X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রশাসন ক্যাডারে একীভূত হওয়ার প্রবণতা

কাবিল সাদি
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২১:৪৭আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২২:১০

গত এক দশকে চাকরির বাজারে বড় রকমের পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। চাকরি প্রার্থীদের প্রথম এবং অকাট্য পছন্দই হচ্ছে সরকারি চাকরি। বিশেষ করে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার প্রবণতা মারাত্মক আকারে বেড়েছে। তবে মজার বিষয় হলো, বিসিএস ক্যাডার হওয়াই এখন শুধু মুখ্য বিষয় নয়, বরং পছন্দের ক্যাডার প্রাপ্তির আশায় তারা ক্যাডার পদে যোগ দিয়েও শেষ বিসিএস পর্যন্ত চেষ্টা করে যান ‘পছন্দের ক্যাডার’ প্রাপ্তির আশায়। যেকোনও বিষয়েই পড়াশোনা করুন না কেন ব্যতিক্রম ছাড়া নির্দিষ্ট কিছু ‘পছন্দের ক্যাডার’ চয়েজ প্রায় সবারই এক। একজন চিকিৎসক, একজন প্রকৌশলী বা একজন সাহিত্য ব্যাকগ্রাউন্ড শিক্ষার্থীর পছন্দও কেন ইদানীং এক রকম হয়ে উঠলো সেটি এখন মূল প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন ক্যাডারের সংখ্যা ২৬। এরমধ্যে ১০টি ক্যাডার পুরোপুরি সাধারণ। অর্থাৎ যেকোনও বিষয়ের শিক্ষার্থীই এই ক্যাডারগুলোতে আসতে পারে। পাঁচটি ক্যাডার সাধারণ ও কারিগরি/পেশাগত। ১১টি ক্যাডারে পুরোপুরি কারিগরি/পেশাগত। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীরাই কেবল এই ক্যাডারে যেতে পারেন। যেমন- চিকিৎসা, প্রকৌশল বা কৃষি বিষয়ের ওপর যারা পড়াশোনা করেন।

পিএসসি বিসিএস পরীক্ষার আবেদনের সময় আগ্রহের ক্যাডার জানতে চায়। সাধারণত পরীক্ষার ফলে এগিয়ে থাকা চাকরিপ্রার্থীরা প্রশাসন, পররাষ্ট্র ও পুলিশ ক্যাডারে আগ্রহ বেশি দেখান। বিশেষায়িত বিষয়ে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট ক্যাডারে যান। সাম্প্রতিককালে দেখা যাচ্ছে, চিকিৎসা, প্রকৌশলবিদ্যার মতো বিশেষায়িত বিষয়ে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ প্রশাসন, পুলিশ ও পররাষ্ট্র ক্যাডারে চলে যাচ্ছেন।


পিএসসি থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, ৩৫তম থেকে ৪০তম (চিকিৎসক নিয়োগের ৩৯তম বাদে) বিসিএস পর্যন্ত ৫টি বিসিএসে প্রশাসন, পুলিশ ও পররাষ্ট্র ক্যাডারে ১ হাজার ৯৮০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরমধ্যে অন্তত ৩৮৭ জন প্রকৌশলী ও চিকিৎসক। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, প্রশাসন, পুলিশ ও পররাষ্ট্র ক্যাডারে আগেও চিকিৎসা ও প্রকৌশলবিদ্যায় পড়া কিছু কিছু শিক্ষার্থী যেতেন। তবে সম্প্রতি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এর কারণ, ওই তিন ক্যাডারে সুযোগ-সুবিধা ও ক্ষমতা বেশি।

এ তো গেলো ক্যাডার পরিবর্তন বা বিষয় সংশ্লিষ্ট ব্যাকগ্রাউন্ড পরিবর্তনের কথা। কিন্তু ইদানীং এসব ‘পছন্দের ক্যাডার’ বিশেষ করে প্রশাসন ক্যাডারে  যেতে নতুন প্রবণতা তৈরি হয়েছে। নিজেদের সংশ্লিষ্ট ক্যাডারটিই বিলুপ্ত করে একীভূত হতে চান প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে। সম্প্রতি বাণিজ্য, তথ্য, সমবায় ও পরিসংখ্যান এই চারটি ক্যাডারের কর্মকর্তারা নিজেদের ক্যাডার বিলুপ্ত করে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে মিশে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, সংশ্লিষ্ট ক্যাডারগুলোতে সহজে পদোন্নতি পাওয়া যায় না। বিনা সুদের ঋণে গাড়ি কেনার সুযোগ নেই। বিদেশ ভ্রমণের সুবিধাও কম। ওদিকে এসব সুবিধা রয়েছে প্রশাসন ক্যাডারে, সঙ্গে রয়েছে সামাজিক মর্যাদা ও ক্ষমতার প্রভাব। ইতোমধ্যে বাণিজ্য ক্যাডার বিলুপ্তির প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারাও একই পথে হাঁটার চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন।

প্রশাসন ক্যাডারে একীভূত হতে ২০১৮ সালে বিলুপ্ত হয়েছে অর্থনৈতিক (ইকোনমিক) ক্যাডার। তবে ইকোনমিক ক্যাডার কর্মকর্তাদের সুযোগ-সুবিধা এই সংশ্লিষ্ট চারটি ক্যাডার থেকে বেশিই ছিল বলে মনে করেন চাকরি প্রার্থীরা। গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রকল্প বাস্তবায়নসহ বাজেটের এডিপি বাস্তবায়নের মতো কাজও ছিল ইকোনমিক ক্যাডারের আওতায়। প্রকল্প তৈরি ও তদারকির মূল দায়িত্ব ছিল এই ক্যাডারের কর্মকর্তাদের হাতে, তুলনামূলক বিদেশ ভ্রমণের সুযোগও তারাই বেশি পেতেন। ধারণা করা হয়, এসব সুযোগ-সুবিধা প্রশাসন ক্যাডারের দখল নিতেই মূলত ইকোনমিক ক্যাডারকে একীভূত করা হয়েছে। এখন ওইসব প্রকল্প তৈরি, তদারকি ও বাস্তবায়নের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

প্রশাসনের সঙ্গে অর্থনৈতিক ক্যাডারের মিশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি বলে মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এ নিয়ে নিজের আক্ষেপের কথা জানিয়েছেন তিনি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশেষায়িত ক্যাডারটি গঠন করা হয়েছিল বিশেষ একটি কাজের জন্য। এক যুগ আগে দেশে এডিপির (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) আকার ছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা। এখন তা আড়াই লাখ কোটি টাকা। ভবিষ্যতে প্রকল্পের সংখ্যা বাড়বে। তখন এই ক্যাডারের চাহিদা আরও বাড়বে, কিন্তু ক্যাডারটি বিলুপ্ত হয়ে গেলো।

যদিও রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১৯৮৫ সালে এই বিশেষায়িত ক্যাডার গঠন করা হয়েছিল বিশেষ প্রয়োজনে। বিশেষায়িত কাজের জন্য বিশেষায়িত ক্যাডারই দরকার এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু সেই প্রয়োজন ফুরিয়েছে কিনা সেটা গবেষণার বিষয়। বিলুপ্ত হওয়ার আগ্রহ তৈরি হয়েছে হয়তো ব্যক্তিস্বার্থে অথবা সুযোগ-সুবিধা পাওয়া না পাওয়ার প্রশ্নে।

সংশ্লিষ্ট ক্যাডার কর্মকর্তারা তাদের বঞ্চনাকেই সামনে এনেছেন। বিশেষ করে তাদের নিজস্ব ক্যাডারেও নিজেরা প্রধান হতে পারেন না সেই বিষয়ে অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও। তাদের সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রথম বা দ্বিতীয় স্তরের পদ পর্যন্তও প্রশাসন ক্যাডারের দখলে।

বাণিজ্য ক্যাডার অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বাণিজ্য নিয়ে কাজ করা নতুন নতুন সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেসব সংস্থায় বাণিজ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া যেত। কিন্তু প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি), প্রতিযোগিতা কমিশন, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো ও বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটের মতো বাণিজ্য নিয়ে কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা রয়েছে। বাণিজ্য নীতি, শিল্পের সুরক্ষা ও দ্রব্যমূল্য নিয়ে কাজ করা ট্যারিফ কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান ও তিন সদস্যের সবাই প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এখন বাণিজ্য ক্যাডারকে বিলুপ্ত করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।

একই ধরনের সমস্যা বা বঞ্চনা দেখা যায় পরিসংখ্যান ক্যাডারে। পরিসংখ্যান ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা চাকরি শুরু করেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোতে (বিবিএস) পরিসংখ্যান কর্মকর্তা হিসেবে। পরিসংখ্যান আইনে বলা আছে, বিবিএসের মহাপরিচালক ও উপমহাপরিচালক সরকার নিয়োগ দেবে। সরকার সাধারণত প্রশাসন ক্যাডার থেকে নিয়োগ দেয়। পরিসংখ্যান ক্যাডারের কর্মকর্তারা সাধারণত পদোন্নতিতে পিছিয়ে থাকেন। ফলে শীর্ষ পদে যাওয়ার যোগ্যতা হয় না। এখন যে দুজন কর্মকর্তা বিবিএসের মহাপরিচালক ও উপমহাপরিচালক পদে রয়েছেন, তাঁরা প্রশাসন ক্যাডারের। সংস্থাটির মহাপরিচালক পদে কখনও সরাসরি পরিসংখ্যান ক্যাডারের কেউ নিয়োগ পাননি। উপমহাপরিচালক পদে শুধু একজন পেয়েছিলেন।

একই চিত্র দেখা যায় সমবায় ক্যাডারে। সমবায় অধিদফতরের প্রধান পদ নিবন্ধক ও মহাপরিচালক। এ পদে এখন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন ৫০ জন। সবাই প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। এরকম একীভূত হতে না চাওয়া আবগারি ও শুল্ক এবং কর ক্যাডারের প্রধান হিসেবেও নিয়োগ পান প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাগণ।

এছাড়াও প্রশাসন ক্যাডারে পদোন্নতি পাওয়া সহজ। পদ না থাকলেও প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিয়মিত পদোন্নতি হয়। যেমন, জনপ্রশাসনে যুগ্ম সচিবের পদ আছে ৫০২টি, যদিও যুগ্ম সচিব রয়েছেন ৮৬৭ জন। উপসচিব হওয়ার তিন বছর পর প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা গাড়ি কেনার জন্য বিনা সুদে ঋণ পান এবং সেই গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা পান। উপসচিব পর্যায়ে ক্যাডার পরিবর্তনের সুযোগ আছে।

এ ক্ষেত্রে প্রতি ১০০টি পদের ৭৫টি প্রশাসন ক্যাডারের জন্য সংরক্ষিত। বাকি ক্যাডারের জন্য ২৫টি। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারাই সাধারণত বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রধান হন এমন না, বরং উচ্চমধ্যম পর্যায়ের পদেও লোক আসেন প্রশাসন ক্যাডার থেকে। অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিজ সংস্থার শীর্ষস্থানীয় পদে যাওয়ার সুযোগ একেবারেই সীমিত। প্রশাসন ক্যাডারে গেলে বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ বেশি পাওয়া যায়, যা বাণিজ্য, তথ্য, সমবায় ও পরিসংখ্যান বা অন্যান্য ক্যাডারে খুবই কম। তবে প্রশাসন ক্যাডার এখানেই থেমে আছে তা নয়। ধীরে ধীরে তাদের ক্ষমতা ও সুযোগ সুবিধার পরিধি বাড়াতে সচেষ্ট।

এবারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে ২৪৫টি প্রস্তাব এসেছিল। এরমধ্যে তিনটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সংশ্লিষ্ট। প্রস্তাবগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মোট ২৭টি প্রস্তাবের সব ক’টিই ডিসি ও ইউএনওদের ক্ষমতা বা দায়িত্বের পরিধি বাড়ানো ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রস্তাব।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাতটি প্রস্তাবের সবগুলোই ডিসি ও ইউএনওদের আর্থিক, গাড়ি, বাড়ি ও অফিস সুবিধা বৃদ্ধি  সংক্রান্ত।

এবারের প্রস্তাবগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল জেলা পর্যায়ে রাজস্ব আদায়, উন্নয়ন প্রকল্পে আর্থিক ক্ষমতা বৃদ্ধি, জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমিটি করা এবং এ ধরনের কমিটিতে ডিসি বা ইউএনওদের প্রধান হওয়া। শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা সব চিঠি ডিসি-ইউএনওদের বরাবর পাঠানো, ইউএনওদের আবাসিক ভবনে সন্ধ্যাকালীন অফিস পরিচালনার জন্য নতুন কর্মচারী নিয়োগ করাসহ ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রস্তাব। এরমধ্যে রাজস্ব আদায় ও উন্নয়ন প্রকল্পের দায়িত্ব তারা আগের সম্মেলনেও চেয়েছিলেন। ২০২২ সালের সম্মেলনে ডিসিরা ২৬৩টি প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন। সেই প্রস্তাবেরও বেশিরভাগ ছিল তাদের ক্ষমতার পরিধি বৃদ্ধি ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর বিষয়ে। এর আগে ডিসি সম্মেলনে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য পৃথক ব্যাংক, বিশেষ বাহিনী, দিবস উদযাপনে কোটি টাকা বরাদ্দ, জ্বালানি তেল ব্যবহারের সীমা তুলে দেওয়া এবং ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের ক্ষমতা চেয়ে প্রস্তাব আনা হয়েছিল। বিচারিক ক্ষমতাও ছিল তাদের প্রস্তাবে।

অথচ ২০১১ সালে ডিসিদের জন্য ৬২টি দায়িত্ব নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। সরকারের রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী প্রতিটি ক্যাডার ও বিভাগের জন্য পৃথক দায়িত্ব রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কাজের ক্ষমতাসংক্রান্ত একাধিক আইন ও বিধি রয়েছে। এরপরও ডিসিরা বিভিন্ন সময়ে অন্য ক্যাডার ও বিভাগের দায়িত্ব চেয়েছেন। ফলে অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা একাধিকবার প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা যায়, এই যে ক্যাডারগুলোর মধ্যে এক ধরনের বৈষম্য, বঞ্চনা এবং তা থেকে উত্তরণে একীভূত হওয়ার প্রবণতা। এতে নাগরিক ও রাষ্ট্রীয় সেবার বিঘ্ন ঘটবেই। কারণ, সব ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে একটি দুটি ক্যাডার। আর তা থেকে হতাশ ও নিরাশ হয়ে নিজ স্বার্থেই অন্য ক্যাডারে একীভূত হওয়ার প্রবণতা মারাত্মকভাবে জনসেবা বিঘ্নিত করবে।

সংশ্লিষ্ট ও বিশেষায়িত ক্যাডার তাদের অভিজ্ঞতা থেকে যে জনসেবাটি দিতে পারবে তা ভিন্ন ক্যাডার পারবে না, এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া এই আন্তক্যাডার বৈষম্যের ফলে চিকিৎসক ও প্রকৌশলীসহ টেকনিক্যাল বা বিশেষায়িত শিক্ষার্থীরা নিজেদের অতি গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাডেমিক ক্ষেত্র ছেড়ে ঝেঁকে বসেছেন এসব ক্যাডারের জন্য। কোনও কোনও ক্ষেত্রে তারা এসব ক্যাডার পেতে ব্যর্থ হলে নিজের সংশ্লিষ্ট ক্যাডারেও ভালো করতে পারেন না। অন্যদিকে একাধিকবার ক্যাডার পরিবর্তনের ফলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সেবাপ্রার্থীরাও বিড়ম্বনার শিকার হন।

একইভাবে এসব বিভাগে পুনর্নিয়োগে নিয়োগ জটিলতা ও সরকারি অর্থেরও অপচয় হয়। আর যদি মনে করা হয় প্রশাসন ক্যাডার সব দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম তাহলে সরকারের উচিত ধীরে ধীরে না করে সব জেনারেল ক্যাডারকে প্রশাসন ক্যাডারে একীভূত করে নেওয়া। যদিও বর্তমানে জেনারেল সব চাকরির ক্ষেত্রেই যেকোনও বিভাগ থেকে চাকরির সুযোগ রয়েছে তাহলে এখানেও সম্ভব। শুধু টেকনিক্যালগুলো আলাদা এবং সুযোগ থাকলে আলাদা বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নেওয়া।  আর জেনারেল (সাধারণ)  ক্যাডার তথা প্রশাসন নামেই একটি ক্যাডারে চালু রাখা যারা সব বিভাগেই ক্রমান্বয়ে ধারাবাহিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।

যেহেতু তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রকৌশল সেক্টরের মতো বিশেষায়িত বিভাগেও দায়িত্ব নিতে আগ্রহী ও সক্ষম বলে মনে করছেন; তাহলে একটি ‘প্রশাসন সামগ্রিক’ ক্যাডার নামে আলাদা ক্যাডার হতেই পারে। আর যদি এভাবে সম্ভব না হয় তাহলে ক্যাডারগুলোর আন্ত বৈষম্য দূর ও দক্ষতার বিচারে সংশ্লিষ্টদেরকেই সেই সেক্টরের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া। বাণিজ্য বা কৃষি সম্পর্কে একজন প্রশাসন ক্যাডারের দক্ষতা সংশ্লিষ্ট ক্যাডার কর্মকর্তার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা লব্ধ জ্ঞান থেকে বেশি হতে পারে না। একই কথা কর, সমবায়, তথ্য, বাণিজ্য বা পরিসংখ্যানসহ অন্যান্য ক্যাডারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

‘এক ক্যাডার নীতি’ গ্রহণ করলে শুধু আন্তক্যাডার সমস্যাই নয় বরং এসব সেক্টরের সেবা গ্রহীতারাই বেশি ভোগান্তিতে পড়বে। তাছাড়া  কোনও ক্যাডার নিজেদের সুযোগ-সুবিধার জন্য প্রশাসন ক্যাডারে  একীভূত হওয়ার চেষ্টা করবে, এটাও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

আধুনিক রাষ্ট্র গঠনে বিশেষায়িত ক্যাডার দ্বারা বিশেষ সেক্টরে সেবা দেওয়ার বিকল্প নেই। এভাবে একীভূতকরণ নামে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি অথবা ‘আত্মসমর্পণ’ প্রক্রিয়ার আগেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।

লেখক: কলামিস্ট ও নাট্যকার

[email protected]

 

 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নারী কর্মচারীর অকস্মাৎ মৃত্যু, অভিযোগ সচিবের দিকে!
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নারী কর্মচারীর অকস্মাৎ মৃত্যু, অভিযোগ সচিবের দিকে!
উত্তরাসহ দেশের চার পাসপোর্ট অফিসে দুদকের অভিযান
উত্তরাসহ দেশের চার পাসপোর্ট অফিসে দুদকের অভিযান
রনির ব্যাটে প্রাইম ব্যাংককে হারালো মোহামেডান
রনির ব্যাটে প্রাইম ব্যাংককে হারালো মোহামেডান
কুড়িগ্রামে বৃষ্টির জন্য নামাজ, এপ্রিলে সম্ভাবনা নেই বললো আবহাওয়া বিভাগ
কুড়িগ্রামে বৃষ্টির জন্য নামাজ, এপ্রিলে সম্ভাবনা নেই বললো আবহাওয়া বিভাগ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ