X
বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫
১৮ আষাঢ় ১৪৩২

উল্টোপথের সচিব

ফজলুল বারী
০২ অক্টোবর ২০১৭, ১৭:১৪আপডেট : ০২ অক্টোবর ২০১৭, ১৭:২৪

ফজলুল বারী ফেসবুকের জনপ্রিয় একটি উদ্যোগের নাম ফেসবুক লাইভ। এর মাধ্যমে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা নিজেদের উপভোগ্য নানা অভিজ্ঞতা বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন। আমিও প্রায় ফেসবুক লাইভে আসি। তবে তা নিজেকে দেখানোর জন্য নয়। নিজেকে দেখানোর মতো অত সৌম্য-সুন্দর আমি নই। ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে ছবির মতো সাজানো সুন্দর দেশ অস্ট্রেলিয়ার পথঘাটসহ অনেক কিছু দেখানোর চেষ্টা করি। আমরা সবাই স্বপ্ন দেখি, আমাদের বাংলাদেশও একদিন এর চেয়ে অনেক সুন্দর-উন্নত হবে। সিডনিতে আমার গাড়িতে চলার পথে বাজে বাংলাদেশের গান। এর একটিই কারণ, আমাদের বয়সীদের দেহটা বিদেশে থাকলেও মনটা পড়ে থাকে সারাক্ষণ বাংলাদেশে। আরও সহজ করে বললে, বিদেশ গেলে দেশটাকে অনেক বেশি অনুভব করা হয়। দেশ থেকে সুহৃদ-বন্ধুরা যখন নানা উপহার পাঠাতে চান, তাদের কাছে বাংলাদেশের নানা সাইজের পতাকা আর গানের সিডি চাই। এসব গানই আমি চলার পথে গাড়িতে বাজাই। ফেসবুক লাইভে অস্ট্রেলিয়ার সিডনির সাজানো-সুন্দর পথঘাটের সঙ্গে বাংলাদেশের গান খুব পছন্দ করেন আমার বন্ধুরা।
ফেসবুক লাইভে আবার গান বাজানোর বিপদও আছে। যে সব গানের কপি রাইট করা আছে তেমন গান, যেমন রবীন্দ্রসঙ্গীত, ভারতীয় জনপ্রিয় শিল্পীদের পুরনো দিনের জনপ্রিয় গানগুলোর বেশিরভাগই কপি রাইট করা। এসব গান লাইভে ব্যবহার করলে তা ধরা পড়ে ফেসবুকের প্রোগ্রাম করা ফাঁদে। ফেসবুক তখন শাস্তি হিসেবে লাইভ করার ব্যাপারটি তিনদিনের জন্য ব্লক করে রাখে। এ কারণে সিডি অনেক থাকলেও সব গান ফেসবুক লাইভে ব্যবহার করা যায় না।

আমার ফেসবুক লাইভে ভিউয়াররা তাদের মন্তব্যে সবচেয়ে যেটি উপভোগ করেন, তাহলে অস্ট্রেলিয়ার ট্রাফিকব্যবস্থা। ‘এত সুন্দর পথ, সবাই কি সুন্দর ট্রাফিক আইন মেনে চলে?’—এমন মন্তব্য অনেকে প্রায় করেন। এর মাধ্যমে সুন্দর একটি ট্রাফিক ব্যবস্থার জন্য প্রকাশ পায় তাদের মনের আকুতি। অস্ট্রেলিয়ার ট্রাফিকব্যবস্থা সুন্দর-আইনানুগ, এটি অনেকদিনের চেষ্টায় গড়া। প্রয়োগেও কড়াকড়ি আছে। আইন এখানে সবার জন্যে সমান। এই দেশের ট্রাফিক আইনে বিচারপতি বা সচিবের জন্য আলাদা কিছু নেই। বাংলাদেশের মতো দেশে আইনের খড়গের টার্গেট আমজনতা।  প্রভাবশালীরা আইন মানেন না অথবা আইন যে তারা মানেন না, এটিকে তারা তাদের প্রতাপের ব্যারোমিটার হিসেবে দেখাতে চান। আপনি সাংবাদিক হয়েছেন তো কী হয়েছে? গাড়িতে আবার সাংবাদিক, প্রেস এসব লিখে রেখেছেন কী কারণে? বেঁচে গেছেন,  লোকজন আপনাদের ভয় পায় বলে কিছু বলে না। কিন্তু এখন বলতে শুরু করেছে। বিচারপতি, সচিবরা আইন মানেন না, এসব নিয়ে আগে কখনও মানুষকে এমন প্রতিবাদী হয়ে কথা বলতে শুনেছেন? সবাইকে একই আইনের আওতায় আসতে হবে। সুষ্ঠু ট্রাফিকব্যবস্থা গড়ে তোলা ছাড়া দেশের মানুষকে চলতি জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করা যাবে না। প্রতিদিন পথে মানুষের যে মূল্যবান কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়, এ অবস্থার উন্নতি ছাড়া অধরা থেকে যাবে উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন।

এই অস্ট্রেলিয়ায় দেখি প্রভাবশালী কাউকে পুলিশ পেলে, তাকে গুরুত্ব দিয়ে ধরে। একবার এক ম্যাজিস্ট্রেটকে গাড়ি চালানো অবস্থায় মোবাইল ফোন ব্যবহার করার অপরাধে পুলিশ ধরলো। এদেশে এটি গুরুতর ট্রাফিক অফেন্স। জরিমানা বাংলাদেশের পঁচিশ হাজার টাকার বেশি। আর দুই পয়েন্ট কাটা। ওই ম্যাজিস্ট্রেট ফোন ব্যবহারের কথা প্রথম অস্বীকার করেছিলেন। পুলিশ প্রমাণ দিয়ে বলে, ওইদিন ম্যাজিস্ট্রেট ওই সময় ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। ওই সময় তার মোবাইলে একটি কল এসেছিল এবং তিনি তা রিসিভ করে কথাও বলেছেন। পুলিশ ওই প্রমাণ উপস্থাপন, মামলা রুজুর পর ওই ম্যাজিস্ট্রেট পদত্যাগ করেন। আমাদের দায়িত্বশীল লোকজনের চামড়া মোটা। তাদের লজ্জাশরম নেই! সারাক্ষণ অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে চোটপাট দেখিয়ে বেড়ান। তাদের নিচের পদের লোকগুলোর শাস্তির ব্যবস্থা করেন। অথচ তাদের  ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করা না পর্যন্ত চেয়ার ছেড়ে যেতে চান না।

অস্ট্রেলিয়ার গাড়ি চালকদের শতভাগ শিক্ষিত। এখানে প্রায় সবাই নিজের গাড়ি নিজে চালান। বাস-ট্রাক-অ্যাম্বুলেন্স-ফায়ার ব্রিগেড, পোস্টাল-কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়ির জন্যই মূলত পেশাদার ড্রাইভার লাগে। এর বাইরে এমপি, সচিব থেকে শুরু করে সাংবাদিক-পুলিশ সবাই নিজের গাড়ি নিজে চালান। ভাড়া গাড়ির পেশাদার ড্রাইভারদের অনেকের আবার স্পেশাল ট্রেনিং-লাইসেন্স। তারাও শিক্ষিত এবং তাদের মজুরিও বেশি। আবার ট্রাফিক আইনটি তাদের ক্ষেত্রেও সমান। ড্রাইভিং লাইসেন্স-পয়েন্টস না থাকলে চাকরি থাকবে না, বউ-বাচ্চা নিয়ে জীবনধারণ কঠিন হয়ে যাবে, জরিমানা হলে টান পড়বে সাপ্তাহিক বাজেটে, এজন্য তারাও গাড়ি চালান সতর্কতার সঙ্গে। ঘণ্টা হিসেবে মজুরি দিয়ে ড্রাইভার বা কাজের লোক রাখার সামর্থ্য এদেশের এক শতাংশ মানুষের আছে কিনা, সন্দেহ। সে জন্য এদেশে আমরা সবাই একেকজন কাজের বুয়া, সবাই একেকজন ড্রাইভার। ট্রাফিকব্যবস্থা সুশৃঙ্খল থাকার অনেক কারণের অন্যতম হলো, চালকদের সচেতনতা। ট্রাফিক আইনর প্রয়োগ হয় কড়াকড়ি। আরেকটা কথা, আমি নবাগতদের মজা করে বলি, এদেশের রাষ্ট্র সারাক্ষণ আমাদের পেছনে বেত হাতে ঘুরে বেড়ায়। বেতটির নাম ফাইন। ব্যয়বহুল জীবনে চলতে সপ্তাহে সাতশ থেকে হাজার ডলার খরচ হয়। এরমাঝে যদি কোনও সপ্তাহে ৪-৫ শ ডলার ফাইন হয়, তাহলে গড়বড় হয়ে যায় সাপ্তাহিক বাজেট।

কোন অপরাধে, কত ডলার জরিমানা, কত পয়েন্ট কাটা পড়বে, সব তথ্য অনলাইনে দেওয়া আছে। আপনি এসব জানেন না বলে পার পাওয়ার সুযোগ নেই। আইন জানা আপনার নিজের দায়িত্ব। আর এদেশের ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে যে পদে পদে সংগ্রাম, তা ওয়াকিবহালরাই জানেন। এজন্য মজা করে বলা হয়, অস্ট্রেলিয়ায় ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার চেয়ে অভিবাসন পাওয়া সহজ। আর ট্রাফিক আইনের পুরো ফোকাসটি হচ্ছে, রাস্তা যারা ব্যবহার করছেন, তাদের নিরাপত্তার জন্য এটা জরুরি। যেমন আপনি মোটরসাইকেল  চালান বা পেছনে চড়ুন, দু’জনেরই হেলমেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক। এটি আপনার নিরাপত্তার জন্যে জরুরি। কারণ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় চালক-আরোহী দু’জনেরই মাথা থেঁতলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু পারে। দেশের আলোচিত সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের হেলমেটবিহীন অবস্থায় মোটরসাইকেল চালানোর যে ছবি প্রায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ছাপা হয়, তা দেখে মন্ত্রী যে এ সংক্রান্ত আইন জানেন না অথবা আইনের পরোয়া করেন না, এমন আলোচনা হয়। মন্ত্রী মহোদয় আপনি সতর্ক হোন। কারণ দেশের লাখ-লাখ ছেলেমেয়ে আপনাকে অনুসরণ করে। আপনি এভাবে নিজের ও অনুসারীদের অকালমৃত্যুর কারণ হবেন না প্লিজ।

রাস্তায় উল্টোপথে গাড়ি জরুরি প্রয়োজনে অস্ট্রেলিয়ায়ও চলে। তবে সেগুলো অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার ব্রিগেড বা জরুরি কোনও খবর পেয়ে দ্রুত ধাবমান পুলিশের গাড়ি। এই গাড়িগুলোও ওই সব পরিস্থিতিতে সাইরেন বাজিয়ে চলে। আর সাইরেন বাজিয়ে চলা অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার ব্রিগেড বা পুলিশের গাড়িকে কিভাবে পথ করে দিতে হবে, তা ড্রাইভিং প্র্যাকটিসের শুরুতে  লারনার লাইসেন্স পাওয়ার আগেই শেখানো হয়। আপনি একজন মন্ত্রী-বিচারপতি-সচিব-পুলিশ অফিসার বা সাংবাদিক হয়ে গেছেন বলেই উল্টোপথে গাড়ি চালিয়ে চলেন যাবেন, এটি এদেশে অকল্পনীয়। সভ্যতা-ভব্যতার চিন্তার বাইরে। আর এজন্য বাংলাদেশের টাকায় ৩০ হাজার টাকার বেশি জরিমানার বিষয় তো আছেই। জরিমানার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এটির অন্যদিক থেকে আসা গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।

এদেশে পার্কিংয়ের নির্ধারিত স্থান ছাড়া আপনি যেখানে-সেখানে গাড়ি পার্কিং করতে পারবেন না। ব্যস্ত এলাকাগুলোর পার্কিংয়ের রাস্তার পাশের নির্ধারিত জায়গাগুলো পনের মিনিট, আধাঘণ্টা, একঘণ্টা—এভাবে মার্ক করা আছে। এর বেশি সময় গাড়িটিকে সেখানে পার্কিং অবস্থায় পাওয়া গেলে যে জরিমানা গুনতে হয়, তা বাংলাদেশের সাত হাজার টাকারও বেশি। আর বাস লেইন বা প্রতিবন্ধীদের পার্কিংয়ে আপনার গাড়ি পাওয়া গেলে তো বাংলাদেশের টাকায় কুড়ি হাজার টাকার বেশি গুনতে হবেই।  রাস্তাঘাটে ক্যামেরা-পুলিশ ট্রাফিক আইনের কড়াকড়ি বাস্তবায়নের কাজ করে। এখানে প্রতি আবাসিক এলাকা থেকে শুরু করে সর্বত্র নানান তথ্যসংবলিত বোর্ড লাগানো। গাড়ি থেমে দাঁড়ানো বা পার্ক করা যাবে না। এখানে ডানে মোড় দেওয়া যাবে না বা ইউটার্ন নেওয়া যাবে না। সামনে স্পিড ক্যামেরা বা রেডলাইট ক্যামেরা, এভাবে তথ্য দিতে হবে আগে এরপর জরিমানা। কোথাও কোনও নগদ টাকা জরিমানা হিসাবে নেওয়ারও ব্যবস্থা নেই। চিঠি চলে আসবে বাসার চিঠির বাক্সে। অমুক তারিখের মধ্যে জরিমানা শোধ করতে হবে। আপনি ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করেছেন, আপনি যেই হোন না কেন, আপনি আইনভঙ্গ করেছেন, আপনার বিরুদ্ধে নেওয়া শাস্তির সিদ্ধান্তে কোনও হেরফের হবে না।

আমাদের এখানে আবাসিক এলাকায় গাড়ির গতিসীমা ৫০, স্কুল শুরুর ও শেষের দেড়ঘণ্টা গতিসীমা ৪০। এরপর আমাদের পথগুলোর গতিসীমা ৬০, ৭০, ৮০, ৯০, ১০০ ও ১১০। রাস্তা বুঝে এই গতিসীমার নিচে থাকলে পেছনের গাড়ির চালক বিরক্ত হবে। নির্ধারিত গতিসীমার বেশি চললে ক্যামেরা বা পুলিশের হাতে ধরা পড়বেন। জরিমানার অঙ্ক আর পয়েন্ট খোয়ানোর চিঠি চলে এলে এরপর সে টাকা পোস্ট অফিসে গিয়ে দেবেন, না অনলাইনে দেবেন, না ফোন করে দেবেন, সেটি আপনার পছন্দের ব্যাপার। একসঙ্গে এত ডলার দেওয়াটা আপনার সামর্থ্যের বাইরে হলে ফোন করলে আপনাকে কিস্তি করে পরিশোধের সুযোগ করে দেবে। কিন্তু জরিমানার অর্থ আপনাকে দিতেই হবে। একটা জরিমানায় পড়লে সপ্তাহের বাজেটে টান পড়ে। সে কারণে সবাই সতর্ক থাকার চেষ্টা করে, যেন জরিমানা না হয়। এ কারণে  ট্রাফিক আইন মেনে গাড়ি চালানোর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয় সড়কশাসন।

বাংলাদেশের রাস্তাঘাট অস্ট্রেলিয়ার রাস্তাঘাটের চেয়ে ছোট বা কম চওড়া নয়। বাংলাদেশের সমস্যা হলো, ছোটদেশে মানুষ বেশি। বাংলাদেশের চেয়ে পয়ষট্টিগুণ বড় দেশ অস্ট্রেলিয়ার জনসংখ্যা আড়াই কোটি। এখানে মানুষ বাংলাদেশের মতো রাস্তায় হাঁটে না। যেখান-সেখান দিয়ে রাস্তা পার হয় না। এমন যেখান-সেখান দিয়ে রাস্তা পেরোনোর জরিমানাও সত্তর ডলার। বাংলাদেশের পথের বড় সমস্যা অনিয়ন্ত্রিত পার্কিং। যখন-তখন রাস্তায় নামে মিছিল-প্রতিবাদ। রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর যাতায়াত উপলক্ষে রাস্তা বন্ধ করা হয়। একবার রাস্তা বন্ধ করলে এর জের সারাদিন ধরে চলে। যানজটের কারণে বাংলাদেশে এখন যে উল্টো পথে আইন অমান্য করে গাড়ি চালানো শুরু হয়েছে, এসব আগে ছিল না। এসব কোনও সাধারণ মানুষের গাড়ি না। মন্ত্রী-এমপি-সচিব-বিচারপতি-পুলিশ-সাংবাদিকের গাড়ি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি বেআইনিভাবে উল্টোপথ দিয়ে চলা রুখতে পথে নেমেছিলেন একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। যানজটে স্থবির বসে থেকে প্রভাবশালীদের আইন অমান্য করে উল্টোপথে চলা দেখে দেখে আমজনতার মধ্যে ক্রোধের পাহাড় জমেছিল। সচিবসহ প্রভাবশালী নানাজনের গাড়িকে জরিমানার ঘটনায় সে ক্রোধের বিস্ফোরণ ঘটেছে।  

ভারপ্রাপ্ত সচিব মাফরুহা সুলতানার গাড়ি পরপর দুই দিন উল্টো পথে চলার অপরাধে জরিমানা হলো। দুই দিনই গাড়িতে বসা ছিলেন মাফরুহা সুলতানা। এ নিয়ে হৈচৈ শুরু হলে বাংলাদেশের প্রশাসন আবার চোখে আঙুল দিয়ে মনে করিয়ে দিলো, তারা রক্ষা করবে সচিবকে। এই সচিব নিজে গাড়িতে বসে থেকে আইন ভাঙলেন। অথচ তার কোনও দায় নেই? সচিবের মত বা সায় ছাড়া তার উপস্থিতিতে একজন গাড়িচালকের সাহস আছে আইনভঙ্গ করে চলার? কিন্তু তা এড়িয়ে গেছে দেশের একচোখা প্রশাসন! ফজলুল হক নামের একজন অতিরিক্ত সচিব আমাকে লিখেছেন, উল্টোপথে গাড়ি চালানোর দায় গাড়ি চালকের। সচিবের নয়। সচিব তখন গাড়িতে বসে কি ঘুমাচ্ছিলেন? জিজ্ঞেস করলে জবাব আসেনি। উল্টোপথে চলা সচিব মাফরুহা সুলতানা তাই একটি 'ক্রোধের' নাম। পরপর দু’দিন তার উপস্থিতিতে তার গাড়ি জরিমানার শিকার হওয়ার পরও প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এজন্য বিবেকের দংশনে পদত্যাগও করেননি ওই সচিব। এমনকি প্রশাসন এই সচিবের কাছে কোনও ব্যাখ্যা-কৈফিয়ত জানতে চেয়েছে কিনা, তাও জানতে পারেনি দেশের করদাতা জনগণ! দেশের আইনের শাসনের জন্য একটি বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকলেন এই উল্টোপথের সচিব। তাকে ও তার রক্ষাকবজ আমলা প্রশাসনকে মনে রাখবে বাংলাদেশের স্বপ্নের আইনের শাসনের ভবিষ্যৎকাল। আপাতত আমরা এদের  বিরুদ্ধে ঘৃণা জানিয়ে রাখি। বাংলাদেশকে যদি এর নেতৃত্ব স্বপ্নের উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যেতে চায়, তাহলে এর সব পথ, সব চরিত্রকে আইনানুগ সোজা পথে আনতে হবে সবার আগে। এসব উল্টোপথের সচিবকে ছেঁটে ফেলে দিতে হবে। তাদের নিয়ে সভ্য আইনানুগ উন্নত বাংলাদেশ হবে না।

লেখক: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক

 

এসএএস/এমএনএইচ

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
অসহায় মা-মেয়ের সরকারি চাল খেয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা
অসহায় মা-মেয়ের সরকারি চাল খেয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা
নীরবে কাঁদেন আবু সাঈদের বাবা-মা, দেখতে চান ছেলে হত্যার বিচার
নীরবে কাঁদেন আবু সাঈদের বাবা-মা, দেখতে চান ছেলে হত্যার বিচার
ফিরে দেখা: ২ জুলাই ২০২৪
ফিরে দেখা: ২ জুলাই ২০২৪
টিভিতে আজকের খেলা (২ জুলাই, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (২ জুলাই, ২০২৫)
সর্বশেষসর্বাধিক