X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

নুরের এবারের মার খাওয়ার উপযোগগুলো

ডা. জাহেদ উর রহমান
২৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৬:৪৫আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৬:৪৭

ডা. জাহেদ উর রহমান ‘হাত নিশপিশ’ থেকে মুক্তি পাওয়া থেকে শুরু করে জাতীয় কর্তব্য পালন পর্যন্ত নানা রকম উপযোগ পাওয়া যেতে পারে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরকে পেটালে! বলা বাহুল্য—এমন ট্রল এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বেশ কিছুদিন থেকেই নুর আর পিটুনি প্রায় সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। তবে, এর আগেরগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে নুরকে এবার পেটানোর কিছু ভিন্ন মাত্রা আছে। সেগুলো নিয়েই এই কলাম।
এর আগে বহুবার ছাত্রলীগের পিটুনি খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও এই প্রথমবার সরকারের দুই প্রভাবশালী নেতা নুরকে দেখতে হাসপাতালে গেছেন। বোধ করি, এবার নুরের ওপর হামলার ফলে দুই জনের আইসিউতে যেতে যাওয়া এই ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে। তারা অগ্রিম ড্যামেজ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করেছেন। নুরদের দেখতে গিয়ে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘ঘটনা এত বর্বর ও পৈশাচিক তা বুঝতে পারিনি’। এবার মার খাওয়ার কয়েকদিন আগেই নুর আরেকবার মার খেয়েছিলেন। তখন বা তার আগে কখনও সরকারি দলের এই উৎকণ্ঠা দেখা যায়নি। এবার নুরকে দেখতে গিয়ে এই নেতারা বুঝিয়ে দিলেন সরকারি দলকে আমরা যত হৃদয়হীন বলে মনে করি, তারা আসলে ততটা নন, ভিন্নমতের কারও ওপর হামলা যদি ‘বর্বর ও পৈশাচিক’ হয় এবং সেটা যদি নানা মহলে খুব শোরগোল তৈরি করে তাহলে এখনও কোনও কোনও ক্ষেত্রে তারা তৎপরতা দেখান। 

যেহেতু সরকারি দলের বড় নেতারা নুরকে দেখতে গেছেন, তাই 'সরকারি দলের সমর্থক' ঢাবি ভিসি মনে করেছেন, নুরকে তারও দেখতে যাওয়া উচিত। তিনি এবারই প্রথম গেলেন। এর আগে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় বিবিসি বাংলাকে ঢাবির প্রক্টর ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেছিলেন, দুই পক্ষের বহিরাগতরাই সমস্যার জন্য দায়ী। তিনি সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে বলবেন।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে, নুরের ওপর হামলার ঘটনায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের তিন নেতাকে আটক  করা হয়েছে, রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার তদন্তের জন্য কমিটি গঠিত হয়েছে। এর আগে আরও ৭/৮ বার মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও নুররা এবার পেয়েছেন মেডিক্যাল বোর্ড। বুয়েটছাত্র আবরার হত্যার পর এই ঘটনার কারণে আবার সরকার দেখানোর চেষ্টা করতে পারলো, অপরাধী যেই হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না; দেশে ‘অসাধারণ আইনের শাসন’ বিরাজিত আছে। 

তথ্যমন্ত্রীসহ একাধিক মন্ত্রী বলেছেন, এই হামলার পেছনে সরকারকে বিপদে ফেলার ষড়যন্ত্র আছে। সরকারের এসব ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ জনগণ বহু দিন থেকেই গ্রহণ করে না। তবে, সরকারি দলের জন্য এর একটি উপযোগ আছে। বেশ কিছুদিন থেকেই সরকারি দলের তৃণমূল অগোছালো অবস্থায় রয়েছে। এই ধরনের ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ তৃণমূলকে সতর্ক করে কিছুটা হলেও ঐক্যবদ্ধ করতে পারবে। তর্কের খাতিরে যদি ধরেই নেই,  সরকারের এই বয়ান সঠিক, তাহলে আমরা আবার এও বুঝলাম, নুরের ওপর আগের হামলাগুলো ষড়যন্ত্র ছিল না, হয়েছিল সরকারি দলের সিদ্ধান্তেই।

এই ঘটনায় বেশ আলোচিত মন্তব্য করেছেন ডাকসু জিএস ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। নুরের আহত হওয়া নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে রাব্বানী সাংবাদিকদের বলেন, ‘নুর আহত হয়েছেন নাকি নিহত হয়েছেন, এটি ডাজ নট ম্যাটার’। স্বয়ং দলীয় সভাপতি অভিযোগের ভিত্তিতে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করার  পর থেকে রাব্বানী কোণঠাসা অবস্থায় ছিলেন। কিছুদিন আগে নুরের একটি অডিও কলের ভিত্তিতে অভিযোগ বানিয়ে এবারের হামলার ঘটনার পর রাব্বানী পায়ের তলায় মাটি পাচ্ছেন, করতে পারছেন ‘বড় গলা’ও। নুরের ওপর এই হামলা রাব্বানীকে গর্ত থেকে বেরিয়ে তার কর্মীদের সামনে এক পরাক্রমশালী নেতার ভূমিকায় আসতে সাহায্য করেছে! 

রাব্বানীর এই মন্তব্য ও ছাত্রলীগের এই কাণ্ড নিরপেক্ষ বিশ্লেষকের মুখোশধারী কিছু সরকারপন্থী কলামিস্টের জন্য একটা দারুণ উপযোগিতা তৈরি করেছে। তাদের  মতে, দুই-একজন রাব্বানী-সম্রাট ছাড়া আওয়ামী লীগের আর সব ধোয়া তুলসীপাতা। কিছুদিন আগেই শুদ্ধি অভিযান যখন সরকারের পক্ষ থেকে চালানো হচ্ছিল, তখনও রাব্বানী-সম্রাটদের বলির পাঁঠা বানিয়ে সরকারি দলকে বাঁচিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তথাকথিত নিরপেক্ষ বিশ্লেষকরা।  

শেষ করছি তৈরি না হওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি উপযোগ প্রসঙ্গে বলে। শুধু এবার নয়, বারবার মার খেয়ে রাস্তায় ফিরে এসেছেন নুর। এরপর আবার মার খেয়েছেন। বিশ্বাস করি, এবারও সুস্থ হওয়ার পর আবার মার খাওয়ার ঝুঁকি থাকলেও রাস্তায় ফিরে আসবেন তিনি। এটি সবচেয়ে বেশি পথ দেখাতে পারতো দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে বিএনপিকে। আমি মানি, নানা রকম অত্যাচার-নির্যাতন-হয়রানির মধ্য দিয়ে দলটির নেতাকর্মীরা গেছেন বছরের পর বছর, কিন্তু এটি তো রাজপথের সংগ্রামকে থামিয়ে দেওয়ার যুক্তি হতে পারে না। একটি ‘কর্তৃত্বপরায়ণ’ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে মাঠেই নামতে হয় সবকিছু উপেক্ষা করে। এটি নুর করে দেখিয়েছেন। দুর্ভাগ্য, এটি আমাদের বিরোধী রাজনীতির জন্য উপযোগ তৈরি করেনি।
লেখক: শিক্ষক, অ্যাকটিভিস্ট

/এসএএস/এমএনএইচ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ