X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

সেই ফোন আর কোনোদিন বাজবে না

ফরিদ কবির
০৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:২৯আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৫:০৩

ফরিদ কবির বারো কি তেরো বছর আগের কথা।
আমার বন্ধু গৌতম সাহা একদিন ঢাকা ক্লাবে আমাকে আমন্ত্রণ জানালেন। বললেন, আগামী শনিবার সন্ধ্যায় আমরা কয়েকজন বসবো। চলে আসেন।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, উপলক্ষটা কী?
তিনি বললেন, উপলক্ষ কিছু না। স্রেফ আড্ডা।
আমি জানতে চাইলাম, আয়োজক কে?
তিনি বিস্তারিত কিছু বলতে চাইলেন না। বললেন, আরে, আসেন না। আর বলেন, কাকে কাকে ডাকা যায়?

একটা অনুষ্ঠানের বিস্তারিত না জেনে কারোর নাম প্রস্তাব করা কঠিনই। তারপরেও আমি কিছু নাম প্রস্তাব করলে গৌতম বললেন, তাদেরকে আপনিই দাওয়াত করে দেন। আর  সব তো পুরুষ মানুষের নাম নিলেন, আপনার এতো এতো সুন্দরী বান্ধবী আছে তাদেরকেও বলেন!

আমি বললাম, বেশ বলবো।

শনিবার ঢাকা ক্লাবে গিয়ে দেখি এলাহি কাণ্ড! পঁচিশ-ত্রিশ জন সেখানে উপস্থিত। বেশিরভাগই লেখালেখি বা সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত লোকজন। অনুষ্ঠানে গিয়ে পরে জানা গেলো, এ আড্ডার অন্যতম আয়োজক মোজাম্মেল বাবুও।

সেই আড্ডায় একজন যুবক নিজে এসেই আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে হ্যান্ডশেক করতে করতে বললেন, ফরিদ ভাই, ভালো আছেন?

আমি হেসে জবাব দিলাম, হ্যাঁ, ভালোই।

যুবকটির গলা এতোই আন্তরিক, যেন অনেক বছরের চেনা। আমার ধারণা হলো, নিশ্চয়ই কোথাও আগে আলাপ হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই তার নাম মনে করতে পারলাম না। সাংবাদিক? নাকি কবি, তাও বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু এটা বুঝতে পারছিলাম, তার সঙ্গে সকলেরই বেশ ঘনিষ্ঠতা। সকলের সঙ্গেই তার আছে আন্তরিক একটা সম্পর্ক। কী কবি-লেখক, কী সংবাদকর্মী!

ঢাকা ক্লাবে সেই আড্ডা ধীরে ধীরে জমে গেলো। দিন পনেরো পর পরই এ আড্ডা চলতে লাগলো। সেখানে তার সঙ্গে প্রায়ই একই টেবিলে আড্ডা হয়। সাহিত্য ও রাজনীতিসহ নানা বিষয় আসে ঘুরে-ফিরে। দীর্ঘদেহী সেই যুবকটির সঙ্গে প্রতিবারই এমন ভঙ্গিতে কথা হয়— যেন বহুদিনের ঘনিষ্ঠ আমরা। কিন্তু তার নাম জানা হয় না। তবে, ধীরে ধীরে কয়েক মাসের মধ্যেই সম্পর্কটা এমনই হয়ে ওঠে— যেন আমরা বহু যুগের পরিচিত।

 

তিন-চারদিনের আড্ডার পরই আমরা এতোটাই ঘনিষ্ঠ হয়ে গেলাম যে মনে হবে, আমরা বহু বছরের বন্ধু। আমার চাইতে বছর দশেক ছোট হলেও আমাদের প্রগাঢ় বন্ধুত্ব হতে তা বাঁধা হতে পারলো না।

 

এরই মধ্যে ছোট্ট একটা ঘটনা ঘটলো। আমি আর লেখক-সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি একদিন দুপুরে সাকুরায় খেতে বসলাম। আমরা দুজন আড্ডা দিচ্ছি এমন সময় মাসুদার ফোন বেজে উঠলো। মাসুদা তাকে বললো, তুমি চলে এসো। আমি আর ফরিদ ভাই সাকুরায় আড্ডা দিচ্ছি।

মাসুদা ফোন কেটে দেওয়ার পর আমি জানতে চাইলাম, কে?

মাসুদা রহস্য করে বললো, এলেই দেখতে পাবে।

আধা ঘণ্টার মধ্যেই সাকুরায় এসে হাজির হয়ে গেলো শাকিল। এবং এসেই ও আড্ডা জমিয়ে ফেললো। আমি কয়েকদিনের পরিচয়েই একটা বিষয় বুঝে ফেললাম। শাকিল যেখানেই যাক, সেখানে ওর উপস্থিতি বিশিষ্ট হয়ে ওঠে।

শুরুর দিকে তিন-চারবারের দেখায় আমাদের সম্বোধন চলছিল ‘আপনি’ করেই। একদিন লক্ষ্য করলাম, ও আমাকে ‘ফরিদ ভাই’ সম্বোধন করলেও আমার কোনও রকম অনুমতির তোয়াক্কা না করেই ‘আপনি’র বদলে ‘তুমি’ সম্বোধন করছে! ও এমনভাবে আমাকে ‘তুমি’ করে বলছে, যেন আমরা দীর্ঘকালের পরিচিত কেউ। আমিও স্বাভাবিকভাবেই ওকেও ‘তুমি’ সম্বোধন করতে লাগলাম।

কোন ফাঁকে, কী কারণে ও আমাকে বিশেষভাবে পছন্দ করে ফেলেলো তা টেরই পেলাম না!

 

বছর দুই-তিনেক আগের ঘটনা।

একদিন দুপুর বেলা। একটা কি দেড়টা বাজে। হঠাৎই ওর ফোন।

ফরিদ কবির বলছেন?

মোবাইলে তার নাম না উঠলেও আমি বুঝতে পারতাম, এটা শাকিল। মোবাইলে ওর নাম ওঠায় আমি আরও নিশ্চিন্ত। বুঝলাম, ঠাট্টা করছে!

জবাব দিলাম, হুম, ফরিদ কবির বলছি।

শাকিল অপর প্রান্ত থেকে বললো, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের একটা বিশেষ কাজে আপনাকে এক্ষুণি ঢাকা ক্লাবে আসতে হবে। খুব জরুরি।

আমি নিস্পৃহ গলায় বললাম, তাই নাকি? প্রধানমন্ত্রীর দফতরে আমার মতো অভাজনের হঠাৎ কী দরকার পড়লো?

শাকিল বেশিক্ষণ অভিনয় করতে পারলো না। ও স্বরূপে হাজির হলো, বললো, আমি ফোন রাখছি, তুমি জলদি আসো। তোমার জন্য আমরা শুরু করতে পারছি না।

আমি বললাম, আরে, এখন তো আমার অফিস। কীভাবে আসি?

শাকিল বললো, তাহলে তোমার বসের নম্বর দাও। আমি তাকেই বলে দিচ্ছি।

বুঝলাম, ভালো পাগলের পাল্লায় পড়েছি! যেতেই হবে। বললাম, আচ্ছা, আসছি।

ঢাকা ক্লাবে গিয়ে দেখি, আরও অনেকেই সেখানে উপস্থিত। মঈনুল আহসান সাবের, তুষার দাশ, মাজহারুল ইসলাম, সিরাজুল কবির চৌধুরী কমল, মিলন পাঠান, আশরাফ সিদ্দিকী বিটুসহ অনেকেই।

 

এ রকম হুটহাট আড্ডায় ওর কারণে প্রায়ই শামিল হতাম। হতাম বললে একটু কম বলা হবে। হতে বাধ্য হতাম। ঢাকা ক্লাবে এলেই আমাকে ডেকে পাঠাতো ও। বলতো, তোমার পাশেই আছি, জলদি আসো। বেরোতে পাঁচ-দশ মিনিট দেরি করলে, আবার রিং বেজে উঠতো। ফোন ধরলেই ওর অসহিষ্ণু গলা, তুমি কি জানো, দেশের দুজন বিখ্যাত লেখক ও কবিকে তুমি বসিয়ে রেখেছো? জলদি আসো।

 

না। ওকে না করা যেতো না। আমি যেমন ওর আহ্বানে সাড়া না দিয়ে থাকতে পারতোম না, তেমনি ঘটতো সম্ভবত অন্যদের বেলায়ও। কখনও কখনও সেসব আড্ডায় শামিল হতেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, শাকুর মজিদ, সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, অঞ্জন রায়সহ আরও  অনেকেই। কখনও কখনও ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাও হাজির হতেন। ওর ডাক উপেক্ষা করা আসলেই ছিল কঠিন।

 

বিষয়টা এমন নয় যে, ওর বন্ধু কেবল আমরাই ছিলাম। এমন কবি-লেখক ও সাংবাদিক খুব কম আছে যার সঙ্গে ওর বিশেষ সম্পর্ক ছিল না। ড. আনিসুজ্জামান থেকে শুরু করে তানিম কবির— সব বয়সের লেখক-কবির সঙ্গেই ছিল ওর সমান সম্পর্ক।

 

সরকারি চাকরি করেন বা সরকারে উঁচু পদে আছেন এমন বন্ধুদের আমি বরাবরই এড়িয়ে চলি। নিজের জন্য তাদের সাহায্য কখনও চাইতে যাই না। কিন্তু একবার খুব বিপদে পড়লাম! আমাদের এলাকায় পানির লাইন খারাপ থাকায় আমাদের ফ্ল্যাটে পানির সরবরাহ হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায়। খবর নিয়ে জানতে পারি, পাইপ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পানির লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কবে সেটা ঠিক হবে কেউ বলতে পারেন না। ওয়াসাতে খোঁজ নিলে তারা জানায়, প্রয়োজনীয় পাইপ না থাকায় লাইন ঠিক করতে সময় লাগবে। পুরো এলাকায় পানির হাহাকার লেগে গেলো।

আমি এক টাংক পানি জোগাড় করতে আমার ড্রাইভারকে স্থানীয় ওয়াসাতে পাঠালাম। কিন্তু দুদিন ঘুরেও ও পানির ব্যবস্থা করতে না পারায় আমি নিজেই একদিন সেখানে গেলাম। স্থানীয় ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী আমাকে পাত্তাই দিলেন না! তিনি যা বললেন, তাতে এটাই বুঝলাম, প্রয়োজনীয় পানি পাওয়া কঠিন। অথচ আমার ফ্ল্যাটে কম করে হলেও প্রতি দুদিনে এক টাংক পানি দরকার।

আমি উপায়ান্তর না দেখে শাকিলকে ফোন দিলাম। একইসঙ্গে অবশ্য আমি আমার দুই বন্ধু আসাদ ও পিন্টুকেও ফোন দিলাম। তারা দুজনই তখন যথাক্রমে অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্মসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা। তবে, শাকিলকে বিষয়টা বলতেই ও বললো, ফরিদ ভাই, তুমি চিন্তা কোরো না। আমি তোমার পানির ব্যবস্থা করছি।

ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই শাকিলের ফোন পেলাম। বললো, সন্ধ্যার মধ্যেই তুমি পানি পেয়ে যাবে। আমি বলে দিয়েছি, প্রতিদিন তোমাকে এক টাংক পানি ওরা পাঠিয়ে দেবে। না পাঠালে আমাকে জানাবে।

সেদিন সন্ধ্যেবেলায় সত্যিই এক টাংক পানি পাঠালো ঢাকা ওয়াসা। পানির লাইন যতদিন নষ্ট ছিল শাকিলের কল্যাণে আমার ফ্ল্যাটে পানির সরবরাহ ঠিকঠাকভাবেই চললো। 

আমার ধারণা, তার বন্ধুদের নানা বিপদেই শাকিল এভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তো। তবে, ও নিজের কোনও সমস্যার কথা তেমন কাউকে বলতো কিনা আমার সংশয় আছে। শাকিলের বিচরণ ছিল নানামুখী। নানা ধরনের মানুষের সঙ্গেই ও অবলীলায় মিশে যেতে পারতো। যারা রাজনীতি করেন তাদেরকে নানা ধরনের লোকজনের সঙ্গে মিশতেই হয়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত রাজনৈতিক নেতাকর্মী তো কম দেখলাম না! কিন্তু শাকিল তাদের কারোর মতোই ছিল না। ও ছিল পুরোদস্তুরই একজন কবি। জীবনাচরণে ও মানসিকতায়। শাকিল কবিতা লিখতো বলেই আমি এমনটা বলছি তা নয়। শুরুর দিকে তার কবিতা আমাকে বিশেষ টানতোও না। যে-কারণে ওর কবিতা নিয়ে আমি নীরবই থাকতাম, যেমনটা আমি থাকি আরও অনেকের বিষয়েই।

আমার এই নীরবতা সহ্য করবার লোক ছিল না ও। একদিন ঠিকই জিজ্ঞেস করে বসলো, ফরিদ ভাই, আমার কবিতা তোমার কেমন লাগে? আমি কিছু বলার আগেই ও বললো, আমাকে খুশি করার জন্য মিথ্যে কিছু তোমার কাছে শুনতে চাই না। তোমার কাছে যেমন মনে হয় সেটাই বলো?

আমি বললাম, শাকিল তোমার মধ্যে কবিতা আছে। শুধু আবেগটা কিছু কমাতে হবে। আর, ছন্দ নিয়েও তোমাকে ভাবতে হবে। কবিতার ভাষা নিয়েও।

এসব কথা বলে আমি বিপদেই পড়লাম। একদিন ঢাকা ক্লাব থেকে আড্ডা দিয়ে বেরোতে বেরোতে অনেক রাত হয়ে গেলো। সঙ্গে আমার গাড়ি ছিল না। আমি বললাম, এতো রাতে সিএনজি করে যেতে পারবো না। আমাকে কি কেউ বাসায় নামিয়ে দেবে?

শাকিল সঙ্গে সঙ্গেই সাড়া দিলো। বললো, আমি তোমাকে নামিয়ে দেবো।

যথারীতি ওর গাড়িতেই উঠলাম। কিন্তু আসাদ গেট পার হয়ে ও ওর সরকারি বাসভবনেই আমাকে নিয়ে এলো। বললো, চলো, আমার বাসায়।

আমি বললাম, এতো রাতে?

শাকিল নির্বিকার গলায় বললো, আরে, চলো তো। কবিদের আবার রাত কী? আমার গাড়ি তোমাকে বাসায় পৌঁছে দেবে। চিন্তা কোরো না।

আমি ওর বাসায় ঢুকলাম। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে গেলো ও আমাকে নিয়ে। দুটো বুকশেলফে সারি সারি বই। পাশে পড়ার টেবিল ও চেয়ার। একটা চেয়ারে ও বসতে বসতে বললো, ফরিদ ভাই বসো। আধা ঘণ্টা বসলে এমন কিছু রাত হবে না। মাত্র বারোটা বাজে।

একটা চেয়ার টেনে বসতেই ও বললো, এবার বলো, কী কী করলে আমার কবিতা আরও ভালো হবে? আমার কবিতায় কী কী সমস্যা আছে?

আমি হেসে বললাম, এতো রাতে এ জন্য আমারে নিয়া আসছো?

শাকিল খুবই সিরিয়াস। বললো, তুমি জানো না, কবিতা বিষয়ে তোমার মতামত আমার কাছে কতোটা ইম্পর্টেন্ট। ফেসবুকে তোমার কবিতাবিষয়ক স্ট্যাটাসগুলি আমি খুবই মনোযোগ দিয়ে পড়ি, সেইটা তো তুমি জানো না। আগে শখে কবিতা লিখতাম। কিন্তু এখন আমি খুবই সিরিয়াস। তুমি বিশ্বাস করো, এক সময় আমি রাজনীতি-টিতি ছেড়ে দেবো। তখন শুধু কবিতাই লিখবো।

কবিতা ওর মধ্যে ভর করতে শুরু করেছিল। আমাদের চারপাশের পঙ্কিলতা থেকে মুক্তি পেতে কবিতার কাছেই আশ্রয় খুঁজেছিল শাকিল। সাহিত্যের সঙ্গে যে পুরোপুরি জড়াতে চেয়েছিল তার ইঙ্গিত পাওয়া গেলো কিছুদিনের মধ্যেই।

একদিন ফোন করে বললো, ফরিদ ভাই, একটা কাগজ করবো ভাবছি। মনজুর ভাই, সাবের ভাইসহ আরও অনেকেই থাকবে। তুমিও থাকবে। আগামীকাল বনানীতে সবাই বসবো। ইনবক্সে তোমকে ঠিকানাটা দিচ্ছি। তুমি ঠিক সাতটার দিকে চলে আসো।

যথাসময়ে আমি সেখানে পৌঁছে গেলাম। গিয়ে দেখি শাকিল ছাড়া সেখানে আর কেউ নেই!

আমি বললাম, কী ব্যাপার, বাকিরা কই?

শাকিল বললো, বাকিরা এসে যাবে আটটার মধ্যে। তোমাকে একটু আগেই আসতে বলেছি। ছন্দটা তোমার কাছে একটু বুঝে নিতে চাই। আর, আমি কবিতাতেও একটা বদল আনতে চাই, সেটার ব্যাপারেও তোমার তোমার পরামর্শ শুনতে চাই।

প্রায় ঘণ্টাখানেক আমরা কবিতা নিয়েই আলাপ চালিয়ে গেলাম। খুবই মনোযোগ দিয়ে ও শুনছিলো। জিজ্ঞেস করছিল নানা খুঁটিনাটি বিষয়ে।

ওর প্রশ্নের ধরনই বলে দিচ্ছিল, কবিতা বিষয়ে ও ভয়ঙ্কর সিরিয়াস!



মানুষ চাইলে কী না হতে পারে? শাকিলকে অনেকেই চেনে রাজনীতিবিদ হিসেবেই। কিন্তু আমার ধারণা শাকিল যতটা রাজনৈতিক কর্মী ছিল, তার চাইতে বেশি ছিল কবি। ও ঝড়ের মতোই কবিতার জগতে এসে ঢুকেছিল। ওর কবিতা কবিতা হয়েও উঠতে শুরু করেছিল। যে সময়টাতে ও প্রকৃত কবিতার দেখা পেতে শুরু করেছিল, যখন ও কবিতার ছন্দে আসতে চাইছিল তখনই যেন ছন্দপতন ঘটে গেলো!

শাকিল যতদিন বেঁচে ছিল, তখন ঠিক বুঝতে পারিনি, মনের কতোটা জায়গা জুড়ে ছিল ও। চলে যাওয়ার পর এখন বুঝতে পারি, অনেকটা জায়গা জুড়েই ছিল ও। শুধু আমার নয়, আমি দেখতে পাই, অসংখ্য মানুষের কাছে ও বিশিষ্ট একজন। এতো মানুষের প্রিয় হওয়া সহজ না।

আমার মোবাইলে এখনও শাকিলের ফোন নম্বরটা রয়ে গেছে! আমি সেটা মুছতে পারিনি। হয়তো মনের গভীর কোনও অংশে এখনও এই প্রত্যাশা জেগে আছে— শাকিলের ফোন বেজে উঠবে, আগের মতোই কোনও ভূমিকা ছাড়াই বলবে, ‘ফরিদ ভাই, এখনই আসো। তোমার জন্য আমরা শুরু করতে পারছি না!’

যদিও সচেতন মন জানে, সেই ফোন আর কোনোদিন বাজবে না! 

লেখক: কবি

/এপিএইচ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বিরল সূর্যগ্রহণ দেখতে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে জড়ো হবেন ১০ লাখ দর্শনার্থী
বিরল সূর্যগ্রহণ দেখতে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে জড়ো হবেন ১০ লাখ দর্শনার্থী
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ