X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

জনসভার আকার দেখিয়ে বিএনপি জনগণকে কী বোঝায়?

ডা. জাহেদ উর রহমান
২২ আগস্ট ২০২২, ১৭:৫৩আপডেট : ২২ আগস্ট ২০২২, ১৭:৫৭

গত ১১ আগস্ট পল্টনে নিজ কার্যালয়ের সামনে বিএনপি এক জনসভা করেছিল জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে। যথেষ্ট আয়োজন করে করা এই জনসভাটিতে ব্যাপক লোকসমাগম হয়েছে, যাকে বিএনপি দলীয় অনেকেই তুলনা করেছেন জনসমুদ্রের সাথে।

ফেসবুকে বিএনপির নেতাকর্মী-সমর্থকদের অনেককে দেখলাম সেই জনসভার ছবি দিয়ে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। স্ট্যাটাস দেবারই কথা। কিন্তু স্ট্যাটাসে অনেকেই যা লিখেছেন, সেটা আমাকে কিছুটা অবাকই করেছে। সেই প্রসঙ্গে আসছি পরে।

এটা বুঝতে পারি, সরকারের এবং সরকারি দলের নানামুখী বাধার মুখে বিএনপি স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি দিতে এবং পালন করতে পারে না। বিএনপির কোনও বড় কর্মসূচি থাকলে সেটাকে কেন্দ্র করে সরকারের বড় ধরনের ধরপাকড় হয়। এমনকি আমরা দেখেছি, বড় সমাবেশ ডাকা হলে পরিবহন মালিকদের সহযোগিতায় বাস লঞ্চ ইত্যাদি গণপরিবহনে এক ধরনের অঘোষিত ধর্মঘট ডাকিয়ে মানুষের উপস্থিতি ঠেকানোর চেষ্টা করা হয়। 

সম্প্রতি জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপি যখন দেশের নানা প্রান্তে সমাবেশ এবং মিছিল করার চেষ্টা করেছে, অভিযোগ আছে তারা বহু জায়গায় নির্বিঘ্নে হতে পারেনি। এরমধ্যে ভোলায় তো সেটা রীতিমতো প্রাণঘাতী হয়েছে–পুলিশের গুলিতে মারা গেছে দু’জন। 

এটা আমরা বুঝতে পারি, আরেকটি নির্বাচনের সময় যখন ঘনিয়ে আসছে তখন সরকারের ওপরে আন্তর্জাতিক মহল, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর বড় ধরনের চাপ তৈরি হচ্ছে। ঢাকায় সেসব দেশের রাষ্ট্রদূতরা নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করছেন, সংবাদ সম্মেলন করছেন সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে তাদের ইচ্ছের কথা বলতে। সম্ভবত এই চাপের কারণেই ঢাকায় বিএনপির এত বড় একটা সমাবেশ হতে পেরেছে। বিএনপির এই আকারের একটি সমাবেশ হতে পারার ক্ষেত্রে বিদেশি চাপ থাকার ভূমিকাই এই সমাবেশের প্রধান সিগনিফিকেন্স বলে আমি মনে করি। বিএনপি মহাসচিব জনাব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও এই কথাটি বলেছেন।

ফিরে আসা যাক এই জনসভা নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের অনেকের মন্তব্য নিয়ে আলোচনায়। আমার কাছে যেটা ভীষণ অবাক লেগেছে সেটা হলো, এই আকারের একটি জনসভা দেখে বিএনপি কর্মীদের অনেকেই মনে হলো ভীষণ উচ্ছ্বসিত হয়েছেন। তাদের অনেকেই বিএনপির জনসমর্থনের প্রমাণ হিসেবে ছবিটা উপস্থাপন করছেন। মনে হলো বিএনপির অনেক নেতাকর্মী নিজেদেরই বোঝাচ্ছেন তাদের দল কত বড়। দীর্ঘকালের দমন-পীড়নের পরও বিএনপি যে ভালোভাবেই টিকে আছে সেটা তাদের স্বস্তি দিচ্ছে নিশ্চয়ই।

বিএনপি নেতাকর্মীদের অনেকেরই এই যে প্রতিক্রিয়া সেটা শুধু তাদের নিজেদের জন্য নয়, বরং তারা বার্তা দিতে চেয়েছেন অন্যদেরও। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বিএনপির সমর্থন কিংবা তার আকার নিয়ে জনগণের মধ্যে কি আদৌ কোনও সংশয় বা সন্দেহ আছে?

আগেই যেমন বলেছি, আমি বিশ্বাস করি বিএনপির জনসভার এই বড় আকার এটুকুই শুধু প্রমাণ করেছে এ যাত্রা সরকার জনসভা করতে বাধা দেয়নি। আমি কোনোভাবেই মনে করি না বিএনপি সংগঠন হিসেবে কত বড় এই নিয়ে মানুষের মধ্যে ন্যূনতম কোনও সংশয় বা সন্দেহ আছে। সুতরাং লোকারণ্য জনসভার ছবি খুব নতুন কিছু প্রমাণ করেনি। বিএনপির অনেক বড় সংখ্যার কর্মী এবং জনসমর্থন আছে, এটা নিয়ে জনগণ নিঃসংশয়। জনগণের দিক থেকে বিএনপি’র সংকট ভিন্ন জায়গায়। 

এটুকু আমি স্পষ্ট করে রাখি, আমি বিশ্বাস করি, বর্তমান সরকারের সময়ে বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসাবে যতটা দমন-পীড়নের শিকার হয়েছে এবং হচ্ছে সেই পরিস্থিতি এর আগে কখনোই ছিল না। সেই দমন-পীড়ন সহ্য করে বিএনপি দল হিসাবে টিকে আছে, বিএনপির কেউ কেউ এটাকেই এক বড় সাফল্য হিসেবে জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে চান। খুব কাছে থেকে রাজনীতি দেখা এবং রাজনীতির একজন মনোযোগী ছাত্র হিসাবে আমি এই টিকে থাকার গুরুত্ব বুঝি। কিন্তু দেশের একেবারে সাধারণ নাগরিকটি কি সেভাবে বোঝে? কিংবা তাদের কি সেভাবে বোঝার কথা? 

তাই এটা প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা চলে, বিএনপি সমর্থকের বাইরেও এই দেশের একটা জনগোষ্ঠী সরকারের ওপরে ক্ষুব্ধ। এটাকে যদি আমরা সত্য বলে মেনে নিই তাহলে আমরা বিএনপির কাছে জনগণের প্রত্যাশাটা বুঝতে পারবো। এমন একটি সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করে দেশকে আবার গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব দেশের বিরোধী দলগুলোর। আর এই দেশের সব বিরোধী দলের মধ্যে বিএনপি যেহেতু সর্ববৃহৎ এবং সাংগঠনিকভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী, তাই যৌক্তিক কারণেই দলটির ওপরেই মানুষের প্রত্যাশা থাকতেই পারে।

দেশের সাধারণ মানুষ হতাশার সাথে দেখছে ক্ষমতায় থাকার দ্বিতীয় টার্মটিও শেষ করে ফেলছে আওয়ামী লীগ সরকার। এবং সাধারণ মানুষ অনেকে মনে করে এই পরিস্থিতি থেকে তাকে বাঁচানোর ক্ষমতা এই সময়টাতে একমাত্র বিএনপিরই ছিল। বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় থাকার পেছনে যেসব ভূরাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ কাজ করছে সেগুলোও মানুষ বোঝে না। বোঝার কথাও না। সাধারণ মানুষ দেখছে বিএনপি বিরোধী দল হিসেবে এর অবসান ঘটাতে পারছে না। এই ব্যর্থতার দায় মানুষ বিএনপিকেই দেবার কথা।

বিরাট জনসমাবেশের ছবি মানুষের সামনে দিয়ে বিএনপি কত বড় দল এটা সাধারণ মানুষকে বোঝানোর ভালো দিক যেমন আছে, তেমনি আছে কিছু ঝুঁকিও। ভালো দিক আমরা সকলেই বুঝতে পারি– এতে বিএনপি সম্পর্কে মানুষের জানাশোনা আবার চাঙা হলো। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, এত বড় সংগঠন থাকা মানুষের মনে এই প্রশ্নও তৈরি করবে - কী লাভ হচ্ছে এত বড় সংগঠন থেকে? এত লোকবল দিয়ে তো একটা গণআন্দোলন তৈরি করে সরকারের পতন ঘটাতে কিংবা একটা অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করাতে পারছে না তারা।

বিরাট জনসভার ছবি দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা জনগণকে যা বোঝাতে চেয়েছেন, সেই বোঝার চৌহদ্দি পেরিয়ে মানুষ যদি এটা বোঝে তাদের কি দোষ দেওয়া যাবে?

লেখক: শিক্ষক ও অ্যাকটিভিস্ট

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ইতিহাস বিকৃত করে বিএনপি সফল হয়নি, এখন আবোল-তাবোল বলছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ইতিহাস বিকৃত করে বিএনপি সফল হয়নি, এখন আবোল-তাবোল বলছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
শাহীনকে সরিয়ে বাবরকে নেতৃত্বে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে পিসিবি!
শাহীনকে সরিয়ে বাবরকে নেতৃত্বে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে পিসিবি!
মেঘলা আকাশ থেকে ঝরতে পারে বৃষ্টি, বাড়বে গরম
মেঘলা আকাশ থেকে ঝরতে পারে বৃষ্টি, বাড়বে গরম
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ১৩৭
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ১৩৭
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ