বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের অধীনে তারা নির্বাচন করবে না। আমাদের অধীনে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করার কে তারা? যাদের জন্মই হয়েছে ভোট চুরির মধ্য দিয়ে তারা আবার প্রশ্ন করে কীভাবে? জনগণ বলুক। দেশের মানুষ তো ভোট দিয়েছে, দেশের মানুষ তো শান্তিপূর্ণ ভোট দিতে পেরে খুশি। হ্যাঁ, এলাকায় এলাকায় কিছু সমস্যা হয়, এটা স্থানীয়ভাবে। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসে, নির্বাচনের ইতিহাস যদি আমরা দেখি অন্তত বলবো— যে নির্বাচন হয়ে গেলো, এইভাবে সুষ্ঠুভাবে একটা নির্বাচন কবে হয়েছে বাংলাদেশে?
মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
আজ এরে বহিষ্কার করে, কাল আবার ওরে
বিএনপির নাম উল্লেখ না করে শেখ হাসিনা বলেন, এখনও একটা দল, যাদের কোনও মাথা-মুণ্ডু নেই। তাদের চেয়ারম্যান সাজাপ্রাপ্ত আসামি। দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও সাজাপ্রাপ্ত আসামি এবং দেশান্তরী। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, সেই সুবাদে সারাক্ষণ অনলাইনে শুধু নির্দেশ দেয়। সেই সিদ্ধান্তেরও ঠিকঠিকানা নেই। আজ এরে বহিষ্কার করে, কাল আবার ওরে বহিষ্কার করে। তাদের কোনও সিদ্ধান্ত নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে, ভোটের অধিকার নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে, তাদের জন্মটাই বা কোথায়? অবৈধভাবে হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী, তাদের পকেট থেকে বের হওয়া যে রাজনৈতিক দল তাদের কাছে এখন গণতন্ত্রের সবক শুনতে হয়, ভোটের অধিকারের কথা শুনতে হয়। তারা হ্যাঁ/না ভোট দিয়ে মানুষের ভোট চুরি করেছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, জাতীয় নির্বাচন— প্রত্যেকটা নির্বাচনই তো আমরা দেখেছি। কীভাবে মানুষের ভোট নিয়ে খেলা হয়।
চক্রান্ত করে আওয়ামী লীগকে হারানো হয়েছিল
বেশি দূর নয়, ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনেও চক্রান্ত করে আওয়ামী লীগকে হারানো হয়েছিল দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, পারসেন্টিজে ভোট আমাদের বেশি ছিল। আমরা সিট পাইনি। কারণ আমি রাজি হইনি আমার দেশের গ্যাস অন্য দেশের কাছে বেচতে। আজ গ্যাসের জন্য হাহাকার। আমরা যদি তখন রাজি হতাম বা গ্যাস বিক্রি করা শুরু করতাম তাহলে কী অবস্থা হতো? আমাদের কোনও ইন্ডাস্ট্রি চলতো? ফার্টিলাইজার ফেক্টরি চলতো? বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়তো? হতো না।
শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া কিন্তু সেই মুচলেকা দিয়েছিল। সে কিন্তু কথা দিয়েছিল ক্ষমতায় গেলে গ্যাস বিক্রি করবে। আমি শুধু একুটু বলেছিলাম— আল্লাহ তায়ালা জন বুঝে ধন দেন। খালেদা জিয়া কথা দিয়েছিলেন গ্যাস বিক্রি করবে, ওই গ্যাস পায়ই না। তাদের আমলে কূপ খনন করে গ্যাস পায়নি। ওদিকে তাদের দৃষ্টিও ছিল না। ক্ষমতায় যাবে, লুটপাট করবে, পয়সা বানাবে, হাওয়া ভবন খুলে খাওয়া খাবে— এটাই ছিল তাদের মাথায়, এটাই তারা করেছে।
দিন বদলেছে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনার অতিমারি, এরপর আসে ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যাংশন-কাউন্টার স্যাংশন, সারা বিশ্বব্যাপী মূদ্রাস্ফীতি— এই সমস্যার কারণেই কিন্তু আমরা নয়, সারা পৃথিবী, এমনকি উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। তারপরও আমরা আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছি। ২০০৮ সালর নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা এক ধাপ ওপরে তুলবো। রূপকল্প ২০২১ আমরা ঘোষণা দেই, দিন বদলের সনদ আমরা ঘোষণা দেই। আজকে দিন বদল ঘটেছে।
তিনি বলেন, সব সময় আমরা লক্ষ্য রেখেছি তৃণমূলের মানুষ, তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নতি করা। আজ কেউ বলতে পারছে না যে গ্রামে দারিদ্য আছে। এখন বলে— শহরে দারিদ্র্য। এখন অদ্ভুত এক হিসাব হয়ে গেছে, দারিদ্রের হার শহরে বেড়ে গেছে, গ্রামে না। অথচ এক সময় গ্রামের মানুষ একবেলা ভাত খেতে পেতো না। মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না। রোগের চিকিৎসা পেতো না। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল। আমাদের উন্নয়নে তৃণমূল মানুষের দিকে লক্ষ্য রেখে পরিকল্পিতভাবে এগিয়েছি। ইতোমধ্যে কয়েকটি জেলা-উপজেলা গৃহহীন, ভূমিহীন মুক্ত ঘোষণা দিয়েছি। অল্প কিছু বাকি আছে, সেগুলোও শিগগিরই হয়ে যাবে। বাংলাদেশের কোনও মানুষই ঠিকানাবিহীন থাকবে না।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বল্পোন্নত দেশ রেখে গেছিলেন, সেখান থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জনের জন্য যে কয়টা পদক্ষেপ নিতে হবে আমরা অত্যন্ত সফল্যের সঙ্গে নিয়েছি। শুধু তাই নয়, কোভিড-১৯, ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যাংশন-কাউন্টার স্যাংশন সব কিছু মিলিয়েও কিন্তু আমরা আমাদের স্থানটা ধরে রাখতে পেরেছি। অনেক দেশ পারেনি, আমরা পেরেছি। ২০২৬ সাল থেকে আমাদের নতুন যাত্রা শুরু হবে। তার প্রস্তুতিও কিন্তু আমরা নিয়েছি।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এই অগ্রযাত্রা সহজভাবে করতে পারার ব্যাপারে নিজের বিশ্বাসের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নয়ত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে শুরু হওয়া সভায় সভাপতিত্ব করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যরা উপস্থিত রয়েছেন।