X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

অমর্ত্য সেনের জন্য কি পশ্চিমারা তদবির করেছিল?

লীনা পারভীন
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:৩৭আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:৩৭

দুই নোবেল বিজয়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে করা দুই দেশের মামলা নিয়ে আলোচনা বেশ সাড়া ফেলেছে। দুজনেই বাঙালি। একজন শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন, আরেকজন অর্থনীতিতে।

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা এখনও চলমান। তারই হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মীরা তাদের অধিকার বঞ্চনার ঘটনায় শ্রম আদালতে মামলা করেছেন। অন্যদিকে অমর্ত্য সেন তার বিরুদ্ধে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি দখলের মামলায় বিজয়ী হয়েছেন।

দুটি মামলায় যে বিষয়টি লক্ষণীয় সেটি হচ্ছে অমর্ত্য সেন প্রথম থেকেই তার বিরুদ্ধে করা মামলাকে আইনি পদ্ধতিতে গ্রহণ করেছেন। নিজের আইনজীবী দিয়ে বিষয়টিকে আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ড. ইউনূস কী করলেন? তিনি দেশের আইনকে মোকাবিলা করতে চাইলেন বিদেশি ‘প্রভু’দের প্রভাব দিয়ে। অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে কিন্তু তার নিজের কোনও প্রতিষ্ঠান মামলা করেনি বা শ্রমিকের অধিকার মেরে দেওয়ার কোনও অভিযোগ আসেনি। কিন্তু ইউনূস সাহেবের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে মামলা হয়েছে। সেই মামলাকে তিনি এবং তার অফিস ধরেই নিলো সেটা সরকারের প্রতিহিংসামূলক কাজ। প্রভাবশালী হলেই কি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো যায়?

একজন নোবেলজয়ী ব্যক্তিত্ব যখন স্বাভাবিক আইনি প্রক্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে ভিন্ন প্রক্রিয়ায় এগোতে চায় তখন কিন্তু নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন আসবেই। অমর্ত্য সেনের কি আন্তর্জাতিক কোনও প্রভাব ছিল না? তিনি কি বিশ্বের বুকে একজন‘এতিম’ নোবেলজয়ী ব্যক্তি? তাহলে উনার জন্য কেন আমেরিকা বা ইউরোপের সিনেটররা ভারত সরকারকে চিঠি দিলেন না? নাকি অমর্ত্য সেন নিজেই চাননি। অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ায় বাহ্যিক কোনও শক্তিকে আমন্ত্রণ জানাবেন না?

আসলে অমর্ত্য সেন অত্যন্ত শক্তিশালী নৈতিকতার একজন ব্যক্তি। তিনি ছিলেন আত্মবিশ্বাসী। জানতেন, তিনি কোনও অন্যায় করেননি; তাই বাইরের কোনও শক্তির প্রয়োজন অনুভব করেননি। তার বিরুদ্ধে আনা মামলার কোথাও তিনি একবারের জন্যও বলেননি যে সরকার তাকে হেনস্তা করতে চাইছে। তিনি প্রথম থেকেই বলেছিলেন আইনের রাস্তাতেই বিজয়ী হয়ে আসবেন। এসেছেনও তা-ই। কোনও দেশের সরকারই কিন্তু দেশের আইন ব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপের অধিকার রাখে না। এটা যেমন ভারতের জন্য সত্য ঠিক, তেমনি বাংলাদেশের জন্যও প্রযোজ্য। অথচ একজন ইউনূস নিজ দেশের সরকারকে বারবার আন্তর্জাতিক মহলের কাছে হেয় করেছেন। বিতর্কিত করে চলেছেন। অত্যন্ত নিন্দনীয় উপায়ে তিনি বিশ্বমোড়লদের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে যে কেন ড. ইউনূস এমনটা করছেন? কোথায় তার ভয়? অন্যায় যদি না করে থাকেন তাহলে জয়ের বিষয়ে এত আস্থাহীনতা কেন? আইনের প্রতি তিনি কেন শ্রদ্ধাশীল নন? নোবেল পেলেই কি কেউ আইনের ঊর্ধ্বে উঠে যায়? তাহলে তিনি যে গোটা বিশ্বে সুশাসনের ওপর বক্তৃতা করে বেড়ান, কী শেখান ওখানে? নাকি কেবল বাংলাদেশেই তিনি আইনকে ছোট করে দেখতে চান? যে ব্যক্তির নিজের দেশের সরকার বা সরকারি ব্যবস্থার ওপর আস্থা বা শ্রদ্ধা থাকে না সেই ব্যক্তির প্রতি সাধারণ নাগরিকদের শ্রদ্ধা আসবে কোথা থেকে?

এ আলোচনা কিন্তু ইতোমধ্যেই চলছে যে একই সময়ে একজন অমর্ত্য সেন যদি ৯০ বছর বয়সে এসে আদালতে গিয়ে হাজিরা দিতে পারেন তাহলে ড. ইউনূসের এত সমস্যা কেন হবে? অমর্ত্য সেন এবং বিশ্বভারতীর মামলা কিন্তু নতুন নয়। অনেক বছর ধরেই চলছিল। ভারতবর্ষের আলোচ্য বিষয় ছিল এই মামলা। অবশেষে সঠিক রাস্তায় ও দেশের আইনের প্রতি আস্থা রেখেই তিনি জিতে এসেছেন। কেউ কিন্তু একবারও প্রশ্ন তুলছেন না যে তিনি প্রভাব খাটিয়ে মামলা জিততে চেয়েছিলেন বা কেন তার বিরুদ্ধে মামলা করা হলো?

অথচ আমাদের একজন নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে কত রটনা ঘটনার জন্ম হয়েছে। খোদ আমেরিকান সিনেটের সদস্যরা চিঠির পর চিঠি দিয়ে চলেছেন প্রধানমন্ত্রীকে।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নটা করতেই হয় যে আমেরিকান সিনেটররা কেন অমর্ত্য সেনের জন্য মোদি সরকার বা মমতা সরকারকে চিঠি দেননি? তাহলে কি তাদের কাছে ইউনূসের চেয়ে অমর্ত্য সেনের গ্রহণযোগ্যতা কম, নাকি অমর্ত্য সেন সেই পথেই হাঁটেননি?

এখানেই দুজনের পার্থক্যটা পরিষ্কার। দেশের মানুষের কাছেও তাই উদাহরণটা থাকা উচিত। দেশের প্রধানমন্ত্রীও আইনের ঊর্ধ্বে নন। আইন চলবে তার নিজের গতিতে। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাওয়া মানেই আইনকে বাধাগ্রস্ত করা হয়। সেখানে আর স্বচ্ছতা থাকে না। বিশ্বাস সেখানে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।

এই শিক্ষাটা একজন নোবেলজয়ী ইউনূসের কেন নেই সেটাই প্রশ্ন। ড. ইউনূসের কন্যাও বিদেশি একটি গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘আমি আশা করি, সেই সময়টি আবার ফিরে আসুক। যদি তারা (শেখ হাসিনা ও ড. ইউনূস) আবারও একসঙ্গে কাজ করেন, তাহলে তা হবে চমৎকার’। অর্থাৎ এটাকে আমি পরোক্ষভাবে একটি আপস করার ইঙ্গিত হিসেবেও দেখতে চাই। আমার কাছে মনে হয়েছে, বিদেশি একটি গণমাধ্যমে সরকারের সঙ্গে আমাদের বিচার বিভাগকে তিনি জড়িয়ে ফেলেছেন।

ড. ইউনূস এবং তাকে সমর্থন করা আন্তর্জাতিক মহলেরও অনেক কিছু শেখার আছে ৯০ বছর বয়সী নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের কাছে। আইনকে শ্রদ্ধা করেই বিজয়ী হতে হয়, অশ্রদ্ধা বা অশুদ্ধ উপায়ে হস্তক্ষেপ করে নয়।

লেখক: কলামিস্ট

/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
টিপু-প্রীতি হত্যা: আ.লীগ নেতাসহ ৩৩ জনের বিচার শুরু
টিপু-প্রীতি হত্যা: আ.লীগ নেতাসহ ৩৩ জনের বিচার শুরু
ঘনঘন শ্যাম্পু ব্যবহারে চুল রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন সমাধান
ঘনঘন শ্যাম্পু ব্যবহারে চুল রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন সমাধান
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ব্যবসায়ীর
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ব্যবসায়ীর
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ