X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

একটু বেশি চাওয়া

মাহমুদুর রহমান
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১১:৪৬আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১১:৫৯

মাহমুদুর রহমান ভাষা শহীদদের চাওয়া খুব বেশি কিছু ছিল না। নিজ মাতৃভাষার কথা বলার স্বাধীনতা। মুক্তিকামী মানুষের নিজস্ব স্বাধীন পরিচয়, তাও খুব বেশি চাওয়া ছিল না। ভাষার মর্যাদা এলো বৈকি, স্বাধীনতার পতাকা আজ উড়ছে বৈকি ।
অথচ, কোথায় যেন  শূন্যতার দীর্ঘশ্বাস আর্তনাদ হয়ে ঘুরে ফিরেছেন। সমুদ্র সৈকতের তীর ঘেঁষে, চকচকে বালি আর নোনা জলের মিলন স্থলে হৃদয় যখন নাচে, সেই নৃত্যের সঙ্গে যে সুর তা কেন ভিন দেশি? প্রিয় শিল্পীর সাক্ষাৎকারে বারবার কেন ‘But’ এবং ‘So’ এর সংযুক্তি ছাড়া বাক্য তৈরি হয় না?
চমৎকারের মতো চমৎকার শব্দ থাকা সত্ত্বেও কেন ‘Wow’ ছাড়া অসাধারণকে বুঝানো যায় না? এই দৈন্যতার লজ্জা কীভাবে লুকিয়ে রাখি?
হোটেল রেস্তোরাঁয় কর্মীরা আমাদেরই খুশি করার জন্য ইংরেজির ভুল উচ্চারণে মুখ টিপে হাসি ঠেকাতে হয়। অথচ মাতৃভাষায় কথা বলতে গিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাহেবদের হার মানানো বাংলা গ্রহণযোগ্যতার ঝলমলে আবরণে আজ সমাদৃত।
উচ্চারণের বলয়ে শাণিত না হলেও, আঞ্চলিকতার প্রভাবে রঞ্জিত হলেও গ্রাম-গঞ্জে থেকে আসা আমাদের পূর্বসুরীরা বাংলা-ইংরেজির অসাধারণ সামাঞ্জস্য বজায় রাখতে পারতেন। আর আমরা যেন সঠিক সময়ে সঠিক বাংলা শব্দ না খুঁজে পেয়ে But, So, Wow আর Anyways-এর ভেলায় গা ভাসাতে না বোধ করি কুণ্ঠা, না পাই লজ্জা।
মাঝখান দিয়ে গর্বিত মাতা-পিতা হেসে ভুলে যান যে Anyways শব্দটির স্থান এখন পর্যন্ত ইংরেজি অভিধানে স্থান পায়নি। অবশ্য ওই মাতা-পিতার দোষ দিয়ে বা কী লাভ। ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি’ কেন জানি তীর্যকতার তীরবিদ্ধ। সম্ভবত দ্বিতীয় কোনও দেশ নেই যেখানে আদালতকে বিকৃত মাতৃভাষায় সম্প্রচার বন্ধের আদেশ দিতে হয়

একুশে বইমেলার বাড়তি সম্প্রচার যতোই সুখকর, ততটাই দুঃখ হয় দায়সারা গোছের প্রচার। সংখ্যা তত্ত্ব আর নাম সর্বস্ব রীতি থেকে বেরিয়ে এসে কোমল মতি মনের শিশুদের আর জ্যাম ঠেলে, ভীড় উপেক্ষা করা পাঠকদের কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে বিশেষজ্ঞ এবং বইমেলার নিয়মিত অতিথিদের দিয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন বইয়ের কিছুটা বিষদ আলোচনার মাধ্যমে আকৃষ্ট করে।
শত শত প্রকাশনার মধ্যেও নতুন কবি, লেখক, অনুবাদকের পরিচিতি সভার ব্যবস্থা, আয়োজক, প্রকাশক এবং প্রচারমাধ্যমেগুলো নিতে পারে।
প্রতি বছর সর্বস্তরে বাংলা চালু করা আজ একটি এক দিনের স্লোগানে পরিণত হয়েছে। এর না আছে দিক না আছে দিগন্ত। নির্দিষ্ট মাইলফলকের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে এমন একটি ভাষা, যা আদায়ের সংগ্রামর ফসল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

তবে অশনী সংকেত সুদূর প্রসারী ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। পার্শ্ববর্তী দেশের চাপের মুখে, স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো ইংরেজি ভাষার বহু অনুষ্ঠান ও ছায়াছবির হিন্দি ভাষায় ডাবিং করছে। এই চ্যানেলের ভক্ত, বিশেষ করে আমাদের শিশুরা বাংলার পরিবর্তে হিন্দি শিখে বড় হচ্ছে। এই লড়াই যদি জাতি হেরে যায় তাহলেও ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে। অবশ্য এমনও হতে পারে যে এই এটা একটু বেশি চাওয়া…।

লেখক: কমিউনিকেশন বিশেষজ্ঞ

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ