X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা মেডিক্যালের জরুরি বিভাগ: টয়লেটে দরজার বদলে পর্দা

আবিদ হাসান
১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:০০আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১৮:৫৮

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলায় রোগীদের জন্য রয়েছে প্রায় ৩৬টি টয়লেট ও ওয়াশরুম। তবে যে পরিমাণে রোগী আসেন, তাদের জন্য এগুলো পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের আত্মীয়স্বজনদের। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওয়াশরুম দিনে একবার পরিষ্কার করা হয়, পরিষ্কারের কিছু সময় পরই আবার নোংরা হয়ে যায়।

এদিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে রোগী ও সঙ্গে আসা স্বজনদের ব্যবহারের জন্য রয়েছে দুটি টয়লেট। এর কোনোটিতেই দরজা নেই। দরজা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে হাসপাতালে পর্দা। এতে করে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় ব্যবহারকারীদের।

অপর্যাপ্ত টয়লেট, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ

ঢামেক পুরাতন ভবনে বেশ কয়েকবার গিয়ে দেখা যায়, টয়লেটগুলোর ভেতরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। ময়লা-আবর্জনা, টিস্যু ফেলার জন্য নেই কোনও ঝুড়ি। টয়লেটের সামনে রোগী ও তাদের স্বজনদের সিরিয়াল। অনেক মানুষ, সে তুলনায় টয়লেট কম। দিনে একবার পরিষ্কার করার পরপরই নোংরা হয়ে যায় টয়লেটগুলো।

ঢামেকে টয়লেটের সামনেও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ

টয়লেটের সামনে অপেক্ষায় থাকা কামাল উদ্দিনের সঙ্গে কথা হয় বাংলা ট্রিবিউনের এই প্রতিবেদকের। যশোর থেকে চিকিৎসা নিতে এখানে এসেছেন তিনি। কামাল উদ্দিন বলেন, চিকিৎসা নিতে ঢাকায় এসেছি এক সপ্তাহ। প্রায় প্রতিদিনই ওয়াশরুমে সিরিয়াল থাকে। এতো রোগীর জন্য এই কয়টা ওয়াশরুম পর্যাপ্ত  না। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসে। সবাই সচেতন না। এছাড়া এতো মানুষের ব্যবহারের ফলে খুব সহজেই নোংরা হয়ে যায়। তাই দিনে অন্তত ঘণ্টাখানেক পর পর এটি পরিষ্কার করা উচিত।

দিনাজপুরের পার্বতীপুর থেকে রোগীর সঙ্গে আসা আঁচিয়া বেগম বলেন, নারীদের জন্য আলাদা কোনও ওয়াশরুম নেই। যার ফলে পুরুষের সঙ্গে একই ওয়াশরুম ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। মহিলাদের জন্য এটা বিব্রতকর, অস্বস্তিকর। এছাড়া এখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতারও কিছুটা ঢিলেমি রয়েছে। দিনে অন্তত চার-পাঁচ বার পরিষ্কার করা উচিত, যেহেতু অনেক রোগী ও তাদের আত্মীয়স্বজনরা ব্যবহার করেন।

ঢামেকে টয়লেটে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ

ভিন্ন চিত্রও রয়েছে ঢামেকে। ডাক্তার ও নার্সদের জন্য আলাদা ওয়াশরুম রয়েছে এবং সেগুলোতে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখা হচ্ছে ঠিকঠাক মতো। কারণ হিসেবে জানা যায়, যারা ব্যবহার করেন তারা সবাই সচেতন। এছাড়া সাধারণ মানুষ বা রোগীদের সেগুলো ব্যবহারের সুযোগ নেই। হাসপাতালে দায়িত্বরত নার্স নুসাইবা খানমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডাক্তার ও নার্সরা সবাই সচেতন বলে তাদের জন্য সংরক্ষিত ওয়াশরুম নোংরা হয় না। কিন্তু রোগী ও তাদের সঙ্গে আসা মানুষদের অজ্ঞতা এবং বহুল ব্যবহারের কারণে সাধারণ ওয়াশরুমগুলো দ্রুতই নোংরা হয়ে যায়।

দায়িত্বরত (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) এক চিকিৎসক বলেন, আমাদের ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা সবচেয়ে জরুরি। তাহলে এতো নোংরা হবে না, আমরাও সুস্থ থাকবো। পাশাপাশি দিনে অন্তত তিন থেকে চার বার টয়লেটগুলো পরিষ্কার করা প্রয়োজন, যেহেতু বহু মানুষ এগুলো ব্যবহার করে।

জরুরি বিভাগে টয়লেটে পর্দা, বহির্বিভাগে ‘ব্যবসা’

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালের রোগীরা প্রাথমিকভাবে আসেন হয় জরুরি বিভাগ, আর না হয় বহির্বিভাগে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি বিভাগে রোগী ও অন্যান্যদের ব্যবহারের জন্য রয়েছে দুটি টয়লেট। তবে টয়লেট দুটির একটিরও দরজা নেই। দরজা হিসেবে ব্যাবহার করা হচ্ছে হাসপাতালে পর্দা। এতে করে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় রোগী ও তাদের স্বজনদের।

জরুরি বিভাগের সামনে কথা হয় সেবা নিতে আসা ইমতিয়াজের সঙ্গে। তিনি বলেন, টয়লেটে দরজার বদলে পর্দা দেওয়া। ভেতরে ঢুকতে গিয়ে দেখি আরেকজন ভেতরে। একটা বিব্রতকর পরিস্থিতি। দরজা থাকলে তো নক করা যেতো। বোঝা যেতো ভেতরে কেউ আছে নাকি।

বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, টয়লেট নিয়ে রীতিমতো ব্যবসা চলছে যেন। হাসপাতালের নিজস্ব টয়লেট থাকলেও সেগুলো এখন বন্ধ। বহির্বিভাগে ‘ভুমিজ’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ওয়াশরুম দিয়েছে। সেটি ব্যবহারের জন্য জনপ্রতি দিতে হচ্ছে ১০টাকা করে। বৃদ্ধ, শারীরিক প্রতিবন্ধী, নারী ও শিশুদের প্রবেশের কথা থাকলেও সবাই এতে প্রবেশ করছেন। কারণ জানতে চাইলে টয়লেট রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সেলিনা আক্তার বলেন, নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি কম থাকায় পুরুষদেরও প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে।

বহির্বিভাগে টয়লেট ব্যবহার করতে লাগে ১০ টাকা

সেলিনা জানান, ‘ভুমিজ’ থেকে ব্যবহার মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া আছে পাঁচ টাকা করে। তবে পরিষ্কার করার ডিটারজেন্টসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তিনি ১০ টাকা করে নিচ্ছেন। পরিচ্ছন্ন নিয়ে অভিযোগ রয়েছে ব্যবহারকারীদের–এই প্রশ্ন করার হলে সেলিনা জানান, ঘণ্টাখানেক পর পরই পরিষ্কার করা হয়। তবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও বৃদ্ধরা ব্যবহারের পর এটা হয়। আমরা দ্রুতই পরিষ্কার করার চেষ্টা করি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢামেক পরিচালক নাজমুল হোসেন বলেন, জরুরি বিভাগে এতোদিন ধরে দরজা নেই এটা আমার জানা ছিল না। আমাদের ওয়ার্ডবয়কে বললে তারা এগুলো সংস্কার করে দিতো আশা করি। তারা বা রোগীরা কেউই আমাকে জানায়নি এগুলোর বিষয়ে। আপনি আমাদের নজরে দিয়েছেন, আমরা এগুলো সংস্কার করে ফেলবো শিগগিরই।

তিনি আরও বলেন, বহির্বিভাগে ভুমিজ নামে একটি এনজিওকে আমরা অনুমোদন দিয়েছি। তারা নারী-শিশু-প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য স্বল্প টাকায় সেবা দিচ্ছে। রোগীসহ যারা আসছে তারাও দেখলাম এটাতে সন্তষ্ট। এছাড়াও আমাদের হাসপাতালের ওয়াশরুম রয়েছে, সেগুলোও খোলা থাকার কথা। কী কারণে বন্ধ আছে আমি খোঁজ নিয়ে খুলে দিতে বলবো।

ছবি: প্রতিবেদক।

/এফএস/
টাইমলাইন: নাগরিক শৌচাগার চিত্র
২০ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:০১
১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:০০
ঢাকা মেডিক্যালের জরুরি বিভাগ: টয়লেটে দরজার বদলে পর্দা
সম্পর্কিত
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
সমবায় সমিতির নামে কোটি টাকার দুর্নীতি: দুদকের অনুসন্ধান শুরু
হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার শঙ্কা এজেন্সি মালিকদের
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৪)
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত যুবলীগ নেতা
দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত যুবলীগ নেতা
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা