X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার

তুষার আবদুল্লাহ
২৩ অক্টোবর ২০২১, ১৫:৫৮আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২১, ১৫:৫৮

তুষার আবদুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) দুলে উঠেছে। সেই দুলুনি দূরে থেকেও অনুভূত হয়েছে। যে গানের দল সুর তৈরি করেছে, কণ্ঠ ছেড়েছে জোরে, তারা আমার চেনা। টেলিভিশনে তাদের সঙ্গে ঢাকার কাছে এক কাশবনে আড্ডা হয়েছিল। তখন আকাশে ছিল শরতের মেঘ। আড্ডা দিয়েছি মেঘদলের সঙ্গে। গতকাল শুক্রবার সেই মেঘদলই টিএসসি এলাকায় সুরের মূর্ছনা ছড়িয়েছিল। আওয়াজ ছিল প্রতিবাদের। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের। প্রতিবাদের এই ভাষা আমার পছন্দের। আমি বিশ্বাস করি- মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরাজিত ও নির্মূল করতে সাংস্কৃতিক অস্ত্রই উপযুক্ত। এই অস্ত্র প্রতিরোধ ও মোকাবিলার শক্তি তাদের নেই।

যে টিএসসিতে গানে গানে শুক্রবার প্রতিবাদ জানানো হলো, সেই টিএসসি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম তীর্থভূমি। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ রাষ্ট্রের যেকোনও বিপন্নতা ও দুর্যোগে এখান থেকে নবীন-প্রবীণের সম্মিলনে সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়েছে। সেই প্রতিরোধ কোনও অপশক্তি কখনও ডিঙাতে পারেনি।

আমাদের সাংস্কৃতিক চর্চা ও আন্দোলনে জোয়ার প্রবাহমান থাকেনি। রাজধানীতে চিন্তক শ্রেণি, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও কর্মীরা রাজনৈতিকভাবে বিভাজিত হয়ে আছে। তাদের কাছে একাত্তর ও বাংলাদেশের চেয়ে ব্যক্তিগত লাভ-লোকসান মিটিয়ে নেওয়াটাই যেন জরুরি বিষয় এখন। পদ-পদবি আর তারকা ইমেজের একটা ঘোরের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে সবাই।

সাংস্কৃতিক চর্চার ভাটাকালকে অপচয় করতে চায়নি মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী। তারা সমাজ, পরিবার ও রাজনীতিতে চিন্তার মেরুকরণ ঘটিয়ে ফেলে। আমাদের জীবনযাপন, শিক্ষায় ধর্মীয় অন্ধত্ব, কট্টর লু’হাওয়া বইয়ে দিতে শুরু করে, যা সমাজ ও রাজনীতিকে অসহিষ্ণু করে তোলে। আমরা ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের দুই নির্বাচন-পরবর্তী বাংলাদেশের সঙ্গে ২০০১ পরবর্তী বাংলাদেশের মিল খুঁজে পাবো না। এ সময়টায় ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহারে মাধ্যমে বাঙালি সংস্কৃতির বদলে একটি পরগাছা সংস্কৃতিতে নিজেদের জড়িয়ে ফেলতে শুরু করি। দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হলো- রাজনীতিবিদরা না হয় ভোট ও ক্ষমতার লোভে পরগাছা তুলে নিলো, কিন্তু দেশের চিন্তক শ্রেণিরাও কেন সেই সুবাসে মোহিত হতে চাইলেন? তাহলে কি আমাদের চিন্তক শ্রেণির কোনও টেকসই বা শক্তিশালী মনন তৈরি হয়নি? পুরোটাই ছিল ভেসে বেড়ানো জলজ উদ্ভিদ?

স্রোতের প্ররোচনায় এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়ানো অভ্যাস আমাদের চিন্তক শ্রেণির আগেও ছিল, এখনও আছে। সংশয়ে ডুব দিয়ে তাদের নীরব থাকাটা একাত্তর ও নব্বইতে যেমন দেখেছি, এখনও একই চিত্র। যখন গণজোয়ার ওঠে, সেই গণজোয়ার কোনও স্বর্ণদ্বীপ আবিষ্কার করলে তারা সেই দ্বীপের নকশাকার কিংবা পূর্বাভাস দাতা হয়ে যান চট করেই। আমরাও যেন কোন মন্ত্রে সেই বচন বিশ্বাস করতে শুরু করি। এমন মন্ত্র বসে কতো চিন্তককে যে রাষ্ট্রের বিধাতা করে তুলেছি‍! অবশ্য নিজ গুণে তাদের পতনও হয়েছে।

তাই কোনও চিন্তক বা রাজনীতির বাঁশিতে মোহিত হতে চাই না। বরাবরই কান পেতে রাখি কখন কোন তরুণদল হাঁক দিয়ে বলবে– ‘জাগো বাহে কোনঠে সবাই’। তখন বজ্রমুঠি নিয়ে মিছিলে নেমে পড়তে রাজি যেকোনও বয়সেই। কারণ প্রতিরোধ আর প্রতিবাদের কোনও বয়স নেই। মাতৃভূমির বিরুদ্ধে যেকোনও ষড়যন্ত্র প্রতিরোধের সব কণ্ঠস্বরের বয়স এক। সমবয়সী। এমন সমবয়সীদের সাংস্কৃতিক আন্দোলনে আবারও জড়ো করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে এই সুরের মূর্ছনা ছড়িয়ে পড়ুক আমার ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, রংপুর হয়ে এই জনপদের দোঁয়াশ, এঁটেল, প্রতিটি ধূলিকোনায়। জয়তু বাংলাদেশ। তুমি জাগ্রত জনতার।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

/এসএএস/জেএইচ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ