পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের খবরে আনন্দের জোয়ার বইছে সেতুর জন্য বাড়িঘর-জমিজমা ছেড়ে চলে আসা নাওডোবা পুনর্বাসন কেন্দ্রে বসবাসকারী মানুষদের মাঝে। সেতুর জন্য বাপ-দাদার ভিটে ছেড়ে তাদের বসতি গড়তে হয়েছিল অন্যস্থানে। খুব কষ্ট নিয়েই চলে আসতে হয়েছিল তাদের। কিন্তু পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হওয়ায় সেই কষ্ট ভুলে তাদের মনে খুশির ঝিলিক। পৈতৃক জায়গার ওপর দিয়ে সেতু নির্মিত হওয়ায় গর্বিত তারা।
স্বপ্নের সেতুর শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে নাওডোবায় সরকারের দেওয়া জায়গায় সবুজে ঘেরা পল্লিতে বসতি গড়া পরিবারগুলোর মাঝে এখন উৎসবের আমেজ।
জাজিরা উপজেলার নাওডোবা পুনর্বাসন কেন্দ্রের বাসিন্দা রাশেদা খাতুন বলেন, ‘নিজেদের জায়গা জমি ছেড়ে দিয়ে আসতে হয়েছে পদ্মা সেতুর জন্য। প্রথমে কিছুটা কষ্ট হয়েছিল, কিন্তু পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হওয়ার পর স্বস্তি পেয়েছি। এখন সেই সেতু উদ্বোধন হবে। সেতুর ওপর দিয়ে সবাই চলাচল করতে পারবে ভেবেই মনে আনন্দ লাগছে। এখন আর কোনও দুঃখ নেই, অনেক ভালো লাগছে। এখানে বসবাসকারী সবাই খুব খুশি।’
আরেক বাসিন্দা রওশন আরা বেগম বলেন, ‘নিজেদের জায়গা ছেড়ে দিয়ে এসে উঠেছি সরকারের দেওয়া জমিতে। এখানে ভালো আছি। পদ্মা সেতুর জন্য জমি ছেড়ে দিতে পেরে এখন গর্ববোধ করছি। বলতে পারবো বাপ-দাদার ভিটের ওপর দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।’
নাওডোবা পুনর্বাসন কেন্দ্রের বাসিন্দা আসলাম শেখ বলেন, ‘ছেড়ে জমিতে অনেকের বাপ-দাদার কবরও ছিল। খুবই কষ্টের ব্যাপার, কিন্তু পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় সবার মাঝে খুশির জোয়ার বইছে। এই সেতুর কারণে ইতোমধ্যেই আমাদের এলাকার অনেক উন্নয়ন শুরু হয়েছে। রাস্তাঘাট নির্মিত হয়েছে, দোকানপাট বসছে। অনেক গরিব মানুষের আয়-রোজগারের ব্যবস্থা হয়েছে।’
নাওডোবা পুনর্বাসন কেন্দ্রের বাসিন্দাদের সন্তানদের পড়ালেখার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মসজিদ, সুপেয় পানির ব্যবস্থা ও পুকুরসহ নানা প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে।
নাওডোবা পদ্মা সেতু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৭ সালের মার্চ মাসে এই স্কুলের উদ্বোধন করা হয়। বর্তমানে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ২৫৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষক এবং কর্মচারী রয়েছেন ১২ জন। এখানে পড়ালেখা করা সবাই পুর্নবাসন কেন্দ্রের বাসিন্দাদের সন্তান। পুনর্বাসন কেন্দ্রের বাসিন্দাদের সন্তানরা যাতে পড়ালেখা করতে পারে সে কারণে এই স্কুল নির্মাণ করেছে সরকার। এখানে বসবাসকারী প্রায় সব শিশুই পড়ালেখা করছে।’
নাওডোবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন ঢালী বলেন, ‘পদ্মা সেতুকে ঘিরে আমাদের এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আমরা যারা সেতুর জন্য জমি দিয়েছি তাদের অনেকেরই মনে দুঃখকষ্ট ছিল, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে তা লাঘব হয়ে গেছে। অনেকের বাপ-দাদার কবর রেখে চলে আসতে হয়েছে, তারপরেও আজ আর কারও মনে কষ্ট নেই।’