টাকা নিয়ে সেবা দেওয়ার শর্ত থাকলেও পুরান ঢাকার গণশৌচাগারগুলোয় নেই কোনও হ্যান্ডওয়াশ বা সাবান-টিস্যুর ব্যবস্থা। স্যানিটাইজেশনের ছিটেফোঁটাও না থাকা অনেক শৌচাগার নোংরা ও অপরিষ্কার।
সরেজমিনে দেখা যায়, পুরান ঢাকার কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বাহাদুর শাহ পার্ক, মালিটোলা পার্কসহ সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে রয়েছে গণশৌচাগার। এগুলোয় টাকা নিলেও কোনও ধরনের হ্যান্ডওয়াশ বা সাবান, টিস্যু দেওয়া হচ্ছে না। এতে হাত পরিষ্কার করতে পারছে না ব্যবহারকারীরা। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন তারা। এ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এসব টয়লেট ব্যবহার করতে আসা মানুষ।
কবি নজরুল সরকারি কলেজের পাশে অবস্থিত গণশৌচাগারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে নেই কোনও সাবান বা টিস্যুর ব্যবস্থা। আবার টয়লেট ও নোংরা ও অপরিষ্কার।
সেখানকার দায়িত্বরত কর্মচারী ইব্রাহিম বলেন, ‘টয়লেটের ভেতর বা বাইরে টিস্যু ঝুলিয়ে রাখলে অনেকে এটা নিয়ে বাসায় চলে যায়। আবার অনেকে অযথা টিস্যু অপচয় করে। এ জন্য টিস্যু আমাদের কাছে রেখেছি। যার লাগবে, সে আমাদের কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে যাবে। আমরা পরিমাণমতো টিস্যু দিয়ে দেবো।’
এই টয়লেটে এসে নারীদের কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। এছাড়া এখানে গর্ভবতী বা অসুস্থ নারীদের জন্য নেই হাই কমোডের ব্যবস্থা। এছাড়া দুটি টয়লেট বন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে।
ইব্রাহিম আরও বলেন, ‘এখানে কিছু মহিলা আসে, তারা হাইকমোড নোংরা করে রেখে যায়। এ জন্য ওই টয়লেট বন্ধ করে রেখেছি। এ ছাড়া এখানে তেমন একটা মানুষ আসে না। অতো বেশি টয়লেটের প্রয়োজন হয় না। মানুষ বেশি থাকলেও কল না থাকায় বেসিনও ঠিক করে নিতাম। কিন্তু সেটার প্রয়োজন হয় না।’
পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বাহাদুর শাহ পার্কে অবস্থিত গণশৌচাগারে দেখা যায়, সেখানেও কোনও টিস্যু বা সাবানের ব্যবস্থা নেই। তবে শৌচাগারের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। সাবান ও টিস্যুর বিষয়ে দায়িত্বরত আকলিমা বলেন, ‘আজ টিস্যু ও সাবান শেষ হয়ে গেছে। এ জন্য টয়লেটে টিস্যু আর সাবান নেই।’
বাহাদুর শাহ পার্কে নিয়মিত হাঁটতে আসা এনামুল হক বলেন, ‘এখানে হাঁটতে এলে প্রায়ই টয়লেট ব্যবহার করতে হয়। টয়লেট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে এটা ঠিক, তবে কখনোই সাবান বা টিস্যু পেপার থাকে না। টাকা দিয়ে টয়লেট ব্যবহার করার পরও একটা টিস্যু দেয় না।’
ব্যায়ামের জন্য হাঁটতে আসা সায়েবা খাতুন নামের একজন বলেন, ‘মহিলাদের জন্য পাবলিক টয়লেটগুলোতে ন্যাপকিনের ব্যবস্থা রাখা উচিত। হঠাৎ অনেকেই অসুস্থ হয়ে নিকটস্থ পাবলিক টয়লেটে যাওয়া লাগে। তখন যদি টয়লেটগুলোয় মহিলাদের জন্য কোনও স্পেশাল সুযোগ-সুবিধা না থাকে, তাহলে বিষয়টি দৃষ্টিকটু লাগে।’
মালিটোলা পার্কের অভ্যন্তরীণ গণশৌচাগারে গিয়ে সবচেয়ে বেশি বাজে অবস্থা দেখা গেছে। এখানে আসা অনেকেই টয়লেটের নোংরা পরিবেশ দেখে ব্যবহার না করেই চলে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দায়িত্বরত একজন বলেন, ‘টয়লেটের সাবান-টিস্যু শেষ হয়ে গেছে। কিনে আনতে পাঠাইছি। কিন্তু এক ঘণ্টা পার হলেও কাউকে আসতে দেখা যায়নি। নোংরা পরিবেশের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আসে। অনেকে পানের পিক ফেলে মুখ ধোয়ার বেসিন অপরিষ্কার করে রাখে। আমরা পরিষ্কার করি নিয়মিত, তবুও ময়লা হয়ে যায়।’
মালিটোলা পার্কের গণশৌচাগারে আসা রিকসন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এই পাবলিক টয়লেটের মতো এতো নোংরা অবস্থা আমি আর কোথাও দেখিনি। টয়লেটের উপরিভাগে মলমূত্র জমে থাকে। ভেতরে মুখ দিলেই বমি চলে আসে। এসব নোংরা বিষয় ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।’
জেসমিন আক্তার নামের আরেকজন বলেন, ‘মহিলাদের টয়লেট মোটামুটি পরিষ্কার ছিল। কিন্তু কোনও ধরনের স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা ছিল না।’
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের কাছে অবস্থিত গণশৌচাগারে স্যানিটাইজেশনের কোনও ব্যবস্থা না থাকলেও এখানে অত্যন্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিরাজ করছে।
লঞ্চ টার্মিনালে আসা মোমেনা বেগম বলেন, ‘এসব পাবলিক টয়লেটে টাকা দিয়ে সার্ভিস নেওয়া সত্ত্বেও স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা না থাকাটা দুঃখজনক। এখানে সাবানই নাই, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হ্যান্ডওয়াশ খোঁজা তো বিলাসিতা।’
এই গণশৌচাগারে দায়িত্বরত মিলন বলেন, ‘এখানে সব সময় এগুলো থাকে। ভেতরে আজ বোধ হয় শেষ হয়ে গেছে। তা ছাড়া যাদের দরকার, তারা আমাদের কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে যায়।’