X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সৃজনশীল ভাবনা ‘পদ্মা সেতু’

তুষার আবদুল্লাহ
১২ ডিসেম্বর ২০১৫, ১৮:০৪আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫, ১৬:৩৮

Tushar Abdullah আর মাত্র বছর তিনেক, তারপর দেশের অর্থনীতির সূচক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেই হিসেব কষতে বসে গেছেন অর্থনীতিবীদরা। ৪২ টি পিলারের ওপর ভর করে বদলে যাবে বাংলাদেশের জীবনমান। অর্থনীতির এই সাহিত্য নিয়ে অর্থনীতিবিদরা আলাপ জমাবেন। তাদের সেই সাহিত্যে পদ্মার দু’কূলের মানুষের কাছে আসার কাহিনী কতোটুকু জায়গা পাবে জানি না। তবে দক্ষিণের ২১ জেলা রাজধানীর সঙ্গে আরও নিবিড় হচ্ছে। সেই নিবিড়তা তাদের পারস্পরিক জানা বোঝাকে কি আরও সুদৃঢ় করবে? আপাতত সেই হিসেব কষা ঠিক হবে না।

কাছাকাছি এলে সম্পর্ক নদীর জলের মতো কোনদিকে বাঁক নেয়, সে কথা জানাবে আগামী দিন। তবে তিন বছর পর দক্ষিণকে কিভাবে দেখতে চাই, দক্ষিণও কাছাকাছি এসে তার মনস্তত্ত্ব কতোটুকু পাল্টাবে, তারও প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। সেই প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকেই।

দক্ষিণের ২১ জেলার প্রথম কাজটি হবে রাজধানীর ওপর নির্ভরশীলতা কমানো। আবাস ও কাজের জন্য রাজধানীমুখী মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ৬.১২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পদ্মা সেতুতে রেললাইনও যুক্ত থাকছে। আর সেতুতো সময়ের দূরত্ব কমিয়ে দিচ্ছেই। তাই ব্যবসা ও কাজের ক্ষেত্র নিজ নিজ জেলাতেই গড়ে তুলতে হবে। রাজধানীকে শুধু  ব্যবহার করতে হবে উৎপাদনের বাজার হিসেবে।

রাষ্ট্র এরই মধ্যে পদ্মা সেতুকে দুঃসাহসিকতার স্তম্ভ মেনে এগিয়ে এসেছে অনেকটা পথ। ঋণ নিয়ে পদ্মা সেতুর ছল-চাতুরি ষড়যন্ত্রকে আমলে না নিয়ে নিজের গাঁটের টাকা নিয়েই মাঠে নেমেছে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করা হলো এই প্রকল্পে। বিশ্বব্যাংক নিজেই হতভম্ব, বিস্মিত উন্নয়নের ঝাণ্ডাধারী দেশগুলোও।

বাংলাদেশের এই সক্ষমতায় পৃথিবীর এই অবাক হয়ে যাওয়ায় অহংবোধে আটকে থাকবে না বাংলাদেশ। তাকে উৎপাদনে সৃজনশীল হতে হবে। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের এই সময়ের সেরা সৃজনশীল ভাবনা। তার টেকসই প্রয়োগ উপস্থাপন হতে পারে শুধু রাজনৈতিক চর্চা, সমচিন্তার রাজনৈতিক সম্মিলনের মাধ্যমে। পদ্মা সেতুর নদী শাসনের কাজ শুরু হলো, তার মধ্যে দিয়ে রাষ্ট্রবান্ধব রাজনীতির অনুশীলনও শুরু হওয়া প্রয়োজন।  সেই অনুশীলন দ্বারাই সম্ভব পদ্মা সেতুর ৪১টি  পিলারকে বিজয় স্তম্ভে রূপ দেওয়া। সেই বিজয় উদযাপনের অপেক্ষায় বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ বরাবরই উন্নয়নের বিজয় উদযাপনের জন্য তৈরি। কিন্তু এখানে উন্নয়নের পরম্পরা ও ধারাবাহিকতা না থাকায়, কোনও কোনও উন্নয়ন তীরে উঠতে পারেনি। যে কোনও টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য এখানে কখনোই সেই পরম্পরা রক্ষা সম্ভব হয়নি।

একচোখে উন্নয়ন দেখার সংস্কৃতি চর্চা বাংলাদেশ শুরু করতে পারেনি বিজয়ের ৪৪ বছরেও। বলতে পারি বাংলাদেশ অনেক অর্জনই ফিকে হয়ে গেছে সংস্কৃতির অনুপস্থিতির কারণে। টেকসই উন্নয়ন না হওয়ার আরেকটি কারণ এখানে রাজনৈতিক সহিষ্ণুতাও বিকশিত হয়নি। একের উন্নয়ন অপরের হয়েছে চক্ষুশূল। যদি পদ্মা সেতুর কথাই বলি, তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, ২০০৮-এর পর যদি ক্ষমতার ধারাবাহিকতা না থাকতো, তবে সেতু নির্মাণের কাজ নদী শাসন পর্যায়ে পৌঁছাতো না। হয়তো এখন সেতুর জন্য নতুন প্রকল্প এলাকা নির্বাচনের কাজ চলতো। একথা সব রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কেউই অন্যের প্রকল্প চালিয়ে নিয়ে যেত না। ফলে লাল ফিতায় বন্দি হয়ে যেতো পদ্মা সেতু। বাংলাদেশের অনেক প্রকল্পের এমন অপমৃত্যু ঘটেছে।

বাংলাদেশ বিজয়ের ৪৪ বছর উদযাপন করতে যাচ্ছে। সেই উদযাপনকে সোনার হরফে লিখে রাখতে ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত যারা, তারা কি পারবেন এক চোখে বাংলাদেশের উন্নয়নের পথচিত্র আঁকতে।

শুরু করতে সহিষ্ণুতার রাজনীতি। পদ্মা সেতুর নদী শাসন শুরুর শুভলগ্নে এই স্বপ্নের দাবিটুকু তো করতেই পারেন উন্নয়ন কাঙাল জনমানুষেরা!

 

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ন্যাটোর কোনও দেশ আক্রমণের পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার: পুতিন
ন্যাটোর কোনও দেশ আক্রমণের পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার: পুতিন
বাস-সিএনজির সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ ৩ জন নিহত
বাস-সিএনজির সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ ৩ জন নিহত
যুক্তরাষ্ট্রে ছুরিকাঘাতে চারজন নিহত
যুক্তরাষ্ট্রে ছুরিকাঘাতে চারজন নিহত
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে টাকা গায়েব করা ৩ জন গ্রেফতার
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে টাকা গায়েব করা ৩ জন গ্রেফতার
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ