X
বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫
১৮ আষাঢ় ১৪৩২

মালদ্বীপে নয়া উপনিবেশ গড়ছে চীন?

আনিস রায়হান
২০ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৩:২০আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০১৮, ১৯:০৭

আনিস রায়হান গত ৭ ডিসেম্বর ২০১৭ মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট বেইজিংয়ে গিয়ে চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিপি) স্বাক্ষর করেছেন। এছাড়া চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগেও আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হয়েছে মালদ্বীপ। এ বিষয়ে দুই সরকারের দেওয়া যৌথ বিবৃতিটি এ অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য এক ভয়ংকর বার্তা হয়ে এসেছে।
দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের অধিকাংশ দেশই মনে করছে, ভারতের তুলনায় চীনা বিনিয়োগ ততটা আগ্রাসী নয়। চীন অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না ভেবেও তারা আশ্বস্ত থাকেন। কিন্তু মালদ্বীপের সঙ্গে সম্পাদিত এফটিপি এ অঞ্চলে চীনের উদ্দেশ্য ঘিরে প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে।
৭ ডিসেম্বরে দেওয়া যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়ে যে, চীনা প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ব্যবস্থা নেবে মালদ্বীপ সরকার। অন্যদিকে, নিজ দেশের নামিদামি প্রতিষ্ঠানগুলোকে মালদ্বীপে বিনিয়োগের জন্য উদ্বুদ্ধ করবে চীন। পাশাপাশি মালদ্বীপের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নেও সহায়তা করবে তারা।

এ চুক্তির ফলে মাছ ছাড়াও মালদ্বীপের আরও প্রায় ৪০০ পণ্য চীনে প্রবেশের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। আর সীমিত শুল্কে মালদ্বীপে শিল্পপণ্য রফতানি করতে পারবে চীন। মালদ্বীপের শিল্পবিকাশ সেক্ষেত্রে চিরতরে রুদ্ধ হওয়ার শঙ্কা দেখছেন অনেকেই। আর মাছসহ মালদ্বীপের স্থানীয় পণ্যের বাজারেও চীনের পরোক্ষ বিনিয়োগ ঘটছে, ঘটবে। ফলে শুল্ক সুবিধা উভয় দিক থেকেই চীনারা ভোগ করবে।

প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন নিজ ক্ষমতা দৃঢ় করতে এবং ভারতীয় প্রতিরোধ মোকাবিলায় এই চুক্তি করে চীনকে পাশে পেতে চাইছেন। তাছাড়া ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিরোধীদের মানবাধিকার প্রচারণার মোকাবেলা করতে হলে ইয়ামিনকে বৃহদাকৃতির কিছু উন্নয়ন প্রকল্প বা 'মেগাপ্রজেক্ট' সামনে নিয়ে আসতে হতো। কিন্তু ইয়ামিন যা করেছেন, তার ফল কী হবে?

যৌথ বিবৃতিতে মালদ্বীপ সরকার তার সকল পর্যায়ে এবং সকল বিভাগেই চীনের সঙ্গে সহযোগিতার বিষয়ে সম্মতির কথা জানিয়েছে। এতে মালদ্বীপ সরকারের সকল পর্যায়ে চীনের প্রভাব আরও বেড়ে যাবে।

৭ ডিসেম্বর এফটিপি স্বাক্ষরের আগে দুই প্রেসিডেন্ট যৌথ বিবৃতি বলছে, উন্নত যোগাযোগ ও সহযোগিতার জন্য, মালদ্বীপবাসীর জন্য চীনা ভাষায় স্কুলও চালু করবে চীন। এতে করে মালদ্বীপের সমাজ-সংস্কৃতি ও ভাষাতেও চীনা প্রভাব পড়বে।

এমন সর্বগ্রাসী চুক্তি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। মালদ্বীপের জনগণের ওপর এটা এক বিরাট আঘাত, আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য ভয়াবহ এক অশনি সংকেত। চীন কি তাহলে দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে 'নয়া-উপনিবেশ' কায়েমে অগ্রসর? সম্প্রতি জিম্বাবুয়ের ক্ষমতা পরিবর্তনের পেছনেও চীনের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

চীনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে মালদ্বীপের স্বনির্ভর উৎপাদন পরিস্থিতি বলে দিচ্ছে, চীনা বা ভারতীয়, কোনো আগ্রাসনের উদ্দেশ্যে-ফলাফলে তেমন কোনো পার্থক্য নেই, পদ্ধতিতে থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা উন্নত হওয়ায় মসৃণ শোষণ চালানোর ক্ষেত্রে ভারতের তুলনায় চীন অনেক বেশি অগ্রসর। এখন সেই সঙ্গে চীনা কূটনীতিরও এক আশঙ্কাজনক বিস্তার ঘটছে- প্রায় নীরবেই দক্ষিণ এশিয়ার একের পর এক দেশে চালিকাশক্তি হয়ে উঠছে চীন। পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, মালদ্বীপ ও মিয়ানমার এই মুহূর্তে প্রধানত চীনের দিকেই ঝুঁকে আছে। এমনকি বাংলাদেশ, ভুটানের মতো ভারতের একেবারে ঘনিষ্ঠ দেশগুলোতেও চীন তার অবস্থান আগের তুলনায় শক্ত করেছে।

লেখক:  লেখক ও সাংবাদিক।

 

 

এফএএন

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
টিভিতে আজকের খেলা (২ জুলাই, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (২ জুলাই, ২০২৫)
ক্লাব বিশ্বকাপে এমবাপ্পের অভিষেক, জুভেন্টাসকে হারিয়ে শেষ আটে রিয়াল
ক্লাব বিশ্বকাপে এমবাপ্পের অভিষেক, জুভেন্টাসকে হারিয়ে শেষ আটে রিয়াল
জুলাই নিয়ে পুলিশ সদস্যের ‘আপত্তিকর’ পোস্ট, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
জুলাই নিয়ে পুলিশ সদস্যের ‘আপত্তিকর’ পোস্ট, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
রংপুরে নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এনসিপির বিশাল পদযাত্রা
রংপুরে নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এনসিপির বিশাল পদযাত্রা
সর্বশেষসর্বাধিক