X
রবিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩
১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩০

দ্বিতীয় দফায় শীতে প্রবেশ করছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২১ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:৩৫আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২৩, ১৯:৫২

পূর্বাঞ্চলীয় রণক্ষেত্রের একটি উষ্ণ আশ্রয়ের স্থানে ইউক্রেনীয় সেনা দিমিত্রো একটি ইঁদুরের দিকে তাকিয়ে আছেন। ইঁদুরটি বাতাসের গন্ধ শুঁকলো এবং পরে দেয়াল ও ছাদে লাগানো প্লাস্টিকের শিটের আড়ালে হারিয়ে গেলো।

৩৬ বছর বয়সী দিমিত্রো  বিএম-২১ গ্রাদ মাল্টিপল রকেট লঞ্চার ছুঁড়েন। তিনি বলেন, গত শীতে আমি ইঁদুর দেখিনি। কিন্তু এবার শরতে ও শীতের শুরুতে দেখতে পাচ্ছি।

বাখমুত শহরের কাছাকাছি একটি স্থানে তার ইউনিট লড়াই করছে। রাশিয়ার ২২ মাসের আক্রমণে এই রণক্ষেত্রে কয়েকটি ভয়াবহ  লড়াই হয়েছে।

পাতলা আবরণের আড়ালে থাকা এই আশ্রয়কেন্দ্রের আয়তন ২০ বর্গ মিটার। এতে বিছানা, রান্নাঘর এবং ডিজেলচালিত গাড়ির হিটার রয়েছে। বিদ্যুতের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে গাড়ির ব্যাটারি।

বাইরের তাপমাত্রা হিম শীতল হলেও ভেতরে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত কয়েক দিনে বৃষ্টির কারণে আকাশ এখন ধূসর, আর বায়ু স্যাঁতস্যাতে।

গত সপ্তাহে বছরের প্রথম তুষারপাত হয়েছে। যা দিমিত্রোর মতো যুদ্ধরত সেনাদের জন্য দ্বিতীয় শীত হাজির হওয়ার ইঙ্গিত।

যুদ্ধের প্রথম শীত ছিল ভীষণ কঠিন। কিন্তু সেনারা বলছেন, তারা মানিয়ে নেওয়া শিখে গেছেন। জেনে গেছেন কীভাবে উষ্ণ থাকতে হয়।

‘তিন জোড়া ট্রাউজার’

গত শীতের দুর্ভোগের কথা স্মৃতিচারণ করে দিমিত্রো বলেন, আমার কোমর শীতে অবশ হয়ে যায়। যখন ডিউটি শেষ হয় আমি যা পাই তা গায়ে জড়াই। কখনও তিন জোড়া ট্রাউজার ও কয়েকটি জ্যাকেট এক সঙ্গে পরিধান করি।

মাথায় নীল উলের টুপি পরা এই ইউক্রেনীয় সেনা বলেন, আমরা সব সময় লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। আমরা অবিরাম গুলিবর্ষণ করছি, সারা দিন। খুব শীত ছিল।

বাখমুতের কাছে আগামী তিন দিন অবস্থান করবেন দিমিত্রো। রাশিয়ার বিমান ও ড্রোন হামলা থেকে রক্ষা পেতে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকেন তিনি।

এখানে একটি আঠালো ফাঁদে তিনটি ইঁদুর আটকে মরে আছে।

ইউনিটটির ৪৫ বছর বয়সী কমান্ডার ভলোদিমির বলেন, ‘সমস্যা হলো ইঁদুর ক্যাবল কামড়ে ছিঁড়ে ফেলে।’ এ সময় তিনি স্টারলিংক স্যাটেলাইটের সঙ্গে সংযুক্ত ক্যাবলের দিকে হাত দিয়ে ইঙ্গিত করেন। ইঁদুরগুলো উষ্ণতা ও খাবারের খোঁজ করে। অনেক সময় সেনাদের পোশাকও খেয়ে ফেলে।

দিমিত্রো বলেন, আমার স্ত্রী গত মাসে এই সোয়েটার কিনে দিয়েছে। ইতোমধ্যে ইঁদুর তা খেয়ে ফেলেছে।

শীতে ঠান্ডা ও ইঁদুরের পাশাপাশি গাছের পাতাও ঝরে যায়। ফলে রুশ ড্রোনের ক্যামেরায় ইউক্রেনীয় সেনাদের অবস্থান ধরা পড়ার ঝুঁকিও বাড়ে। আর কাদার কারণে সড়কগুলো দিয়ে অস্ত্র ব্যবস্থা আনা-নেওয়া করা কঠিন হয়, আটকে যায় যানবাহন।

বিস্তৃত ডনবাস অঞ্চলের দিকে ইঙ্গিত করে ভলোদিমির বলেন, এখন কাদা। পরে তুষারপাত শুরু হবে।

এখান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে, বাখমুতের কাছে, ওসমাক কল সাইনের সামরিক চিকিৎসক বলেন, শীতের জন্য এবার তিনি ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন।

সেনাদের একটি চিকিৎসাকেন্দ্রে কর্মীরা দরজার ও জানালা লাগিয়েছেন কাঠ ও বোর্ড দিয়ে।

হাত উষ্ণ রাখতে রাসায়নিক

কিছু কক্ষে কাঠ পোড়ানোর চুলা এবং গাড়ির হিটার বসানো হয়েছে। চিকিৎসক বলেন, গত শীতে কাজ করা অনেক কঠিন ছিল। কারণ আমাদের কাছে সঠিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার মতো সময় ছিল না। আমরা ঠান্ডায় কাজ করেছি।

তিনি বলেছেন, রোগীদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত কক্ষগুলোতে আরামদায়ক তাপমাত্রা থাকা উচিত। যা ২৮ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে। কারণ আহত সেনারা অনেক সময় খোলা জায়গায় শুয়ে থাকার পর রক্তক্ষরণ এবং হাইপোথার্মিয়ায় ভোগেন।

দুজন আহত সেনাকে নিয়ে আসা হয়েছিল, তাদের উরুতে জখম ছিল। একজন সেনা অস্ত্রোপচারের টেবিলে কাঁপতে থাকেন। চিকিৎকরা তাকে একটি ফয়েল কম্বলে মুড়িয়ে ভেতরে একটি পাইপ বসান। এই পাইপ বাইরে একটি বড় জেনারেটরের গরম বাতাস কম্বলের ভেতরে নিয়ে আসে।

চিকিৎসক আরও বলেছেন, তাপমাত্রা শূন্যের নিচে নেমে যাওয়ায় তুষারপাত শিগগিরই হতে পারে। সেনারা  এখন হাত উষ্ণ রাখতে রাসায়নিক ব্যবহার করছে।

তিনি বলেন, যখন আহতরা আসে প্রায়শই তাদের শরীরে, তাদের জ্যাকেটের নিচে এবং গ্লাভসে হাত উষ্ণ রাখার রাসায়নিক থাকে। গত শীতে এটির ব্যবহার কম ছিল। এখন তারা নিজেদের যত্ন নিচ্ছে।

সূত্র: এএফপি

/এএ/
টাইমলাইন: ইউক্রেন সংকট
২১ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:৩৫
দ্বিতীয় দফায় শীতে প্রবেশ করছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ
০২ নভেম্বর ২০২৩, ২৩:৩৬
সম্পর্কিত
আত্মসমর্পণকারী ইউক্রেনীয় সেনাদের গুলি করছে রুশ বাহিনী
ইসরায়েলের ‘যুদ্ধাপরাধ’ বন্ধ না হলে সংঘাত ছড়িয়ে পড়বে: ইরান
ইউক্রেনে রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
সর্বশেষ খবর
কালিয়াকৈরে যাত্রীবাহী বাসে আগুন
কালিয়াকৈরে যাত্রীবাহী বাসে আগুন
চট্টগ্রামে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন, আরেকটি ভাঙচুর
চট্টগ্রামে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন, আরেকটি ভাঙচুর
অবরোধের সমর্থনে মিছিলে গিয়ে যুবদল নেতার মৃত্যু, কেন্দ্রীয় নেতাদের দাবি পুলিশের হামলায়
অবরোধের সমর্থনে মিছিলে গিয়ে যুবদল নেতার মৃত্যু, কেন্দ্রীয় নেতাদের দাবি পুলিশের হামলায়
রাজশাহী বিভাগে প্রথমবারের মতো তৃতীয় লিঙ্গের ১০১ জন ভোট দেবেন 
রাজশাহী বিভাগে প্রথমবারের মতো তৃতীয় লিঙ্গের ১০১ জন ভোট দেবেন 
সর্বাধিক পঠিত
একবছরে এক শিক্ষকের ১০২টি গবেষণাপত্র, প্রতিটি তৈরিতে লেগেছে তিন দিন!
একবছরে এক শিক্ষকের ১০২টি গবেষণাপত্র, প্রতিটি তৈরিতে লেগেছে তিন দিন!
আজকের আবহাওয়া: গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘মিগজাউমে’ পরিণত
আজকের আবহাওয়া: গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘মিগজাউমে’ পরিণত
কক্সবাজার সৈকতে ভেসে আসা ২ লাশের পরিচয় মিলেছে
কক্সবাজার সৈকতে ভেসে আসা ২ লাশের পরিচয় মিলেছে
ক্রেডিট কার্ডের টাকা না দেওয়ায় ডলি সায়ন্তনীর মনোনয়নপত্র বাতিল
ক্রেডিট কার্ডের টাকা না দেওয়ায় ডলি সায়ন্তনীর মনোনয়নপত্র বাতিল
নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ব্যাপক মিথ্যাচার করা হচ্ছে: শিক্ষামন্ত্রী
নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ব্যাপক মিথ্যাচার করা হচ্ছে: শিক্ষামন্ত্রী