X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভুবনেশ্বর হে, ঐক্য চাই

তুষার আবদুল্লাহ
২২ মে ২০২১, ১৬:৩৩আপডেট : ২২ মে ২০২১, ১৬:৩৩

তুষার আবদুল্লাহ ইদানিং আসমানের দিকে তাকিয়ে থাকি। জমিনে চোখ নামাতে পারি না। জমিনে তো বরাবরই চৈত্র। আষাঢ়- ভাদ্রের জল এসে লজ্জায় জমিনের ফাটল ঢেকে দেয়। কিন্তু খণ্ড-বিখণ্ড জমিনকে এক করতে পারে না। মানুষ আসমানের মতো অসীমতাকে ছুঁতে চায়। কিন্তু থাকতে ভালোবাসে খণ্ডিত হয়ে। ব্যক্তি মানুষ, গোষ্ঠী মানুষ সকলের গঠন ও আকাঙ্ক্ষা একই। জলের স্পর্শে এক ভূমিতে মিশে যাওয়ার যে মেরুকরণ দেখি, তা ভনিতা মাত্র। জল শুষে নিয়ে আবার নিজেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ করে তোলে। আমরা ব্যক্তিগত ভাবে নিজের দিকে তাকালে, আমাদের সমাজ ও পেশাগত অবস্থান ও সম্পর্ক বিশ্লেষণ করলে তাই দেখতে পাবো। দুনিয়া থেকে চোখ যদি নিজ ভূখণ্ডের দিকে নিয়ে আসি, দেখবো চৈত্রের জমিনের মতো চৌচির আমরা।

সকল পেশাই খণ্ডিত হয়ে আছে। নানা ছুঁতোয়। রাজনৈতিক মন্ত্র ছাড়াও, ব্যক্তি লোভের কারণেও পেশাজীবী সংগঠনগুলো খণ্ডিত। তাদের এই পাঠ রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে। আমরা এক সময়ের প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলগুলোকে কতিপয় ব্যক্তি নামে খণ্ডিত হতে দেখেছি। আমাদের সাংস্কৃতিক সংগঠনের অভিজ্ঞতাও একই। পেশাজীবী সংগঠনগুলো রাজনৈতিক মন্ত্রকে পুঁজি করে খণ্ডিত হয়েছে। অন্দরে নেতৃত্বের দ্বন্দ্বও উসকানি হিসেবে কাজ করেছে। এই খণ্ড-বিখণ্ড পেশাজীবী সংগঠনগুলো বরাবরই খনিজ উপকরনের সংকটে ভুগে। ফলে পেশাগত অধিকার, কোনও অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রয়োজনীয় বল সঞ্চয় করতে পারে না। বিচ্ছিন্নভাবে মাঠে নামার কারণে শক্তি রূপ পায় না এককে। ফলে অধিকাংশ সময়েই ফল না তুলেই তাদের ঘরে উঠে আসতে হয়। কিংবা বিচ্ছিন্নতার আরও বিস্তার ঘটে। ফলাফল– দাবি আদায়ের লক্ষ্য রূপ নেয় আত্ম বিরোধে।

নিজেদের কথা যদি বলি, তবে সাংবাদিক সংগঠনগুলোর বেলাতেও একই উদাহরণ চলে আসবে। নিকট অতীতে সাগর রুনি হত্যাকাণ্ড, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং চলমান রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা ও কারাবাস জ্যন্ত উদাহরণ। এছাড়া দেশজুড়ে বছরজুড়েই সংবাদ কর্মীদের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের করা হয়রানিমূলক মামলার শিকার হয়ে জেল খাটতে হচ্ছে। দুই একটি ঘটনার সঙ্গে সাংবাদিক পরিচয়ধারীদের অনৈতিকতা কারণ হতে পারে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সত্য প্রকাশের মূল্য দিতে হয় সাংবাদিকদের। কোনও কোনও ঘটনায় স্থানীয় মৃদু প্রতিবাদ হয়, বিভক্ত পেশাজীবী সংগঠন, এখনও বাহ্যিকভাবে অখণ্ড আছে এমন এক দুই সংগঠন কাগজে প্রতিবাদ হয়তো জানালো, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে সাংবাদিককে ব্যক্তিগত ভাবে হয়রানির ঘানি টেনে নিয়ে যেতে হয়। এই যে প্রতিবাদের কথা বললাম, সেখানেও আছে গোষ্ঠী প্রিয়তা।

সকল সরকারের সময়েই কিছু প্রচলিত কথা শোনা যায়– সরকার অমুক সাংবাদিককে পছন্দ করেন না। তমুক আমাদের না। একেবারে সাংগঠনিকভাবে বিভাজিত নন। কোনও সংগঠনের সম্পর্ক রাখেন না, এমন গণমাধ্যম পেশাদার গণমাধ্যম কর্মীদের সম্পর্কে এমন একটা ধারণা চাওর করে দেওয়া হয়। সেই মিথ্যে চাওরটি আবার সরকারের বিভিন্ন ধাপ বিশ্বাস করতে শুরু করে কোনও যাচাই-বাছাই ছাড়াই। যাচাই-বাছাই ছাড়া বিশ্বাস করা শোভন নয়। কিন্তু তারা তো গণমাধ্যমের অন্দর মহলে ঢুকে তথ্য নিচ্ছেন না। তাদের কানে তথ্য তুলে দিচ্ছেন আমার, আমাদেরই কোনও সহকর্মী। যারা নিজের পদ রক্ষা বা সরকারের কাছে ভালো থাকার জন্য এই কাজটি করছেন। দুঃখজনক হলো, এদের অধিকাংশ সকল সরকারের কাছে গিয়ে একই ভান ধরে। সুতরাং এই চরিত্র নিয়ে সাংবাদিকরা বেতন, ভাতা, মামলা- জেল এর হয়রানি থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পারবেন, এমন প্রাণ শক্তি, আমরা এখনও সঞ্চয় করতে পারিনি।

এ কারণে আমাদের গণমাধ্যমের গুনগত মানের যে উত্তরণ প্রয়োজন ছিল বৈশ্বিক ও উপমহাদেশীয় প্রেক্ষপটে, সেখানেও আমরা পৌঁছতে পারিনি। আমরা অনুকরণ ও অনুসরণ করে পথে নামি বারবার, কিন্তু পথের শুরু থেকেই ফিরে আসতে হয়। কারণ গণমাধ্যমের পেশাজীবীদের অনৈক্য দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি, সঠিক বিনিয়োগেরও অন্তরায়। বর্তমান বাংলাদেশের গণমাধ্যম সেটি হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছে। গণমাধ্যমের ঐক্য নিয়ে চেষ্টা তদবির কম হয়নি। এখনও হচ্ছে। শুধু গণমাধ্যম কর্মীরাই নয়। ভোক্তাদের মধ্য থেকেও এই চাপ তীব্র হচ্ছে, কারণ তারা জানেন অনৈক্য গণমাধ্যম সত্যের কাছাকাছি পৌঁছতে পারে না। ভেতর বাইরের তাগিদ ও চাপ নিয়েও, বাস্তবে এখনও আমরা ঐক্যের পথে তৈরিই করতে পারিনি, হাঁটা বহুদূর। তাই জমিনে ভরসা না পেয়ে আকাশ পানে চেয়ে আছি। ভুবনেশ্বর যদি আমাদের ঐক্যের কোনও পথ মিলিয়ে দেন।

লেখক: গণমাধ্যম কর্মী

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বিরল সূর্যগ্রহণ দেখতে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে জড়ো হবেন ১০ লাখ দর্শনার্থী
বিরল সূর্যগ্রহণ দেখতে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে জড়ো হবেন ১০ লাখ দর্শনার্থী
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ