X
সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫
৯ আষাঢ় ১৪৩২

নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ হোক

সালেক উদ্দিন
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯:৪৭আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯:৪৭

জুলাইয়ের কোটা সংস্কার ছাত্র আন্দোলন শেষ দিকে রূপ নিয়েছিল ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো যে লৌহমানবীকে ১৫ বছর আন্দোলন করেও মসনদ থেকে নামাতে পারিনি, তিনিই ছাত্র-জনতার এক মাসের গণ-আন্দোলনে শুধু মসনদই ছাড়েননি, জীবন বাঁচাতে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। গণ-আন্দোলনের এই শক্তির উৎস কী ছিল এবং তাদের মুখ্য চাহিদা কী সেটাই আজকের লেখার বিষয়বস্তু।

একসময় মনে হতো, লৌহমানবী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবদ্দশায় তার দল আওয়ামী লীগকে কেউ ক্ষমতা থেকে নামাতে পারবে না। কারণ ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসনসহ রাষ্ট্রের উল্লেখযোগ্য সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করতে সক্ষম হয়েছিল। যার কারণে পর পর চারবার তারা ক্ষমতায় এসেছিল। তারা ভোট চুরির নির্বাচন করে, ভোটারবিহীন নির্বাচন করে, বিরোধী দলের প্রার্থী ছাড়া নির্বাচন করে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫২ জন এমপি বানানোর নির্বাচন করে ক্ষমতায় এসে প্রতিবারই পূর্ণ মেয়াদ কাটিয়ে গেছেন। বিরোধী দল ও জোট আন্দোলন করে কিছুই করতে পারেনি। তাদের আন্দোলনের ডাকে সেভাবে মানুষ মাঠে নামেনি। কারণ স্বাধীনতার পর থেকে মানুষ যত দলীয় সরকার দেখেছে তাদের চেহারা কমবেশি একই রকম ছিল।

একটি সরকারের পতনের পর নতুন সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। সবাই ক্ষমতার চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের দিকে ছুটেছে। পরিবর্তিত প্রতিটি সরকারই পূর্ববর্তী সরকারের চেয়ে অধিক দলীয়করণ, একনায়কতন্ত্র ও স্বৈরাচারতন্ত্র প্রতিষ্ঠা নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি সবার ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য ছিল।

বাংলাদেশের পুরনো ধারার এই রাজনীতির চরিত্র দেখে মানুষের মধ্যে একটা জড়তা চলে এসেছিল। তারা পুরনো ধারার রাজনীতিকে রাজার নীতি মনে করে নিয়েছিল এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল। সেই মানুষই যখন দেখলো কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছাত্ররা ‘নতুন বাংলাদেশের’ স্বপ্ন নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে তখন তারা আর ঘরে থাকেনি। নেমে এসেছে রাজপথে। ছিনিয়ে এনেছে বিজয়।

সংগ্রামী জনতা গতানুগতিক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে, স্বৈরাচার সৃষ্টির রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে সুষ্ঠু সুন্দর গণতান্ত্রিক রাজনীতির সংস্কৃতি, সর্বোপরি বাংলাদেশের  মাটি ও মানুষের রাজনীতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্ব দিয়েছে। বিশ্ববরেণ্য নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দেশের সূর্যসন্তানদের হাতে অর্পণ করেছে নতুন বাংলাদেশ গড়ার গুরুদায়িত্ব। এর জন্য রাষ্ট্র কাঠামোর যেখানে যে সংস্কার দরকার সেই সংস্কারের সঙ্গে রয়েছে তাদের একাত্মতা।

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে গণমানুষের প্রত্যাশা হলো সত্যিকারের গণতান্ত্রিক নতুন বাংলাদেশের অবয়ব তৈরি করে দেওয়া। মানুষ  আর পুরনো ধারার রাজনীতি চায় না। নতুন ধারার রাজনীতি চায়। চায় সুষ্ঠু গণতন্ত্রের স্থায়ী বন্দোবস্ত। চায় স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গঠনের টেকসই ফর্মুলা। তাদের প্রত্যাশা, অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনাসহ রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের কাঠামো তৈরি করে দিয়ে যাবে। সেই রাষ্ট্র কাঠামো তৈরির পরই তারা নির্বাচন চায়। এর আগে নয়। কারণ কোনোক্রমেই যেন পুরনো ধারার সেই বাংলাদেশের ফিরে আসার ফাঁকফোকর থেকে না যায়। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পর 'নতুন বাংলাদেশ' গড়ার যে সুযোগ গণমানুষের হাতে এসেছে, তার একটি কণাও তারা হেলায় হারাতে চায় না।

লেখক: কথাসাহিত্যিক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
জনগণের পুলিশ হতে পারলেই পুলিশের কলঙ্ক মুছে যাবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
জনগণের পুলিশ হতে পারলেই পুলিশের কলঙ্ক মুছে যাবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
গণহত্যাকারীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে শিবির: ছাত্রদল সেক্রেটারি
গণহত্যাকারীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে শিবির: ছাত্রদল সেক্রেটারি
একদিনে বছরের সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে, মৃত্যু ২
একদিনে বছরের সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে, মৃত্যু ২
নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের ৩৮ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের ৩৮ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
সর্বশেষসর্বাধিক