X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

গণমানুষের আস্থায় আওয়ামী লীগ

ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন
২৩ জুন ২০২২, ০০:১৮আপডেট : ২৩ জুন ২০২২, ০০:১৮

২৩ জুন আওয়ামী লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠিত হয় আওয়ামী মুসলিম লীগ। পরবর্তীকালে সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে উঠে আওয়ামী লীগ হিসেবে পরিচিত হয় দলটি। ঐতিহাসিক এক প্রেক্ষাপটে জন্ম নেওয়া এ রাজনৈতিক দলটি পরবর্তী সময়ে নানা ইতিহাসের জন্ম দিয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে পূর্ব বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য লড়ে গেছে আওয়ামী লীগ। ভাগ্য ফিরিয়েছে দেশের মানুষের। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের হাত ধরে এসেছে বাঙালি জাতির চূড়ান্ত বিজয়। ১৯৭১ সালে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জাতি গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে আওয়ামী লীগ। হয়ে উঠেছে আপামর জনতার আস্থার সংগঠনে। এখন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা দেশের মানুষের দিনবদলের প্রচেষ্টায় এগিয়ে চলেছেন।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন ভেঙে ধর্মের ভিত্তিতে উপমহাদেশে জন্ম নেয় দুটি পৃথক রাষ্ট্রের। এর কয়েক মাসের মধ্যে জন্ম নেয় পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। তরুণ শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। এর পরের বছরেই পাকিস্তানের প্রথম রাজনৈতিক দল হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি, শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক, শেখ মুজিবুর রহমানকে (কারাবন্দি ছিলেন) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হয় আওয়ামী (মুসলিম) লীগের প্রথম কমিটি। ১৯৫৫ সালে দলটির নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়।  ধর্মনিরপেক্ষতাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে দলের নামকরণ হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ।’

পরবর্তী সময়ে পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পথপরিক্রমা নির্ধারিত হয়েছে আওয়ামী লীগের হাত ধরে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পথপরিক্রমাকে যদি তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়, তবে প্রথমে আসবে স্বাধীনতা পূর্ব সময়কাল। স্বাধীনতার আগের ২৩ বছরের পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালির অধিকার আদায়ের কথা উচ্চারিত হয়েছে আওয়ামী লীগের মাধ্যমে। সেই সময় আওয়ামী লীগকে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, আইয়ুবের সামরিক শাসন-বিরোধী আন্দোলন, ৬৪-এর দাঙ্গার পর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা, ৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন এবং ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ বাঙালি জাতির স্বাধীনতার পটভূমি রচনা করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ২৩ বছরের আপসহীন লড়াই-সংগ্রাম জাতিকে একটি চূড়ান্ত বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়।

এরপর দ্বিতীয় ভাগে রয়েছে বাঙালির নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি মুক্তিযুদ্ধের ডাক দেন। তার ডাকে বাঙালি অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। এই যুদ্ধের সময় আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে বিদেশে জনমত গঠন যেমন করেছে তেমনি রণাঙ্গনেও নেতৃত্ব দিয়েছে। এই সশস্ত্র জনযুদ্ধের মাধ্যমেই ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এর মাধ্যমে প্রতিফলিত হয় বাঙালির হাজার বছরের লালিত স্বপ্ন। তৃতীয়ত, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশ পুনর্গঠনে আওয়ামী লীগের ভূমিকা অপরিসীম, যা এখনও চলমান রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাঙালি জাতির ভাগ্য পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৭৩ বছরে আওয়ামী লীগের অর্জন অনেক। এসব অর্জন মূলত সাধারণ মানুষের জন্য উৎসর্গীকৃত। এই অঞ্চলের গণমানুষের আস্থা অর্জন করেছে দলটি। এটি আওয়ামী লীগের অন্যতম সেরা অর্জন। পাকিস্তান আমলে যেমন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মানুষের অধিকার আদায় করেছে আওয়ামী লীগ, ঠিক তেমনি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও মানুষের আস্থার প্রতিদান দিয়েছে দলটি। মূলত দেশের মানুষের চাওয়া-পাওয়ার প্রতিফলন ঘটেছে আওয়ামী লীগের মাধ্যমে। জাতির জন্য যখন যা প্রয়োজন তাই বাস্তবায়ন করেছে আওয়ামী লীগ। তাই দেশের বড় অর্জনগুলোও অর্জিত হয়েছে দলটির হাত ধরে। যার সর্বশেষ উদাহরণ বহু কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু। প্রশিক্ষিত পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে একাত্তরে যেমন বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে জাতি ঝাঁপিয়ে পড়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল; ঠিক তেমনি বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সৃষ্টি হয়েছে আরেকটি ইতিহাস। দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রকল্প পদ্মা সেতু বাস্তবায়িত হয়েছে বিদেশি কোনও অনুদান ছাড়াই। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি হওয়া পদ্মা সেতু জাতির ভাগ্য পরিবর্তনের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠবে। যা সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের অক্লান্ত পরিশ্রমে।  ২৫ জুন, ২০২২ তারিখে এই সেতু উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ জন্ম দিতে যাচ্ছে আরও একটি ইতিহাসের।

ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, সর্বত্র আওয়ামী লীগ। দেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামের অগ্নিসাক্ষী এই দলটি। এসব আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশ গঠনে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করেছে আওয়ামী লীগ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে তো বটেই; স্বাধীনতার পরও দেশবিরোধীদের নানা ষড়যন্ত্র ছিল বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। এসব ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সময় সবচেয়ে বড় ক্রান্তিকাল অতিক্রম করেছে আওয়ামী লীগ। তবে ষড়যন্ত্রকারীদের রুখে দিয়ে ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে এসে আবারও ঘুরে দাঁড়ায় দলটি।

১৯৬৬ সালে বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে স্বাধিকার আদায়ের জন্য ঐতিহাসিক ৬ দফা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। সেই ৬ দফা ছিল বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনের প্রথম পদক্ষেপ। বাঙালির মুক্তির সনদ। স্বাধিকার আন্দোলনের পথ বেয়েই ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান আসে। এই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের ভূমিকা দলটিকে এই অঞ্চলের একক বৃহৎ রাজনৈতিক দলে পরিণত করে। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরিণত হন দলের তথা বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে।

এভাবে সত্তর সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সফল নায়ক ছিলেন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সভাপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশের ইতিহাস রচনা এক কথায় অসম্ভব।

৭৩ বছরের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসে আওয়ামী লীগ কথা বলেছে সাধারণ মানুষের। মানুষের আস্থার প্রতীকে পরিণত হওয়া এই সংগঠনটি উপমহাদেশের বৃহত্তম ও দেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল। ৭৩ বছরের পথপরিক্রমায় দলটিকে অনেক চড়াই-উতরাই পার হতে হয়েছে। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগের হাতেই বর্তায় দেশ গঠনের দায়িত্ব। বঙ্গবন্ধুর সুদক্ষ নেতৃত্বে সেই কাজ বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে চলছিল। কিন্তু মাত্র চার বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে ঘাতকেরা। দলের ভেতরে ভাঙন সৃষ্টিতে তৎপর হয় স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী। অস্তিত্ব সংকটে পড়ে আওয়ামী লীগ। থমকে পড়ে জাতির ভাগ্য। পাকিস্তানি পরাজিত গোষ্ঠী বাংলাদেশকে পিছিয়ে নিতে চায় একাত্তরের পূর্ববর্তী সময়ে। বাংলাদেশ এবং আওয়ামী লীগের চরম দুঃসময়ে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। প্রাণের ভয়কে উপেক্ষা করে দেশে ফিরে এসে দলের হাল ধরেন তিনি। দীর্ঘ একদশক ঘুরে ঘুরে দলকে সুসংগঠিত করার কাজ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। আবারও সংগঠিত হয়ে দেশবিরোধীদের সব ষড়যন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে এগিয়ে যায় আওয়ামী লীগ। দেশ থেকে স্বৈরশাসনের বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠাতেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তিনি। ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশে যে স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলন শুরু হয় তার অন্যতম প্রতীক হয়ে ওঠে আওয়ামী লীগ। যুগপৎ আন্দোলনে স্বৈরশাসকের পতন হয়।

১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ সরকার। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে মনোনিবেশ করেন তিনি। এরপর ২০০৮ সালে ফের ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ সরকার। এখন টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় রয়েছে দলটি। বিগত ১৩ বছরে দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে অভূতপূর্ব পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু একটি দেশ উপহার দিয়েছেন। আর তারই কন্যা সেই দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করার কাজটি করেছেন দক্ষ হাতে। তারা দুজনই আওয়ামী লীগের ইতিহাসে অনিবার্য হয়ে উঠেছেন। আওয়ামী লীগের অভিযাত্রা দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও দিনবদলের প্রত্যয়ে। যে কারণে দলটি হয়ে উঠেছে বাঙালি জাতির মুক্তির দিশারী।

লেখক: অধ্যাপক; বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিবিদ; সদস্য, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এবং পরিচালক, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল)। সহ-সভাপতি, আমরাই ডিজিটাল বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন।

 

 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ