আগামী ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে শিবচরে সর্বস্তরে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। ওই দিন পদ্মা বহুমুখী সেতুর উদ্বোধন হচ্ছে।বহুল কাঙ্খিত সেতুটি বাস্তবায়নকে ঘিরে এক সময়ের অবহেলিত জনপদ শিবচরের পদ্মার পাড় এখন আলো ঝলমলে। সবার মধ্যে যেন এক উৎসবমুখর অবস্থা বিরাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন ও দলীয় নেতাকর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আর এ উদ্বোধনকে সামনে রেখে সবার মধ্যে দেখা দিয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। পোস্টার, ব্যানার আর বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট, হাটবাজার আর অলিগলি। ছেয়ে গেছে পুরো শিবচরের জনপথ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায় প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে বাংলাবাজার ঘাট এলাকাসহ আশেপাশের তিন কিলোমিটার এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করাসহ নানা সাজে সজ্জিত করা হয়েছে। প্রায় সবখানেই লেগেছে রংয়ের ছোঁয়া। ঢাকা ভাঙা এক্সপ্রেস ওয়ের শিবচরে পাচ্চর থেকে ছয় কিলোমিটার এলাকায় প্রায় ২০টি তোরণ, বড় বড় ব্যানার ও ছয় হাজার ফেস্টুনে ছেয়ে গোটা সড়ক ও জনসভাস্থলের আশপাশ।
এছাড়া বিভিন্ন সড়কের ডিভাইডার, জনসভাস্থলসহ দুই পাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকাতে সাতদিন আগে থেকেই আলোকসজ্জা করা হয়েছে। শিবচর উপজেলা পরিষদ ভবন, বিভিন্ন সরকারি অফিস, হাট বাজার, বিভিন্ন এলাকা নান্দনিক সাজে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। নৌকার আদলে নির্মিত হচ্ছে জনসভাস্থলের মঞ্চ। প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে পুরোদমে চলছে মঞ্চ তৈরির কাজ।
শিবচর উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ২৫ জুন শনিবার পদ্মা সেতুর দুই প্রান্ত মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীর এসে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন, পরে জনসভায় যোগ দিবেন। জনসভাকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রায় ১৫ একর জমির ওপর ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এই দিন শিবচর উপজেলা থেকে প্রায় এক লাখ লোক সমাগমের চেষ্টা করছেন তারা। তাই চলছে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে দলীয় বৈঠক, আলোচনা সভা, মিছিল, গণসংযোগ ও মাইকিং। এ অবস্থায় সাধারণ জনগণ চান সব ধরনের সংঘাত এড়িয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন দেখতে।
ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেস ওয়ের শিবচরে কাঁঠালবাড়ি এলাকায় ফেষ্টুন স্থাপন করতে থাকা আবদুল আলীম নামে যুবলীগের এক নেতা বলেন, আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে ও আমাদের প্রিয় নেতা চীফ হুইপ নুর ই আলম চৌধুরী এমপির নির্দেশনায় ফেস্টুন। আমরা এই রোডে ৬ হাজার ফেস্টুন লাগাবো।
সুব্রত মন্ডল নামে এক যুবক বলেন,আমি ঢাকায় চাকরি করি। সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এলাকায় চলে এসেছি। চলছে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ক্ষণ গণনার পর্ব। আর এখানেই আনন্দ-উল্লাসের সব অনুভূতি উপচে পড়ছে। কারণ, পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের, উন্নয়ন, অগ্রগতি আর সমৃদ্ধির সেতু।
শিবচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল লতিফ মোল্লা বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের প্রানের দাবি ছিলো। অনেক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বাংলাদেশ সরকার সেতুটি করেছে। এতোদিন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক দিয়ে পিছিয়ে ছিল। এ জনপদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বিরাট সুযোগ সৃষ্টি করেছে পদ্মা সেতু। প্রধানন্ত্রীর সফর ও জনসভা উপলক্ষে পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর ব্যাপক প্রস্তুতি লক্ষ্য করা গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, সেতু উদ্বোধন ঘিরে পদ্মা পাড়ের এ অঞ্চলের প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে পোস্টার, ব্যানার আর বিলবোর্ডে ভরে গেছে সমাবেশেস্থলের চারপাশসহ আশেপাশের এলাকা। উদ্বোধন অনুষ্ঠানসহ এ উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এসব অনুষ্ঠান যেন নির্বিঘ্নে হয় সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, জনসভা ঘিরে আমাদের যাবতীয় প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা এসএসএফের সঙ্গে সমন্বয় করে সার্বিক দায়িত্ব পালন করছি।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন জানান, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। জেলার সব জনসাধারণের সহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রীর এই সফর আরও সাফল্যমণ্ডিত হবে।’
