X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

শৌচাগারে নেই স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা, নষ্ট পানির কল

ওয়াজহাতুল ইসলাম, জাবি প্রতিনিধি
২১ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০২৩, ১৩:৪০

দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ১৯৭২ সালে কার্যক্রম শুরু করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত নানা উন্নতি হয়েছে। বেড়েছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। গাছ-পালায় আবৃত ক্যাম্পাসটি ধীরে ধীরে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে— শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বহিরাগত দর্শনার্থীদেরও। তবে এত বছরেও বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাসে নেই কোনও গণশৌচাগার। দাফতরিক কাজে আসা ব্যক্তিদের বাধ্য হয়ে ব্যবহার করতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, অ্যাকাডেমিক ভবনসহ আবাসিক হলের শৌচাগারগুলো। তবে সেখানেও নেই স্যানিটাইজেশনের যথাযথ ব্যবস্থা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবন ও হলের শৌচাগারগুলো সরেজমিনে দেখা যায়, বেশিরভাগ শৌচাগারেই সাবান ও টিস্যুর ব্যবস্থা নেই। এমনকি টিস্যু ফেলার পর্যাপ্ত ঝুড়িও রাখা হয়নি।

আবসিক হলগুলো ঘুরে দেখা যায়, সম্প্রতি ছেলেদের ৬টি হলের শৌচাগার সংস্কার করা হয়েছে। সংস্কারের অংশ হিসেবে শৌচাগারগুলোতে টাইলস, সাবান রাখার পাত্র, নতুন ট্যাপ লাগানো হয়েছে। ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন সকালে শৌচাগারগুলো পরিষ্কার করা হয়। তবে হলগুলোর শৌচাগারে সাবান অথবা লিকুইড হ্যান্ডওয়াশ ও টিস্যুর ব্যবস্থা নেই। এছাড়া ব্যবহৃত টিস্যু ফেলার জন্য পর্যাপ্ত ঝুড়িও রাখা হয়নি। ফলে শৌচাগারগুলোতে যত্রতত্র পড়ে আছে ব্যবহৃত টিস্যু। এছাড়া ফেলে রাখা টিস্যু থেকে ব্লকেজ তৈরি হয়েছে অনেকগুলো প্রশ্রাবাগারে। এতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে ও দিনের বেশিরভাগ সময় শৌচাগারগুলো ব্যবহারের অযোগ্য থাকে।

শৌচাগারে নেই স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা, নষ্ট পানির কল

বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আলিফ হাসান বলেন, ‘ছুটির দিন ব্যতীত শৌচাগারগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। তবে ইদানিং পর্যাপ্ত ডিটারজেন্ট অথবা টয়লেট ক্লিনার ব্যবহার করা হচ্ছে না। যার কারণে শৌচাগারের কমোডগুলোতে ময়লা জমে ও দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। প্রশ্রাবাগারের ট্যাপ বসানো হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক ওপরে। ফলে ট্যাপ খুললে ছিটকে পড়া পানি গিয়ে শরীরে লাগছে। এছাড়া করোনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের হল গেটে হ্যান্ডওয়াশের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু গত দুমাস ধরে সে ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’

অ্যাকাডেমিক ভবনগুলোতে ছেলে ও মেয়েদের আলাদা শৌচাগারের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে অধিকাংশ ভবনেই নেই হাত ধোয়ার সাবান, কিংবা লিকুইড হ্যান্ড ওয়াশের ব্যবস্থা। সমাজবিজ্ঞান অনুষদের কিছু বিভাগে শিক্ষার্থীদের শৌচাগারে সাবানের ব্যবস্থা থাকলেও  সেখানে টিস্যুর ব্যবস্থা নেই। দুরবস্থা নতুন কলা ও মানবিকী অনুষদের নিচতলার শৌচাগারেরও। সম্প্রতি শৌচাগারটি সংস্কার করা হলেও সাবান ও টিস্যু ফেলার ঝুড়ির দেখা মেলেনি। ফলে  যত্র-তত্র ব্যবহৃত টিস্যু পড়ে থাকতে দেখা যায়। এছাড়া শৌচাগার থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

শৌচাগারে নেই স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা, নষ্ট পানির কল

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিটি ভবনের নিচতলার শৌচাগারগুলো বেশি ব্যবহৃত হয়। ফলে ভবনের অন্যান্য শৌচাগারের চেয়ে এগুলিই বেশি অপরিচ্ছন্ন থাকে। এই শৌচাগারগুলো দিনে একাধিকবার পরিষ্কার করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন ব্যবহারকারীরা। অ্যাকাডেমিক ভবনের অনেকগুলো শৌচাগার সংস্কার করা হলেও কিছু শৌচাগারের ট্যাপ খোলা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। বেশিরভাগ ট্যাপে ময়লার আস্তর পড়েছে।

জাবির চিকিৎসাকেন্দ্রের শৌচাগার ছাড়া বিভিন্ন দফতর, মসজিদ ও ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) শৌচাগারে নেই সাবান অথবা লিকুইড হ্যান্ড ওয়াশের ব্যবস্থা। স্বয়ং বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনের নিচতলার শৌচাগারেই নেই স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা। এছাড়া শৌচাগারগুলোর অনেক ট্যাপ নষ্ট হয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। মসজিদের ওজুখানাতে মাঝে মাঝে সাবানের ব্যবস্থা করা হলেও বেশিরভাগ সময় তা থাকে না। টিএসসির শৌচাগারের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ খুবই অস্বাস্থ্যকর। যেখানে-সেখানে পড়ে আছে টিস্যু। মাঝে মাঝে শৌচাগারের অভ্যন্তরে জমে থাকে নোংরা পানি। পানির ফ্ল্যাশগুলো নষ্ট হয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। তাই শৌচকর্ম শেষে পর্যাপ্ত পানি ঢালতে পারছেন না ব্যবহারকারীরা। এতে দ্রুতই দুর্গন্ধময় হচ্ছে শৌচাগারের পরিবেশ। তবে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই ব্যবহার করতে হচ্ছে শৌচাগারগুলো।

শৌচাগারে নেই স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা, নষ্ট পানির কল

কিছু কিছু শৌচাগারে প্রতিবন্ধী ও বিশেষ চাহিদা-সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য হাই-কমোডের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে নেই কোনও সাহায্যকারী। ফলে অনেক সময় বিশেষ চাহিদা-সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা শৌচাগার ব্যবহারে প্রতিবন্ধকতায় পড়েন।

করোনার পর আবাসিক হল, অ্যাকাডেমিক ভবন, বিভিন্ন দফতরের প্রবেশমুখে লিকুইড হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে গত দেড় মাস ধরে অনেক হলে সেই ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। অ্যাকাডেমিক ভবনগুলোতে অনেক আগে থেকেই তা বন্ধ রয়েছে। স্যানিটাইজেশনের জন্য হলগুলোতে শিক্ষার্থীরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে সাবান কিংবা লিকুইড হ্যান্ড ওয়াশের ব্যবস্থা করলেও অ্যাকাডেমিক ভবনগুলোতে তা নেই। ফলে অ্যাকাডেমিক ভবনগুলোতে শৌচকর্ম শেষে সাবান ব্যবহার করতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা।

এদিকে স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা না থাকায় ব্যবহারকারীরা দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাহফুজা মোবারক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকগুলো শৌচাগার সংস্কার করা হয়েছে। তবে সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় না। সাবান দিয়ে হাত না ধোয়ার ফলে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস জাতীয় রোগের ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও গণশৌচাগার নেই। যারা এখানে প্রথম আসেন তারা বিড়ম্বনায় পড়েন।’

শৌচাগারে নেই স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা, নষ্ট পানির কল

তবে শৌচাগারের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে ব্যবহারকারীদেরও দায় রয়েছে, বলেন ড. মাহফুজা মোবারক। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক জিনিস ব্যবহারের একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। আমাদের ব্যবহারকারীরা তা মানতে চায় না। শৌচকর্ম সম্পাদনের পর যেখানে সেখানে টিস্যু ফেলা ও পর্যাপ্ত পানি না ঢালা, অপরিচ্ছন্নতার অন্যতম কারণ। এসব বিষয়ে ব্যবহারকারীদের সচেতন হওয়া উচিত। এছাড়া শৌচাগারগুলো পরিষ্কারের পর তা শুষ্ক করার ব্যবস্থা করলে অপরিষ্কার কম হবে।’

আবাসিক হলগুলোর শৌচাগারে টিস্যু ও সাবান কিংবা লিকুইড হ্যান্ড ওয়াশের ব্যবস্থা আছে কিনা জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের কর্মকর্তা মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ‘এ ধরনের ব্যবস্থার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে হলকে বাজেট দেওয়া হয় না। তাই এই ব্যবস্থা নেই। করোনার পর হলের প্রবেশমুখে লিকুইড হ্যান্ড ওয়াশের ব্যবস্থা ছিল। সেটার বাজেট ইউজিসি থেকে দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় সেই ব্যবস্থাও বন্ধ হয়ে গেছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আবাসিক হল, অ্যাকাডেমিক ভবনগুলোতে সাবান কিংবা লিকুইডের ব্যবস্থা আছে কিনা, না থাকলে কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করেন।’

/এপিএইচ/
টাইমলাইন: নাগরিক শৌচাগার চিত্র
২১ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০
শৌচাগারে নেই স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা, নষ্ট পানির কল
২০ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:০১
সম্পর্কিত
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
বহুতল ভবনের সংজ্ঞাফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কবে সমন্বয় করবে রাজউক?
ফটোকপি দোকানের কর্মচারী, জেলে, রাজমিস্ত্রি তৈরি করতো জাল টাকা
সর্বশেষ খবর
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
করোনার পর মাধ্যমিকে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে
করোনার পর মাধ্যমিকে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়