X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার মধ্যে কীভাবে টিকে থাকলো রুশ অর্থনীতি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২২:০২আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২২:৪০

রাশিয়ার যুদ্ধকালীন অর্থনীতির বিকাশ হচ্ছে। গত দুই বছর ধরে মস্কোর প্রকাশিত পরিসংখ্যানের নির্ভুলতা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও আসন্ন তৃতীয় বছরেও যুদ্ধের ব্যয় মেটানোর মতো সক্ষমতা দেশটির রয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

বোস্টনভিত্তিক ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান লুমিস সায়লেস-এর রাশিয়া বিশেষজ্ঞ হাসান মালিক বলেছেন, বিশুদ্ধ অর্থনৈতিক অবস্থান থেকে বিবেচনা করলে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মতো সামর্থ্য রাশিয়ার রয়েছে।

২০১৪ সাল থেকেই রাশিয়া নিজেকে নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলায় প্রস্তুত করছিল। ওই সময় ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়াকে বিচ্ছিন্ন করে নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে ঘোষণা করেছিল তারা। এছাড়া তেল বিক্রি থেকে এখনও দেশটি রাজস্ব আয় করছে।

এই দুই বছরে রুশ অর্থনীতির টিকে থাকার পাঁচটি কারণ তুলে ধরেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডার।

প্রতিবেশী দেশে যুদ্ধ

রাশিয়ার অর্থনীতি এখনও সচল থাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো যুদ্ধের স্থান। মালিক বলেছেন, এই যুদ্ধ মূলত ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে হচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে ইউক্রেনীয় বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কারখানা। রাশিয়ার উৎপাদন সক্ষমতা ও রুশ নাগরিকদের জীবনে এগুলো ধ্বংসের প্রভাব খুব সীমিত।

এক্ষেত্রে রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয় দেশের অর্থনীতিতে যুদ্ধের প্রভাব বিবেচনায় নিলে তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।

সরকারি তথ্য অনুসারে, যুদ্ধের প্রথম বছর ২০২২ সালে রাশিয়া অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছিল এক দশমিক দুই শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মধ্যে রয়টার্সের পরিচালিত এক জরিপে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, ২০২৩ সালে রাশিয়া জিডিপি হতে পারে তিন দশমিক এক শতাংশ।

বিপরীতে ২০২২ সালে ইউক্রেনের অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে ২৯ দশমিক এক শতাংশ। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৩ সালে প্রবৃদ্ধি হয়েছে চার দশমিক ৯ শতাংশ। 

মালিক ব্যাখ্যা করে বলেছেন, নিজের দেশে যুদ্ধ পরিচালনা করতে হয়নি এমন প্রেক্ষাপটে যুদ্ধ চাহিদা বাড়ায়। বিশেষ করে যুদ্ধের সরবরাহ ও মানবশক্তির। রাশিয়াতেও একই ঘটনা ঘটেছে। যুদ্ধ রাশিয়ার অর্থনীতিতে গতি এনেছে।

যুদ্ধকালে পণ্য ও সেবার চাহিদা বৃদ্ধি

যুদ্ধের সময়ে পণ্য ও সেবার চাহিদা বাড়তে থাকে। রুশ সেনাবাহিনীর অস্ত্র, গোলাবারুদ, চিকিৎসা সরঞ্জামের প্রয়োজন হয়েছে। এই চাহিদা এই খাতে এসব পণ্য উৎপাদন বাড়িয়েছে। আমদানি নিষিদ্ধ থাকায় দেশে উৎপাদনে জোর দিতে হয়েছে মস্কোকে।

সামরিক সরঞ্জামের চাহিদা এত তীব্র ছিল যে, এমনকি মধ্য রাশিয়ার একটি বেকারিও যুদ্ধ প্রচেষ্টায় শামিল হয়েছে। এর আগে দোকানটি রুশ টিভিতে রুটি তৈরি করলেও পরে তা নতুন ড্রোন নির্মাণ শুরু করে। এখন তা যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় পড়েছে। 

যুদ্ধ চালিয়ে যেতে মানবশক্তিরও প্রয়োজন হয়। রাশিয়া একটি জনতাত্ত্বিক সংকটে রয়েছে। দেশটির জনসংখ্যা কমছে এবং যুদ্ধের আগে থেকেই জন্মহার কমছিল। যুদ্ধ শুরুর পর সেনাবাহিনী যোগদানে উপযুক্ত প্রায় দশ লাখ রুশ নাগরিক দেশ ছেড়েছেন। এতে দেশটির শ্রমশক্তি আরও খর্ব হয়েছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সেনা সমাবেশের ঘোষণা দেওয়ার পর তা আরও কমেছে। পুরো ২০২২ সালজুড়ে তা অব্যাহত ছিল। 

গত বছর রাশিয়ায় ৫০ লাখ শ্রমিকের ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। এক বছরের আগের তুলনায় শ্রম ঘাটতি বেড়েছে ৫ শতাংশ। নভেম্বরে রাশিয়ায় বেকারত্বের হার রেকর্ড কম দুই দশমিক নয় শতাংশে নেমে এসেছিল।

শ্রম শক্তির ঘাটতির কল্যাণে মজুরি বেড়েছে। যা ব্যয় বাড়িয়েছে ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সমর্থন করেছে।

অস্ত্র ও পণ্য উৎপাদনে আত্মনির্ভরশীলতা

রাশিয়া গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশ্বিক অর্থনীতির দেশ। ২০২২ সালে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম অর্থনীতি ছিল দেশটি। মূলত তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, গম ও ধাতুর মতো পণ্য উৎপাদনে অবস্থান শক্তিশালী থাকার কারণে।

বিভিন্ন দেশের মতো, রাশিয়াও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পণ্য উৎপাদনে স্বাবলম্বী। তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও গম উৎপাদনের আত্মনির্ভরশীল থাকার ফলে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব খুব বেশি ছিল না।

মালিক বলেছেন, কোনও সন্দেহ নেই পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও বাণিজ্যিক বিধিনিষেধ রুশ অর্থনীতিতে কিছু মাত্রায় প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু সেই প্রভাব মোটাদাগে রুশ প্রতিরক্ষা শিল্পে সীমাবদ্ধ ছিল। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ অস্ত্র রফতানিকারক দেশ হিসেবে রাশিয়া অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নিজের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারে।

এর পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটি। বিকল্প উৎস থেকে আমদানি, চীন ও ভারতে রফতানি এবং নতুন সাপ্লাই চেইন তৈরির ফলে রুশ প্রতিরক্ষা শিল্প ও যুদ্ধকালীন অর্থনীতিতে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সীমিত রেখেছে।

প্রণোদনা, ভর্তুকি ও নীতি

সরকারি ভর্তুকি, ব্যয় ও নীতিও অর্থনীতির বিকাশে ভূমিকা রেখেছে। যুদ্ধকালীন অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে রাশিয়ার পদক্ষেপগুলো এতই আগ্রাসী ছিল যে, মর্টগেজে ভর্তুকির কারণে আবাসন খাত ফুলে ফেঁপে উঠেছে।

বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ভর্তুকি চালু করে রুশ সরকার। যা অর্থনীতিতে চাহিদাকে বাড়িয়ে দেয়।

ইউক্রেনে আক্রমণের পরপরই বাজার ও অর্থনীতিতে স্থিতিশীল রাখতে রুশ নীতিনির্ধারকরা দ্রুত পদক্ষেপ নেন। কয়েক সপ্তাহ মস্কো এক্সচেঞ্জ বন্ধ ছিল, পুঁজিতে নিয়ন্ত্রণ ও আর্থিক নীতি ব্যবস্থাপনায় বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।

ইউরোপিয়ান ব্যাংক ফর রিকন্সট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ সের্গেই গুরিয়েভ বলেছেন, এসব পদক্ষেপ দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করা হয়। 

বৈদেশিক ঋণ কম ও রফতানি শক্তিশালী রাখা

রাশিয়া যখন যুদ্ধ শুরু করে তখন দেশটির বৈদেশিক ঋণ ছিল খুব কম। বর্তমানে উদ্ধৃত রয়েছে। যুদ্ধকালে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে এই উদ্ধৃত এসেছে। 

মালিক বলেছেন, রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ জব্দের মতো পশ্চিমা উদ্যোগে যে ক্ষতি হয়েছিল তা পূরণ হয়ে গেছে। 

এত নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত হওয়ার পরও ২০২৪ সালের বাজেটে এক-তৃতীয়াংশ বরাদ্দ প্রতিরক্ষা খাতে রাখতে সক্ষম হয়েছে রাশিয়া। 

সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার

 

/এএ/
টাইমলাইন: ইউক্রেন সংকট
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:৩০
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:০২
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:০৪
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২২:০২
যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার মধ্যে কীভাবে টিকে থাকলো রুশ অর্থনীতি
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:০১
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:০৪
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২৩:০১
সম্পর্কিত
তাইওয়ানের কাছাকাছি আবারও সামরিক কার্যকলাপ চালালো চীন
লোহিত সাগরে আরেক তেলবাহী জাহাজে হুথিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২
সর্বশেষ খবর
কেন ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়াচ্ছে কিশোররা?
কেন ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়াচ্ছে কিশোররা?
অটোরিকশার ধাক্কায় মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে শিশুর মৃত্যু
অটোরিকশার ধাক্কায় মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে শিশুর মৃত্যু
উন্নয়নের ভেলকিবাজিতে বাংলাদেশ এখন ডেথ ভ্যালি: রিজভী
উন্নয়নের ভেলকিবাজিতে বাংলাদেশ এখন ডেথ ভ্যালি: রিজভী
ময়মনসিংহে বাস-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ, দম্পতি নিহত
ময়মনসিংহে বাস-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ, দম্পতি নিহত
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?