X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

এবারের ঈদটাও অন্যরকম!

রেজানুর রহমান
২১ জুলাই ২০২১, ১৫:২৯আপডেট : ২১ জুলাই ২০২১, ১৫:৫১

রেজানুর রহমান সরল মনে কিছু সরল কথা বলতে চাই। কথাগুলো প্রশ্নের মতো মনে হতে পারে। কবিতার ভাষায় অনেকটা এরকম- ‘মাথায় কত প্রশ্ন আসে দিচ্ছে না কেউ জবাব তার’। আসলেই মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। খুবই সহজ প্রশ্ন। কিন্তু উত্তর খুঁজে পাচ্ছি না। অনেকেই হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন, আজ বাদে কাল ঈদ। কাজেই ঈদ নিয়ে কথা বলুন। তা না করে কী সব ‘প্রশ্ন’ বলেই যাচ্ছেন। কথায় যুক্তি আছে। ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে আনন্দ। কাজেই খুশি আর আনন্দ নিয়েই কথা বলা যুক্তিযুক্ত। কিন্তু এবারের ঈদটাও অন্যরকম। আর দশটা স্বাভাবিক ঈদের মতো নয়। ঈদ মানেই নামাজ শেষে কোলাকুলি। এ বাড়ি থেকে ও বাড়িতে আনন্দমুখর ছোটাছুটি। কিন্তু করোনা সতর্কতায় এবারের ঈদেও কোলাকুলি না করতে বলা হয়েছে। দেশের মানুষ সরকারের এই নির্দেশ অথবা পরামর্শ যাই বলি না কেন বাস্তবে মানবে কি?

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। ভিড়ের মাঝে যাবেন না। ঘরের বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক পরবেন- অন্তত এই তিন সতর্কতা মেনে চললেই করোনার সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব। কিন্তু কে শোনে কার কথা?

আমাদের দেশে হাট-বাজার ও রাস্তাঘাটে জনারণ্য দেখলে সত্যি বোঝার উপায় নেই প্রতিদিন হু হু করে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। বলা হচ্ছে ভিড় এড়িয়ে চলুন। কিন্তু হাট-বাজারে ভিড়ই হচ্ছে বেশি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখলাম শত শত মানুষ ছাগল নিয়ে রুদ্ধশ্বাসে যে যেদিকে পারে দৌড়াচ্ছে। ঘটনা কী? কেন তারা এভাবে দৌড়াচ্ছে? খোঁজ নিয়ে জানা গেলো কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পশুর হাট বসানো হয়েছে। সেজন্য ঝটিকা অভিযানে এসেছেন সরকারি লোকজন। তাই দেখে গরু ছাগল নিয়ে যে যেভাবে পারে হাট থেকে পালাচ্ছে। মানুষ পালাচ্ছে। সাথে সাথে গরু, ছাগলও পালাচ্ছে। কিছু সময় পর সবাই আবার ফিরে এসেছে হাটে। পুকুরে ঢিল দেওয়ার মতো অবস্থা। ঢিল পড়তেই পানির ঢেউ সরে যায় চারদিকে। পরক্ষণেই পুকুর শান্ত হয়। যেন একটু আগে কিছুই ঘটেনি!

এবার মাথায় যে প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে সে ব্যাপারেই বলি! ইভ্যালি নামে একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মালিককে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইভ্যালির অধিকাংশ আউটলেট। ইভ্যালির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ, সাধারণ মানুষের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। অভিযোগের ভূরি ভূরি প্রমাণও আছে। ইভ্যালির চটকদার বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পা দিয়ে দেশের অনেক মানুষ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। শোনা যাচ্ছে ইভ্যালি নাকি নিজেও দেনার মধ্যে আছে। তা যদি সত্যি হয় তাহলে যারা প্রতিষ্ঠানটির কাছে টাকা পাবে তাদের টাকা ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা কী? একেবারে প্রকাশ্যে এই যে একটি প্রতারণামূলক ব্যবসার জাল সারাদেশে বিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল–সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর, বিশেষ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কি ব্যাপারটা একবারও টের পায়নি? ডেসটিনির প্রতারণামূলক ঘটনার কথা সবাই জানেন। ইভ্যালি ডেসটিনিরই আধুনিক সংস্করণ। বাজার মূল্যের অর্ধেক কমে যখন কোনও প্রতিষ্ঠান পণ্য সরবরাহের নিশ্চয়তা দেয়, একটা কিনলে পাঁচটা ফ্রি দেওয়ার কথা বলে বিজ্ঞাপন প্রচার করে, তখন তো স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে এটা কীভাবে সম্ভব? এখানে কোনও প্রতারণা হচ্ছে না তো? দেশের হাজার হাজার মানুষ প্রতারণার শিকার হওয়ার পর সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের টনক নড়েছে। ইভ্যালির মালিকদ্বয়কে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হয়েছে। ধরা যাক, শেষ পর্যন্ত ইভ্যালির মালিকদ্বয়ের সাজা হলো। তাতে কি সাধারণ মানুষ তাদের হাজার হাজার টাকা ফেরত পাবে? ইভ্যালিকে কি আগে থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা যেত না? যাতে প্রতিষ্ঠানটি দেশের সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করার সুযোগ না পায়। অবস্থাটা কি শেষ পর্যন্ত ডেসটিনির মতোই হবে? প্রতারণার দায়ে কারাগারে যাবেন ইভ্যালির মালিক। শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে কারাগার থেকে হাসপাতালের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে আয়েশী জীবনযাপন করবেন। অনলাইনে কর্মীদের সাথে কথা বলে নতুন ব্যবসার ফাঁদ পাতবেন! অন্যদিকে টাকা ফেরত চাইতে চাইতে ক্লান্ত জনগণ একদিন বিধাতার কাছে বিচার দিয়ে শুধুই কাঁদবেন। একদিন হয়তো তাদের কান্নাও শুকিয়ে যাবে। কেউ হয়তো টাকার শোক ভুলতে না পেরে মারাও যাবেন। তারপরও হয়তো একদিন ভিন্ন নামে আরেক প্রতারণার জাল বিছানো হবে সারাদেশে।

নারায়ণগঞ্জে সজীব গ্রুপের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৫২ জন  শ্রমিক পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেলো। কে ছেলে কে মেয়ে বোঝার উপায় নেই। প্রতিটি লাশ বড় কয়লা খণ্ডের মতো দেখতে হয়েছে। লাশ শনাক্তে ডিএনএ টেস্ট করতে হবে। এরপরও ২০/২২ দিন পর বোঝা যাবে কে ছেলে কে মেয়ে। কোন লাশ কার? উদ্বেগজনক বিষয় হলো, পুড়ে যাওয়া লাশগুলো বেশি দিন মর্গে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এদিকে প্রচার মাধ্যমেই শুনলাম সজীব গ্রুপের মালিক নাকি বলেছেন, কারখানা থাকলে অগ্নিকাণ্ড হবে, মানুষ মারা যাবে এটাই স্বাভাবিক। এখানে আমার দায় কোথায়? মানুষের মৃত্যু নিয়ে এ কেমন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য খেলা? অবাক হচ্ছি প্রতিষ্ঠানটির অনিয়মের ফিরিস্তি শুনে। একটা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বানাতে কিছু নিয়ম-কানুন মানতে হয়। অথচ ন্যূনতম নিয়মও নাকি অনুসরণ করেনি সজীব গ্রুপের প্রতিষ্ঠান। কারখানার গুদামে নাকি অনেক দাহ্য পদার্থ ছিল, যা নিয়ম-বহির্ভূত। একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা এবং ৫২ জন মানুষের করুণ মৃত্যুর পর জানা গেলো প্রতিষ্ঠানটিতে কোনও নিয়ম-কানুনের বালাই নেই। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ইতোপূর্বে একাধিক প্রতিষ্ঠানে ঘটেছে। সব ক্ষেত্রেই দেখা গেছে রাষ্ট্রের কোনও নিয়ম-কানুন অনুসরণ করেনি অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান। তাহলে কি একটি প্রশ্ন জরুরি হয়ে দাঁড়ায় না? বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নিয়ম-নীতি অনুসরণ করছে কিনা তার দেখভালের জন্য রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট দফতর আছে। এই দফতরের আদৌ কাজ কী? ‘রোগী মরিবার পর ডাক্তার আসিলো’ বলে অনিয়ম বোঝাতে একটি বচন আছে। প্রতিষ্ঠানগুলো কি অক্ষরে অক্ষরে এই বচন অনুসরণ করে? তা না হলে যখনই কোনও দুর্ঘটনা ঘটে, মানুষ মারা যায়, তারপর অনিয়মের গল্প প্রকাশ হয় কেন? আগে কেন হয় না? এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাব্যক্তিরা কেন সঠিক দায়িত্ব পালন করেন না। চোর পালানোর পর বুদ্ধি বাড়লে তো কাজের কাজ কিছু হবে না। আমাদের দেশে সাধারণত কী হয়? কোনও ঘটনা ঘটলে প্রচারমাধ্যম থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। দুই একদিন তোলপাড় থাকে। তদন্ত কমিটি গঠনের সংবাদ আসে। তারপর আস্তে আস্তে ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যায়। পুরনো ঢাকার নিমতলীসহ একাধিক স্থানে ইতোপূর্বে বারবার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। অসংখ্য মানুষের করুণ মৃত্যু হয়েছে। প্রতিটি ঘটনার পরই আবাসিক এলাকায় দাহ্য পদার্থ বিক্রির দোকান অথবা প্রতিষ্ঠান রাখা যাবে না বলে প্রচারমাধ্যমে সংবাদ প্রচার/প্রকাশ হয়েছে। অথচ পুরনো ঢাকা থেকে একটিও কেমিক্যালের দোকান, প্রতিষ্ঠান সরে যায়নি। অচিরেই হয়তো বা আবারও ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটবে। অসহায় কিছু মানুষ আগুনে পুড়ে মারা যাবে। পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা আসবে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ হলেও কার্যত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।

দেশে এই ধরনের অপরাধ অনিয়ম, দুর্নীতি অব্যাহত গতিতে বাড়তে থাকায় আস্থাহীনতার সংস্কৃতি বেগবান হচ্ছে! কোনও অপরাধ সংঘটিত হলে দেশের মানুষ এর তাৎক্ষণিক বিচার দেখতে চায়। দোষী ব্যক্তির শাস্তি হয়েছে এটাই আশা করে। কিন্তু তাদের সামনে এ ধরনের কোনও নজির নেই। বরং অপরাধীরাই প্রকাশ্যে দাপট দেখাচ্ছে। এ ধরনের নজির ভূরি ভূরি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের অসহায় গরিব, দুঃখী মানুষের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প চালু করেছেন। বিনে পয়সায় জমি ও বসতবাড়ি পেয়েছে দেশের অসহায় ভূমিহীন মানুষ। পৃথিবীর আর কোনও দেশে বোধকরি এ ধরনের জনবান্ধব কর্মসূচি চালু নেই। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, প্রধানমন্ত্রীর এই আন্তরিক উদ্যোগকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা ভূমিহীনদের ঘরবাড়ি অনেক স্থানে নির্মাণের পরপরই ধসে পড়েছে অথবা ঘরের দেয়ালে ফাটল ধরেছে। ভেবে পাই না মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই আন্তরিক উদ্যোগকে যারা প্রশ্নবিদ্ধ করলেন তাদের সাহসটা আসে কোত্থেকে?

আমাদের দেশে মৌসুমভিত্তিক কিছু সংকট তৈরি হয়। এটা যতটা না প্রাকৃতিক তার চেয়ে বেশি মানুষ্যসৃষ্ট সংকট। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে উৎসব-পার্বণে দ্রব্যমূল্যের  দাম কমিয়ে দেওয়া হয়। এটা হলো জনগণের জন্য উৎসব বোনাস। আর আমাদের দেশে উৎসব পার্বণ মানেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। উৎসব-পার্বণ মানেই ক্রেতাকে ঠকানোর দুর্দান্ত প্রতিযোগিতা। উৎসব-পার্বণ  মানেই মহাসড়কে ভয়াবহ যানজট। বছরের পর বছর চলছে এই অনিয়ম, অস্থিরতা। পত্র-পত্রিকাসহ প্রচারমাধ্যমসমূহে দেশের সড়ক পথে ভয়াবহ যানজট ও মানুষের সীমাহীন ভোগান্তির চিত্র দেখানো হচ্ছে। প্রতি ঈদে এভাবেই দেখানো হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীসহ কর্মকর্তারা প্রতিশ্রুতি দেন আগামী বছর জনগণকে আর ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হবে না। পুরনো বছর যায়। নতুন বছর আসে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। কয়েকদিন আগে সড়ক পথে ঢাকা থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত গিয়েছিলাম। লকডাউনের মধ্যেও পথে পথে সীমাহীন যানজটের মুখোমুখি হয়েছি। লকডাউনেও কেন সড়কে যানজট? কারণ খোঁজার চেষ্টা করে দেখলাম, ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী হাইওয়ের রাস্তাঘাট আগের চেয়ে বেশ উন্নত হয়েছে। একমুখী চলাচলের প্রশস্ত রাস্তা দেখে মন প্রাণ জুড়িয়ে গেলো। কিন্তু সমস্যার সৃষ্টি করেছে কিছু কালভার্ট অথবা ব্রিজ। কাজ থেমে আছে। ফলে বিশাল আকারের রাস্তা দিয়ে দূরপাল্লার গাড়ি সাই সাই করে ছুটে এসে কালভার্ট অথবা ব্রিজ নির্মাণের অপেক্ষাকৃত সরু রাস্তায় থেমে যাচ্ছে। এরকম বহু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে দেশের অধিকাংশ মহাসড়কে। করোনাকালে দেশের উন্নয়নমূলক কাজ তো আর থেমে নেই। উত্তরবঙ্গগামী মহাসড়কের কাজও চলেছে। কিন্তু কাজের গতি খুবই শ্লথ! অধিকাংশ জায়গায় দেখলাম রাস্তা নির্মাণের রড, ইট, বালু নিয়ন্ত্রণহীনভাবে পড়ে আছে। বৃষ্টিতে ধুয়ে নিচ্ছে বালু! দেখার কেউ নেই। ‘সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল’ এমন অবস্থা। অথচ কর্তৃপক্ষ একটু তৎপর হলেই উত্তরবঙ্গগামী মহাসড়কের তীব্র যানজট এবার ঠেকাতে পারতেন। এটা করা গেলে মানুষের এত ভোগান্তি হতো না।

মানুষের ভোগান্তি কি শুধু পথেই হচ্ছে? না, তা নয়। বাজারেও চলছে ভোগান্তি। ঈদ উপলক্ষে অধিকাংশ দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েছে। প্রচারমাধ্যমেই ‘দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশেই নাকি চালের দাম বেশি’– এমন খবর বেরিয়েছে। অথচ চাল উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে আমরাই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এগিয়ে আছি। তাহলে অন্য দেশের চেয়ে আমাদের দেশে চালের দাম কেন বাড়বে? এই প্রশ্নের উত্তর পাবো কার কাছে?

ঈদ মানেই খুশি, ঈদ মানেই আনন্দ। আর ঈদ মানেই ছুটি আর ছুটি। ঈদের ছুটিকে বাড়িয়ে দিতে দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা সাজিয়েছে। কিন্তু আমরা কি থাকবো দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সাথে? আমরা জেনে না বুঝে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন নিয়ে অনেক ভুল তথ্য দেই। ভুল কথা বলি। আমাদের টেলিভিশন নাটক নিয়ে অনেকের নাক সিটকানো ভাব লক্ষ করি। ভাবটা এমন- আমাদের নাটক, সিনেমা সেই অর্থে কিছুই হয় না। যারা এ ধরনের মন্তব্য করেন তারা না বুঝে করেন। না দেখে করেন। এই লেখাটির প্রয়োজনে আমি ১৫ জন নানা পেশার মানুষের সাথে কথা বলেছি। এদের ৯ জনই দেশের টেলিভিশন দেখেন না। কেন দেখেন না প্রশ্ন করে সন্তোষজনক উত্তর পাইনি। কয়েকজন দায়সারা উত্তর দিয়েছেন। বলেছেন, আমাদের দেশে আবার নাটক সিনেমা হয় নাকি? পাল্টা প্রশ্ন করেছি– আপনি শেষ কোন টিভি নাটক অথবা সিনেমা দেখেছেন তার নাম বলুন। ৯ জনই এর উত্তর দিতে পারেননি। অথচ জোর দিয়ে বললেন, এই দেশে নাকি কিছুই হয় না।

এটা এক ধরনের উন্নাসিকতা। আমরা কথায় কথায় অন্য দেশের উদাহরণ দেই। কিন্তু সেই উদাহরণটা দেশে সৃষ্টি করতে চাই না। বিদেশে গেলে নিয়ম মানি, দেশে এসে একই নিয়ম মানতে চাই না। বরং যে যত নিয়ম ভাঙে, নিয়ম অমান্য করে। দুর্নীতি করে, মানুষকে ঠকায় সেই যেন নায়ক। সত্যি কি সে নায়ক? এই প্রশ্নের উত্তর পাবো কার কাছে?

আগেই বলেছি এবারের ঈদটা অন্যরকম- এই শিরোনামে একটি গান বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সত্যি এবারের ঈদটা অন্যরকম। এবারও কোলাকুলি হবে না। জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব মানতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি মাস্ক পরার জন্য জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সরকারের এই নির্দেশ অথবা পরামর্শ অনুযায়ী নিয়ম-কানুন মানছি কি আমরা? না মানছি না। বরং অনিয়মকেই নিয়মে পরিণত করেছি। সেজন্যই নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় ৫২ জন অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পরও নির্ভার হয়ে আছি যেন কিছুই হয়নি। প্রতারকরা প্রতারণার জাল ফেলে সাধারণ মানুষকে প্রকাশ্যে ঠকাচ্ছে দেখেও না দেখার ভান করছি। করোনার সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। সেই সাথে প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। তবু আমাদের হুশ হচ্ছে না। এই যে অনিয়ম আর অনাচার, শেষ পর্যন্ত আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে বলা মুশকিল।

প্রিয় পাঠক, মাফ করবেন পবিত্র ঈদের খুশির দিনে এমন ভারী ভারী কথা লেখার জন্য। এবারের অন্যরকম ঈদটা আনন্দময় হোক। শুভ কামনা থাকলো সবার জন্য। ঈদ মোবারক।

লেখক: কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, সম্পাদক: আনন্দ আলো।

 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
পূজা শেষে বাড়ি ফেরার পথে বাসচাপায় বাবা-ছেলে নিহত
পূজা শেষে বাড়ি ফেরার পথে বাসচাপায় বাবা-ছেলে নিহত
জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করছে পুলিশ: আইজিপি
জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করছে পুলিশ: আইজিপি
তামাকপণ্যের দাম বাড়ানোর দাবি
তামাকপণ্যের দাম বাড়ানোর দাবি
ভারত সফর স্থগিত করলেন ইলন মাস্ক
ভারত সফর স্থগিত করলেন ইলন মাস্ক
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ