ইউক্রেনে দখলকৃত ভূখণ্ডকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পশ্চিমাদের প্রত্যাখ্যানের কারণে যুদ্ধ অবসানে শান্তি আলোচনা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে উল্লেখ করেছে রুশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুদ্ধ অবসানে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুতের ইঙ্গিত দেওয়ার পর এই অবস্থান জানালো রাশিয়া। শুক্রবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ক্রেমলিন বলেছে, তারা আলোচনার জন্য উন্মুক্ত। কিন্তু ইউক্রেন থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারের দাবি মেনে আলোচনায় বসবে না রাশিয়া।
সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলকে অবৈধভাবে নিজেদের অংশ বলে ঘোষণা করে রাশিয়া। যদিও চারটি অঞ্চলের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ তারা নিতে পারেনি। ৯ মাসের যুদ্ধে যে পরিমাণ ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড দখল করেছিল সেগুলোর অর্ধেকের বেশি অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ তারা ধরে রাখতে পারেনি।
বৃহস্পতিবার রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, যুদ্ধ বন্ধের উপায় খুঁজতে যদি পুতিনের আগ্রহ থাকে তাহলে তিনি তার সঙ্গে বৈঠকে প্রস্তুত আছেন। তবে ফরাসি প্রেসিডেন্টকে সঙ্গে নিয়ে তিনি স্পষ্ট করেছেন, ইউক্রেনকে ছাড় দিতে কখনও তারা আহ্বান জানাবেন না।
আলোচনা নিয়ে ইউক্রেন ও রাশিয়ার আগ্রহের সামান্য ইঙ্গিত না থাকলেও বেশ কয়েক মাস ধরে কূটনৈতিক উদ্যোগ জারি রয়েছে। ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় খেরসন থেকে রুশ সেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। এরপর ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ বেসামরিক স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট হামলা শুরু করেছে রাশিয়া।
সেপ্টেম্বরের পর প্রথমবারের মতো শুক্রবার জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস ফোনে কথা বলেছেন পুতিনের সঙ্গে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী আলাপে যত দ্রুত সম্ভব ইউক্রেন থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহার করে একটি কূটনৈতিক সমাধানের পথ খুঁজতে পুতিনকে আহ্বান জানিয়েছেন শলৎস। এমনটিই জানিয়েছে বার্লিন।
ক্রেমলিন বলছে, জার্মান পক্ষ ফোনালাপে আগ্রহ দেখিয়েছে। পুতিন জার্মানিকে আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনীয় ঘটনায় তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করার জন্য। জার্মানিসহ পশ্চিমা দেশগুলোর ধ্বংসাত্মক অবস্থানের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন পুতিন। একই সঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, ইউক্রেন আলোচনার ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছে।
এর আগে ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মার্কিন শর্ত মেনে নিতে রাজি না মস্কো। প্রেসিডেন্ট বাইডেন যা বলেছেন তার অর্থ হলো, রুশ সেনাদের ইউক্রেন ছাড়তে হবে। কেবল তখন তিনি পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।
পেসকভ বলেন, এতে আলোচনার দ্বিপক্ষীয় ভিত্তির অনুসন্ধানকে জটিল করে তুলেছে। ইউক্রেনে রুশ ভূখণ্ডকে স্বীকৃতি দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র।
শুক্রবার পুতিন-শলৎস ফোনালাপের আগে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ অভিযোগ করেছেন, ইউরোপীয় দেশগুলো মধ্যস্থতার বিষয়ে কোনও নির্দিষ্ট প্রস্তাব দেয়নি।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ স্পষ্ট করেছেন, ইউক্রেনকে ছাড় দিতে কখনও আহ্বান না জানানোর বিষয়ে বাইডেনের প্রস্তাবকে তিনি সমর্থন করেন। কারণ, এটি ইউক্রেনের জন্য গ্রহণযোগ্য হবে না।
ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি শুক্রবার বলেছেন, ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজের সময় এসে গেছে। কিন্তু এটি হতে হবে ইউক্রেনের স্বাধীনতার মাধ্যমে, আত্মসমর্পণ করে নয়।
তিনি বলেন, মানুষের ওপর বোমা নিক্ষেপ করার বদলে ক্রেমলিনকে স্পষ্ট বার্তা দিতে হবে।