X
রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫
১৫ আষাঢ় ১৪৩২

কান্না, অবজ্ঞা, অহমিকায় চলচ্চিত্র যেন হারিয়ে না যায়

রেজানুর রহমান
২১ জানুয়ারি ২০২২, ১৫:৫২আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০২২, ১৫:৫২
রেজানুর রহমান চিত্রনায়ক রিয়াজ হাউমাউ করে কাঁদছেন। তার আশপাশে যারা দাঁড়িয়ে আছেন তারাও কাঁদছেন। তাদের কান্না রিয়াজের কান্নাকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে। প্রথমে ভেবেছিলাম এটা বোধকরি নতুন কোনও সিনেমার শুটিং দৃশ্য। পরে বুঝলাম নতুন ছবির শুটিং দৃশ্য নয়। বাস্তবে ঘটছে। সত্যি সত্যি কাঁদছেন রিয়াজ। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ভোটাধিকার বঞ্চিত কয়েকজন শিল্পীকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন। তার সঙ্গে কাঁদছেন আরও অনেকে।

চিত্রনায়ক রিয়াজের এই কান্নার ঘটনা চলচ্চিত্র পাড়ায় বেশ আলোচিত এখন। কেউ কেউ বলছেন রিয়াজের কান্না হৃদয় ছুঁয়েছে সবার। ভোটাধিকার বঞ্চিত শিল্পীদের জন্য রিয়াজের এই কান্না অনেকের বিবেকে নাড়া দিয়েছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, রিয়াজের কান্না ছিল এক ধরনের স্টান্টবাজি। নিজেদের নির্বাচনি প্যানেলের প্রতি ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য রিয়াজ কান্নার অভিনয় করেছেন।

বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে সিনেমা বলতে এখন আর কিছু নেই। নতুন সিনেমার স্রোত কমে গেছে। অনেক বিভাগীয় শহরেও এখন সিনেমা হল নেই। সিনেমার বিশ্লেষণে এফডিসি বলতে গেলে খাঁ খাঁ মরুভূমি। তবে কারও কান্না, কারও অবজ্ঞা, কারও অহমিকার দোলাচলে সিনেমাহীন দেশের সিনেমা অঙ্গন নির্বাচনি ডামাডোলে হঠাৎ যেন সরগরম হয়ে উঠেছে। তবে কোথাও প্রকৃত অর্থে সিনেমার কথা নেই। আছে ভোটের কথা। ভোট চাই। ভোট দিন। ভোটের লড়াইয়ে আমাদের সিনেমা অঙ্গনের প্রকৃত চেহারাটা ঠিক ঠাওর করা যাচ্ছে না।

২৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মূলত দুটি প্যানেল এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করছে। একটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন চিত্রনায়ক, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের নেতা ইলিয়াস কাঞ্চন ও চিত্রনায়িকা নিপুণ। অন্য প্যানেলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বর্তমান কমিটির সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান। উভয় প্যানেলেই নবীন-প্রবীণের উপস্থিতি রয়েছে। নির্বাচন মানেই ভোট উৎসব। প্রকৃত অর্থেই ভোট উৎসবে মেতে উঠেছে দেশের চলচ্চিত্রাঙ্গন বিশেষ করে এফডিসি। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির এবারের নির্বাচন অন্যান্যবারের চেয়েও একটি ভিন্নমাত্রা যুক্ত করেছে। বিশিষ্ট চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ভোটের মাঠে যুক্ত হওয়ায় নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের আগ্রহ একটু যেন বেশি। পাশাপাশি ভোটাধিকার বঞ্চিত ১৮৪ জন শিল্পীর বিষয়টি এবার বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যদিও সংখ্যাটি ১৮৪ কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শিল্পী সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বলেছেন, তারা যে ১৮৪’র কথা বলছেন, আসলে সংখ্যাটি ১৮৪ হবে না। সংখ্যাটি ১৫০ অথবা তার কিছু বেশি। তাদের ভোটাধিকার নেই। কিন্তু তারা তো এখনও সমিতির সহযোগী সদস্য রয়েছেন। জায়েদ খান বলেছেন, ‘কারা শিল্পী কারা শিল্পী না বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়া প্রয়োজন। আমার গাড়ির ড্রাইভার কমপক্ষে ২০টি সিনেমায় গাড়ির দরজা খুলে দেওয়ার অভিনয় করেছে। তাকেও কি আপনারা শিল্পী বলবেন?’

তবু ভোটাধিকার বঞ্চিত শিল্পীরাই এবার চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে বেশ আলোচিত হয়ে উঠেছেন। একটানা দুই বছর যে সব শিল্পী সিনেমায় অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত নেই মূলত তাদের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়। মহামান্য আদালতে এ নিয়ে মামলা হয়েছে। মহামান্য আদালত শিল্পী সমিতির কাছে এই সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছেন। ভোটাধিকার বঞ্চিত শিল্পীদের তালিকায় সদ্য প্রয়াত চিত্রনায়িকা রাইমা ইসলাম শিমুও ছিলেন। মৃত্যুর আগে তিনি একাধিক সাক্ষাৎকারে ভোটাধিকার সংক্রান্ত শিল্পী সমিতির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে বলেছেন, ‘আমি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সিনেমায় নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেছি। অথচ আমাকে শিল্পী সমিতি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এটা অন্যায়। একই অভিযোগ করলেন ভোটাধিকার বঞ্চিত আরও অনেক শিল্পী। কয়েকজন বললেন, দুই বছর যারা ছবিতে অভিনয় করেনি সমিতিতে তাদের ভোটাধিকার থাকবে না বলা হচ্ছে। কিন্তু দেশে তো সেভাবে সিনেমাই নির্মাণ হচ্ছে না। কাজেই অভিনয় করবো কোথায়?

তবে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের সিনেমাঙ্গন, বিশেষ করে এফডিসি এখন বেশ সরগরম। দুটি প্যানেলই প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে জোরেশোরে। এই সুযোগে বহিরাগতদের উপস্থিতিও বেড়েছে। অতি উৎসাহীরা নায়ক-নায়িকাদের দেখার জন্য এফডিসিতে ভিড় করছেন। মোবাইল ক্যামেরায় প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিতে প্রতিদিনই সংবাদকর্মী পরিচয়ধারীদের ভিড় বাড়ছে। ১৯ জানুয়ারি বিকালে এফডিসিতে গিয়েছিলাম। নির্বাচনি প্রচারণা চলছিল বেশ জোরেশোরে। একজন প্রার্থীর সাক্ষাৎকার নিচ্ছে সংখ্যায় ৩০-এর অধিক তরুণ-তরুণী। সবার হাতে স্মার্ট মোবাইল ফোন। সবাই নাকি সংবাদকর্মী। পরিবেশ বেশ বড় একটা জটলায় রূপ নিয়েছে। কয়েকজনকে দেখলাম লাইভ সাক্ষাৎকার নিচ্ছে।

যতদূর জানি এফডিসি একটি নিয়ন্ত্রিত এলাকা। এখানে সর্বসাধারণের অবাধ প্রবেশ থাকার কথা নয়। অথচ শিল্পী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বহিরাগতদের আনাগোনা, জমায়েত প্রতিদিনই বাড়ছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে এখনই পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। সেই সঙ্গে জরুরি এবারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলচ্চিত্রের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে একটা সমন্বিত উদ্যোগ। মনে রাখতে হবে, সিনেমার উন্নতি না হলে সংগঠনের নেতা হয়ে কোনও লাভ হবে না। কাজেই সিনেমার উন্নয়নের কথাই এবারের নির্বাচনে অধিক গুরুত্ব পাক- এই প্রত্যাশা সবার।

লেখক: কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, সম্পাদক- আনন্দ আলো।
/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
উইলিয়ামসের ১৩৭ রান ছাপিয়ে দ্বিতীয় দিনেও দক্ষিণ আফ্রিকার দাপট
উইলিয়ামসের ১৩৭ রান ছাপিয়ে দ্বিতীয় দিনেও দক্ষিণ আফ্রিকার দাপট
এনবিআরের চলমান অচলাবস্থা নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছে আইএমএফ
এনবিআরের চলমান অচলাবস্থা নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছে আইএমএফ
জামালপুরে ইউপি সদস্যকে হত্যা
জামালপুরে ইউপি সদস্যকে হত্যা
পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি: ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ ও তার দুই সহযোগী রিমান্ডে
পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি: ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ ও তার দুই সহযোগী রিমান্ডে
সর্বশেষসর্বাধিক