X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

জীবন যেন ‘হাওয়াই মিঠাই’

তুষার আবদুল্লাহ
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৭:১১আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৭:১১

তুষার আবদুল্লাহ ক্রিকেট খেলা শেষ করে অফিস ফিরতেই মাঘের আকাশে আষাঢ়ের সাজ। সঙ্গে ‘আউলা’ বাতাস। এমন দিনে ইট বাক্সে বন্দি থাকা মুশকিল। আরও মুশকিল পুত্র- কন্যার কাছ থেকে দূরে থাকা। কাজকে ছুটি দিয়ে ছুটে গেলাম কন্যার আলিঙ্গনে। পুত্রতো সকাল থেকেই জড়ানো। ঢাকার উত্তর দিকে ঘুরাঘুরি। উপায় খোঁজা, কী করে একুশে ফেব্রুয়ারি শিশুদের জন্য অনুষ্ঠান করা যায়। উত্তরায় নাকি শিশুদের জন্য বইয়ের আয়োজন কম। ওদের জন্য সেখানে বর্ণ উৎসব আর বইমেলা করতে পার্ক, সড়ক ঘুরে দেখলাম। আমরা ভিজলাম। যেমন ভিজি আষাঢ়- শ্রাবণের বৃষ্টিতে। ছেলের পা ডুবে গেলো মাঘের জমা জলে। তবু আমাদের হাঁচি নেই, কাশি নেই। আমাদের কণ্ঠে উচ্ছ্বাস, কিছু একটা হবে, একুশেতে হবে।

ফিরছি যখন, তখন সন্ধ্যে নেমেছে অনেকক্ষণ। ছেলে বলছে ঠাণ্ডায় ও কটকটি হয়ে যাচ্ছে। মেয়ে জানতে চাইলো– বাবা তুমি কি একা? আমি অবাক হয়ে জানতে চাইলাম– আমি, একা, এমন মনে হলো কেন? মেয়ে বলে– ওই মানুষটাও নাকি একা ছিলেন, অনেক মানুষই নাকি একা হয়ে যাচ্ছেন?

আমি কিছুক্ষণ সামনের পথ বাতি আর গাড়ির আলোক তরঙ্গের দিকে চেয়ে রইলাম। কেন, তা বলতে পারবো না। মেয়ের প্রশ্নের কী উত্তর খুঁজছিলাম। যাইহোক ছেলেও কি তার দাদা’র প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে আমার কাছে?

ছেলে বললো, বাবা, দাদা মনে হয় তোমার কাছে কিছু জানতে চাইছে। আমি ওকে আরও শক্ত করে বুকে আটকে নিয়ে বললাম– দেখ, এই যে অফিস শেষ না হতেই, তোর ভাই বলতে থাকে– বাবা কখন আসবে, আমাদের হাঁটার সময় হয়ে গেছে তো। জলদি আসো। আজ কিন্তু ম্যারাথনের মতো দৌড়াতে হবে। আর তুই। তোর জন্য কিনে আনা চকলেট, আইসক্রিম আমাকে ছাড়া খেতেই পারিস না। বসে থাকিস, আমার ফেরার অপেক্ষায়। শহরে কখন কোথায় ফুল ফুটলো, সেই ফুল কি একা দেখা যায়? তুই আমি, আমরা কেউ কোনও সুন্দর একা দেখতে পারি না। কোনও উৎসবে একা কাটাতে পারি না। এই যে জাপ্টে রাখিস। এভাবে থাকলে কেউ কি একা হয়ে যায়, যেতে পারে?

মেয়ে বলে, কতজনকেই তো শুনি ছেলে-মেয়েরা দূরে থাকে। আবার ছেলে-মেয়েরা বলে, বাবা মায়েরা সময় দেয় না। জানতে চাই, তোর কি মনে হয়? মেয়ে বলল, একা থাকা না থাকা। সবাইকে জড়িয়ে থাকা, সবই নির্ভর করে আমরা কেমন করে থাকতে চাই। এই ধরো আমার কাছে মনে হয়, সহপাঠী বন্ধু সবাই চারপাশে আছে। কখনও কখনও মনে হয় এত নিঃস্বার্থ  ভালোবাসা হয় না। হতে পারে না। কিন্তু ধীরে ধীরে সংখ্যাটা কমে আসে। বেরিয়ে আসে স্বার্থের জিহবা। লেনদেনের  সম্পর্কে ক্লান্তি আসে। সুতরাং প্রত্যাশা কারও কাছে না রাখাই ভালো বাবা। যে যতটুকু দিলো, তাতেই তুষ্ট থাকা ভালো। আমি মেয়ের বিশ্লেষণ শুনে যাই। মেয়ে বলতে থাকে– আমি দেখেছি, ভাই বোন, বাবা-মায়ের সঙ্গেও অনেকের বোঝা পড়াতে সমস্যা হয়। সেখানেও দেখেছি জমি, টাকা  নিয়ে অভিমান।

আমরা বাড়ির পথে আছি। রেলগাড়ি যাচ্ছে। আটকে আছি লেভেল ক্রসিংয়ে। মেয়ের কাছে জানতে চাই, তাহলে সমাধান? মেয়ে বলল– দেখো বাবা, আমার ঘরের পাশে একটা বারান্দা আছে। সেখানে দাঁড়িয়ে আমি চা খেতে পারি আকাশ দেখতে দেখতে। বৃষ্টিতেও ভিজে। আবার আমার অনেক পরিচিতের ঘরের বারান্দা আমাদের ফ্ল্যাটের সমান। বারান্দা থেকে সিঁড়ি উঠে গেছে ছাদে। তা দেখে আমার ওই বারান্দার জন্য মন খারাপ হতে পারে। তুমি দিতে না পারলে হতে পারে অভিমান। কিন্তু আমিতো এও জানি আমার অনেক বন্ধুর নিজের ঘর নেই। বাবা, সেদিন বন্ধুদের নিয়ে কফি খাচ্ছিলাম। কফির কাগজের গ্লাস ছুঁড়ে দিয়েছিলাম বাইরে। ৭/৮ বছরের এক শিশু। ও’ চা বিক্রি করে বেড়ায়। কাগজের গ্লাসগুলো চেয়ে নিলো ও’। দাম কত ওই গ্লাসের, জানতে চাইলো। বললো ঘরে নিয়ে খেলবে। ওর হাতে গ্লাসগুলো তুলে দেওয়ার পর কী যে সুন্দর হাসি দিলো ছেলেটা। ভাবলাম বড় ঘর, বারান্দা, কফি আমাদের খুশি করতে পারে না। অথচ মাত্র খালি কয়েকটা গ্লাস ছেলেটাকে কত আনন্দ দিলো। বাবা জীবনের চাওয়াটা সামান্য, সহজ ও সংযমের হলে জটিলতা, শূন্যতা জীবন থেকে সরে যাওয়ার মাইলফলকে পৌঁছাবে না কখনই ।

বাড়ির কাছেই চার মাথার মোড়। বৃষ্টির মধ্যেই হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করছিল এক কিশোর। মেয়ে-ছেলে মিলে হাওয়াই মিঠাই খেতে থাকি। মেয়ে বলে– বাবা, জীবনটাতো হাওয়াই মিঠাই, তাই না?

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ