X
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫
১৭ আষাঢ় ১৪৩২

বাবুল আক্তার এবং আমরা

সাইফুর মিশু
০৯ জুন ২০১৬, ১৩:২১আপডেট : ০৯ জুন ২০১৬, ১৩:২৪

সাইফুর মিশুবাবুল আক্তার একজন অকুতোভয় পুলিশ কর্মকর্তা। পত্রিকার মাধ্যমে যতটুকু জেনেছি, তিনি জঙ্গিদের জন্য ছিলেন আতঙ্ক। চট্টগ্রামের হওয়ার কারণে তার বীরগাথা মনে হয় একটু বেশিই শুনেছি। জনাব বাবুল আক্তারের পরিবারের এই ক্ষতি কখনওই পূরণ হওয়ার নয়, কারও পক্ষে সম্ভব নয় তা পূরণ করা। তবে মাত্র মাসখানেকের কম সময়ে আমার পরিবার কাছাকাছি একটি ঘটনার শিকার হওয়ার কারণে জনাব বাবুল আক্তারের স্ত্রী হত্যার ঘটনা জানার সঙ্গে-সঙ্গে মনটা বিষাদে ভরে গিয়েছিল। নিজ পরিবারের ঘটনার কোনও সুরাহা করতে পারিনি প্রতিপক্ষ ক্ষমতাধর রাজনৈতিক নেতার কারণে এবং এদিকে আমরা নিতান্তই সাধারণ পরিবার। তবে বাবুল আক্তার শুধু একজন সাধারণ নাগরিক নন, অন্য সাধারণ নাগরিকরা যাতে নিরাপদে থাকতে পারেন তার জন্য জীবন বাজি রাখা একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা।
বাবুল আক্তার সাহেবের স্ত্রীর ছবি পত্রিকায় যতবার দেখেছি, ততবার নিজের ছোট বোনের হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা ছবিটি চোখের সামনে ভেসে উঠেছে। ভয়টা হলো, যেখানে বাবুল আক্তারের মতো একজন পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীকে এভাবে রাস্তায় প্রকাশ্যে দিবালোকে হত্যা করার পরিকল্পনা করতে পারে খুনিরা, সেখানে আমার মতো একজন সাধারণ নাগরিক কী করে নিজেকে নিরাপদ ভাববে এই দেশে?
যতবার সন্তানদের কোলে নেওয়া বাবুল আক্তারের ছবি চোখের সামনে এসেছে, ততবার নিজের বোনের স্বামী এবং তার দুই সন্তানের ছবিই যেন ভেসে উঠেছে চোখের সামনে। বার বার মনে হয়েছে, আমরা বিচার পাইনি। সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে আমার বোন। বাঁচেনি মিতু, ন্যায় বিচার কি পাবেন বাবুল আক্তার? তিনিতো আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার জন্য শপথ নিয়েই ওই পোশাক গায়ে দিয়েছেন। আমার চেয়ে নিশ্চয়ই তিনি আইনের প্রতি অধিকতর শ্রদ্ধাশীল এবং আইনের মারপ্যাঁচে এবং ক্ষমতাধরদের কোনও প্রভাব নিশ্চয়ই তাকে ন্যায় বিচার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করতে পারবে না।
জনাব বাবুল আক্তারের কান্নার ছবি প্রকাশিত হয়েছে প্রায় সবক’টি দেশি এবং প্রথমসারি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে। সুইডেনের একাধিক স্থানীয় পত্রিকায়ও এসেছে ছবিগুলো। একজন বাবুল আক্তারকে এই স্বাধীন দেশে কাঁদতে দেখার চেয়ে দুর্ভাগ্য আমাদের বড় কিছু হতে পারে না। একজন বাবুল আক্তার ভেঙে পড়া মানে আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে যে কোনও অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সবটুকু সাহস হারিয়ে ফেলা, একজন বাবুল আক্তারের হেরে যাওয়া মানে বাংলাদেশের হেরে যাওয়া।

আরও পড়তে পারেন: শিক্ষানীতি নিয়ে সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানো হচ্ছে!

বাবুল আক্তার কি পারবেন স্ত্রী হারানোর এই শোক সয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়াতে? দূর থেকে হয়তো আমরা অনেকেই অনেক কথা বলতে পারি, তবে যার যায় শুধু সেই টের পায়। আমরা জানি ন্যায় বিচার না পাওয়ার বেদনা, নিজের অক্ষমতা এবং প্রভাবশালীদের অন্যায়ের কাছে হেরে যাওয়ার কষ্ট কিভাবে প্রতিমুহূর্ত দংশন করে, আমি চাই জনাব বাবুল আক্তারকেও ঠিক একইভাবে দংশন করুক স্ত্রী হারানোর বেদনা। তবেই তিনি প্রচণ্ড শক্তি সঞ্চয় করতে পারবেন, ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন, আবারও নিজের মেধাকে কাজে লাগিয়ে এই দুর্বৃত্তদের শেকড়ে আঘাত হানতে পারবেন।

আমরা অনেকেই হয়তো অনেক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করার চেষ্টা করবো এই ঘটনাকে। তবে এই সময়টা বিবেচনা, বিশ্লেষণ করে নষ্ট করার নয়। এই সময়টা সব অপশক্তির বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হওয়ার। এই সময়টা আমাদের পুরো জাতির ঐক্যবদ্ধভাবে সব দুর্নীতিবাজ, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী, সন্ত্রাসীদের মদদদাতা এবং জঙ্গিবাদের সহযোগীতাকারী সবার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে যুদ্ধে নামার। এই সময়টা বাবুল আক্তারের পাশে দাঁড়িয়ে বলার, অন্যায়ের প্রতিবাদে আমরাও আপনার পাশেই আছি। শত্রুর বুলেটটা আপনার বুকে যাওয়ার আগে আমাদের বুকেই যেন ছেদ করে যায়। তবেই এই ক্রান্তিকাল থেকে মুক্তি পাবে এই জাতি।

লেখক: মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, ব্লগার

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেই গাজার একাধিক স্থানে ইসরায়েলি হামলা, নিহত ৯৫
যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেই গাজার একাধিক স্থানে ইসরায়েলি হামলা, নিহত ৯৫
ফেনীতে অস্ত্রসহ ছাত্রদলের সাবেক দুই নেতা আটক
ফেনীতে অস্ত্রসহ ছাত্রদলের সাবেক দুই নেতা আটক
ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই জ্বালানি রূপান্তর জরুরি
ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই জ্বালানি রূপান্তর জরুরি
ফিরে দেখা: ১ জুলাই ২০২৪
ফিরে দেখা: ১ জুলাই ২০২৪
সর্বশেষসর্বাধিক