X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মিরাজ আপনাকে স্যালুট

রেজানুর রহমান
০৫ ডিসেম্বর ২০২২, ১৫:১৫আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২২, ১৫:৪৩

মাফ করবেন। আমার এই লেখাটি অনেকের হয়তো পছন্দ নাও হতে পারে। তবে কারও না কারও পছন্দ হবেই। সেই ভরসায় লেখার সাহস করছি। তার আগে একটি ছোট্ট প্রশ্ন করতে চাই। আপনার পরিবারে একটি আনন্দ সংবাদ এসেছে। আপনার সন্তান দেশের মর্যাদা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটি ভালো কাজ করেছে। একই সময়ে আপনি যে কাজে নাই সেই কাজে পৃথিবীর অন্য দেশের ছেলেমেয়েদের কৃতিত্ব নিয়ে উৎসব চলছে। আপনিও এই উৎসবে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু যেদিন আপনার সন্তান দেশের হয়ে একটি অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করলো, সেদিনও কি আপনি অন্য দেশের ছেলেমেয়েদের কৃতিত্ব নিয়েই আনন্দ মিছিল করবেন? নাকি নিজের সন্তানের জন্য আনন্দ মিছিলের ব্যবস্থা করবেন?

ব্যাপারটা তাহলে খোলাসা করি। ফুটবল বিশ্বকাপ জ্বরে আক্রান্ত গোটা পৃথিবী। বাংলাদেশও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। বিশ্বকাপ ফুটবলে বাংলাদেশ নেই তো কী হয়েছে? পছন্দের দেশকে সমর্থন করতে তো দোষ নেই। দেশের ফুটবলের উন্নয়নে হয়তো ১০ টাকা চাঁদা চাওয়া হলো। সবাই এই চাঁদা দেবেন না। বরং নেতিবাচক অনেক কথা বলবেন। কেন ১০ টাকা চাঁদা দেবো? এই প্রশ্ন তুলে অনেকে হয়তো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড় তুলবেন। অথচ ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার জন্য হাজার হাজার টাকা চাঁদা দিতে কেউ আপত্তি করছেন না। বরং ব্রাজিল আর্জেন্টিনার সমর্থকরা দেদার অর্থ খরচ করছেন। এই দেশেই জার্মান ফুটবলের জন্য সাত কিলোমিটার দীর্ঘ পতাকা বানিয়েছেন একদল তরুণ। এটাকে কী বলবো আমরা? ফুটবল উন্মাদনা! কোনও কোনও ক্ষেত্রে উন্মাদনার চিত্র বেশ বাড়াবাড়ি পর্যায়েও চলে গেছে। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সমর্থকদের মধ্যে দেশের একাধিক স্থানে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। মাঠে আমাদের ফুটবল নেই। কিন্তু ফুটবল নিয়ে হইচই আর আনন্দ আছে। বিশ্বকাপ ফুটবল বলে কথা। হইচই রৈ রৈ অবস্থা। ফলে গর্বের ক্রিকেট যেন আড্ডা আলোচনা থেকে হঠাৎ উধাও।

ঢাকায় ভারত-বাংলাদেশের ক্রিকেট লড়াই শুরুর দিনেও প্রচার মাধ্যমের তেমন তোড়জোড় চোখে পড়েনি। তবে মাঠের গ্যালারিতে ছিল ক্রিকেট ভক্তদের সরব উপস্থিতি। মিরপুর ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারত বনাম বাংলাদেশের মধ্যে ৩ ওয়ানডে ম্যাচের প্রথমটিতে টসে জিতলো বাংলাদেশ। ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠালো। সব উইকেট হারিয়ে ভারত ১৮৬ রান করে মাঠ ছাড়লো। বিরতির পর শুরু হলো দ্বিতীয় ইনিংস। ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ দলের ক্যাপ্টেন লিটন দাস ও অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের ব্যাটিং দৃঢ়তায় শুরুর দিকে বাংলাদেশ ভালো করলেও মাঝপথে খেই হারিয়ে ফেলে। মুশফিক, মাহমুদউল্লাহসহ নির্ভরযোগ্য তারকা ব্যাটসম্যানরা ব্যাটিং ব্যর্থতার উদ্বেগজনক নজির স্থাপন করে একে একে মাঠ ছাড়লেন। মাঠে তখন মেহেদী হাসান মিরাজ ও মোস্তাফিজুর রহমান। ভারতের শক্তিশালী বোলিং তোপে তারাই বা কতক্ষণ টিকবেন? বাংলাদেশের জয়ের আশা প্রায় সবাই ছেড়েই দিয়েছিলেন। অনেকে টিভির পর্দা থেকে চোখ সরিয়ে নিয়েছিলেন। বাংলাদেশের খেলা আর দেখবেন না– এমনই ক্ষোভ আর অভিমান অনেকের চোখে-মুখে। এমন অনিশ্চয়তার খাদ থেকে বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে তুললেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও মোস্তাফিজুর রহমান। অবিশ্বাস্য ঘটনা। যা কল্পনাও করা যায়নি। তাই করে দেখালেন মিরাজ ও মোস্তাফিজ। বলতে গেলে মিরাজই এই জয়ের নায়ক। মিরাজ ঘরের ছেলে। কাজেই তার জন্যই তো আমাদের আনন্দ করার কথা। অথচ আজ ৫ ডিসেম্বর দেশের কয়েকটি পত্রিকার ভূমিকা দেখে একটু যেন আশাহত হলাম। বেশ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় মিরাজের সাফল্যের খবর প্রথম পৃষ্ঠায় একেবারে নিচে গুরুত্বহীনভাবে ছাপা হয়েছে। মিরাজের চেয়ে মেসি, নেইমারের ছবিই গুরুত্ব পেয়েছে বেশ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায়। মেসি আর নেইমারের তুলনায় আমাদের মিরাজ হয়তো কোনও তারকাই নয়। কিন্তু একটা দিন তো মিরাজ দেশের সব দৈনিকে ওপরের স্থানে জায়গা পেতে পারতো নাকি? অনেকে হয়তো বলবেন ঘরের মাঠে বাংলাদেশের জয় এ আর এমন কী ঘটনা? তাদের উদ্দেশে বলি– ভারত ক্রিকেট পরাশক্তি। সেই ভারতকে হারিয়ে দেওয়ায় কৃতিত্ব সৃষ্টিকারী মিরাজ একদিনের জন্য হলেও ক্রিকেটের নায়ক। কাজেই তাকে স্যালুট করা আমাদের দায়িত্ব। দেশের একটি জনপ্রিয় পত্রিকায় দেখলাম মিরাজকে নিয়ে খবর ছেপেছে প্রথম পাতায় ভাঁজের নিচে। ওপরের অংশে নেইমারের বিরাট ছবি সংবলিত বিশেষ প্রতিবেদন। সবিনয়ে প্রশ্নটা করি, অন্তত আজকের (৫ ডিসেম্বর) দিনে নেইমারের জায়গায় মিরাজকে কি রাখা যেতো না?

এ কথা ঠিক– ক্রিকেট হাসলে বাংলাদেশ হাসে। সেই ক্রিকেটের জয় বাংলাদেশ দলের জন্য অনেক অনুপ্রেরণার হতে পারে বলে আমাদের বিশ্বাস। ভারতের সঙ্গে খেলতে গেলেই বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা একটু যেন মনস্তাত্ত্বিক সমস্যায় আক্রান্ত হন। খাদের কিনার থেকে বাংলাদেশকে তুলে এনে মিরাজ আর মুস্তাফিজ এই যে একটা যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন, তা মনস্তাত্ত্বিক সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নির্মাণে এই দৃষ্টান্ত অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

শেষে একটা ছোট্ট কথা বলি। ফুটবল এবং অবশ্যই ক্রিকেটের ব্যাপারে আমাদের একটা গ্রহণযোগ্য পরিকল্পনা জরুরি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুঃখ করে বলেছেন, এই যে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা চলছে, আমি খুব মনোযোগ দিয়ে বিভিন্ন দেশের খেলা দেখি। খুব আফসোস হয় আমাদের বাংলাদেশ বিশ্বকাপে নেই। আগামীতে আমি আমাদের ফুটবলকে বিশ্বকাপে দেখতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই আবেগমাখা স্বপ্ন সবার হৃদয় ছুঁয়েছে। পৃথিবীর অনেক ছোট দেশ বিশ্বকাপ ফুটবলে অংশ নিয়েছে। তাহলে বাংলাদেশ পারবে না কেন? আমরা আর কতদিন বিশ্বকাপ ফুটবলের শুধু দর্শক হয়ে থাকবো? আশা করি দেশের ফুটবল সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে গুরুত্ব দিয়েই ভবিষ্যতের জন্য আমাদের ফুটবলকে সাজাবেন।

বাকি থাকলো ক্রিকেট। ফুটবল থেকে অনেক এগিয়ে আছে ক্রিকেট। তবে মাঝে মাঝে ছন্দপতনও ঘটছে ক্রিকেটের। এক্ষেত্রেও কার্যকর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা জরুরি। ক্রিকেট বোর্ড নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে তৎপর। আমরা চাই মিরাজের এই দৃষ্টান্ত ক্রিকেটের পাশাপাশি ফুটবলের ক্ষেত্রেও একটা নয়া জাগরণ তুলুক। জাগরণের স্লোগান হোক– হ্যাঁ আমরাও পারি... ক্রিকেটের জয় হোক।

লেখক: কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, সম্পাদক- আনন্দ আলো।

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ