X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

পুতিন কোথায়?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৮ নভেম্বর ২০২২, ১৯:২৫আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০২২, ২০:২৩

দক্ষিণ ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শহর থেকে টেলিভিশনে প্রচারিত সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার সময় রাশিয়ার শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের দেখা গিয়েছিল। কিন্তু প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া কক্ষে একজন লোক অনুপস্থিত ছিলেন, তিনি হলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

৯ নভেম্বর রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু ও ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর প্রধান কমান্ডার জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিন যখন ক্যামেরার সামনে খেরসন শহর থেকে সেনা প্রত্যাহারের কারণ তুলে ধরছিলেন, পুতিন তখন মস্কোর একটি নিউরোলজিক্যাল হাসপাতাল পরিদর্শন করছিলেন, এক চিকিৎসক মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচার করছিলেন, তা দেখছিলেন তিনি।

ওই দিনেই পুতিন আরেকটি অনুষ্ঠানে কথা বলেছেন। কিন্তু খেরসন থেকে সেনা প্রত্যাহার নিয়ে কোনও শব্দ উচ্চারণ করেননি তিনি। যে প্রত্যাহারকে ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধে রাশিয়ার সবচেয়ে অপমানজনক পিছু হটা বলে মনে করা হচ্ছে। ওই দিনের পর থেকে রুশ প্রেসিডেন্টকে প্রকাশ্যে কথা বলতে দেখা যায়নি।

প্রায় ৯ মাসের যুদ্ধে ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর একের পর এক ব্যর্থতায় যখন তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে তখন পুতিন এই নীরবতা অবলম্বন করছেন। দৃশ্যত খারাপ সংবাদ তিনি অন্যদের দিয়ে ঘোষণা দিচ্ছেন। করোনাভাইরাস মহামারির সময়ও একই কৌশল নিয়েছিলেন তিনি।

ইউক্রেনে রাশিয়া একমাত্র যে আঞ্চলিক রাজধানী দখল করেছিল সেটি ছিল এই খেরসন শহর। ইউক্রেন আক্রমণের প্রথম দিনেই শহরটি দখল করেছিল রুশ বাহিনী। কয়েক মাস ধরে রাশিয়া শহরটি এবং পুরো অঞ্চল নিজেদের দখলে রেখেছিল। এই অঞ্চল ক্রিমিয়া উপদ্বীপের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার।

কয়েক মাস আগে অবৈধভাবে খেরসন অঞ্চলসহ ইউক্রেনের চারটি প্রদেশকে রাশিয়া নিজেদের ভূখণ্ড বলে ঘোষণা করে। পুতিন ব্যক্তিগতভাবে ক্রেমলিনে এক অনুষ্ঠানে এই অংশীভূত করার বিষয়টি উদযাপন করেন। সেপ্টেম্বরে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, লুহানস্ক, ডনেস্ক, খেরসন ও জাপোরিজ্জিয়া চিরতরে রাশিয়ার অংশ হয়ে গেছে।

ওই ঘোষণার মাত্র এক মাসের মাথায় রাশিয়ার তিন রঙের পতাকা খেরসনের সরকারি ভবন থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে স্থান নিয়েছে ইউক্রেনের হলুদ-নীল পতাকা।

১১ নভেম্বর খেরসন শহর থেকে রুশ সেনাদের ডিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীরে সরিয়ে নেওয়ার কাজ সমাপ্ত হয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়ার সেনাবাহিনী। এরপর থেকে প্রকাশ্যে যতবার হাজির হয়েছেন একবারও খেরসন থেকে রুশ সেনাদের পিছু হটার কথা উল্লেখ করেননি তিনি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক তাতিয়ানা স্টানোভায়া সম্প্রতি লিখেছেন, পুতিন পুরনো দিনের যুক্তিতে বসবাস করে চলেছেন। আর তা হলো: এটি যুদ্ধ নয়, বিশেষ অভিযান। মূল সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন পেশাদারদের ক্ষুদ্র একটি চক্র। এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে প্রেসিডেন্ট দূরে রয়েছেন।  

২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু যুদ্ধের একপর্যায়ে জানা গিয়েছিল, পুতিন ব্যক্তিগতভাবে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান তত্ত্বাবধান করছেন, যুদ্ধক্ষেত্রের নির্দেশ দিচ্ছেন জেনারেলদের। কিন্তু সম্প্রতি মনে হচ্ছে তিনি যুদ্ধ ছাড়া অন্য সবকিছুতে মনোযোগী।

সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে পুতিন কথা বলেছেন দেউলিয়া প্রক্রিয়া এবং অটোমোবাইল শিল্পের সমস্যা নিয়ে। সাইবেরিয়ার এক গভর্নরের সঙ্গে কথা বলেছেন অঞ্চলটিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে, ফোনে একাধিক বিশ্বনেতার সঙ্গে কথা বলেছেন এবং রাশিয়ার অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের নতুন সভাপতির সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন।

মঙ্গলবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মরণে আয়োজিত এক ভিডিও বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন পুতিন। দিনটিতে তিনি ইন্দোনেশিয়ায় জি-২০ সম্মেলনে কথা বলবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছিল। কিন্তু তিনি শুধু যে সম্মেলনে উপস্থিত না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেননি তা নয়, এমনকি তিনি ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হওয়া বা পূর্বে ধারণকৃত বক্তব্য পাঠানো থেকেও বিরত থাকেন।

এই বৈঠকটি ছিল একমাত্র বৈঠক, যাতে গত কয়েক দিনের মধ্যে খেরসন ছাড়া ইউক্রেনের অপর শহরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বৈঠক শেষে পুতিন দখলকৃত মেলিতোপোল ও মারিউপোলকে ‘সিটি অব মিলিটারি গ্লোরি’ এবং লুহানস্ককে ‘সিটি অব লেবর মেরিট’ আখ্যা দিয়ে ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেন।

স্বতন্ত্র স্বাধীন রাজনৈতিক বিশ্লেষক দিমিত্রি ওরেশকিন পুতিনের নীরবতার বিষয়ে বলেছেন, তিনি (পুতিন) সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছাকাছি একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন। যে ব্যবস্থায় এর নেতা ভুলে ঊর্ধ্বে বলে মনে করা হয়। পুতিন ও পুতিনের ব্যবস্থা এমনভাবে গড়ে তোলা হয়েছে, যাতে সব ব্যর্থতার দায় অন্যের ওপর চাপানো যায়। যেমন: শত্রু, বিশ্বাসঘাতক, পেছনে আঘাত, বৈশ্বিক রুশবিদ্বেষ ইত্যাদি। ফলে তিনি যদি কোথাও পরাজিত হন তাহলে প্রথমত তা সত্য নয়, দ্বিতীয়ত তিনি পরাজিত হননি।

পুতিনের ঘনিষ্ঠ মহলের কয়েকজনও তার এই দূরত্ব বজায় রাখাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন। এমনকি ক্রেমলিনপন্থি মহলেও যুদ্ধ নিয়ে সমালোচনামূলক মনোভাব বাড়ছে।

ক্রেমলিনপন্থি রাজনৈতিক বিশ্লেষক সের্গেই মারকভ ফেসবুকে লিখেছেন, যখন খেরসন থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহার করা হচ্ছিল, তখন পুতিন আর্মেনিয়া ও সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের নেতার সঙ্গে কথা বলছিলেন ফোনে। তা ছিল খেরসন ট্র্যাজেডির চেয়ে বেশি দুঃখজনক।

তিনি আরও লিখেছেন, প্রথমে খবরটি আমি বিশ্বাস করিনি। ঘটনাটি এতই অবিশ্বাস্য ছিল।

অন্যরা এই পিছু হটায় ইতিবাচক দিক খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছেন এবং পুতিনকে জড়াচ্ছেন। ক্রেমলিনপন্থি টিভি উপস্থাপক দিমিত্রি কিসেলেভ রবিবার রাতে দাবি করেছেন, খেরসন থেকে সেনা প্রত্যাহারের যুক্তি হলো মানুষকে রক্ষা করা।

নিজের জনপ্রিয় অনুষ্ঠানে পুতিনের বিশাল ছবির সামনে বসে কিসেলেভ এসব কথা বলেন। এই ছবিতে একটি ক্যাপশন রয়েছে। যাতে লেখা রয়েছে, মানুষকে রক্ষা। এই যুক্তিই পুতিন ব্যবহার করেছেন। মানুষকে রক্ষায় এবং বিশেষ পরিস্থিতিতে সব মানুষকে রক্ষা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার সাধারণ মানুষের একাংশ খেরসন শহর থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারকে এভাবেই দেখছেন।

কার্নেগি এনডোমেন্ট-এর সিনিয়র ফেলো আন্দ্রেই কলেসনিকভ বলেন, শান্তি আলোচনার পক্ষে ক্রমবর্ধমান মানুষের সংখ্যা বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এমনকি পুতিন সমর্থকরাও এমন পদক্ষেপকে শান্তভাবে নিয়েছেন অথবা জনবল রক্ষা, শান্তির সম্ভাব্যতা হিসেবে গ্রহণ করেছেন।

বিশ্লেষক ওরেশকিন বলেছেন, তবে রাশিয়ার যুদ্ধবাজরা ও ক্রেমলিনের সরব সমর্থক, যারা যুদ্ধক্ষেত্রে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন, তারা খেরসন থেকে সেনা প্রত্যাহারে খুশি নন। ইউক্রেনের বিদ্যুৎ গ্রিডে নিয়মিত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে রুশ বাহিনী। তবে আমার মনে হয় এসব হামলায় ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর খুব ক্ষতি হচ্ছে না এবং যুদ্ধক্ষেত্রে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাচ্ছে না।

তিনি বলেন, কিন্তু এমন বিজয়ী নেতার ভাবমূর্তি গড়ে তোলা প্রয়োজন। ফলে বিভিন্ন ধরনের হামলা চালিয়ে যাওয়া এবং এগুলো নিয়ে গলা ফাটানো দরকার। তারা এখন এটিই করছে বলে আমার মনে হচ্ছে।

সূত্র: এপি

/এএ/এমওএফ/
টাইমলাইন: ইউক্রেন সংকট
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:৩০
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:০২
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:০৪
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:০১
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:০৪
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২৩:০১
সম্পর্কিত
ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার জ্বালানি স্থাপনায় আগুন
মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনের বহুল প্রতীক্ষিত সহায়তা প্যাকেজ পাস
ঘুষ মামলায় আদালতের আদেশ লঙ্ঘন, ট্রাম্পের শাস্তি চান প্রসিকিউটররা
সর্বশেষ খবর
মিয়ানমার থেকে দেশে ফিরছেন দেড় শতাধিক বাংলাদেশি
মিয়ানমার থেকে দেশে ফিরছেন দেড় শতাধিক বাংলাদেশি
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রেললাইনে ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রেললাইনে ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত
ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার জ্বালানি স্থাপনায় আগুন
ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার জ্বালানি স্থাপনায় আগুন
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা