X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষকতা

ড. মোহাম্মদ সামসুল আরেফিন
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৮:৫২আপডেট : ০৪ অক্টোবর ২০২১, ১৮:১৭

ড. মোহাম্মদ সামসুল আরেফিন

শিক্ষকতার সর্বোচ্চ স্তর হলো বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষকতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের  কাজ মূলত নতুন জ্ঞান সৃষ্টি এবং তা যথাযথ বিতরণের মাধ্যমে যোগ্য মানবসম্পদ তৈরি করা। নতুন জ্ঞান সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন গবেষণা। গবেষণার কাজ একজন শিক্ষককে যোগ্য শিক্ষক হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করে,একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বাড়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ কারণেই বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধানে শিক্ষকদের বিভিন্ন কাজের মধ্যে গবেষণার বিষয়টি আলাদাভাবে উল্লেখ করা থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়, তা ব্যক্তির উদ্যোগে বা সমষ্টিগত যেভাবেই করা হোক না কেন। কনফারেন্স, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ওয়ার্কশপ ইত্যাদির আয়োজন গবেষণা কাজের অংশ। এসবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে এবং বাইরে স্বাভাবিকভাবেই অনেক সম্মানিত। তাছাড়া এ কথা তো সত্যি, দেশের এবং বিশ্বের যেকোনও সমস্যা সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষকদেরকে গবেষণার মাধ্যমে এগিয়ে আসতে হয়। তাদের গবেষণালব্ধ ফলাফল দেশ এবং বিশ্বের সমস্যা সমাধানে সহায়ক হয়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের মানসম্পন্ন গবেষণা যে কতটুকু কার্যকর হতে পারে, তার প্রমাণ দেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের গবেষণালব্ধ ফলাফল। যার বাস্তব প্রয়োগ  প্রিয় মাতৃভূমিকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ধীরগতিতে হলেও গবেষণার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে শুরু করেছে, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো— তাদের অর্জিত জ্ঞান ও গবেষণা ছাত্রছাত্রীদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া। এ কাজ করতে পেরে একজন শিক্ষক সর্বোচ্চ তৃপ্তি লাভ করেন। এ কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক যখন কোনও বিষয়ে পাঠদান করেন, তখন তা এমনভাবে উপস্থাপন হওয়া প্রয়োজন, যাতে সেই উপস্থাপনার মধ্যে নতুনত্বের অস্তিত্ব আছে বলে সবার কাছে, বিশেষত ছাত্রছাত্রীদের কাছে প্রতীয়মান হয়, তা যতই জানাশোনা বিষয় হোক না কেন। এ ধরনের উপস্থাপনার জন্য প্রয়োজন যথাযথ প্রয়াস এবং নিজের উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে কাজে লাগানো। শুধু কোনও বই বা অন্য কোনও সোর্স থেকে তথ্য নিয়ে সেগুলো সরাসরি উপস্থাপন একজন বিশ্ববিদ্যালয়  শিক্ষকের আদর্শ শিক্ষাদান পদ্ধতি হতে পারে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হতে হয় আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন শিক্ষকরা বক্তৃতা, টিউটোরিয়াল, আলোচনা, সেমিনার, হাতে-কলমে প্রদর্শন এবং  কর্মশিবিরের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা এবং গবেষণায় আগ্রহী করে তোলেন।  তাদের ব্যক্তিত্বের কারণেই ছাত্রছাত্রীরা তার প্রদত্ত উপস্থাপনার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। ছাত্রছাত্রীরা যাতে লার্নিংয়ের ক্ষেত্রে প্রো-অ্যাক্টিভ ভূমিকা পালন করতে পারে, সে উদ্যোগ  শিক্ষকদেরই নিতে হবে। এ পদ্ধতিতে একজন শিক্ষকের ভূমিকা হবে ডিক্টেটরের পরিবর্তে ফ্যাসিলিটেটরের, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষক কর্তৃক নির্ধারিত বিষয়গুলো ক্লাসের আগেই দেখে আসবেন। ক্লাসে টপিকগুলোর ওপর আলোচনা হবে এবং কঠিন বিষয়গুলো শিক্ষক পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দেবেন। এটি  বর্তমান বিশ্বে বহুল প্রচলিত  শিক্ষা পদ্ধতি এবং বর্তমান প্যান্ডেমিক পরিস্থিতিতে খুবই সময় উপযোগী। ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে আরও বেশি ইন্টারেক্টিভ হওয়ার ক্ষেত্রেও আমাদের শিক্ষকদের ভূমিকা রাখতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এখনও পর্যন্ত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাদান পদ্ধতি একমুখী, যেখানে একজন শিক্ষক লেকচার প্রদান করেন এবং ছাত্রছাত্রীরা লেকচার শুনে, কিছু ক্ষেত্রে তারা কিছু নোট নেয় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা ক্লাসে অ্যাক্টিভলি পার্টিসিপেট করে না। শিক্ষাদানের এ পদ্ধতি থেকে আমাদের দ্রুত বের হয়ে এসে ছাত্রছাত্রীদের অ্যাক্টিভ লার্নিংয়ে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

শিক্ষকতার ক্ষেত্রে চাপ প্রয়োগের পরিবর্তে মোটিভেট করার মাধ্যমে, ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহী করার মধ্যেই একজন শিক্ষকের সর্বোচ্চ সফলতা। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষকতায় ছাত্রছাত্রীদের চাপ সৃষ্টি ও বাধ্য করার মতো বিষয়গুলো থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।  এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন, যাতে ছাত্রছাত্রীরা নিজ থেকেই শিখতে আগ্রহী হয়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও  ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষকদের দেখামাত্রই  দাঁড়িয়ে যাবে। স্যার বলে সম্বোধন করবে। এ বিষয়গুলোর মাঝে কোনও শিক্ষক কখনও গৌরব অনুভব করেন না। মনভরা ভালোবাসা থাকলে কোনও ছাত্রছাত্রী আমাকে স্যার না ডেকে প্রফেসর বা ডক্টর নামে ডাকুক, বা আমাকে দেখে বসে থাকুক, এর মাঝেই আমি গর্ব অনুভব করবো। এর অন্যথা হলে শিক্ষক হিসেবে আমার অনেক কিছু করার বাকি আছে, একথা নির্দ্বিধায় বলতে পারি। শিক্ষকরা তা তারা যে পর্যায়েই শিক্ষকতা করুন না কেন, তাদের হতে হয় বন্ধুবৎসল, যাতে ছাত্রছাত্রীরা তাদের যাবতীয় সমস্যা শেয়ার করতে পারে। বাস্তবতা হলো, বিষয়গুলো থেকে এখনও আমরা অনেক দূরে, যদিও ধীরে ধীরে অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। 

একজন শিক্ষককে তার ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, আন্তর্জাতিক জীবন এবং অর্থনৈতিক জীবনকে সমন্বয় করে চলতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হবেন যেকোনও ব্যাপারে স্পষ্টভাষী এবং রাগ-বিরাগের বশবর্তী না হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এ মানদণ্ড মেনে চলতে সক্ষম হচ্ছি কিনা, তা ভেবে দেখার সময় হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝে সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকতে কোনও দোষ নেই, বরং অনেক ক্ষেত্রেই তা প্রশংসার দাবিদার, বিশেষত তা যদি হয় গবেষণা  পরিচালনা, মানসম্মত কনফারেন্স, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ইত্যাদির আয়োজন বা এমন কোনও শিক্ষাদান পদ্ধতির প্রয়োগ, যার দ্বারা ছাত্রছাত্রী, সহকর্মী, বিশ্ববিদ্যালয়, এমনকি জাতি তথা বিশ্ব উপকৃত হয়। এর পরিবর্তে ছোটখাটো কিছু পদ-পদবির লোভে যদি শিক্ষকদের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি হয়, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। কে কোন পদের জন্য যোগ্য, কাকে কোন পদে নিয়োগ দিলে বিশ্ববিদ্যালয় তথা দেশের মঙ্গল হবে,এই বিষয়গুলো ভাবার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং দেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজ্ঞজনের। এক্ষেত্রে কোনও অনুরাগ-বিরাগের বশবর্তী না হয়ে যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারারসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদস্থ ব্যক্তিবর্গ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাদের শিক্ষকদের মধ্য থেকেই নিয়োগ প্রদান করা হয়ে থাকে। কাজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনাসহ অন্যান্য অধিকাংশ বিষয়ের সফলতা-ব্যর্থতা আমাদের শিক্ষকদের ওপরই বর্তায়। একজন সফল প্রশাসক একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যে কত বড় সম্পদ, তার প্রমাণ করোনাকালে আমাদের কিছু স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত উপাচার্যরা রেখে চলেছেন, যাদের গতিশীল নেতৃত্বে এই সময়েও সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা-গবেষণাসহ অন্যান্য কার্যক্রম সুন্দরভাবে পরিচালিত হচ্ছে। কিছু দিন আগে বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের  সভাপতিত্বে একটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের টেকনিক্যাল প্রোগ্রাম কমিটির একটি সভায় উপস্থিত ছিলাম। ওই সম্মানিত উপাচার্য  একটি প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও তার নিজস্ব গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা, দেশের প্রতি তার ভালোবাসা এবং দায়িত্ববোধ, তার দৃষ্টিভঙ্গি, উদ্যোগ এবং দূরদৃষ্টি বিশ্ববিদ্যালয়টিকে একসময় বিশ্বের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকায়  স্থান দেবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আমি এও বিশ্বাস করতে চাই, আমাদের অধিকাংশ উপাচার্য  তাদের মেধা, মনন এবং দূরদৃষ্টির মাধ্যমে নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট যোগ্যতাসম্পন্ন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশ্বমানে উন্নীতকরণের যাবতীয় উদ্যোগ গ্রহণের কোনও বিকল্পও তাদের আছে বলে আমি মনে করি না। কারণ, এ গুরুদায়িত্ব সরকার তাদের ওপর অর্পণ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশ্বমানে উন্নীতকরণের ক্ষেত্রে যেকোনও উপাচার্যের যেকোনও পদক্ষেপের সঙ্গে কোনও শিক্ষক কখনও দ্বিমত পোষণ করতে পারেন, তা আমি ভাবতেই পারি না, তিনি যে মত বা পথেরই হোন না কেন।

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শত প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারাটা অত্যন্ত গর্বের ব্যাপার হিসেবে প্রতীয়মান। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া এখনও মেধা তালিকার প্রথম দিকের ছাত্রছাত্রীরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পায়। এ তরুণ শিক্ষকদের জন্য আমাদের যথাযথ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি, যাতে তারা শিক্ষাদান ও গবেষণা কার্যক্রমে যথাযথ মনোনিবেশ করতে পারেন। তাহলে আমাদের নবীন এবং প্রবীণ শিক্ষকদের সম্মিলিত প্রয়াসে  বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষা ও গবেষণায় একদিন বিশ্বের উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাতারে শামিল হবে। উচ্চশিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের  জন্য যথাযথ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা অতীব জরুরি। কারণ, উচ্চশিক্ষা অর্জন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। অন্তত যতদিন পর্যন্ত আমরা পিএইচডি বা সমমানের ডিগ্রিধারীদের শিক্ষক হিসেবে যোগদান নিশ্চিত করতে  না পারি। আমাদের  দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর  স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে যাবতীয় উদ্যোগ গ্রহণে আর কোনও দেরি করার সুযোগ নেই। এ প্রোগ্রামগুলোতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তরুণ শিক্ষকরাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা তাদের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে যথাযথ বৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে তারা দেশের বাইরে যাওয়ার পরিবর্তে দেশেই ডিগ্রি করতে আগ্রহী হয়।  আমাদের জানামতে, অন্যান্য অনেক পেশায় উচ্চশিক্ষার জন্য যে  পরিমাণ বৃত্তির ব্যবস্থা রয়েছে, সে তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য বৃত্তির পরিমাণ অনেক কম। এ ক্ষেত্রে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুততম সময়ে যথাযথ উদ্যোগ আশা করি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যেখানে জয়েন করেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা প্রায় দীর্ঘ ৩০-৪০ বছর একই প্রতিষ্ঠানে থাকেন। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝে একটি আত্মিক বন্ধন তৈরি হয়।  তাই তো তারা অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল, সিন্ডিকেট, ফিন্যান্স কমিটি, ডিসিপ্লিনারি কমিটিসহ বিভিন্ন অফিসিয়াল ফোরামে জোরালোভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভূমিকা রাখার জন্য তীব্র মতপার্থক্য করলেও মিটিং শেষে হাসিমুখে হাতে হাত ধরে বের হয়ে আসতে পারেন। শিক্ষকরাই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে সর্বপ্রথম প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠেন, তা তার যতদিনের জানাশোনা সহকর্মীর ব্যাপারেই হোক না কেন। এগুলোই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষকতার মাহাত্ম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে ইদানীং অনেক রকম কথাবার্তা, যেমন তারা ক্লাস নেন না, ঠিকমতো অফিসে আসেন না, বাইরে ক্লাস নেন বা কনসালটেন্সি করেন  ইত্যাদি। এর কিছুটা ঠিক এবং অধিকাংশই অমূলক, কল্পনাপ্রসূত।  আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যে  স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহির বিষয় রয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে অনেকে পুরোপুরি অবগত না থাকায় এ ধরনের সমালোচনা করছেন। একটা কথা সবার মাথায় রাখা দরকার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সর্বদাই নিজের বিবেকের কাছে, ছাত্রছাত্রীদের কাছে, সমাজের কাছে, এমনকি সবার কাছে জবাবদিহি করতে হয়, যা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে।

তাই সবাইকে বিনীত অনুরোধ, শিক্ষকদের বিষয়ে পরিপূর্ণভাবে না জেনে, কোনও নেতিবাচক মন্তব্য না করে কীভাবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্বমানে উন্নীত করা যায়, সেটা মাথায় রেখে সবাইকে স্বীয় অবস্থান থেকে একযোগে কাজ করি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো  বিশ্বমানে উন্নীত করার বিষয়ে ভূমিকা রাখি। সমাজে এবং রাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয় তথা সব পর্যায়ের শিক্ষকদের যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত করি। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় হোন। 

লেখক: অধ্যাপক, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও কৌশল বিভাগ, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)

/এপিএইচ/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ধাক্কা মেরে ফেলে চাপা দিলো কাভার্ডভ্যান, মোটরসাইকেলচালক নিহত
ধাক্কা মেরে ফেলে চাপা দিলো কাভার্ডভ্যান, মোটরসাইকেলচালক নিহত
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ