X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

করোনা পজিটিভ?, বি পজিটিভ

প্রভাষ আমিন
০৪ মে ২০২০, ১৫:৫৯আপডেট : ০৪ মে ২০২০, ১৬:০৫

প্রভাষ আমিন গত কয়েকদিনে আমার বেশ কয়েকজন করোনা পজিটিভ বা সন্দেহভাজন রোগীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের কারও কারও অসুস্থতার শুরু থেকে সুস্থ হওয়া পর্যন্ত নিয়মিত যোগাযোগ রাখার সুবাদে পুরো প্রক্রিয়াটা আমি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পেয়েছি। দেখেশুনে আমার মনে হয়েছে, করোনাভাইরাস নিয়ে আমরা যতটা আতঙ্কিত, বাস্তবে এটি ততটা ভয়ঙ্কর নয়। তারচেয়ে বড় কথা হলো, কোভিড-১৯ যতটা না শারীরিক সমস্যা, মানসিক সমস্যা তারচেয়ে কম নয়। বরং কখনও কখনও আমার কাছে মনে হয়েছে, মানসিক সমস্যাটাই বেশি। দুইটা উদাহরণ দেই। একজন আমাকে ফোন করে বললেন, ‘ভাই আমি তো মরেই গিয়েছিলাম। ৪৮ ঘণ্টা ঠিকমতো খাই নাই, ঘুমাই নাই।’ আমি চমকে উঠলাম, ‘কী হলো আপনার?’ তিনি যেটা জানালেন সেটা বিস্ময়কর, তিনি কয়েকদিন ধরে জ্বর-কাশিতে ভুগছিলেন। আতঙ্ক থেকে তিনি করোনা টেস্ট করান। টেস্ট করার পর রিপোর্ট পেতে তার ৪৮ ঘণ্টা লেগেছে। এই ৪৮ ঘণ্টা সময় কেটেছে তার মৃত্যু যন্ত্রণায়। রিপোর্ট নেগেটিভ আসার সঙ্গে সঙ্গে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যান। আমি নিশ্চিত, রিপোর্ট পজিটিভ হলে তার অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটতো। নেগেটিভ রিপোর্টের এমন পজিটিভ প্রভাব সত্যি বিরল। অথচ পজিটিভ বা নেগেটিভ একটি কাগুজে রিপোর্ট মাত্র। এই রিপোর্ট পাওয়ার সঙ্গে কোনও শারীরিক পরিবর্তন হওয়ার কথা নয়। কিন্তু করোনা পজিটিভ আর নেগেটিভের মধ্যে যেন আকাশ-পাতাল ফারাক। এবার উল্টো উদাহরণটা বলি। আমার আরেক বন্ধু জ্বর-কাশি-গলা ব্যথায় ভুগছিলেন। ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে নিয়মিত ওষুধ খেয়ে তিনি প্রায় সুস্থ হয়ে ওঠেন। আমি প্রথম থেকেই খোঁজ রাখছিলাম। আগেরদিন করোনা পরীক্ষার জন্য তার স্যাম্পল নিয়ে গেছে। কিন্তু জ্বর ভালো হয়ে গেছে, গলা ব্যথাও নেই বলে তিনি বেশ নির্ভার ছিলেন। বিকালেও কথা হলো। বললেন, একটু দুর্বলতা ছাড়া আর কোনও সমস্যা নেই। বেশ হাসি খুশি।

আমি তাকে বললাম, আপনি তো ৯৫ ভাগ সুস্থ হয়ে গেছেন। কিন্তু সন্ধ্যায় যখন তাকে ফোন করলাম, আমি চিনতেই পারলাম না। প্রথমে ভেবেছি, রং নম্বর বুঝি।

আতঙ্কে কথা বেরুচ্ছে না। মিনমিন করে কথা বলছেন। কী হয়েছে? বললেন, ‘দাদা আমি তো শেষ। আমার করোনা পজিটিভ এসেছে।' তার কথা শুনে মনে হচ্ছিল, করোনা পজিটিভ মানেই যেন অনিবার্য মৃত্যু। জাস্ট একটা রিপোর্ট যেন তাকে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে নিচ্ছে। টানা ৪/৫ দিন ওষুধ খেয়ে প্রায় সুস্থ হয়ে যাওয়া মানুষটিই এখন আবার নতুন করে অসুস্থ হলেন যেন। এরপর তাকে সুস্থ রাখতে আমার খুব কষ্ট হয়েছে। দিনরাত বুঝিয়েছি, সাহস দিয়েছি। তাকে নতুন করে দেওয়ার মতো কোনও ওষুধ ছিল না। নতুন করে তার কোনও শারীরিক সমস্যাও হয়নি। খালি মানসকিভাবে ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। সেই করোনা পজিটিভ রোগী কিন্তু এখন সুস্থ, শারীরিক দুর্বলতা ছাড়া আর কোনও সমস্যা নেই।

এই যে আমি বললাম, করোনা ভয়ঙ্কর কোনও ভাইরাস নয়, এটা শুনে অনেকে নিশ্চয়ই আমাকে মারতে আসতে চাইবেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যাকে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করেছে, বিশ্বের লাখ লাখ লোক যেখানে আক্রান্ত হচ্ছে, মারা যাচ্ছে; সেখানে একে ভয়ঙ্কর না বলার আমি কে। এবার আসুন পরিসংখ্যানে। বিশ্বের লোকসংখ্যা বর্তমানে ৭৭৮ কোটি।

এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৫ লাখ ৮১ হাজার ৮৭৯ জন। আক্রান্তের হার কত জানেন? মাত্র দশমিক ০৪ ভাগ। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন ২ লাখ ৪৮ হাজার ৫৫৮ জন। মৃত্যুর হার কত জানেন? মাত্র ৭ ভাগ। তার মানে আক্রান্ত হওয়া মানুষের ৯৩ ভাগই সুস্থ হয়ে যান। চীনে যখন প্রথম করোনা ছড়িয়ে পড়ে তখন মৃত্যুর হার ছিল ৩ ভাগ। ইতালি এবং যুক্তরাষ্ট্রে অনেক মানুষের মৃত্যুর পর এই হার ৭ ভাগে উঠেছে। এখন প্রশ্ন হলো আপনি নিজে কোন ভাগে থাকতে চাইবেন? আক্রান্ত না হওয়া ৯৯ দশমিক ৯৬ ভাগে নাকি আক্রান্ত দশমিক ০৪ ভাগের মধ্যে? আপনি যদি দুর্ভাগা হন তাহলে আক্রান্তের মধ্যে পড়ে যেতে পারেন। আচ্ছা আক্রান্ত যদি হয়েই যান, তাহলে আপনি নিশ্চয়ই সুস্থ হয়ে যাওয়া ৯৩ ভাগের মধ্যে নিজেকে রাখতে চাইবেন। যারা দুর্ভাগাতম তারাই ৭ ভাগের চক্করে পড়ে যান। আপনি আক্রান্ত না হওয়া বা আক্রান্ত হলেও সুস্থ হওয়াদের দলে থাকবেন কিনা তার অনেকটাই নির্ভর করছে আপনার ওপর। ঠিক পড়েছেন, আপনারই ওপর।

আক্রান্ত না হতে হলে কী করতে হবে, আমার ধারণা সেটা এখন বিশ্বের ৭৭৮ কোটি মানুষের সবাই জানেন। আমি যে শুরুতে বলেছি করোনা ‘ততটা ভয়ঙ্কর’ বলেছি, সেটা আসলে পুরোপুরি ঠিক নয়। করোনা একটি ভয়ঙ্কর ভাইরাস। কারণ এটি সাংঘাতিক ছোঁয়াচে। আক্রান্ত মানুষের কাছাকাছি গেলে যে কেউ করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। তাই আক্রান্ত না হওয়ার প্রথম শর্ত হলো, আপনাকে করোনায় আক্রান্ত মানুষের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে। কিন্তু আপনি যেহেতু জানেন না কে আক্রান্ত আর কে আক্রান্ত নন; তাই আপনাকে সব মানুষের কাছ থেকেই নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হবে। আবার মানুষের কাছে না গিয়েও আপনি করোনা আক্রান্ত হতে পারেন। মানুষের শরীরে করোনা প্রবেশের রাস্তা চারটি—মুখ, নাক, কান এবং চোখ। করোনা আক্রান্ত কেউ যদি আপনার মুখের ওপর এসে হাঁচি বা কাশি দেন বা আপনি যদি কোথাও থেকে করোনা ছুঁয়ে আপনার হাত মুখ, চোখ, কান বা নাকে দেন; তাহলেই কেবল আপনার শরীরে করোনা ঢুকতে পারবে। করোনা কিন্তু বাতাসে ভেসে বেড়ায় না। তাই আপনি যদি ভাইরাসটি প্রবেশের রাস্তাগুলো সুরক্ষিত রাখতে পারেন এবং নিজেকে জনসমাগম থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে পারেন; তাহলেই আপনি নিরাপদ থাকতে পারেন। আর সমাগমে যদি যেতেই হয় মুখ-চোখ-নাক-কান ঢেকে রাখতে হবে; যাতে ভাইরাস ঢোকার রাস্তা না পায়। আর নিজের হাত সামলে রাখতে হবে।

কারণ হতে পারে আপনি নিজেই নাক-মুখ-কান বা চোখে হাত দিয়ে নিজের শরীরে করোনা ঢুকিয়েছেন। তাই নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হলে আপনাকে সাবধান থাকতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাতে ভালো থাকে তার জন্য ভিটামিন সি’সহ পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।

এত সতর্কতার পরও কিন্তু আপনি আক্রান্ত হয়ে যেতে পারেন। হয়ে গেলে আপনি কী করবেন? এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। করোনা পজিটিভ হওয়ার পর আপনি সুস্থ হওয়া ৯৩ ভাগে থাকবেন, নাকি দুর্ভাগা ৭ ভাগে পড়ে যাবেন; এর অনেকটাই নির্ভর করছে একদমই আপনার ওপর। সাধারণভাবে বুঝি মানুষের শরীরও একটা দেশের মতো।

একটা দেশের যেমন প্রতিরক্ষাবাহিনী থাকে, আমাদের শরীরেরও থাকে। আমরা যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বলি, সেটাই আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষাবাহিনী। সব দেশের প্রতিরক্ষাবাহিনী যেমন সমান শক্তিশালী নয়, তেমনি সব মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও সমান নয়। ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া নিত্যই আমাদের শরীরে আক্রমণ করে। আর আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষাবাহিনী তাদের সঙ্গে লড়াই করে। যদি আমার বাহিনী জিতে যায়, তাহলে ভাইরাস হাওয়া। আর যদি ভাইরাস জিতে যায়, তাহলে আমরা কাবু হয়ে পড়ি, অসুস্থ হয়ে যাই। এমন লড়াই আমাদের প্রতিরক্ষাবাহিনীকে নিত্যই করতে হয়, ভাইরাস দুর্বল হলে আমরা টেরই পাই না।

আর করোনার মতো সবল ভাইরাস হলে লড়াইটা হয় সেয়ানে সেয়ানে। তাই করোনার সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য আপনার বাহিনীকে সতর্ক ও সবল রাখতে হবে। তার মানে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকতে হবে, যাতে লড়াইয়ে আপনি জিততে পারেন। এই যে উন্নত দেশগুলোতে করোনার আক্রমণ বেশি, মারাও যাচ্ছে বেশি; সেই তুলনায় বাংলাদেশের মতো গরিব দেশগুলোতে কম কেন? তাপমাত্রা, বিসিজি টিকা ইত্যাদি নানান থিওরি শুনেছি। হাস্যকর মনে হতে পারে, তবে আমার একটা কম বুদ্ধির থিওরি আছে। উন্নত দেশের মানুষেরা পুষ্টিকর খাবার খায়, নিয়ম মেনে চলে; তাই তাদের শরীরের প্রতিরক্ষাবাহিনীকে তেমন কোনও লড়াই করতে হয় না, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয় না। তাদের বাহিনী হয়তো আমাদের চেয়ে শক্তিশালী; কিন্তু সেই বাহিনী অলস; তারা বেশিরভাগ সময় বিশ্রামে থাকে, অসতর্ক থাকে। তাই ভাইরাসের আক্রমণে কাবু হয়ে যায়। আর আমাদের যা লাইফস্টাইল; তাতে আমাদের শরীরের বাহিনীকে সবসময় লড়াই করতে হয়, অস্ত্র উঁচিয়ে সবসময় তৈরি থাকতে হয়। তাই করোনাভাইরাস খুব একটা সুবিধা করতে পারে না।

করোনা আক্রান্ত হলে প্রথম যেটা করতে হবে, সেটা হলো ভয় না পাওয়া। করোনার সঙ্গে লড়াইটা একইসঙ্গে শক্তিমত্তার এবং কৌশলের। যুদ্ধে সৈনিকদের মনোবলটা যেমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আপনার মনোবলটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এমন একটা ভাব করতে হবে, আরে ধুর, করোনা কোনও বিষয় নাকি। উড়িয়ে দেবো। আপনার মনোভাবে করোনা ভয় পেয়ে যেতে পারে। আর আপনি যদি ভয় পেয়ে যান, করোনা আপনার ওপর চেপে বসবে। আতঙ্কিত হলে যে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, এটা কিন্তু কথার কথা নয়, প্রমাণিত। নিজে ভাবুন আপনি যদি ভয় পান, তখন আপনার কেমন লাগে। ধরুন আপনি রাস্তায় হাঁটছেন, একটা গাড়ি প্রচণ্ড গতিতে আপনার একদম কাছ ঘেঁষে গেলো। আপনি অল্পের জন্য বেঁচে গেলেন। প্রথম রিফ্লেক্সে সর্বশক্তি দিয়ে আপনি লাফিয়ে নিজেকে রক্ষা করবেন, তারপরই কিন্তু ভয়ে আপনার শরীর দুর্বল হয়ে যাবে। গ্রামে এটাকে বলে শরীর ছেড়ে দেওয়া, মানে তাৎক্ষণিকভাবে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। তখন যদি কোনও ভাইরাস আক্রমণ করে আপনি কিন্তু মুহূর্তেই কাবু হয়ে যাবেন। করোনা আক্রান্তের খবরে আপনি যদি আতঙ্কিত হয়ে যান, তাহলে করোনা আপনাকে পেয়ে বসবে। এটা কোনোভাবেই করতে দেওয়া যাবে না। পুরো বিষয়টার নিশ্চয়ই অনেক একাডেমিক ব্যাখ্যা আছে। আমি মূর্খ মানুষ, একটু মূর্খের মতো বোঝার চেষ্টা করলাম।

করোনা পজিটিভ হলেও আপনাকে নেগেটিভ হলে চলবে না। ভয় পেলে আপনি উল্টাপাল্টা কাজ করবেন, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। প্রথমে ঠান্ডা মাথায় করণীয়গুলো ঠিক করতে হবে। ধাপে ধাপে কী করবেন, তার একটা তালিকা করে ফেলতে হবে। একজন ডাক্তারের নম্বর, অ্যাম্বুলেন্সের নম্বর, প্রয়োজন হলে হাসপাতালের নম্বর, রাত-বিরাতের ফোন দেওয়ার মতো বন্ধুর নম্বর লিখে রাখতে হবে। প্রয়োজনীয় ওষুধ, থার্মোমিটার, পালসঅক্সিমিটার, গ্লুকোমিটার, নেবুলাইজার, সম্ভব হলে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার বাসায় মজুত রাখতে হবে।

আপনার যদি কোনও পরিচিত ডাক্তার থাকেন, তাহলে খুব ভালো। তার সঙ্গে একটা প্রটোকল ঠিক করে নিন। আর নইলে কোনও টেলিমেডিসিনের সাহায্য নিতে হবে। এখন অনেক ডাক্তার তাদের ফোন নম্বর পাবলিক করে দিয়েছেন। তাদের কোনও একজনের সঙ্গে নিজেকে ট্যাগ করে ফেলুন। এতদিনে আপনি নিশ্চয়ই জেনে গেছেন, করোনার কোনও টিকা যেমন নেই, নির্দিষ্ট কোনও ওষুধও নেই। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরই ভয় পেয়ে কোনও ডাক্তার বা হাসপাতালে ছুটে যাওয়ার কোনও মানে নেই। কারণ ডাক্তারের কাছে গেলেও আপনাকে লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসাই দেবে। জ্বর, সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা, গায়ে ব্যথা, শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যার নিয়মিত ওষুধ আছে।

অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মেনে ওষুধ খেতে হবে। লক্ষণ বুঝে ডাক্তার কোনও অ্যান্টিবায়োটিকও দিতে পারেন। করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ ভাগই বাসায় চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। তাই আপনাকেও চেষ্টা করতে হবে বাসায় থেকেই চিকিৎসা শেষ করে সুস্থ হয়ে যাওয়ার। মনে রাখবেন যতক্ষণ বাসায় আছেন, ততক্ষণ কিন্তু করোনার ওপর আপনার এবং আপনার পরিবারের নিয়ন্ত্রণ থাকবে। হাসপাতালে চলে গেলে কিন্তু নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে থাকবে না। কিন্তু তারপরও বাধ্য হলে আপনাকে হাসপাতালে যেতেই হবে। জ্বর, সর্দি, কাশি, গায়ে ব্যথা, গলা ব্যথার চিকিৎসা আপনি বাসায় বসেই করতে পারবেন। শ্বাসকষ্ট হলেও প্রাথমিকভাবে ইনহেলার নিয়ে, নেবুলাইজ করে বা অক্সিজেন সিলিন্ডার ভাড়া এনে বাসায়ই চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। কিন্তু যখন আপনার ভেন্টিলেটর, আইসিইউ বা লাইফ সাপোর্ট লাগবে; তখন আপনাকে হাসপাতালে যেতেই হবে। তবে কখন আপনি হাসপাতালে যাবেন সেটা ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করেই নেবেন। হাসপাতালে না যেতে পারলে ভালো। আবার হাসপাতালে দেরি করে যাওয়াটাও কিন্তু বিপজ্জনক। তাই শ্বাসকষ্টটা মনিটর করবেন, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা মনিটর করবেন। অসহনীয় হলে আর দেরি নয়।

করোনা আক্রান্ত হলে নির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা নেই, এটা ঠিক। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টোটকা চিকিৎসার কোনও শেষ নেই। নিম পাতা, থানকুনি পাতা, আদা, রসুন, কালিজিরা, লং, মধু, লেবু, মাল্টা, কমলা, চা, গরম পানি, লবণ পানির গার্গলের মতো অনেক অব্যর্থ ওষুধের কথা নিশ্চয়ই আপনি শুনেছেন। এতে করোনা ভালো হবে কিনা তার কোনও গ্যারান্টি নেই, প্রমাণিত কোনও তথ্যও নেই।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এ উপমহাদেশে মানুষ আদিকাল থেকে এসব ব্যবহার করে আসছে। আর এসব ব্যবহারে তেমন কোনও ক্ষতি নেই, বরং উপকার আছে। আর এসব ব্যবহার করলে যদি আপনার মানসিক সন্তুষ্টি আসে, তাহলে করোনা সংক্রমণের আগে বা পরে এসব ব্যবহারে কোনও ক্ষতি নেই। তবে ইথানলের ভাপ নেওয়া বা ট্রাম্পের পরামর্শমতো ফুসফুস পরিষ্কার রাখতে ডিটারজেন্ট খেয়ে ফেলার কথা ভুলেও মাথায় আনবেন না।

করোনার এই সময়ে করোনা থেকে তো সাবধান থাকতে হবেই, সাবধান থাকতে হবে অন্য সব ধরনের অসুখ থেকেও। যাদের কিডনি বা হার্টের অসুখ আছে, ডায়াবেটিস, প্রেসার, গ্যাসট্রিকের মতো অসুখ আছে; তাদের সবাইকে নিয়ম মেনে চলতে হবে। নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে। কোনও অনিয়ম করা যাবে না। কারণ এই সময়টায় যেকোনও রোগের চিকিৎসা পাওয়াই কঠিন। এমনকি বাথরুমে যাওয়ার সময়ও সাবধানে পা টিপে টিপে যাবেন। বাথরুমে পড়ে গিয়ে অসুস্থ হওয়াটা বয়স্ক মানুষের জন্য খুব কমন। তবে এই সময় বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে। আপনি নিয়মিত যেসব ওষুধ খেতেন, সেগুলো চালিয়ে যাবেন, প্রয়োজনে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

শুরুতে যে বলেছিলাম, করোনা ‘ততটা ভয়ঙ্কর’ নয়; এটা একদম ডাহা মিথ্যা কথা। শুরুতে আপনাদের সাহস দেওয়ার জন্য বলেছিলাম। এতক্ষণে নিশ্চয়ই আপনার সাহস অনেক বেড়েছে। এবার জেনে রাখুন করোনা একটি ভয়ঙ্কর ভাইরাস। আতঙ্কিত না হলেও একটু ভয় কিন্তু পেতে হবে। ভয় না পেলে আমরা সাবধান থাকবো না। আমরা একটু অসতর্ক হলেই করোনা ঢুকে পড়তে পারে। আর শত্রুকে খাটো করে দেখা চলবে না।

আপনি ভাব দেখাবেন, পাত্তা দিচ্ছেন না, কিন্তু আসলে পাত্তা দিতে হবে, তৈরি থাকতে হবে। করোনা সহজে ছড়ায় এবং দ্রুত মানুষকে মৃত্যুর দিকেও টেনে নিতে পারে। যারা আগে থেকেই কোনও না কোনও জটিল অসুখে ভুগছেন, করোনা তাদের প্রিয় টার্গেট। আর ৩/৪ দিনের জ্বরে মরে যাওয়ার ঘটনাও অনেক আছে। হয়তো বাসার নিরোগ তরুণ ছেলেটি বাইরে থেকে করোনা নিয়ে এলো। নিজে ৩/৪ ভুগে সুস্থ হয়ে গেলো। কিন্তু তার থেকে সংক্রমিত হয়ে তার বয়স্ক বাবা দুই দিনেই মৃত্যুর দুয়ারে চলে গেলেন। তাই প্রবীণ স্বজন বা অসুস্থ স্বজনদের ব্যাপারে বেশি সতর্ক থাকতে হবে। করোনা যেন তাদের নাগাল না পায়। কারণ তাদের শরীরের সৈনিকেরা তুলনামূলক দুর্বল।

৮০ ভাগ রোগী তো বাসায় থেকেই সুস্থ হয়, তাদের কাছে করোনা কোনও অসুখই মনে হয় না। কিন্তু বাকি যে ২০ ভাগকে হাসপাতালে যেতে হয়, তাদের ভয়ঙ্কর শারীরিক ও মানসিক লড়াই চালাতে হয়। হাসপাতালে যাওয়াদের মধ্যে আবার যাদের আইসিইউতে যেতে হয়, তাদের বিষয়টি অনেক সময় অদৃষ্টের হাতে চলে যায়। তাই সাবধানে থাকতে হবে, যাতে করোনা নাগাল না পায়। পেলেও যাতে বাসায় থেকে সুস্থ হওয়া যায়। হাসপাতালে গেলেও মানসিকভাবে দৃঢ় থাকতে হবে, যাতে লড়াইটাতে জেতা যায়।

নিজে শক্ত থাকুন, ডাক্তারদের ওপর আস্থা রাখুন, তাদের সহায়তা করুন। ভয় পেলে, আতঙ্কিত হলে যেহেতু কোনও লাভ নেই; তাই ইতিবাচক থাকুন, দৃঢ় থাকুন।

: করোনা পজিটিভ?

: বি পজিটিভ।

* লেখাটি একাধিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখে দিয়েছেন।

লেখক: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ

 

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
এনসিসি ব্যাংক ও একপের মধ্যে চুক্তি সই
এনসিসি ব্যাংক ও একপের মধ্যে চুক্তি সই
‘বিএনএমের সদস্য’ সাকিব আ.লীগের এমপি: যা বললেন ওবায়দুল কাদের
‘বিএনএমের সদস্য’ সাকিব আ.লীগের এমপি: যা বললেন ওবায়দুল কাদের
ভাটারায় নির্মাণাধীন ভবন থেকে লোহার পাইপ পড়ে হোটেল কর্মচারীর মৃত্যু
ভাটারায় নির্মাণাধীন ভবন থেকে লোহার পাইপ পড়ে হোটেল কর্মচারীর মৃত্যু
সুইডেনের প্রিন্সেস ক্রাউনের কয়রা সফর সম্পন্ন
সুইডেনের প্রিন্সেস ক্রাউনের কয়রা সফর সম্পন্ন
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ