উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। গত বছর কিয়েভের পুনরুদ্ধার করা অঞ্চলগুলো আবার দখল করতে চাইছে তারা। এর মাধ্যমে দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে ইউক্রেনীয় পাল্টা আক্রমণে থাকা বাহিনীর মনোযোগ বিভক্ত করতে চাইছে মস্কো। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এ খবর জানিয়েছে।
এই রণক্ষেত্রে রাশিয়ার সীমান্ত থেকে মাত্র ১৬ মাইল দূরে সিঙ্কিভকা গ্রামের চারপাশে মূল লড়াই চলছে। যেখানে রাশিয়া ইউক্রেনীয় মাইন ক্ষেত্রগুলোঅতিক্রম করে দক্ষিণে কুপিয়ানস্ক শহরের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছে।
দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার কঠোর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকার পরও একটু একটু করে পাল্টা আক্রমণে এগোচ্ছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। কিন্তু কুপিয়ানস্কের আশেপাশে রাশিয়ার দখল প্রচেষ্টা দেখিয়ে দিচ্ছে, মস্কো এখনও আরও ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড দখলের উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করছে। যদিও তাদের আক্রমণ অভিযান থমকে আছে।
সোমবার অনলাইনে প্রকাশিত ফুটেজে দেখা গেছে, রাশিয়ার সামরিক ব্লগাররা কুপিয়ানস্ককে দ্বিখণ্ডিত করা ওসকিল নদীর ওপর একটি সেতু ধ্বংসের কথা বলেছেন। যা ইউক্রেনের রসদ সরবরাহকে জটিল করে তুলবে এবং রুশ বাহিনী শহরের উপকণ্ঠে পৌঁছালে শহরের কেন্দ্রস্থলে আক্রমণ করা কঠিন করে তুলবে। ইউক্রেন সেতুটি ধ্বংসের বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার সেনাবাহিনী গত বছর শীত ও বসন্তজুড়ে আক্রমণ চালিয়ে এখন মোটাদাগে বিধ্বস্ত। এই সময়ে তারা ডোনেস্ক অঞ্চলের বাখমুত দখল তেমন কোনও ভূখণ্ড দখল করতে পারেনি।
কিন্তু মস্কো ভরসা করছে ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ ব্যর্থ হবে এবং যুদ্ধটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে পরিণত হওয়ার ওপর। যুদ্ধ দীর্ঘ হলে বিশাল সামরিক শিল্প এবং ইউক্রেনের তিনগুণ জনসংখ্যা তাকার বিশেষ সুবিধা পাবে রাশিয়া।
রাশিয়া কয়েক মাস ধরে কুপিয়ানস্কে গোলাবর্ষণ করছে। সেখানে যুদ্ধরত ইউক্রেনীয় সেনারা বলছেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রাশিয়ার কামানের আক্রমণের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও রাশিয়া এখন পর্যন্ত সিঙ্কিভকা পর্যন্ত যেতে ব্যর্থ হয়েছে। উত্তর থেকেও অগ্রসর হতে পারেনি তারা।
কুপিয়ানস্ক রাশিয়ার সীমান্ত থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত ওসকিল নদীর তীরে অবস্থিত। ইউক্রেনের জন্য শহরটির প্রতীকী তাৎপর্য রয়েছে। যুদ্ধের প্রথম দিকে রাশিয়া এটি দখল করে নেয় এবং উত্তর-পূর্ব খারকিভ অঞ্চলের দখলকৃত অংশে রাশিয়ার শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছিল।
কিন্তু গত বছর বিদ্যুৎগতির আক্রমণে ইউক্রেন খারকিভের বেশিরভাগ অংশ পুনরুদ্ধার করে। এ সময় হাজার হাজার রুশ সেনা তাদের অস্ত্র ফেলে পালিয়ে যায়। রাশিয়া প্রায় প্রতিদিন কুপিয়ানস্কে গোলাবর্ষণ শুরু করেছে। এর মাধ্যমে স্থানীয়দের মনোবল ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করছে তারা।
কুপিয়ানস্কে ইউক্রেনীয় একটি ড্রোন কোম্পানির সার্জেন্ট ওলেস মালিয়ারেভিচ বলেছেন, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়োগকৃত অপরাধীদেরসহ পদাতিক বাহিনীর ছোট দল ব্যবহার করে হামলার চেষ্টা করছে রুশ সেনারা।
মালিয়ারেভিচের ইউনিট ইউক্রেনের ৯২ তম ব্রিগেডের অংশ। সম্প্রতি তার ইউনিট ২০ হাজার ডলার মূল্যের একটি ড্রোন ব্যবহার রাশিয়ার তিনটি ট্যাংক ধ্বংস করেছে। ড্রোনটি অক্ষত থাকে।
তিনি বলেছেন, গত কয়েক সপ্তাহে কোনও পক্ষই উল্লেখযোগ্য ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি। তার কথায়, ‘তারা একটি অঞ্চলে অবস্থান নেয়, আমরা তা পুনরুদ্ধার করি, তারা অন্যত্র নতুন এলাকা দখল করে। এভাবে চলছে। সম্মুখ রেখায় বড় পরিবর্তন আসছে না।
ফ্রন্ট লাইনে রাশিয়ার সেনাদের সঙ্গে সময় কাটানো জনপ্রিয় রুশ ব্লগার সেমিয়ন পেগভ রবিবার বলেছেন, রুশ বাহিনী সিঙ্কিভকার উত্তরে ইউক্রেনীয় মাইনফিল্ড অতিক্রম করতে সমস্যায় পড়েছে।
তবে উভয় পক্ষই ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এবং রাশিয়ার অভিজাত সামরিক ইউনিট এবং বিমানবাহিনীর সহযোগিতায় পরিচালিত আক্রমণের মুখে পড়তে হচ্ছে ইউক্রেনীয়দের। ইউক্রেনের উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী হান্না মালিয়ার সোমবার বলেছেন, রাশিয়া কুপিয়ানস্কের দিকে কামানের সহযোগিতায় নতুন আক্রমণ চালাচ্ছে।
হান্না মালিয়ার বলেছেন, আমাদের বাহিনী আক্রমণ প্রতিহত করছে এবং সম্মুখ রেখা ধরে রাখছে। তারা শত্রুকে এগিয়ে যেতে দিচ্ছে না।
আগস্টের শুরুর দিকে কুপিয়ানস্কের ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ শহরের আশেপাশের ৩৭টি গ্রাম থেকে বাসিন্দাদের বাধ্যতামূলক সরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। খারকিভ অঞ্চলের গভর্নর ওলেহ সিনেহাইবভ টেলিগ্রামে বলেছেন, সর্বশেষ সোমবার রাশিয়ার গোলাবর্ষণে একজন নিহত ও ১১ জন আহত হয়েছে।
মালিয়ারেভিচ বলেন, রাশিয়ার বাহিনী এখন ওসকিল নদীর পুরো পূর্ব তীর দখলের লক্ষ্যে দক্ষিণ দিক থেকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে তারা কুপিয়ানস্ককে ঘিরে থাকা পূর্ব দিকে কৌশলগত উঁচু ভূখণ্ড দখল করে সুবিধা নিশ্চিত করতে চাইছে। তাদের পরিকল্পনা সুস্পষ্ট।