X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ, তোমার ভাবনায়

তুষার আবদুল্লাহ
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৭:৩২আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৭:৩২

তুষার আবদুল্লাহ তার বয়স কত? নিজেই জানালেন ৬২ পেরিয়ে ৬৩ তে। বললাম, বাংলাদেশের চেয়ে বড়! তিনি বললেন, হুম যন্ত্রণাটা সেখানেই। বাংলাদেশকে কাছে থেকে বড় হতে দেখলাম। ছোটবেলায় আমরা যেমন বালি-মাটি দিয়ে ঘর বাড়ি বানাই। তখন ওই বাড়িটাকে নিজের আপন করেই গড়ি। মনে হয় সারাজীবন যে বাড়িতে থাকবো ওই বাড়ি আমার মতো হোক। পরে নিজেকে বোকা মনে হতো। বাংলাদেশকে নিজের মতো করেই গড়ে তুলতে চেয়েছিলাম। পরিবার সন্তানের বদলে বেশি সময় দিয়েছি আমার বাংলাদেশকে। এখন মনে হয় বড্ড বোকামি করে ফেলেছি। জানতে চাইলাম কেন, আপনিতো বড় একটি শিল্প গড়ে তুলেছেন। ব্যবসায় বহুমাত্রিকভাবে জড়িয়ে পড়েছেন। আমরাতো আপনাকে বাহ্যিকভাবে সফলই জানি। তিনি মৃদু হেসে বললেন- আমিতো এককভাবে সফল হতে চাইনি। সবাই মিলে সফল হতে চেয়েছিলাম। পারছি না কেন? 

তিনি বললেন-  গত ৫০ বছরে শুধু আমাদের মূল্যবোধের অবনমন হয়েছে। কোনও একটি খাত দেখাতে পারবেন, যেখানে অটুট আছে মূল্যবোধ। কোনও পেশায় সততার মূল্যায়ন নেই। আমরা কেউ কেউ আর্থিকভাবে অনেক পুঁজির মালিক হয়েছি। লড়াই করে খুব কম। বললাম বাকিদের হাতে টাকা এসেছে অনৈতিকভাবে। ফলে সেই টাকা বা  টাকার উত্তাপ দেখানোর প্রদর্শনী চলছে। যা সকল পেশার মানহীনতার একটি কারণ। বললাম ৫০ বছর খুব বেশি সময় নয়, আমাদের কাছে পুঁজি ছিল না। মূলধন না থাকলে দেশ গড়বো কী করে?  তিনি বললেন- মূল্যবোধ হারানো জাতি, অথৈ মূলধন দিয়ে কি পুষ্টিকর রাষ্ট্র তৈরি করতে পারবে?

দেখা হলো আরেকজন প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে। বাজারে তার তৈরি বা সরবরাহ করা ব্র্যান্ডের অভাব নেই। তবে তার নামটিই ব্র্যান্ড হিসেবে বাজারে সমাদৃত। তার কাছে জানতে চাইছিলাম বাংলাদেশ  নিয়ে। তিনি আশাবাদী ও ইতিবাচক মানুষ বরাবরই। বললেন- বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য। কোনোভাবেই আটকে রাখা যাবে না। তবে দক্ষ জনবল গড়ে উঠছে না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু সেই অনুপাতে দক্ষ কর্মী বা ব্যবস্থাপক বাজারে আসেনি। কারণ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা অপুষ্টিতে ভুগছে। আমরা কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারিনি এখনও। সংকট আছে শিক্ষকের। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে গোনা কয়েকটি মান বজায় রাখতে পারছে। বাকিগুলো মানে পৌঁছাতে পারেনি। ফলে আমরা যখন কর্মী খুঁজি তখন সনদ পাই, দক্ষতা পাই না। বললাম, অভিযোগ আছে আমাদের দক্ষ কর্মী থাকার পরেও বিদেশ থেকে কর্মী নিয়ে আসি। উত্তরে তিনি বললেন- অভিযোগ আংশিক সত্য। পুরো নয়। আপনি কোনও একটি প্রতিষ্ঠান শুরু করতে চাইলেই বুঝতে পারবেন সমস্যাটি কোথায়? শিক্ষার সনদ আছে, যথাযথ শিক্ষা নেই। শিক্ষা আছে কিন্তু পেশাদারিত্ব বা কাজের প্রতি ভালোবাসার নিবেদন নেই। সুতরাং আমরা যে মেইড ইন বাংলাদেশের কথা বলছি, সেখানে দক্ষ জনবল তৈরির দিকে আমাদের মনযোগ দিতে হবে।

চায়ের দাওয়াত দিয়েছিলেন দেশ সেরা আরেকজন প্রধান নির্বাহী। তিনি লেখাপড়া করেছেন মূলত বিদেশে। প্রায় দেড় দশক বাংলাদেশে আছেন। কিন্তু এখনও বাংলাদেশকে পুরো চিনে উঠতে পারেননি। তবে তিনি যে ব্যবসাটি করছেন, সেটা ভালো ভাবেই করছেন। তিনি আমার কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে চাইলেন। বললাম- ৫০ বছরে এসে চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা সম্ভব না। তবে আমার কাছে একটি ঘাটতি লক্ষ্যণীয়, আমাদের বাংলাদেশের স্বার্থের প্রশ্নে জাতীয় ঐক্য তৈরি হয়নি। আমাদের বিভক্তি, বিভাজন  রয়েছে। দেশ নিয়ে পরের ওপর নির্ভরশীলতা বেশি। ৫০ বছরে একটি জাতির মধ্যে কেন জাতীয়তাবোধ তৈরি হলো না, এনিয়ে অপরাধবোধ কাজ করে। কারণ আমি নিজেই বাংলাদেশের সঙ্গে বেড়ে ওঠা। তিনি একদম বাংলাদেশের সমবয়সী। বললেন, দেশের বাইরে বসে আমিও এমন শূন্যতাবোধ করেছি। দেশে এসেও একই অভিজ্ঞতা। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে যদি কোনও কিছুর অভাব থাকে তবে এটিই, আর সব দিক দিয়ে অন্য যে কোনও জাতির চেয়েও আপনি এগিয়ে রাখতে পারেন। ক্রিকেটে। যত সহজে এক হয়ে যায় বাংলাদেশের মানুষ, ততো কঠিন তাদের মন বিভাজন মিটিয়ে ফেলা। রাজনৈতিক একটি বিভাজন আছে, স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ। একে অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু বাংলাদেশকে ভালোবাসেন যারা তারা কেন বিভক্ত হবেন?

উত্তর তার কাছেই জানতে চাইলাম, আপনার কী মনে হয়? সবাই সামগ্রিক বা সমগ্রতার বদলে একক, ব্যক্তি স্বার্থ নিয়ে মেতে আছেন। নিজে জয়ী হতে না পারলে, অন্যের জয়ের পথও আটকে দিচ্ছেন। এই মানসিকতায় বেড়ে ওঠা জাতির মধ্যে জাতীয়তাবোধ তৈরি হওয়া কি সহজ? চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে বেরিয়ে এলাম। বাজার বাণিজ্যের তিন অগ্রসেনার মূল্যায়ন নিয়ে ভেবেই যাচ্ছি। দেখি কতক্ষণ ভাবতে থাকার স্বাধীনতা পাওয়া যায়।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
সারা দেশে আরও ৭২ ঘণ্টার ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি
সারা দেশে আরও ৭২ ঘণ্টার ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি
প্রীতি উরাংয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু: ‘অপরাধ আড়ালের চেষ্টা হচ্ছে’
প্রীতি উরাংয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু: ‘অপরাধ আড়ালের চেষ্টা হচ্ছে’
মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হলো সেনাসহ ২৮৮ বিজিপি সদস্যকে
মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হলো সেনাসহ ২৮৮ বিজিপি সদস্যকে
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ