X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

কী কারণে ধনী হতে পারছেন না?

সাইফুল হোসেন
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৩৩আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৫:২২

কোন সে একটি মাত্র কারণ যে জন্য আপনি ধনী হতে পারছেন না? আপনারা সবাই জানেন, ধনী হতে হলে অনেক অ্যাট্রিবিউটস লাগে, অনেক গুণের অধিকারী হতে হয়, অনেক পরিশ্রম করতে হয়, অনেক পরিকল্পনা করে সামনে এগোতে হয়। আপনি যা আয় করবেন তার থেকে কম ব্যয় করতে হয়, আয়ের একটা অংশ সেভিংস করতে হয়, এবং সেই সেভিংস যখন একটা বড় অংশে পরিণত হয় তখন সেটা ইনভেস্ট করতে হয়।

একসময় সেই ইনভেস্টের অংশ আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। সেভিংস প্ল্যানও চলমান থাকে। যদি কেউ আর্থিকভাবে স্বাধীন হতে চান, ধনী বা ওয়েলদি হতে চান, তাহলে এমন অনেক নিয়ম মানতে হয়।

ধরুন, কেউ দেখতে সুন্দর, কেউ সুন্দর করে কথা বলেন, কেউ মানুষের সঙ্গে মিশতে পারেন, কারও কাছে অসংখ্য আইডিয়া আছে, সবাই সম্মান করে, সবাই দেখা হলেই সালাম দেয়। এত সবকিছু ধনাত্মক থাকা সত্ত্বেও কি এমন একটা কারণ আছে যে কোনও কিছুই গোছাতে পারছেন না?

আপনি উদ্যোগকে সফল করতে পারছেন না, আপনি ধনী হতে পারছেন না, আপনি গরিবই থেকে যাচ্ছেন? যখন বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করবেন তখন হয়তো কিছু কারণ খুঁজে পাবেন। আবার কোনও কারণ খুঁজে নাও পেতে পারেন। কারণ, আমরা নিজের ত্রুটি খুঁজে বের করতে পারি না। নিজের ওপর অন্ধবিশ্বাস এমন যে মনে করি আমরা যা করছি সব ঠিক করছি।  

অনেক গুণ আছে কিন্তু আপনি যদি বিশৃঙ্খল মানুষ হন তাহলে কখনোই সফল হওয়া সম্ভব নয়, এটা আমি হলফ করে বলতে পারি। পৃথিবীতে যত ধনী ও সফল ব্যক্তিত্ব আছেন, গভীর দৃষ্টি দিলে দেখবেন সবার মধ্যে একটা কমন গুণ আছে, সেটি হচ্ছে তাঁদের মধ্যে নিয়মানুবর্তিতার অপূর্ব গুণ আছে। নিয়মানুবর্তিতা এমন একটি গুণ, যে গুণ একজন মানুষকে সফল হতে দুর্দান্তভাবে সহায়তা করে। একজন মানুষের কোনও ব্যবসায় সফল হতে, ব্যবসাকে দীর্ঘমেয়াদি করতে, চাকরিতে উন্নতি করতে বা যে যেই অবস্থানেই আছেন সেই অবস্থানে তাঁর সর্বোত্তম অবস্থানে যেতে, এই ডিসিপ্লিন বিষয়টা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আপনার কাছে সময় যেমন প্রতিদিন চব্বিশ ঘণ্টা, তেমনই বিল গেটসের জন্য, ওয়ারেন বাফেটের জন্য, মার্ক জুকারবার্কের জন্য– অর্থাৎ সবার জন্য চব্বিশ ঘণ্টা। সবার জন্য যদি চব্বিশ ঘণ্টা হয়, তাহলে আপনি যদি অনিয়মানুবর্তী হয়ে থাকেন তাহলে পিছিয়ে পড়বেন। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে কী কী করছেন?

দেখবেন, আপনি হয়তো নয়টায় বা দশটায় ঘুম থেকে উঠছেন, এক ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় ধরে রিফ্রেশড হচ্ছেন, তারপরে নাশতা করছেন, যদি কোনও কাজ থাকে কোথাও তখন সেটি করে নিচ্ছেন, দুপুর গড়িয়ে যখন বিকালের দিকে যাচ্ছে তখন আপনি একটু রেস্ট নিচ্ছেন, সন্ধ্যার সময় বাইরে গিয়ে কারোর সঙ্গে একটু আড্ডা দিচ্ছেন, আপনার খাওয়ার সময় হয়ে গেলে আপনি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ছেন বা একটু আড্ডা, টিভি দেখা, মোবাইল অথবা ল্যাপটপ ব্যবহার করা অথবা বেশি রাত পর্যন্ত জাগছেন। পরের দিন আবার আগের নিয়মে দিন কাটাচ্ছেন। এই হচ্ছে আপনার প্রতিদিনের রুটিন।

মজার ব্যাপার হচ্ছে সারা দিন কীভাবে গেলো তার কোনও হিসেব আপনার কাছে নেই, কতটুকু কাজ করলেন তাও জানেন না, কী কী কাজ করার দরকার ছিল তাও জানেন না।

যদি আপনি একটু খেয়াল করেন, নিজের সঙ্গে একটু বসেন তাহলে সত্যি অবাক হবেন। দেখতে পাবেন আপনার বিশৃঙ্খলা কোন পর্যায়ে আছে, আপনার নিজের সময়ের প্রতি কতটা যত্নবান। যখন সময়ের প্রতি যত্নবান হবেন না, তখন সময় আপনাকে রিওয়ার্ড দেবে না। সময় ব্যর্থতা দেবে, সময় কষ্ট দেবে, জীবনকে অসফল করে দেবে, হাতে টাকা থাকবে না।

ফলে যতই বিশৃঙ্খল হবেন, ততই আপনার জীবন দুর্বিষহ হতে থাকবে। ভুল করবেন, আর তার জন্য দোষ দেবেন অন্যের, দোষ দেবেন আপনার আশপাশে যারা আছেন, পরিবারের অন্য সদস্যদের, বন্ধুবান্ধবের।

দেখতে পাবেন চারপাশে শুধু শত্রু, সারা পৃথিবী আপনার বিরুদ্ধে। পক্ষান্তরে, আপনি সবচাইতে বিজ্ঞ ব্যক্তি, সবচাইতে সুন্দর ব্যক্তি, কোনও দোষ নেই, কোনও ভুল নেই, ত্রুটি নেই। মনে হবে চারপাশের পরিবেশ আপনার সহায়ক না, পরিবারের সদস্যরা সহায়ক না, আশপাশে যারা বন্ধুবান্ধব আছেন, তাঁরা আপনার সহায়ক না। ফলে সফল হতে পারছেন না। আপনার মনে হবে আপনি ঠিকই সফল হতেন যদি অন্যরা আপনার পথে বাধা না দিতেন, অন্যরা যদি আপনার সহায়ক শক্তি হতেন।

আপনার জন্য আমার কিছু বলার আছে। অন্যের দিকে না তাকিয়ে নিজের দিকে ফোকাস করুন। আঙুল দুটো একটু নিজের দিকে ঘোরান। সময়টা কীভাবে যাচ্ছে দেখতে পাবেন এবং তখনই নিজের কাজের মূল্যায়ন করতে পারবেন। যখন আপনি নিজের দিকে মনোযোগ দেবেন, তখন দেখতে পাবেন যে আসলেই সমস্যা নিজের মধ্যে। আপনি প্রচণ্ডভাবে ইনডিসিপ্লিন্ড। সময়কে সাংঘাতিকভাবে অপব্যয় করছেন, সময়ের সঠিক ব্যবহার করছেন না। সময়কে ব্যবহার করার ব্যাপারে প্রচণ্ডভাবে উদাসীন। ফলে উল্লেখযোগ্য কোনও প্রোডাক্টিভিটি নেই। আপনি শুধু খাচ্ছেন, লোকেরটা নিচ্ছেন বা যদি কিছু জমানো টাকা থাকে সেটা খরচ করছেন, কিন্তু আপনি সমাজে মূল্য সংযোজন করছেন না, ফলে সমাজ আপনাকে কোনও পেমেন্ট করছে না, সময় আপনাকে পেমেন্ট করছে না, জীবন আপনাকে পেমেন্ট করছে না।

পেমেন্ট করছে কী? আপনি যে ভ্যালু অ্যাড করবেন সোসাইটিতে তার পরিবর্তে পেমেন্ট করবে। মানুষের জীবনে যে ভ্যালু অ্যাড করবেন, সেই ভ্যালু এডিশনের কারণেই তারা আপনাকে পেমেন্ট করবে। ফলে যদি প্রচণ্ড বিশৃঙ্খল হন, আপনি যদি বিশেষ কোনও কাজ না করেন, তাহলে আপনাকে পেমেন্ট করবে কেন? কীসের বিনিময়ে করবে?

সুতরাং এ কথা খুবই স্পষ্ট, যারা প্রচণ্ড বিশৃঙ্খল তারা জীবনে কিছু করতে পারেন না, সফলতা তো সহজলভ্য কোনও বিষয় না। আমি অবাক হই, যখন দেখি অনেক বাচ্চারা বা অনেক বয়স্করাও আছেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইল দেখছে তো দেখছেই। সারাক্ষণ আপনি এন্টারটেইনমেন্ট দিয়ে করবেন কী? হোয়াট ইজ দ্য পারপাস অব দ্যাট এন্টারটেইনমেন্ট দ্যাট ইউ আর গেটিং ইন এভরি মোমেন্ট অব ইউর লাইফ? নাথিং। যদি কোনও কাজ পারপাসফুল হয়, তার পেছনে আপনি সময় ব্যয় করেন, সেটা আপনাকে রিওয়ার্ড দেবে। মনে রাখবেন, যদি আপনি বিশৃঙ্খলভাবে কোনও কিছু করতে থাকেন, একটা কাজের মধ্যে অসংখ্য কাজ করতে থাকেন, একটা চিন্তার মধ্যে অসংখ্য চিন্তা ঢুকিয়ে দেন, যদি প্রচণ্ডভাবে মাল্টিটাস্কার হন, যদি সময়ের অপচয় করেন, আপনি যদি প্রচণ্ড ইনডিসিপ্লিন্ড হন, আপনার জীবন বিফলে চলে যাবে। কারোর ক্ষমতা নেই সফল করার। আমি সবার মাঝে সফলতাকে দেখতে চাই।

লেখক: অর্থনীতি বিশ্লেষক, ফাইন্যান্স ও বিজনেস স্ট্রাটেজিস্ট; সিইও, ফিনপাওয়ার লিডারশিপ ইন্টারন্যাশনাল

মেইল: [email protected]

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
যুক্তরাষ্ট্রের ‘নেসা সেন্টার’ প্রতিনিধি দলের ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস পরিদর্শন
যুক্তরাষ্ট্রের ‘নেসা সেন্টার’ প্রতিনিধি দলের ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস পরিদর্শন
জাতিসংঘে বাংলাদেশের ‘শান্তির সংস্কৃতি’ রেজুলেশন গৃহীত
জাতিসংঘে বাংলাদেশের ‘শান্তির সংস্কৃতি’ রেজুলেশন গৃহীত
‘তীব্র গরমে’ মারা যাচ্ছে মুরগি, অর্ধেকে নেমেছে ডিম উৎপাদন
‘তীব্র গরমে’ মারা যাচ্ছে মুরগি, অর্ধেকে নেমেছে ডিম উৎপাদন
ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করলো তুরস্ক
ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করলো তুরস্ক
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ