X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

মন ভালো করার থেরাপি!

আহসান কবির
০৮ জুলাই ২০২২, ১৯:০৩আপডেট : ০৮ জুলাই ২০২২, ১৯:০৭
মন ভালো করার বিচিত্র এবং মজার অনেক উপায় আছে। সবচেয়ে প্রচলিত উপায়টা হচ্ছে ‘হাসি’। হাসি নাকি রক্তচাপ কমায় আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। হাসি না এলেও হাসা যায়। যেমন কোরিয়ান সেনাবাহিনীর এক জেনারেল এসেছেন সফরে। তিনি দেশীয় সেনাবাহিনীর সদস্যদের সামনে বক্তৃতা দিলেন। সবাই তালি দিলো। সবশেষে একটা কৌতুক বললেন জেনারেল। সবাই চুপচাপ থাকলো, হাসলো না। কোরিয়ান জেনারেলকে উৎসাহ দিতে দেশীয় এক জেনারেল বললেন, উনি একটা হাসির গল্প বলেছেন। সমবেত সৈনিকরা আপনারা খুব করে হাসুন! সঙ্গে সঙ্গে হাসির বন্যা বয়ে গেলো, যা দেখে হাসি এলো কোরিয়ান জেনারেলেরও!

ধানমন্ডি লেক বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সকালে যারা হাঁটতে বা শরীর চর্চা করতে যান তারা জানেন যে একটা জায়গায় অনেকেই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ অনর্গল হাসেন। এটাও নাকি ব্যায়াম। তবে শরীরচর্চার এই আয়োজনে তারা হাউমাউ করে কাঁদেনও। লেক ও পার্কের সেসব ব্যায়ামবিদদের মতে, কান্নাও মন ভালো করে দেয়। মন খুলে হাসার মতো মন খুলে নাকি কাঁদতেও হয়। কথায় তো আছেই, যত হাসি তত কান্না।

গান শুনলেও নাকি মন ভালো হয়। পৃথিবীর বেশিরভাগ জনপ্রিয় গান হচ্ছে বিষাদের। প্রেমিকাকে হারানোর পর ছবি দেখতে যাওয়া এবং কান্না নিয়ে ফেরার পর যখন প্রেমিকার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল তুমি কি কাঁদছো? এর উত্তরে কান্না লুকিয়ে সেই প্রেমিক বলেছিলেন, স্যাড মুভিজ অলওয়েজ মেক মি ক্রাই! ‘স্যাড মুভিজ অলওয়েজ মেক মি ক্রাই’–এখন জনপ্রিয় একটি গান। বিরহকে গানে রূপান্তরিত করে সেই গানের সঙ্গে নাচলেও ভালো লাগে। মন ভালো হয় কিন্তু। বিশ্বাস হচ্ছে না?

২০২২-এর জুনে এক নায়ক-নায়িকা দম্পতির ঘরে অশান্তি, এক খলনায়কের ছেলের বিয়ের আসরে চর মাড়া, পিস্তল দেখানোর ঘটনা ভাইরাল হবার পর অনেকেই ১৯৮৯-৯০ সালের একটা গান ট্যাগ করেছিলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ফিডব্যাক ব্যান্ডের সাবেক শিল্পী মাকসুদের সেই গানের কথা ছিল এমন– ‘তার বুকের আলিঙ্গনে লুকিয়ে.. তুমি ভাবছো কি আমার কথা? তার সুখের ঘরনী হয়ে তোমার মনে পড়ছে কী আমার কথা? না কোনও বিরহের গান শুনে তুমি করছো উপহাস? ও মৌসুমী বলো কার তুমি নাকি ভুল হয়ে গেলো আমার’?

এই গান শুনে এখনও আপনার নাচতে ইচ্ছে হতে পারে। নাচার ইচ্ছেটাই আসল। সকাল সন্ধ্যায় ধানমন্ডি লেকের পাশে পোষা কুকুর নিয়ে দৌড়ানোর দৃশ্যও চোখে পড়ে। এমন দৌড়ানোর পর নাকি মন ভালো হয়। বিড়াল নিয়েও আপনি এমন দৌড়াদৌড়ি করতে পারেন। মন ভালো হওয়া নিয়েই কথা। মন ভালো করার জন্য আপনি ছবি অর্থাৎ ফিল্ম দেখতে পারেন। দেশ-বিদেশে ভ্রমণে যেতে পারেন।

মন ভালো করার জন্য আরও কিছু জিনিস বেরিয়েছে বাজারে। আপনি ইচ্ছে হলে এসব দেখতে পারেন। যদি মনে হয় গান শুনবেন তাহলে জনৈক আলম নামের একজন যে রবীন্দ্রসংগীত গেয়েছে সেটা শুনতে পারেন। রবীন্দ্রসংগীত পছন্দ না হলে পদ্মা সেতু নিয়ে গানটা শুনতে পারেন। সেটাও পছন্দ না হলে আপনি নিজেই পদ্মা সেতু নিয়ে গান বানাতে পারেন। প্রকৃষ্ট সময় কিন্তু আজ বয়ে যায়। এখন যৌবন যার পদ্মা সেতু নিয়ে গান গাওয়ার তার শ্রেষ্ঠ সময়। আপনার ভালো থাকা নিয়েই কথা।

এসব ভালো না লাগলে আপনি কিছু একটা করে ভাইরাল হতে পারেন। হোক সেটা নাটক কিংবা গান। কোনও টেলিভিশনে ওমুক সাহেবের মতো গানের একক শোও করতে পারেন। সারা দেশে নিন্দার ঝড় উঠলেও কোনও ক্ষতি নেই। আপনার ভালো লাগাটাই আসল এবং সারা দেশের লোকজন আপনাকে চিনবে। আপনি হারিকেন হাতে গান গাইবেন আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত হবে ‘হারিকেন তৈরি রাখুন। খানিক পরেই উঠবে ঝড়’। একই রকমভাবে আপনি অভিনয় না পারলেও নিজের টাকায় ছবি বানিয়ে সেটার একক নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারেন। আপনার যত টাকা তত নাকি অনন্ত সম্ভাবনা।

এসব করতে মন না চাইলে আপনি খানিকক্ষণ বিরোধী দলকে গালাগাল করতে পারেন। হলফ করে বলা যায় আপনার কোনও সমস্যা হবে না। তাসের খেলায় কোনও চাল না থাকলে চিড়া দিয়ে চাল দিতে হয়। তেমনি কোনও কিছু করার না থাকলে বিরোধী দলকে সমালোচনা করাটাও একটা মজার কাজের মধ্যে থাকা। কারণ, অন্য কারও সমালোচনা বা গালাগাল করাটাও নাকি মনের মধ্যে এক ধরনের শান্তি বা ভালোলাগা বোধ তৈরি করে।

জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ নাটকে দেখিয়েছিলেন যে রাগ কমিয়ে মনে শান্তি আনতে গ্লাস ভাঙা কর্মসূচি বেশ কাজে দেয়। আপনি চাইলে গ্লাস ভাঙতে পারেন। ভালো সাঁতার জানলে ব্রিজের ওপর উঠে জলের ভেতর ঝাঁপ দিতে পারেন। সাঁতার এবং হাঁটা খুব ভালো ব্যায়াম, যা করলে নাকি মন ভালো থাকে।

গার্লফ্রেন্ডের সাথে টকশো করতে পারেন। যদি ঠিকঠাক লুকোতে পারেন তাহলে একাধিক গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে জড়াতে পারেন। গার্লফ্রেন্ডের সংস্পর্শে থাকতে পারাটা স্বর্গীয়। সবার ওপরে গার্লফ্রেন্ড সত্য তাহার ওপরে নাই!

মন ভালো রাখার জন্য আরও কিছু উপায় দেখা যায় সামাজিক মাধ্যমে। কেউ সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয় বেশ কিছু লাইক পাওয়ার জন্য। যত লাইক মন তত ভালো। কেউ কেউ বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় খেয়ে ফেসবুকে সেসবের বিবরণ দেয়, যাদের বলা হচ্ছে ‘ফুড ভ্লগার’। একদিন দেখলাম ট্রাকে করে ব্যান্ড পার্টি যাচ্ছে। বাজনা বাজছে। একটা ব্যানারে লেখা– রাস্তার হর্নের চেয়ে বাজনা উত্তম। আপনি যদি গিটার বাজাতে পারেন তাহলে মন ভালো করার জন্য আপনি গিটার, বেহালা বা সন্তুর বাজাতে পারেন। বাদ্যযন্ত্র বাজানো মন ভালো করার ও মনোযোগ বাড়ানোর একটা ভালো উপায়।

আপনি অবশ্য কারও কারও উপদেশমূলক বক্তৃতা শুনতে পারেন, যাদের বলা হয় মোটিভেশনাল স্পিকার। এই মোটি স্পিকাররা আপনাকে বলে দেবে কী করিলে কী হয়! কী করিলে গার্লফ্রেন্ড শান্তিতে থাকে। কী করিলে ভালো চাকরি পাওয়া যাবে। কী খেলে আপনি স্লিম হবেন। কোনও কোনও মোটিভেশনাল স্পিকার আপনাকে ধর্মীয় উপদেশও দিতে পারেন। কখন জিকির করবেন, কখন গজল গাবেন, মসজিদে যাবার আগে বা পরে কী কী করবেন, কার ওয়াজ শুনবেন, সব পাবেন তাদের কথামালায়। এরপরও কী আপনার মন ভালো হবে না?

যদি না হয় তাহলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিতে পারেন। তারা বলে দেবেন মন ভালো করার উপায়। কেউ কেউ ইদানীং হাত দেখাতেও যান। ভবিষ্যদ্বাণী শুনেও নাকি কারও কারও ভালো লাগে। একজনকে চিনতাম, যে রাস্তায় রাস্তায়  ঘুরে পাখিদের দিয়ে ভাগ্যগণনা করা ওয়ালাদের সাহায্য নিতেন। অনেক চেষ্টা করেছেন কিন্তু ভাগ্যের নতুন কোনও তরিকার সন্ধান না পাওয়াতে সেসব ছেড়ে দিয়েছেন। মন ভালো করতে অনেককে দেখেছি ফুটপাত ক্যানভাসারদের লেকচার শুনতে। কেউ কেউ স্টেডিয়ামে কিংবা টেলিভিশনের পর্দায় খেলা দেখতেও ভালোবাসেন।

কোনও কিছুতে কোনও কিছু না হলে অর্থাৎ মন ভালো না হলে হাসি থেরাপি তথা স্ট্যান্ডআপ কমেডির সাহায্য নিতে পারেন, কৌতুক শুনতে পারেন অথবা নিজেও কৌতুক বলতে পারেন! সুতরাং একটি কৌতুক শুনে সামান্য হাসি দিয়ে হলেও এই লেখাটা পড়ে শেষ করুন!

গল্পটা মন ভালো করা নিয়ে। এক লোক বিয়ে করেছে। বাসর রাতে বউয়ের ঘোমটা খুলে সে তো অবাক। বউ পরীর মতো সুন্দর। তার মন এত ভালো হয়ে গেলো যে সে দৌড়ে গেলো ওয়াশরুমে। বালতি ভর্তি পানি নিয়ে এসে সে বউয়ের গায়ে ছিঁটাতে লাগলো। বউ বললো করো কী, করো কী? লোকটা উত্তর দিলো– কী যে বলো না। মালামাল সব তাজা রাখতে হবে না?

লোকটা আসলে সবজির ব্যবসা করেন। মন ভালো করতে প্রয়োজনে জল ছিটানো বা জলকেলি করুন। তাও মন ভালো রাখুন। নিয়মিত ঘুষ খাওয়া অনেককে দেখেছি নিয়মিত মসজিদে যেতে। কৌতূহলী হয়ে একদিন একজনার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ঘুষ খান আবার মসজিদেও যান? লোকটি উত্তর দিয়েছিল, ভাই জানি আমি পাপ করি। পাপ করলে মন খারাপ হয়ে যায়। মন ভালো করার জন্য প্রার্থনা করি।

প্রার্থনায়ও মন ভালো হতে পারে। প্রয়োজনে প্রার্থনা করুন, ঘুষ দুর্নীতি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখুন। স্রষ্টাকে ডাকার পরে মন যেমন ভালো হয় সেই ভালো মন নিয়ে বাঁচুন।

অন্যের ক্ষতি না করে পাপহীন বেঁচে থাকাটাই আসল। অন্যকে ছোট করার ভেতর যে মজা সেটাও নাকি মানুষকে অনেক আনন্দ দেয়, মন ভালো রাখে। মন ভালো রাখার এই পদ্ধতিটা নিপাত যাক!


লেখক: রম্যলেখক
/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
হৃদরোগ বিভাগে ছারপোকার রাজত্ব, হাসপাতাল পরিচালক দুষছেন রোগীদের
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালহৃদরোগ বিভাগে ছারপোকার রাজত্ব, হাসপাতাল পরিচালক দুষছেন রোগীদের
‘মডার্ন মেট্রোপলিস’ থিমে ঈদ সংগ্রহ এনেছে ঢেউ
‘মডার্ন মেট্রোপলিস’ থিমে ঈদ সংগ্রহ এনেছে ঢেউ
কাপাসিয়ায় গরু চোর সন্দেহে ২ জনকে পিটিয়ে হত্যা
কাপাসিয়ায় গরু চোর সন্দেহে ২ জনকে পিটিয়ে হত্যা
ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কবে সমন্বয় করবে রাজউক?
বহুতল ভবনের সংজ্ঞাফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কবে সমন্বয় করবে রাজউক?
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ