X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

নারী প্রশ্নে বাসদ: যে প্যানডোরার বাক্স খোলা যাবে না

দিলশানা পারুল
১০ জুলাই ২০২৩, ১৮:২৬আপডেট : ১০ জুলাই ২০২৩, ২১:৩১

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাসদের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার নামে যৌন হয়রানি এবং যৌন শোষণের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। পুরো ঘটনার সূত্রপাত হয় দলটির কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের হুইসেল ব্লোইংয়ের মাধ্যমে। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই #spbmetoo দিয়ে যৌন হয়রানির একাধিক অভিযোগ উত্থাপিত হয়। এবং বাসদ প্রথম দফাতেই আনুষ্ঠানিকভাবে এবং পরবর্তীতে দফায় দফায় নেতারা এই অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ অস্বীকার করতে থাকে এবং এই অভিযোগগুলো তারা “দলের বিরুদ্ধে কুৎসা” “চক্রান্ত” হিসেবে চিহ্নিত করতে থাকে।

যদিও অভিযোগ বাসদ নেতাদের বিরুদ্ধে কিন্তু অফিসিয়ালি বিবৃতি দেওয়া হয় ছাত্রফ্রন্টের তরফ থেকে। মানে দল হিসেবে বাসদের কাছে নারী নিপীড়নের অভিযোগ খুব বেশি হলে এতটুকুই গুরুত্ব বহন করে যে তার ছাত্র সংগঠন থেকে বিবৃতি দিয়ে সব ঘটনা অস্বীকার করাই যথেষ্ট, এর চেয়ে বেশি গুরুত্ব আসলে এই ঘটনা ডিজার্ভ করে না। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ কিন্তু ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে বিবৃতির দেওয়ার মানে এটাই দাঁড়ায়।

এখন এই যে সব অভিযোগকে অস্বীকার করা, দলের বিরুদ্ধে ‘কুৎসা’ এবং ‘চক্রান্ত’ বলে চালিয়ে দেওয়া, এতে আমরা যারা একসময় এই দলটি করেছি, তারা কি অবাক হয়েছি? আসলে না। কারণ, আজ থেকে ১৭-২০ বছর আগেও আমরা যখন বাসদ করেছি তখনও বাসদে দফায় দফায় বিভিন্ন নেতার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের এবং যৌন শোষণের অভিযোগ উঠেছে এবং বাসদ একইভাবে ঠিক এই শব্দগুলা ব্যবহার করে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে, তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে। এমনকি এসব ‘কুৎসা’র জবাবে বাসদ একটি পুস্তিকাও প্রকাশ করে।

তাহলে কি বাসদের অভ্যন্তরে আসলেই এই ধরনের কোনও যৌন হয়রানি বা যৌন নিপীড়ন বা যৌন শোষণের ঘটনা ঘটেনি? প্রশ্নটা আমি একটু ঘুরিয়ে করি। বাসদ কি এই পৃথিবীর বাইরের কোনও কাল্পনিক সমাজের মধ্যে থাকা দল যে তাদের অভ্যন্তরে এই ধরনের সংকট থাকবে না? এটা ঠিক রাজনৈতিকভাবে এই দলের নেতারা বিয়ে করেন না। বিয়ে বা ব্যক্তিগত প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্কে যাওয়াটাকে তারা রাজনৈতিকভাবেই ঠিক মনে করেন না। রাজনৈতিকভাবে মানবিক বা আবেগের সম্পর্ক বন্ধন বা বিয়ের মধ্য দিয়ে প্রচলিত সমাজের সঙ্গে যুক্ততা বা বন্ধন তৈরি হয়।


কাজেই আদর্শিকভাবেই তারা বিয়ে বা সম্পর্কে জড়ানো ঠিক মনে করেন না, কারণ তারা মনে করেন এই সমাজ পচা-গলা, এই সমাজ ভাঙতে হবে। কাজেই যে সমাজ তারা ভাঙতে চায় সেই সমাজের সঙ্গে বন্ধন তৈরি করার প্রক্রিয়া মানে বিয়ে বা প্রেম– এগুলো তো আসলে তারা করতে পারে না। বাসদের বিরুদ্ধে যে ধরনের নিপীড়নের অভিযোগগুলো সামনে এসেছে সেগুলো হলো–

১. যৌন হেনস্তা।

২. প্রতারণা করে যৌন সম্পর্ক করা, পরবর্তী সময়ে সম্পর্কের স্বীকৃতি না দেওয়া বা সম্পূর্ণ অস্বীকার করা।

৩. জোরপূর্বক গর্ভপাত (একাধিক নারীকে একের অধিকবার)।

এখন মূল প্রশ্ন হচ্ছে, এই যে তিনটি ক্রিমিনাল অফেন্সের কথা বললাম এর কোনোটার কি কোনও প্রমাণ আছে? না, নেই। যৌন নিপীড়ন এমন একটা অপরাধ যেটা সম্পন্ন হওয়ার জন্য গোপনীয়তা এবং গোপন পরিবেশ একটা আবশ্যক নিয়ামক। যৌন নিপীড়ক প্রমাণ রেখে কখনও নিপীড়ন করে না। সেটা বাসদ বা বাসদের বাইরে সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যৌন নিপীড়নের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় এটা ‘শি সেইড ভার্সেস হি সেইড’। বাসদের ক্ষেত্রে তো আরও বেশি কঠিন, কারণ ‘শি সেইড’ কখনোই জনপরিসরে হয়নি। এখানে ভিকটিম মেয়েরা কখনোই তাদের ওপর হওয়া নিপীড়নের ঘটনা জনপরিসরে সবার সামনে আনেনি। একটা বিরাট প্রশ্ন– কেন বাসদের কোনও মেয়ে কখনোই কোনও ঘটনা পাবলিকলি আনলেন না?

তার মানে কি আসলেই বাসদে কোনও যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেনি? ঠিক এই সুযোগটাই বাসদ নেয়। খুব জোর দিয়ে বাসদ বলে এবং বলছে– এই ধরনের ঘটনা ঘটলে ভিকটিম মেয়েগুলো মামলা করেনি কেন বা মামলা করছে না কেন? কারণ, বাসদের নেতারাও জানে ভিকটিম মেয়েরা পাবলিকলি মুখ খুলবে না, মামলা করবে না। সেই শর্ত তারা দলের অভ্যন্তরে তৈরি করে রেখেছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে বাসদের ভেতরে যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে কিনা? এই প্রশ্নের উত্তর আসলে কে দেবে? বা এই বিষয়টা আসলে সবচেয়ে ভালো কাদের জানার কথা? বাসদের কর্মীদেরই জানার কথা। ঠিক? সব কর্মীর কি এটা জানার কথা? না। আবারও বলছি এই গোপন বিষয়টি শুধু ঘটনাক্রমে যারা দেখে ফেলেছে বা জেনে ফেলেছে তাদেরই একমাত্র জানার কথা। আর জানে যারা এই বিষয়টার সঙ্গে যুক্ত তারা।

তারপরের প্রশ্ন, একটা রাজনৈতিক দলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে এই চর্চা জারি থাকলে কাদের জানার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি? সেই দলের নারী কর্মীদেরই। সেই দলের নারী কর্মী কারা? এই যে এখন যারা প্রকাশ্যে এসে অভিযোগ করছে তারা প্রত্যেকেই বাসদের সক্রিয় কর্মী ছিল কম করে হলেও পাঁচ থেকে সাত বছর, সবকিছুকে ব্যাপ্ত করে এই দল করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের। তারা সবাই বাসদের নারী কর্মী। তাহলে বাসদের নারী কর্মী হিসেবে আমিসহ তারা যা যা দেখেছে, যা যা জেনেছে, যে যে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছে সেটা ঠিক কোনও যুক্তিতে সত্য না হয়ে কুৎসা রটানো হয়? ঠিক কি কারণে ভিকটিম নারীদের কথার চেয়ে নিপীড়ক পুরুষের কথার গ্রহণযোগ্যতা বেশি তৈরি হয়? কারণ তারা পুরুষ, কাজেই তাদের কথার ওজন বেশি? কারণ তারা নেতা, তাই তাদের কথা সত্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি? মেয়েগুলো সাধারণ কর্মী তাই তাদের কথার গ্রহণযোগ্যতায় কমতি পড়ে? যেহেতু বাসদের শক্তিশালী সোশ্যাল ক্যাপিটাল মানে রেপুটেশন আছে, ওই জন্য সেই দলের নেতারা এই ঘটনাগুলো ঘটালে তা বিশ্বাসযোগ্য হয় না?

আগের প্রশ্নটায় আবার ফিরে যাই, মেয়েগুলো চুপ থাকে কেন? মামলা করেনি কেন?

জনপরিসরে না হলেও বাসদের অভ্যন্তরে একাধিকবার এই ধরনের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। এই দফাতেও জনপরিসরেই বাসদ দলের বর্তমান নেতাকর্মীরা সরাসরি বলছে, যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তাদের দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়, দলের অভ্যন্তরেই এর মীমাংসা হতে হবে। এটা যে তারা শুধু বলে তাই না, সর্বোচ্চ সতর্কতায় এটা এতদিন যাবৎ তারা চর্চাও করে এসেছে। এই ধরনের বিষয়কে জনপরিসরে আলোচনায় না নিয়ে আসার পেছনে তার একটা ইথিক্যাল অবলিগেশন তৈরি করে দেয়। জীবনের সব দিয়ে একজন কর্মী লম্বা একটা সময় ধরে যখন এই দল করেছে, সবটা দিয়ে যে নেতাদের প্রতি সবমিট করেছে, সব আবেগ যেখানে প্রোথিত রেখেছে, যে বিপ্লবের স্বপ্ন দেখতে সে সকাল-সন্ধ্যা এত পরিশ্রম করেছে, সেই একই দলের, সেই দলের নেতাদের এবং স্বপ্নে দেখা বিপ্লবের ক্ষতি করতে তার বিপ্লবী নৈতিকতায় আটকায়। ওই জন্য নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কেউ এই ধরনের ঘটনার সাক্ষী হলেও জনপরিসরে বলেনি।

তাছাড়া দল এটাও প্রতিষ্ঠা করেছে– দলের ভেতরের বিষয় ভেতরেই সুরাহা করা রাজনৈতিক পন্থা। কর্মীদের থেকে পাবলিকলি বাসদের নেতারা এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি কখনও হয়নি যে এই গোপনে সবকিছু সেরে ফেলার কোনও ব্যত্যয় ঘটাবে। আর বিপ্লবী দল বনাম নারী নিপীড়নের বিচার এই ডাইকোটমিতে সবসময়ই জয়ী হয়েছে বিপ্লবী দল।  

বাংলাদেশের সাধারণ মেয়েরা এখন দেখবেন যৌন হয়রানি বা নিপীড়নের ঘটনাকে কিন্তু আর আগের মতো গোপন করে না। সাহস নিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। তাহলে বাসদের মতো এরকম একটা বিপ্লবী দল (?) করা, মিছিলে স্লোগান তোলা, আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া মেয়েরা কেন আসলে তাদের ওপর হওয়া নিপীড়নকে সামনে আনতে পারে না? বিচার চাইতে পারে না?

এই প্রশ্নটার উত্তর পেতে হলে আসলে বাসদের অভ্যন্তরে নারীদের অবস্থান জানাটা বেশ জরুরি। বাসদে নারীদের যে প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হয় এবং তার পরবর্তীতে কর্মী বা নেতা হিসেবে তৈরি করার জন্য যে প্রক্রিয়াগুলো ফলো করা হয়, সেটা খুবই ইনটেনসিভ। যুক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রথমে তাদের আবেগগতভাবে এবং মানসিকভাবে দলের সংশ্লিষ্ট নেতৃত্বের প্রতি সম্পূর্ণ নির্ভরশীল করে ফেলা হয়। দীর্ঘদিন ‘দলই জীবন, বিপ্লবই জীবন’ এই মটো সামনে নিয়ে সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা দলের কাজ করার মধ্য দিয়ে বাসদের নারী-পুরুষ সব কর্মীই পরিবার, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশ, অর্থনৈতিক কর্মসংস্থানের জোগান সবকিছু থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। একটা পর্যায়ে গিয়ে দল ছাড়া আসলে তাদের মানসিক, আবেগিক, পারিবারিক, সামাজিক, ব্যক্তিগত বা অর্থনৈতিক কোনও অবলম্বনই থাকে না। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বাসদের কর্মীদের পার হতে হয়– সেটা হচ্ছে ব্যক্তির চারিত্রিক যে স্বকীয়তা সেটাকে বাসদের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়। রাজনৈতিকভাবে বাসদ মনে করে, এই সমাজ যেহেতু পিছিয়ে পড়া, বুর্জুয়া, ভোগবাদী, এই সমাজ এবং রাষ্ট্র থেকে বেরিয়ে আসা সকলেই এই চরিত্র ধারণ করবে স্বাভাবিক। বিপ্লবী হওয়ার প্রথম পাঠ হচ্ছে নিজের ভেতরে বিদ্যমান এসব ভোগবাদিতা বা বুর্জুয়া চরিত্রের সঙ্গে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে নিজেকে সাচ্চা বিপ্লবী বানাতে হয়, মানে আসলে বাসদের প্রত্যাশিত চরিত্রের মতো হতে হয়। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ দেখবেন বাসদের কর্মীদের সঙ্গে কথা বললে আপনার মনে হবে আপনি একজনের সঙ্গেই কথা বলছেন। এই যে বিপ্লবী বানানোর ‘বাসদীয়’ প্রেসক্রিপশন, এই প্রেসক্রিপশনে প্রত্যেকটা মেয়ের নিজস্ব চারিত্রিক গঠনকে ভেঙেচুরে ফেলা হয়। নিজস্বতা ভাঙার মধ্য দিয়ে যদি ব্যক্তি নারী আরও শক্তিশালী হয়ে হাজির হতে পারতো তাহলে আসলে এই প্রক্রিয়াকে প্রশ্ন করার কিছু ছিল না। কিন্তু খেয়াল করে দেখা যাবে জাতীয় পর্যায়ে একজন নারীনেত্রীর নাম আপনি বলতে পারবেন না, যারা বাসদ করে বা করতো। একসময় বাসদ করা কোনও নারী কর্মী আপনি দেখাতে পারবেন না, যারা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছে বা কোনও ধরনের সোশ্যাল অ্যাকটিভিজমের সঙ্গে যুক্ত আছে। একটা বয়সের পর বাসদে যুক্ত হওয়া শত শত নারী কর্মী আর দল তো করতেই পারে না, এমনকি কোনও ধরনের রাজনীতি বা অ্যাটিভিজমের সঙ্গেও যুক্ত থাকতে পারে না। একদম বাতাসে মিলিয়ে যাওয়ার মতো তাদের অস্তিত্ব নাই হয়ে যায় যেন। কর্মী নারীর ব্যক্তিত্বকে এমনভাবে ভাঙা হয়।

এখন এই রকমের প্রায় ভঙ্গুর একটা ব্যক্তিত্ব, দলের কাছে বন্ধক থাকা আবেগ, মানসিক গড়ন, পরিবার সমাজ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন একজন নারী যখন ওই দলের ভেতরেই যৌন নিপীড়নের শিকার হয়, তার মনস্তাত্ত্বিক অসহায়ত্ব আসলে আমরা বুঝতে পারছি কিনা? নারীটির কোনও মানসিক শক্তি বা কাঠামোই থাকার কথা না দলের বাইরে তার নিপীড়নের বিষয়ে কথা বলার।  

শেষ প্রশ্ন– সম্মতিতে যদি যৌন সম্পর্ক হয় সেটা কীভাবে অপরাধ হয়?

যে কথাটা আমরা বারবার বলার চেষ্টা করছি, সম্মতি উৎপাদনের প্রক্রিয়া কি ছিল সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষমতা ভারসাম্যহীনতার যে সম্পর্ক (নেতা-কর্মী) সেখানে ক্ষমতার প্রভাব অবশ্যম্ভাবী। আর বাসদের ক্ষেত্রে আমরা যেটা দেখেছি, যেটাকে বাসদ নেতাদের দ্বারা অল্প বয়সী কর্মীদের নার্সিং করা বলা হয়, সেটাকে সরল ভাষায় আমরা গ্রুমিং বলে চিনি। দীর্ঘদিন এই গ্রুমিং প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে রেখে, তথাকথিত প্রেম করে অথবা কোনও রকম সম্পর্কহীনভাবে নারী কর্মীর সঙ্গে পুরুষ নেতার যে যৌন সম্পর্ক, সেটা আর যাহোক কখনোই ব্যক্তি নারীর এজেন্সি মেনে যৌন সম্পর্ক করেছে এটা বলা যায় না। যদি এই ধরনের নামহীন যৌন সম্পর্ককে বাসদের নারী কর্মী তার এজেন্সিতেই রাজি থাকতো তাহলে একটা সময় পর সে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতো না, সম্পর্কের রিকগনিশন চাইতো না, কিংবা নিজেকে এক্সপ্লয়েটেড হয়েছে এভাবে ভাবতো না। বাসদের ক্ষেত্রে আমরা ঠিক এই জিনিসটাই হতে দেখেছি।

যৌন নিপীড়নকে পারিবারিক বিষয় বলে যেমন পাশ কাটানোর সুযোগ নাই, কোনও রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলেও দায় মুক্তি পাওয়ার সুযোগ নেই। বাসদের প্রাক্তন কর্মী হিসেবেই দায়িত্ব নিয়ে বলছি, বাসদের অভ্যন্তরে সিস্টেমেটিকভাবে পুরুষ নেতাদের দ্বারা নারী কর্মীদের যৌন নিপীড়ন হয়েছে এবং হয়। রাজনীতির নামে, ইউটোপীয় বিপ্লবের নামে মেয়েদের ওপর সব ধরনের নিপীড়ন বন্ধ হোক। বাসদে যে মেয়েরা যুক্ত হতে এসেছিল তারা দিনবদলের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য এসেছিল, কোনও নেতার যৌন নিপীড়ন বা শোষণের শিকার হতে না। যে রাজনীতি নারী কর্মীর শরীরকে সস্তা ভাবে, ভোগ্যযোগ্য ভাবে, নিপীড়িত হলে গোপন করে, গোপন রাখতে বলে, সেই রাজনীতিকে জবাবদিহির আওতায় আনা খুবই জরুরি।

 

লেখক: প্রাক্তন আহ্বায়ক, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা; সদস্য, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় কমিটি।

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
শিবনারায়ণের চোখে আলো দেখছেন মশিউর ও কালাম
শিবনারায়ণের চোখে আলো দেখছেন মশিউর ও কালাম
ঢাকার কোথাও হালকা বৃষ্টি, কোথাও ঠান্ডা ঝোড়ো হাওয়া
ঢাকার কোথাও হালকা বৃষ্টি, কোথাও ঠান্ডা ঝোড়ো হাওয়া
সূর্যকুমারের ছক্কায় সেঞ্চুরি ও মুম্বাইয়ের জয়
সূর্যকুমারের ছক্কায় সেঞ্চুরি ও মুম্বাইয়ের জয়
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ