X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

মমতার হাতে পুনরায় ক্ষমতা: কিছু পর্যবেক্ষণ

রাহমান নাসির উদ্দিন
০৫ মে ২০২১, ১৫:২৯আপডেট : ০৫ মে ২০২১, ১৫:২৯

রাহমান নাসির উদ্দিন অনেক বছর ধরে এক ধরনের নেশার মতো আমি আমেরিকা এবং পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করি। এবার অবশ্য ২০২০ সালের নভেম্বরের ৮ তারিখ অনুষ্ঠিত মিয়ানমারের নির্বাচনও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি; সেটা প্রধানত রোহিঙ্গা এবং সু চি’র কারণে। মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। প্রতি পাঁচ বছর পর পর পশ্চিমবঙ্গের বিধান সভার নির্বাচন হয়। আমি তুমুল উত্তেজনায় সেটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করি এবং নানান রাজনৈতিক সংশ্লেষণের (ইমপ্লিকেশনের) পলিমিক বিশ্লেষণ করি। আমার নিজস্ব কিছু চিন্তা, ভাবনা এবং বিশ্লেষণ গড়পরতা “রাজনৈতিক বিশ্লেষণ” এবং পাইকারি “রাজনৈতিক আলোচনা”র বাইরে গেলে সেটা সংবাদপত্রে লিখে প্রকাশ করি, যার মাধ্যমে আর দশ জনের সঙ্গে নিজের চিন্তা-ভাবনা শরিক করতে পারি। এটাও তারই ধারাবাহিকতা। ভারতের পাঁচটি রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচন হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে জিতেছে তৃণমূল কংগ্রেস, আসামে জিতেছে বিজেপি’র নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ, তামিলনাড়ুতে এক দশক পর জিতেছে ডিএমকে-কংগ্রেস জোট, কেরালায় জিতেছে বাম ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এলডিএফ), আর পদুচেরিতে জিতেছে বিজেপি জোট। তবে, অন্য আর দশ জন ভারতীয় এবং বাংলাদেশির মতো আমারও কেন্দ্রীয় মনোযোগ ছিল পশ্চিমবঙ্গের দিকে। ইতোমধ্যে এ খবর রাষ্ট্র হয়েছে যে পশ্চিমবঙ্গে মমতার নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। পশ্চিমবঙ্গের বিধান সভায় ২৯৪টি আসন; যার মধ্যে ২টি আসনের নির্বাচন হয়নি। বাকি ২৯২ আসনের মধ্যে মমতার তৃণমূল কংগ্রেস ২১৩টি আসনে জয়লাভ করে। কিন্তু এ বিপুল জয়লাভের মধ্যে চাঁদের কলঙ্ক হয়ে আছে নিজের কনস্টিটিউয়েন্সি নন্দীগ্রামে মমতা পরাজিত হয়েছেন তারই একসময়কার সহযোদ্ধা বর্তমানে বিজেপি’র প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর কাছে। এটা এ বিপুল উচ্ছ্বাসে একটা বড় দীর্ঘশ্বাস বটে! তথাপি মমতা নিজের জয়-পরাজয়ের ভালো লাগা-খারাপ লাগার ঊর্ধ্বে উঠে নিজের দলের জয়ে আনন্দিত এবং সবার সঙ্গে সেটা শরিক করার প্রক্রিয়ায় স্বতঃস্ফূর্ত। তবে, মমতা বিধায়ক না-হয়েও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হতে পারবেন কিনা তা নিয়ে কেউ কেউ মিনমিন করে গা চুলকাচ্ছেন! কিন্তু সংবিধান সম্মতভাবেই মমতা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। মেজরিটি আসনে জয়লাভ করা দলের সকল বিধায়ক যদি সম্মিলিতভাবে মমতাকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত করেন, তবে মমতার মুখ্যমন্ত্রী হতে কোনও সাংবিধানিক বাধা নাই। শুধু একটা শর্ত পূরণ করতে হবে, শপথ গ্রহণের ১৮০ দিনের মধ্যে মমতাকে রাজ্যের কোনও একটি আসন থেকে উপনির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। এবং সেটা খুব কঠিন কোনও কাজ হবে না মমতার জন্য। কেননা, যে দু’টি আসনে উপনির্বাচন হবে, সেখানে যেকোনও একটি আসনে জয়ী হলেই চলবে। মমতার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারেই এর নজির আছে। যেমন, ২০১১ সালে মমতা বিধানসভার নির্বাচনই করেননি, কিন্তু তিনি বিধায়কের সর্বসম্মত নির্বাচনের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরে ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত সুব্রত জোশী মমতার সম্মানে আসনটি ছেড়ে দেন এবং পরবর্তীতে উপনির্বাচনে মমতা জয়ী হয়ে অ-বিধায়ক হিসাবে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার শর্ত পূরণ করেন। ফলে, এবারও বিষয়টি সেদিকেই যাচ্ছে এবং সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগামী ৫ মে টানা তৃতীয়বারের মতো (২০১১, ২০১৬ ও ২০২১) পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন।

মমতার তৃতীয়বারের ক্ষমতায় আসাটাকে নানানভাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ হচ্ছে। অধিপতিশীল বিশ্লেষণগুলো সংক্ষেপে দাঁড়ায় এভাবে:

(১) মমতার জয় বিজেপি পশ্চিমবঙ্গকে হিন্দুত্ববাদের মন্ত্র দিয়ে যেভাবে দখল করতে চেয়েছিল সেখান থেকে রক্ষা করেছে;

(২) মমতার জয় হিন্দু জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতীয়তাবাদে জয়;

(৩) মমতার জয় বাংলার শাসন বাঙালি মেয়ের হাতে রেখে দিলো;

(৪) মমতার জয় আধুনিক, সেক্যুলার এবং গণতান্ত্রিক ভারতের জয়;

(৫) মমতার জয় মোদি সরকারের জন্য এক বড় বার্তা প্রদান করলো;

(৬) মমতার জয় পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের নির্ধারণী জয়। কেননা, তৃণমূল কংগ্রেস এখন পশ্চিমবঙ্গের মেজরিটারিয়ান আইডিয়ালোজির প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক দল;

(৭) কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য মমতার জয় আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য একটা অশনি সংকেত;

(৮) মমতার তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়া বিজেপির তৃতীয় দফা ক্ষমতায় থাকার পক্ষে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে প্রভৃতি। এসব পপুলার বিশ্লেষণের সঙ্গে আমি খুব একটা দ্বিমত করি না কেননা এসব বোঝার জন্য রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নাই। তবে, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন এবং নির্বাচনি ফলাফল নিয়ে আমার পাঁচটি পর্যবেক্ষণ আমি সংক্ষেপে এখানে পেশ করছি।

এক. বিজেপি অনেক চেষ্টা করেও তৃণমূলকে হারাতে পারেনি এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বড় জয়। কেননা, নির্বাচনি প্রচারে এরকম করোনাভাইরাসের সময়েও ভারতের প্রধানমন্ত্রী খোদ নরেন্দ্র মোদি ১৫ থেকে ২০ বার পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন নির্বাচনি জনসভায় যোগদান করে বক্তৃতা দিয়েছেন। এবং ভারতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপির প্রভাবশালী নেতা অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনি প্রচারণায় যোগ দিয়েছেন প্রায় ৬৫ বার। আর অন্যান্য হেভিওয়েট বিজেপি নেতারা তো রীতিমতো পাতি নেতার মতো পশ্চিমবঙ্গে আসা-যাওয়া করে নির্বাচনি প্রচারণায় যোগ দিয়েছেন। এতেই অনুমান করা যায় বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনকে কতটা গুরুত্ব দিয়েছে। তাই, মমতার জয় দল হিসেবে বিজেপির এবং নেতা হিসেবে মোদির এক বিরাট পরাজয়। মমতার তৃণমূল এবার যে পরিমাণ আসন পেয়েছে, তা আগে কখনও পায়নি। ২০১১ সালে তৃণমূল পেয়েছিল ১৮৪ আসন, ২০১৬ সালে পেয়েছিল ২১১টি আসন কিন্তু এবার পেয়েছে ২১৩টি আসন। ভোটের সংখ্যা এবং শতাংশও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০১১ সালে ছিল ৩৮.৩৯%, ২০১৬ সালে ছিল ৪৪.৯১% এবং ২০২১ সালে সেটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭.৯৪%। ফলে, এসব সংখ্যাতাত্ত্বিক প্রবৃদ্ধির একটা গভীর রাজনৈতিক তাৎপর্য আছে নিঃসন্দেহে।

দুই. সবাই বলছে মমতা জিতেছেন এবং মোদি হেরেছেন কিন্তু আমি মনে করি তৃণমূল জিতেছে সত্য কিন্তু বিজেপিও হারেনি। বরং এ নির্বাচনে বিজেপিরও একটা বিপুল বিজয় হয়েছে। ২০১৪ সালের আগে বিজেপি ছিল প্রধানত গুজরাট থেকে বেড়ে ওঠা একটি পশ্চিম এবং উত্তর (কেন্দ্রীয়) ভারত-কেন্দ্রিক দল, যা ভারতবর্ষের শাসন ক্ষমতা হাতে পেয়ে পুরো ভারতবর্ষকে গিলে খাওয়ার মহাপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছে। ইতোমধ্যে ভারতবর্ষের অনেক রাজ্যে বিজেপির রাজত্ব পাকাপোক্ত করেছে। কেবল পশ্চিমবঙ্গে ২০১৬ সালের বিধান সভার নির্বাচনে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। ২০১৬ সালের বিধানসভার নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ৩টি আসন। কিন্তু ২০২১ সালে এসে বিজেপির আসন সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৭টি। তাহলে এটাকে কোনোভাবেই পরাজয় বলা যাবে না। সুতরাং বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের ২০২১ সালের নির্বাচনের প্রকারান্তরে বিপুল বিজয় নিয়ে নিজের শক্ত শেকড় গেঁড়েছে। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরপরই ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপি প্রধান নরেন্দ্র মোদি পশ্চিমবঙ্গের হবু মুখ্যমন্ত্রী ‘দিদি’কে টুইট করে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। কিন্তু পাশাপাশি এটাও জানান দিয়েছেন যে, বিজেপিও সমানতালে আছে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় এবং ৭৭ টি কনস্টিটিউয়েন্সিতে। সুতরাং বিজেপি হারেনি, বরং প্রবল প্রতাপে জিতেছে।

তিন. এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে হতাশার চিত্র হচ্ছে, ভারতীয় কংগ্রেস পার্টি (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস) এবং ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই) পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার নির্বাচনে একটি আসনও জিতেনি। এরচেয়ে করুণ এবং হৃদয়বিদারক ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে আর কখনও ঘটেনি। ২০১৬ সালের নির্বাচনেও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ৯২টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৪৪টি আসলে জয়লাভ করেছিল। আর কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া ১৪৮টা আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ২৬টি আসনে জয়লাভ করেছিল। কিন্তু এবার ভারতীয় কংগ্রেস এবং কমিউনিস্ট পার্টি একটি আসনেও জয়লাভ করেনি। ইতিহাসের করুণ সত্য তথ্য হচ্ছে, এ দু’টি দল মিলে পশ্চিমবঙ্গকে শাসন করেছে প্রায় ৬৪ বছর, কিন্তু এবারের বিধানসভায় এ দু’টি দলের কোনও প্রতিনিধিই থাকবে না। কংগ্রেস এবং বামদের এ অনুপস্থিতি প্রধান বিরোধী দল হিসাবে ৭৭ আসন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় বিজেপির অবস্থানকে আরও শক্ত এবং পোক্ত করবে এ-বিষয়ে কোনও সন্দেহ নাই। এবং বিধান সভায় মমতা এবং তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য এটা হবে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ।

চার. এবারের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় বিস্ময় হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের যেসব আসন মুখ্যত গ্রাম-প্রধান, যেখানে শিক্ষার হার কম, যেখানে দারিদ্রের সংখ্যা বেশি, খানিকটা পাহাড়ি এলাকা এবং যেখানে ধর্মীয় কার্যক্রমের আধিক্য রয়েছে, সেখানে বিজেপির মনোনীত প্রার্থীরাই বেশি জিতেছে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, শিলিগুড়ি, দার্জিলিং, নাটাবারি, কুমারগ্রাম, নাগরকাটা, কালিয়াগঞ্জ, বালুরঘাট, বাহারামপুর, চাকদা, কল্যাণী প্রভৃতি। আর তথাকথিত আধুনিক, নাগরিক, মধ্যবিত্ত এবং শহুরে এলাকায় জিতেছে তৃণমূল কংগ্রেসের মনোনীত প্রার্থীরা। যেমন উদাহরণস্বরূপ ইসলামপুর, চাকুলিয়া, হেমতাবাদ, সুজাপুর, ফারাক্কা, সাগরদিঘি, লালগোলা, ভারতপুর, নইড়া, দমকাল, দুমদুম, বারাসাত, যাদবপুর, কলকাতা পোর্ট, ভবানীপুর, বালিগঞ্জ, হাওড়া (উত্তর), হাওড়া (মধ্যম), খড়গপুর, মেদিনীপুর প্রভৃতি। এ বিজয়-কাঠামো প্রকারান্তরে কীসের ইঙ্গিত দেয়? বিজেপি’র যে রাজনৈতিক এবং নির্বাচনি মূলমন্ত্র হিন্দুত্ববাদের নামে এক ধরনের ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করা সেটা এসব গ্রাম-প্রধান, স্বল্পশিক্ষিত এবং দরিদ্র মানুষদের মধ্যে ভালোই গেলানো গেছে। আর শহুরে, শিক্ষিত, নাগরিক মধ্যবিত্তরা তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে যতটা না মমতার মমতায় কিংবা তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক দর্শন এবং আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে, ততধিক হিন্দুত্ববাদী ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের বিরোধিতার জায়গা থেকে। ফলে, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের ভোটের ফলাফল কেবল বিজেপি বনাম তৃণমূল কংগ্রেসের দ্বি-দলীয় ভাগাভাগি নয়, একটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের আধুনিক, সেক্যুলার এবং গণতান্ত্রিক ভারতবর্ষের যে আকাঙ্ক্ষা, সে জায়গার একটা অনুন্মোচিত চেতনার বহিঃপ্রকাশ হিসাবে।

পাঁচ. পশ্চিমবঙ্গের তৃতীয়বারের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতার জয়ে বাংলাদেশে এন্তার আলোচনা ঘুরপাক খাচ্ছে তিস্তার পানি পাবো কী পাবো না সে হিসাব-নিকাশ নিয়ে। এটা আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক চিন্তার বৈকল্যের একটা চরম নিদর্শন। অনেক ‘বিশ্লেষক’কে অত্যন্ত বিলাপের সুরে এটা বলতেও শুনেছি যে, ‘পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এলে আমরা তিস্তার পানি পেতাম কিন্তু মমতা আসাতে সেটা আর হলো না।’ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যখন ২০১৭ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে ভারত সফরে যান, তখন তিস্তার পানি চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু মমতার আপত্তির কারণে সেটা হয়নি। তখন থেকেই মমতা বাংলাদেশের মানুষের রীতিমতো জাতীয় শত্রুতে পরিণত হন! কিন্তু দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার এক বন্ধু-সহকর্মী অধ্যাপক আমাকে বলেছিলেন, মোদি জানতো যে মমতা আপত্তি করবে। তাই, মোদি অতি উৎসাহে তিস্তার পানি বাংলাদেশকে দিয়ে দিচ্ছিলো। এর মধ্য দিয়ে মোদি গাছেরটাও খেয়েছেন (তিস্তার পানি দেওয়ার নাটক করে বাংলাদেশের বন্ধু হয়েছেন!), আবার তলারটাও গিলেছেন (মমতাকে বাংলাদেশের কাছে ভিলেন বানিয়ে মমতার ওপর শোধ নিয়েছেন)। কিন্তু আমরা মোদির বড়ি খেয়ে দিদির ওপর ‘গোস্সা’ করে বসে আছি! রাজনীতির চাল বড় চাল! তাই, তিস্তার পানি পাবো কী পাবো না, তা দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মমতার বিজয়কে মাপঝোঁক করলে সেটা অত্যন্ত নাবালক রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি হবে। বরং বাঙালি দিদি কর্তৃক বাংলা বিজয়কে স্বাগত জানাতে হবে এবং তিস্তার পানিবণ্টনসহ অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক বিষয়াদি সামনে নিয়ে কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে দিদি’র মমত্বকে কাজে লাগাতে হবে।
পরিশেষে বলবো, পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের যে সেক্যুলার জীবন-দর্শন এবং একটি আধুনিক-উদার-গণতান্ত্রিক মনোবৃত্তি সেটা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে যে কারণে মোদির উগ্র হিন্দুত্ববাদ খানিকটা প্রশ্রয় পেলেও বাংলার মসনদ দখল করতে পারেনি। প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় বাঙালি চরিত্রের একটা ঐতিহাসিক নজির দিয়ে শেষ করছি। অবিভক্ত ভারতবর্ষের গভর্নর এলগিং ১৮৯৭ সালে বাঙালিদের চরিত্র নিয়ে একটি রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন লন্ডনে। তিনি লিখেছিলেন, “Bengalis- a peculiar people. They don’t often believe what we tell them. They can critically think and based in knowledge, are fiercely opinionated. Almost too progressive. It’s not a problem we’ve encountered anywhere else in India”। মোদি মনে হয় বাঙালির এ চরিত্র খানিকটা টের পেয়েছেন!

লেখক: নৃবিজ্ঞানী ও অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩৮
সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩৮
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ