পশ্চিমা বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করছে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী। তারা বলছেন, দুটি গুরুত্বপূর্ণ রেখা ধরে আক্রমণে এই অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। ইউক্রেন দাবি করেছে, পাল্টা আক্রমণের পর রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে পক্ষত্যাগকারীর সংখ্যা বাড়ছে।
ইউক্রেনীয় সেনারা জাপোরিজ্জিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে কয়েক মাইল অগ্রসর হয়েছে এবং রাশিয়া-অধিকৃত গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন কেন্দ্র মেলিতোপোলের উপকণ্ঠ রবোটাইনে পৌঁছে গেছে। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের বক্তব্যে এমন অগ্রগতির কথা উঠে এসেছে।
শনিবার রাতে টেলিগ্রামে একটি পোস্টে ইউক্রেনীয় বাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ডার জেনারেল ওলেক্সান্ডার টারনাভস্কি বলেছেন, তাভরিয়া দিকে স্বাধীন অঞ্চল রয়েছে। প্রতিরক্ষা বাহিনী কাজ করছে।
একই দিকে স্টারোমায়োর্স্ক ও উরোজাইনের আশেপাশের এলাকায় ইউক্রেন নিজেদের অবস্থান সুসংহত করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এখানকার একটি সড়ক মারিউপোলে গেছে।
জাপোরিজ্জিয়ার মস্কো নিয়ন্ত্রিত অংশের রুশপন্থি কর্মকর্তা ভ্লাদিমির রোগভ রবিবার বলেছেন, শত্রুরা এই দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে তুমুল ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর উরোজাইনের উত্তর অংশে প্রবেশ করতে এবং পা রাখতে সক্ষম হয়েছে।
কিয়েভের লক্ষ্য আজভ সাগরে পৌঁছা। এর মাধ্যমে তারা রাশিয়ার দখলদার বাহিনীকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে। একই সঙ্গে তারা রাশিয়ার রসদ সরবরাহে আঘাত হানতে চাইছে। এজন্য ক্রিমিয়া ও রাশিয়ার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে চাইছে। সাম্প্রতিক গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অগ্রগতির একটি হলো, রাশিয়া অন্যত্র থেকে দক্ষিণাঞ্চলে সেনা মোতায়েন করতে বাধ্য হচ্ছে।
দৈনিক পর্যালোচনায় ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ) শনিবার ইউক্রেনের এসব অগ্রগতিকে ‘কৌশলগতভাবে তাৎপর্যপূর্ণ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। তারা বলেছে, ইউক্রেনীয় পাল্টা আক্রমণমূলক অভিযানের ফলে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীকে পশ্চিম জাপোরিজ্জিয়া অঞ্চলে পুনরায় সেনা মোতায়েন করতে হচ্ছে। যা ইঙ্গিত দিচ্ছে ইউক্রেনীয় প্রচেষ্টায় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
আইএসডব্লিউ বলেছে, রুশ বাহিনীর প্রতিরক্ষার আরও অবনতি ইউক্রেনের অগ্রগতিকে নির্ধারক হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে।
ইউক্রেনের সাম্প্রতিক হামলার জন্য আরেকটি লক্ষ্য ছিল ক্রিমিয়া সেতু। শনিবার সেতু লক্ষ্য ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। যা রণাঙ্গনে রাশিয়ার সামরিক সরবরাহ বিঘ্নিত ও ক্রিমিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার প্রচেষ্টা।
ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা সংস্থা এসবিইউ দাবি করেছে, শনিবার ১৭টি ড্রোন দিয়ে রাশিয়ার রসদ ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন রুশ সেনা নিহত ও আহত হয়েছে।
ইউক্রেনীয় জেনারেল স্টাফের দাবি, রুশ বাহিনীতে আতঙ্ক বাড়ছে এবং এর ফলে বাড়ছে পক্ষত্যাগকারী রুশ সেনাদের সংখ্যা। খেরসনে রুশ সামরিক কর্মকর্তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পক্ষত্যাগকারীদের খুঁজছে। এছাড়া রাশিয়ার নতুন সেনাদের মধ্যে মদপান ও মাদক গ্রহণ বেড়েছে। কিছু কিছু স্থানে সেনারা নিজেদের অবস্থান ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস, কিয়েভ পোস্ট