী পাকিস্তানিরাও। আপনি যখন আমেরিকাকে ভ্রুকুটি করেন তখন আমার কাছে মনে হয়, এই তো আমি আত্মশক্তিতে বলীয়ান হচ্ছি। আপনি যখন মোড়লদের প্রচুর ফোনকে উপেক্ষা করে একের পর এক যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দিচ্ছিলেন, আমার মতো কোটি বাঙালি সেদিন কেঁদেছিলো, জানেন? শহীদের স্বজনেরা সেদিন নিচু করা মাথাকে উঁচু করে গলা ছেড়ে– জয় বাংলা বলেছিলো ঠিক ক্ষুদিরামের মতো।

আমি একজন স্বপ্নবাজ শেখ হাসিনাকে প্রচণ্ড কাছের মনে করি। তিনিই তো প্রথম বুঝিয়েছিলেন আমাদেরও স্বপ্ন দেখার হক আছে। আমরাও পারি নিজের মতো করে বাঁচতে। আমরাও পারি নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে নিজের জীবনকে সাজাতে।

আজকের তরুণরা অনেক ভাগ্যবান। আমার দুটি কিশোর ছেলে আছে যারা জানে না একদিন বাংলাদেশ ছিল অন্ধকারের বাংলাদেশ। যে দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা জানতো না কেমন করে নিজেদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে হয়। তারা কোনোদিন ভাবেওনি যে ঋণ না করেও কিছু করা যায়। আমার সন্তানেরা জানে না লোডশেডিং কেমন করে হয়। অথচ এক সময় বিদ্যুতের অভাবে মানুষের কারখানা বন্ধ হয়ে যেতো। বাসায় বাসায় বিদ্যুতের বিলের চেয়ে মোমবাতির খরচ হতো বেশি। আমি জানি এর জন্য হয়তো আইপিএস-এর ব্যবসায়ীরা আপনাকে দোষ দেবে কিন্তু এখন আর আমাদের গরমে কষ্ট করতে হয় না।

আমি ভাবিনি আমার জীবদ্দশায় কোনোদিন দেখবো যে বাংলাদেশ নিজের টাকায় সেতু করেছে। একটা রাস্তা সংস্কার করা যেখানে অন্যের দয়ার বিষয় ছিল সেখানে এতবড় একটি সেতু হবে আমাদের টাকায়! ওরে বাবা!

সে যে দুঃস্বপ্নেও আসেনি। কী কাণ্ড! আপনি সেটিও করে দেখালেন। বিশ্বব্যাংক ছিল আমাদের কাছে দারুণ এক ভয়ের নাম। নাটক সিনেমায় দেখতাম দিনের পর দিন কেমন করে বেনিয়ারা গরিবদের সহায়তার নামে ঋণের বোঝা ধরিয়ে দিতো। সেই বিশ্বসেরা বেনিয়াকে আপনি ‘ঝেঁটিয়ে’ বিদায় করে দিলেন। এখন শুনতে পাই তারা আমাদেরকে ঋণ দেওয়ার জন্য তোয়াজ করে চলে।

ওগো বঙ্গবন্ধু কন্যা, মাঝেমাঝে এই একরোখা কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয়  বঙ্গবন্ধুর চেয়েও আপনি আমাদের  বেশি চেনেন-বোঝেন। জাতি হিসেবে তো আমরা খুব একটা সুবিধার না। ‘নিমকহারামি’ আমাদের রক্ত থেকে হারিয়ে যায়নি যে। সেই মীরজাফর থেকে খন্দকার মোশতাকেরা তো রয়ে গেছে যুগে যুগে। এই ‘নিমকহারাম’দের নিয়ে আপনার চলার পথ অনেক কঠিন হয়ে যায়। কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলে যাওয়া মানুষগুলোকে কতটা অবলীলায় আপনি উপেক্ষা করে এগিয়ে যাচ্ছেন। আপনি বলেছেন কে কী বললো সেটা দেখে আপনি দেশ চালান না। এই যে উপেক্ষা করার ক্ষমতা, আমি এই শেখ হাসিনার কাছ থেকে শিক্ষা নেই,শক্তি নেই।

দলের মাঝে লুকিয়ে থাকা ক্ষমতালোভীদের সামলে রাখা চাট্টিখানি কথা নয়। তারমধ্যে আপনি যে বাঙালি নারী। যে বাঙালি নারী নাকি জন্মেছে কেবল কোমলমতি কাজ করার জন্য। তারা শাসন ক্ষমতা চালাতে পারবে না।

নারীর হাতে রাষ্ট্র দেখতে অভ্যস্ত নয় যারা, সেই মানুষগুলো অনেক চেষ্টা করেছে আপনাকে দুর্বল করে দিতে। আপনাকে টলাতে পারেনি। পারবে কেন? আপনি যে অনেক আগেই নারী নেতৃত্ব থেকে সাধারণের নেতা হয়ে উঠেছেন আপন মহিমায়। আপনি কেবল নিজেই উঠেননি, উঠাচ্ছেন বাংলার কোটি নারীকেও। তাদের সামনে আজকে আপনি একজন আইডল। আর কেবল দেশেই কেন? বিদেশেও যে আপনার নামে বন্দনা চলছে। আপনি হয়ে উঠেছেন অনেকের কাছে পড়ার বই। আমিও আপনাকে পড়ি। প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে আমি আপনাকে পড়ি। বোঝার চেষ্টা করি। কেমন করে পারেন আপনি?

উত্তর, আপনি নিজেই দিয়েছেন। পারেন, কারণ আপনি দেশকে ভালোবাসেন। আপনার জীবনে বাংলাদেশের উন্নয়ন ছাড়া আর কোনও বিষয় নেই। ঠিক আপনার পিতার মতো। তিনিওতো একই স্বপ্ন দেখেছিলেন। আমিও বাংলাদেশকে ভালোবাসতে শিখি আপনার কাছ থেকে। হয়তো আপনার মতো ত্যাগী হতে পারবো না। কিন্তু সততার সাথে দেশের সাথে থাকার শিক্ষাটা আমি শান দেই আপনাকে দেখে।

তাইতো আমি চাই এই বাংলাদেশের হাল থাকবে আপনার হাতেই। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল, উন্নত দেশ হবার স্বপ্নতো আপনি এই জাতিকে দেখিয়েছেন। উন্নয়নশীল দেশের নাগরিক হবার মর্যাদাতো আপনি দিয়েছেন আমাদেরকে। ২০৪১ সালে দেশ হিসাবে উন্নত বাংলাদেশ হবার অর্জনেও আমি আপনাকেই চাই। আপনি থাকবেন আমাদের ভালোবাসার সারথী হয়ে। আপনার দীর্ঘজীবন ছাড়া যে আমাদের স্বপ্নটুকু অধরা রয়ে যাবে।

লেখক: কলামিস্ট

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
দুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টিদুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ