X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা-১৭ উপনির্বাচন: আসলে জিতলো কে?

রেজানুর রহমান
১৯ জুলাই ২০২৩, ১০:৫৯আপডেট : ১৯ জুলাই ২০২৩, ১০:৫৯

ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে নৌকার প্রার্থী মোহাম্মদ এ. আরাফাত জয়লাভ করেছেন। নির্বাচনের ফলাফল এমনই হবে ধারণাটা আগে থেকেই ছিল। নির্বাচনে আরাফাতের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিরো আলমও বোধকরি এমনটাই ভেবেছিলেন। নির্বাচনি ফলাফল মোহাম্মদ এ. আরাফাতের পক্ষেই গেছে। নৌকার প্রার্থী আরাফাতই জিতেছেন। সেই তুলনায় আরাফাত কি প্রচারমাধ্যমর কাছে গুরুত্ব পেলেন?

সাধারণত কী হয়? যেকোনও নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীই প্রচারমাধ্যমের কাছে গুরুত্ব পায়। বিজয়ী প্রার্থীর পক্ষেই সাধারণ মানুষ বিজয় মিছিল করে। বাসাবাড়ি, অফিস-আদালত, চায়ের দোকানের আড্ডায় বিজয়ী প্রার্থীই আলোচনার মূল বিষয় হয়ে ওঠেন। অথচ ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে ঘটলো তার উল্টো। বিজয়ী প্রার্থীর চেয়ে পরাজিত প্রার্থীকে নিয়েই শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা। একটি পত্রিকা লিখেছে ‘নিরুত্তাপ ভোটে হিরো আলমে উত্তাপ’। প্রথম পাতায় হিরো আলমের ওপর হামলার ৩ কলাম সাইজের ছবি ছাপা হয়েছে। পত্রিকাটির দ্বিতীয় পাতায় খবরটির অবশিষ্ট অংশের মাঝখানে বিজয়ী প্রার্থী আরাফাতের সিঙ্গেল কলাম ছবি ছাপা হয়েছে। তাহলে জিতলো কে? আরাফাত নাকি হিরো আলম? নিজেকে প্রশ্নটি করে কোনও সদুত্তর পেলাম না।

আরেকটি পত্রিকায় শিরোনাম ছাপা হয়েছে ‘শান্তিপূর্ণ ভোটে নৌকার জয়’। বিজয়ী প্রার্থী আরাফাতের সিঙ্গেল কলাম ছবির পাশে পরাজিত প্রার্থী হিরো আলমকে হামলার ডাবল কলাম ছবি ছাপা হয়েছে। জয়ী প্রার্থীর ছবি সিঙ্গেল কলাম। পরাজিত প্রার্থীর ছবি ডাবল কলাম। যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘও জানালো, হিরো আলমের ওপর হামলার সুষ্ঠু তদন্ত করতে। তাহলে প্রশ্ন হলো- ঢাকা ১৭ উপনির্বাচনে জিতলো কে?

ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের ফলাফল নিয়ে একই ট্রিটমেন্ট দিয়েছে প্রায় প্রতিটি দৈনিক। একটি পত্রিকায় দেখলাম হিরো আলমকে হামলার ছবির নিচে আরাফাতের সিঙ্গেল কলাম সাইজের একটি ছবি ছাপা হয়েছে। শিরোনাম প্রকাশ হয়েছে– ‘হিরোর ওপর হামলা, বিজয়ী আরাফাত’। অপর একটি পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠাজুড়ে হিরো আলমকে হামলা করার ক্লকওয়াইজ দুটি ছবি ছাপা হয়েছে। প্রথম পৃষ্ঠায় বিজয়ী প্রার্থী আরাফাতের কোনও ছবি নেই। তাহলে ব্যাপারটা কেমন হলো? একটি জাতীয় নির্বাচন। বিজয়ী প্রার্থীর ছবি এবং নিউজ গুরুত্ব না পেয়ে পরাজিত প্রার্থীর ছবি ও নিউজ গুরুত্ব পেলো। তাহলে বিজয়ী প্রার্থীর মান-সম্মানটা থাকলো কোথায়?

আমি ব্যক্তিগতভাবে হিরো আলমের অনেক কাজ সমর্থন করি না। তাই বলে তার কাজে বাধা দেওয়ার কোনও অধিকার আমার নেই। বাংলাদেশে নির্বাচনি আচরণবিধি মেনে যে কেউ যেকোনও নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। এটা তার সাংবিধানিক অধিকার। এই অধিকারের ধুয়া তুলে তথাকথিত ইউটিউবার হিরো আলম বাংলাদেশের সবচেয়ে ‘পশ’ এলাকা হিসেবে খ্যাত গুলশানে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচন করার যোগ্যতা দেখিয়েছেন। কাজেই তাকে ছোট অথবা খাটো করে দেখার কোনও সুযোগ নেই। হিরো আলম বলতে গেলে অশিক্ষিত। তার মতো একজন মানুষ শিক্ষিতদের এলাকায় জনপ্রতিনিধি হতে চায়। শিক্ষিতদের দুনিয়ায় অশিক্ষিত হবে নেতা। এর জবাব ভোটের মাধ্যমেই দিয়েছে এলাকার মানুষ। হিরো আলমকে প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু সামান্য ভুল, অসতর্কতায় সমর্থনটা তো শেষ পর্যন্ত হিরো আলমের পক্ষেই গেলো।

সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত নির্বাচনে ভোট গ্রহণের সময়সীমা ছিল। শেষ বেলায় ঘটলো একটি অপ্রীতিকর ঘটনা। বনানীর একটি কেন্দ্রে ভোটের পরিবেশ দেখতে যান হিরো আলম। নৌকার পক্ষে একদল অতি উৎসাহী তরুণ হিরো আলমের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। তাকে মারধর করে। নির্বাচনে ভোট গ্রহণের আর মাত্র বাকি ছিল এক ঘণ্টা। সারা দিনের শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিমিষেই অশান্তির তকমা পেয়ে গেলো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে নির্বাচনের মূল ফোকাস হয়ে উঠলেন হিরো আলম।

একটি কথা আছে– একটুখানি ভুলের তরে অনেক বিপদ ঘটে। যেকোনও নির্বাচনে দলীয় কৌশল অনেক জরুরি হয়ে দাঁড়ায়। ফেসবুকে হিরো আলমকে হামলার ঘটনাটি কয়েকবার দেখলাম। দলবল নিয়ে হঠাৎ বনানীর ওই নির্বাচনি কেন্দ্রে ঢুকলেন হিরো আলম। তার সঙ্গে অনেক ইউটিউবার। সরাসরি লাইভ দিচ্ছিলেন অনেকে। হঠাৎ একজন তরুণ হিরো আলমের বিরুদ্ধে আপত্তিকর কথা বলতে শুরু করলেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিরো আলমকে ঘিরে রেখে কেন্দ্রের বাইরে নিয়ে এলেন। ততক্ষণে হিরো আলমের প্রতি একদল তরুণ অতিমাত্রায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। তারাই হিরো আলমকে কিল ঘুসি দিয়ে অপদস্থ করলেন। দৌড়ে পালিয়ে বাঁচলেন হিরো আলম।

খোলা চোখে এই ঘটনা খুবই নিন্দনীয়। সংসদ নির্বাচনে একজন প্রার্থীর ওপর এমন নারকীয় হামলার ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়, ইউটিউবাররা কি নির্বাচনি কেন্দ্রে প্রবেশের অধিকার রাখেন? বোধকরি না। তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে তারা হিরো আলমের সঙ্গে কেন্দ্রে ঢুকলেন? একইভাবে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, যুবলীগের পরিচয়ে যারা হিরো আলমকে হামলা করলো তারা কোনও ষড়যন্ত্রের অংশ না তো?

নিশ্চয়ই এখন এসব বিষয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে। আগামী কয়েকটা দিন সংবাদপত্র ও টেলিভিশনের টকশোতে হিরো আলমকে নিয়ে নিশ্চয়ই অনেক কথা হবে। হিরো আলমের বিজয়টা এখানেই। আমরা মানি বা না মানি, কিছু ভুলের কারণে হিরো আলমরা তথাকথিত নায়ক থেকে মহানায়কে পরিণত হচ্ছেন। শ্রদ্ধাভাজন মামুনুর রশীদের মন্তব্যের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলছি– রুচির দুর্ভিক্ষ আরও বাড়ছে।

ভুলটা কেমন সেটা একটু বলি। মানি বা না মানি হিরো আলম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক পরিচিত। ঢাকা-১৭ আসনের নির্বাচনে হিরো আলম যখন প্রার্থী হলেন তখন আমার এক বন্ধু একটা মন্তব্য করেছিলেন। বন্ধু বলেছিলেন, হিরো আলম জিতলেও লাভবান হবেন, না জিতলেও লাভবান হবেন। অবাক হয়ে তাকে প্রশ্ন করেছিলাম, না জিতলে লাভবান হবে কী করে? বন্ধু বুঝিয়ে বললেন, হিরো যদি দেখে নির্বাচনে জেতার কোনও সম্ভাবনা নেই তখন সে এমন কিছু ঘটাবে যাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ গোটা প্রচারমাধ্যম তার পক্ষে এসে দাঁড়ায়... এতে হিরো আলমেরই লাভ। ভিউ বাড়বে। ভিউ বাড়লেই টাকা বাড়বে। টাকায় টাকা...।

এতদিন নাটক, সিনেমার ক্ষেত্রে ‘ভিউ’ শব্দটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এখন দেখি রাজনীতিতে ‘ভিউ’ শব্দটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যে কারণে হিরো আলমও এখন ‘রাজনৈতিক নেতা’। বাহ! বেশ বেশ...।

লেখক: কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, সম্পাদক- আনন্দ আলো।

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
জেসি অনভিজ্ঞ বলেই আপত্তি ছিল মোহামেডান-প্রাইম ব্যাংকের
জেসি অনভিজ্ঞ বলেই আপত্তি ছিল মোহামেডান-প্রাইম ব্যাংকের
যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
শেখ জামালের জন্মদিন আজ
শেখ জামালের জন্মদিন আজ
জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস আজ
জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস আজ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ